skip to Main Content

কভারস্টোরি I পাওয়ার প্যালেট

করোনাকালের বিষাদরেখা ছিল দীর্ঘ। ফ্যাশন-বাণিজ্যে নেমে এসেছিল ঘোর অমানিশা। সেখান থেকে নতুনের আহ্বান শোনা যাচ্ছে বহু বছর পরে। বেসিকেরও বেসিক থেকে বেরিয়ে ‘সামথিং ভেরি কালারফুল’ কড়া নাড়ছে। এবার দেখার পালা, কতটা রাঙিয়ে দিতে পারে ফ্যাশনিস্তাদের জগৎ। লিখেছেন সারাহ্ দীনা

পোস্ট-প্যানডেমিক রিবাউন্ড এবার বেশ আলোচনায়। মহামারি কাটিয়ে উঠতে দীর্ঘ সময় প্রয়োজন পড়েছে। করোনাকাল-পরবর্তী বছরগুলোতে বিষাদ যেন জেঁকে বসেছিল। এবার সেখান থেকে বেরিয়ে ইতিবাচকতা, আশা আর শক্তির বন্দনা করতে চায় পৃথিবীবাসী। ফ্যাশনবোদ্ধারা জানিয়েছেন, উজ্জ্বল রংগুলোর প্রতি আগ্রহ থাকবে এই বছর। আন্তর্জাতিক ফ্যাশন বাজারে ফোরকাস্ট পুরো বছর সম্পর্কে ধারণা বেশ আগেভাগেই তৈরি করে দেয়। সেখান থেকে এই সফট গুডস ইন্ডাস্ট্রির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানা যায় নানা কিছু। জৌলুশময় ফ্যাশন বাজারের জন্য রং অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। তাই এ বিষয়েও পাওয়া যায় পূর্বাভাস। কোন কোন রং থাকবে আলোচনায়, তা-ও জানা যায়। কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। ফ্যাশন ফোরকাস্টে জানা যায়, বোদ্ধারা ধারণা করছেন, এবার কলকাঠি নাড়বে রং। কোনো ফ্যাশন কোর নয়। কিন্তু এই পরিবর্তন এমনি এমনি, কোনো কারণ ছাড়া হয়নি; বরং সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও মানসিক—এই তিন কারণে রং হয়ে উঠেছে সব চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
এ তিনের বাইরেও একটি বিষয়কে প্রভাবক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে; তা হচ্ছে ক্রেতা। এ বছরে সম্ভাব্য ক্রেতা যারা, তাদের মধ্যে বড় একটি অংশ জেনারেশন জেড। ব্যক্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাসী তারা, যা ইতিমধ্যে বোঝা হয়ে গেছে বিশ্ববাসীর। এমন মানুষের সংখ্যা বাড়ছে দিন দিন। রংকে তারা দেখছেন অন্যের সামনে প্রকাশের উপযোগী উপায় হিসেবে। যেন রঙের আবরণে ব্যক্তিত্বের বিস্তারিত প্রকাশ। অল্প কতেক রং সাধ মেটাতে পারছে না তাদের। কলেবরের বিস্তার তাই সময়োপযোগী। কালার প্যালেটের উজ্জ্বল রং ধারণ করে নিজের ব্যক্তিত্বের উচ্ছলতার প্রকাশ করতে স্বচ্ছন্দ এই প্রজন্ম। আবার, প্রকৃতিপ্রেমেও মনোযোগী তারা। তাই কালার প্যালেটের আরদি টোনও তাদের মন টানে। একই সঙ্গে এটাও ভুলে যাওয়ার উপায় নেই যে প্রযুক্তিতে সব্যসাচী এই জেনারেশন। তাই তাদের ফ্যাশনে টেক ইনফ্লুয়েন্স থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। এই সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই করা হয় ফ্যাশন ফোরকাস্ট। বিশ্বের বাঘা বাঘা ফ্যাশন গবেষকের অংশগ্রহণে তৈরি হয় এটি। তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে কাজ সম্পন্ন করে আন্তর্জাতিক জরিপ ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠানগুলো। প্যান্টন আর ওর্থ গ্লোবাল স্টাইল নেটওয়ার্ক যার মধ্যে অন্যতম।
