skip to Main Content

সঙ্গানুষঙ্গ I গিক-শিক-গো

বুদ্ধিদীপ্ত চেহারা। কিন্তু কেমন যেন খানিকটা বোকা। পোশাকে-আশাকে, সাজসজ্জায় আকর্ষণের ছিটেফোঁটা নেই। পড়াশোনা করেই তো সময় মেলে না, স্টাইল করার সময় কই! লুকে সে ভাইবটা ফুটিয়ে তোলারই জোরদার চেষ্টায় হালের ফ্যাশনিস্তারা

এই তো সম্প্রতি টিকটকে ভাইরাল গিক-শিক অথবা লাইব্রেরিয়ানকোর ফ্যাশন অ্যাসথেটিক। কিন্তু মূল সূত্র আরও পেছনের সময়ে। পঞ্চাশের দশকে। যা জড়িয়ে আছে ‘নার্ড’ শব্দটার সঙ্গে; এটি মূলত ব্যবহৃত হতো এমন পুরুষদের ক্ষেত্রে, যারা সামাজিকতা রক্ষার দক্ষতায় পিছিয়ে। কিন্তু বুদ্ধিগতভাবে অনেক এগিয়ে; বিশেষ করে বিজ্ঞান আর প্রযুক্তিতে। ষাটের দশকে আরও জনপ্রিয়তা পায় নার্ড টার্মটি। বাটন ডাউন শার্ট, বো টাই আর হাই ওয়েস্টেড পোশাক যেন তাদের পরিচয়ের প্রতীক হয়ে ওঠে। সত্তরে জনপ্রিয় হয় মেয়েদের মাঝেও। ‘অ্যান্টি-ফেমিনিন’ অথবা ‘ডর্কি’ ওয়্যার হিসেবে পরিচিত হতে শুরু করে। মাঝে কিছুদিন রাডারের বাইরে থাকলেও নব্বইয়ে এ স্টাইল ফেরে জোরদার প্রস্তুতি নিয়ে। হয়ে ওঠে পুরোদস্তুর ফ্যাশন ট্রেন্ডের অংশ। রানওয়ে, রেড কার্পেট, রিল থেকে রিয়েল—সবেতেই চোখে পড়তে শুরু করে। নির্দিষ্ট রং, টেক্সটাইল আর শিলুয়েটকে প্রাধান্য দিয়ে একদম আলাদা অ্যাসথেটিক তৈরি করার কারণে। সঙ্গে যোগ করা হয় গিকি অনুষঙ্গ। #বুকটক নামে যা সম্প্রতি আবারও সাড়া ফেলেছে টিকটকে। ফলাফল—লাইব্রেরিয়ানপ্রাণিত ফ্যাশনে সেজে উঠছেন সেলিব্রিটি থেকে সাধারণ ফ্যাশনপ্রেমীরা।
বুক ব্যাগ
বইপোকাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। সেই সঙ্গে গিক-শিক অ্যাসথেটিক লুক পেতে মাস্ট হ্যাভ আইটেম। নার্ড কমিউনিটি তো বহু আগে থেকে আউটকাস্টের কাতারে—রিল এবং রিয়েল লাইফ—দুটোতেই। রেফারেন্স? সিনেমার দৃশ্যগুলো মনে পড়ে যায়। সঙ্গে বইয়ের পাতাগুলোও ভেসে ওঠে মানসপটে। ক্লাসের সবচেয়ে নার্ডি মেয়েটি যেখানে বুলির শিকার। স্কুলের গুটি কয়েক মাস্তান ছেলেপেলে তার ব্যাকপ্যাক নিয়ে টানাটানি করে মাটিতে ফেলে দিচ্ছে, সব ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ছে—মনে পড়ে? ব্যাগ তাই থাকতেই হবে এই লুকে। পছন্দের বই-খাতা, পেনসিল পুরে রাখার জন্য। তবে এবারের ট্রেন্ডে ট্র্যাডিশনাল ব্যাকপ্যাকের জায়গা নেই। তা দখল করে নিয়েছে নব্বইপ্রাণিত বোলিং ব্যাগ। মিনিমালিস্ট ডার্ক কালারের লাক্সারিয়াস লেদার কিংবা কর্ড ব্যাগ। ভেতরে ভরপুর জায়গাযুক্ত। ভিক্টোরিয়া বেকহাম আর মিউ মিউয়ের শোতে সেই আভাসই মিলেছে। তবে হাতের কাছে তা না থাকলে টোট আর স্যাচেল ব্যাগেও তৈরি করা যাবে এ লুক।
মেরি জেন
ব্যাক উইদ আ ব্যাং। ব্যালেকোর ফ্যাশনের বরাতে। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ডি হয়ে ওঠার বহু আগে থেকেই এটি গিক-শিক সম্প্রদায়ের স্টেপল পিস হিসেবে সুপরিচিত। লোফার, ব্যালেরিনা অ্যাঙ্কেল বুটস তো আরও আগে থেকে এই ফ্যাশন অ্যাসথেটিকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। কিন্তু যারা গিকের চেয়ে বেশি শিক চিক দেখাতে আগ্রহী, তাদের জন্য পলিশড ফুটওয়্যার মেরি জেন সবচেয়ে ভালো অপশন। অনেক বেশি কসরত না করে নজরকাড়া হয়ে উঠতে। সাম্প্রতিক স্প্রিং কালেকশনগুলোর লাইব্রেরিয়ান কোডেড রানওয়ে লুকে মিলেছে সে পষ্টতা। টরি বার্চ থেকে এমিলিয়া উইকস্টেডের শোগুলোতে মেরি জেনের স্টাইলিং ছাড়া আর কোনো ফুটওয়্যারে যেন চোখই পড়ছিল না।