প্যান্টন প্যারামিটার
করোনাকালের অশনি দেখা দিয়েছিল ২০১৯ সালের শেষ দিকে। সচেতন ব্র্যান্ডগুলো তখন ২০২০ সালের ফ্যাশন ক্যালেন্ডার নিয়ে একদম তৈরি। উনিশের ৫ ডিসেম্বর প্যান্টন ঘোষণা করেছিল, রং হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে ক্ল্যাসিক ব্লু। এ সিদ্ধান্তের পেছনের ভাবনায় ছিল সন্ধ্যার আকাশের স্নিগ্ধতা। যেখানে পুরোনোকে বিদায় দিয়ে নতুনের আগমনকে বরণ করার আনন্দের বিকাশ। কিন্তু নতুন বছর শুরু হতে না হতেই বিশ্বজুড়ে শোকের পাহাড়। অন্দরমহলে কেটে গেল পুরো বারো মাস। বেদনার রং হয়েই থেকে গেল নীল। সেভাবে নীলের আবেশ উপভোগ করতে পারেননি কেউই। এরপরের বছর, অর্থাৎ ২০২১ এ প্যান্টন কালার হিসেবে নির্বাচিত করে দুটি রংকে দ্য আলটিমেট গ্রে আর ইলুমিনেটিং। নতুন দিনের আশা ছিল এই সিদ্ধান্তের অনুপ্রেরণায়। ২০২২ সালে নির্বাচিত হয় ভেরি পেরি। বেগুনির উজ্জ্বল শেড। এই সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে জানা যায় প্রযুক্তির প্রসারের কথা। মহামারি দিয়েছে বন্দিদশা। কিন্তু মানুষ তো মানিয়ে নিতে ওস্তাদ! তাই সেই কঠিন সময়েও কাজ করে গেছে আধুনিকতাকে আঁকড়ে ধরে। ভেরি পেরিতে সন্ধান করা হয়েছে পৃথিবীতে কীভাবে প্রযুক্তি প্রভাব বিস্তার করছে সেই রহস্য। প্রতিটি রং নির্বাচনের পেছনে রয়েছে পৃথিবীর মানুষের বাস্তব জীবনের অবস্থা, তাদের ভাবনা আর আশার প্রকাশ।
করোনাকালে ডিজিটাল দুনিয়ায় ব্যাপক পরিবর্তন আসে। মানুষ অনলাইন শপিং, ভার্চুয়াল রিয়েলিটিসহ বিভিন্ন আধুনিকতার সঙ্গে পরিচিত হতে শুরু করে। তাই ২০২২ সালের রং হিসেবে ভেরি পেরি নির্ধারণের উল্লেখিত যুক্তি অঙ্ক মিলিয়ে দেয় শতভাগ। একই ধারা আমরা দেখতে পাই ২০২৩ সালেও। নির্বাচিত রং তখন ভিভা ম্যাজেন্টা। কারণ জানা যায়, প্রকৃতিতে এই শেডের নান্দনিক অবস্থান এবং নতুন শক্তির প্রতীক হিসেবে গ্রহণযোগ্যতার কথা। মহামারির পরে প্রকৃতিপ্রেম প্রবলভাবে স্পর্শ করে মানুষের মন। প্রকৃতির শক্তি নিয়ে ভাবতে বসে নতুন ভাবে। এই রং তাই সেই সময়ের সঙ্গে দারুণ সম্পর্কিত। ২০২৪ সালের রং পিচ ফাজের বয়ানে জানা যায়, এই রং মনের প্রশান্তিকে বোঝায়। একই সঙ্গে যত্ন, সহানুভূতিও প্রকাশ করে। মহামারির মরণ কামড়ে বিপর্যস্ত দুনিয়ার জন্য সে সময় সহমর্মিতা বড্ড বেশি জরুরি ছিল।
এরপর ২০২৫-এর গল্প। রং হিসেবে নির্বাচিত রং মোকা মুজ। এই শেডে অন্তর্নিহিত আছে স্বপ্ন আর লক্ষ্য। মনের খুব গভীরে ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে চলে মানুষ। সুন্দর দিনের আশায় বেঁচে থাকে। অসুখ, যুদ্ধ, বিবাদে অস্থির হয়েছে পৃথিবী। আর মানুষ দিন দিন অস্থিরতার মতো নেতিবাচকতা থেকে বিমুখ হয়েছে। আত্মার প্রশান্তি নিয়ে ভাবতে বসেছে। স্লো ফ্যাশনে বেড়েছে মনোযোগ। রংও সেখানে মুখ্য বিষয় হিসেবে বিবেচিত হবে, এটাই কি স্বাভাবিক নয়? প্যান্টন সেখানেই দেখিয়েছে মুনশিয়ানা। মোকা মুজকে বেছে নিয়ে।