শিয়ার স্টকিং
একলেকটিক গ্র্যান্ডপা ট্রেন্ডের অংশ বটে। কিন্তু গিক-শিক লুক তৈরির জন্য সাজে এমন কিছু উপাদান অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন, যেগুলো পরলে একটু বোকা বোকাই দেখাবে। স্টকিং এ ক্ষেত্রে সহজ সমাধান। আদিকালের ভিনদেশি লাইব্রেরিয়ানদের কথা ভাবলেই চোখে ভেসে উঠবে লম্বা মোজা পরা কোনো চরিত্র। এটা যেন পুরো লুকেরই একটা অংশ। সম্প্রতি ডিজাইনাররা আবার ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন ক্ল্যাসিক এ পিস নিয়ে। খেলছেন এর স্বচ্ছতা আর স্টাইলিং নিয়ে। ভিক্টোরিয়া বেকহামের শোতে শিয়ার নিলেন্থ স্টকিং পরতে দেখা গেছে টেইলরড শর্টের সঙ্গে। আর জিভাঁসির শোতে স্কার্টের সঙ্গে নজর কেড়েছে স্বচ্ছ স্টকিং। গিক-শিক লুক সালট্রি ভাইব যোগ করতে চাইলে সংগ্রহে কিন্তু থাকতেই হবে।
ইউনিফর্ম স্কার্ট
শুধু এই একটি পিসের উপস্থিতিতেই নিশ্চিত হয়ে যেতে পারে গিক-শিক ফ্যাশন স্টেটমেন্ট। ওয়্যারড্রোব স্টেপল হিসেবে পরিচিত এ পিসকে সামান্য পরিবর্তন করে প্লিটেড সিলুয়েটকে দেওয়া হচ্ছে প্রাধান্য। খানিকটা স্কুল ইউনিফর্মের মতো দেখতে এ পিসগুলো যে নার্ডি ফ্যাশনের অংশ, তা বুঝতে বোদ্ধা হতে হয় না। শুধু খেলা চাই টেক্সটাইল, কালার আর প্যাটার্ন নিয়ে। টারটান প্রিন্টেরগুলো এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি নম্বর নিয়ে এগিয়ে থাকবে। থাকতে পারে সলিড রংগুলোও। আর দৈর্ঘ্য নিয়ে খেলা যাবে ইচ্ছামতন।
রিডিং গ্লাস
চশমিশ, চার চোখা কিংবা কানা—কত নামেই-না ডাকা হয় চশমা পরিহিত নার্ডদের। কিন্তু এখন সে ধারণা বদলেছে অনেকখানি। চশমা হয়ে উঠেছে স্টাইল স্টেটমেন্টের অংশ। যার মধ্যে গিক-শিক অন্যতম। পপ কালচারের মতে নার্ডদের চোখে সব সময় উঠেছে প্রেসক্রিপশন আইওয়্যার। বদলের হাওয়া লেগেছে তাতেও। আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপনের নানা কৌশলের দেখা মিলেছে রিল এবং রিয়েল লাইফে। দ্য ডেভিল ওয়্যার প্রাডার সেরেনার কথা মনে আছে? আইকনিক এ মুভির চরিত্রে দেখা গিয়েছিল সুপারমডেল জিজেল বুন্ডশেনকে। দ্য গিক শিক এডিটর হিসেবে। পরনে ব্ল্যাক বেয়োনেত্তা আইওয়্যার আর ফর্মফিটিং ওয়ার্কওয়্যার। চলচ্চিত্রটি রিলিজ পাওয়ার পর সে সময় বাজারে চিকন আই গ্লাসের কাটতি বাড়ে তরতরিয়ে। সম্প্রতি আর কোনো নিয়মের ছকে বন্দী নেই চশমার ফ্রেম। রানওয়ে তো বটেই, এর বাইরেও। ওভারসাইজ রাউন্ড গ্লাস, ট্র্যাডিশনাল ক্যাট-আই লেন্স থেকে খাটো ওভাল ফ্রেম—চলছে সবই। তবে চিকন রিডিং গ্লাস আবার ফিরবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বেলা হাদিদ, এমা শেম্বারলেইনের মতো মডার্ন ডে স্টাইল আইকনদের বরাতে।

 জাহেরা শিরীন
মডেল: শ্রাবণী
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top