মোকা মুজ ম্যাডনেস
১৯৭০ সালের আর্থ রেভল্যুশন থেকে ব্রাউন শেডের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করতে শুরু করেন ফ্যাশনিস্তারা। তারপরে যুগে যুগে বিভিন্নভাবে এটি ছিল আলোচনায়। ক্ল্যাসিক কালার বললে ভুল হবে না। এ বছর প্যান্টন সেই ব্রাউন শেড থেকেই কালার অব দ্য ইয়ার নির্ধারণ করেছে। পুস্তকীয় নাম মোকা মুজ। যদিও ফ্যাশন কোর অ্যাসথেটিক কোয়াইট লাক্সারির কালার এটি। কিন্তু প্যান্টন সূত্রে জানা যায় সাধারণত্ব, আভিজাত্য এবং ব্যক্তিস্বাধীনতা প্রকাশের ইচ্ছা—এই তিনের মিশেলকে ভাবনায় রেখে নির্বাচিত হয়েছে এই রং। এ বছরের সামার-স্প্রিং ফ্যাশন রানওয়েতে এই কালার নিয়ে মনে রাখার মতো কাজ করেছে প্রাদা, এম্পোরিও আরমানি, জে ডব্লিউ আন্ডারসন, মিউ মিউ। বোঝাই যাচ্ছে, বছরজুড়ে এই রং থাকবে আলোচনায়। বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হবে ফ্যাশনে।
ওর্থ গ্লোবাল স্টাইল নেটওয়ার্ক
স্টাইলবিষয়ক বহুজাতিক গবেষণা ও জরিপ প্রতিষ্ঠান ওর্থ গ্লোবাল স্টাইল নেটওয়ার্ক (ডব্লিউজিএসএন) এ বছরের রং হিসেবে নির্বাচিত করেছে ভায়োলেট ব্লু। এর অন্তর্নিহিত কারণ, এই রং প্রতিনিধিত্ব করে পরিবর্তনের। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যে আরও জানা যায় মহাশূন্যকে জানার, বোঝার যে আগ্রহ মানুষের মনের খুব গভীরে প্রোথিত আছে, তা-ও প্রকাশ করে এই রং।
প্যান্টন আর ওর্থ গ্লোবাল—দুই জায়গাতেই এ বছর আনকোরা দুই রঙের সঙ্গে পরিচিত হয় ফ্যাশন বিশ্ব। কোনোটাই তথাকথিত সেইফ কালার হিসেবে বিবেচিত হয় না ডিজাইনারদের কাছে; বরং নিরীক্ষার জন্য উপযুক্ত এই দুটি শেড। নতুনত্ব শতভাগ বলা চলে। তবে এটাও সত্যি, বাঁকবদলে ফ্যাশন ডিজাইনারদের ভাবনা আগের চেয়ে বেশ পরিবর্তিত হয়েছে। রং নিয়ে সাবধানতা নয়, বরং ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা দেখা যাচ্ছে; যা এবারের পুরো বছর রাঙিয়ে তুলতে ভূমিকা রাখবে বলে আঁচ করছেন ফ্যাশন ওয়ার্ল্ডের গুরুজনেরা।
ফ্যাশন ট্রেন্ড ফোরকাস্টিং সংস্থা ওর্থ গ্লোবাল স্টাইল নেটওয়ার্কের হেড অব কালার উরানগো সামবার বক্তব্য পাওয়া যায় প্রতিষ্ঠানটির অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে। সেখান থেকে জানা যায়, কী কী উপায়ে নির্দিষ্ট করা হয় বছরজুড়ে কোন কোন রং নিয়ে কাজ করবে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি। তিনি বলেন, বিশ্বজুড়ে মানুষ কী ভাবছে, কী চাচ্ছে; সেসব নিয়ে আলোচনা করে নেওয়া হয় সিদ্ধান্ত। উইমেন্স ওয়্যার, মেনজ ওয়্যার, তারুণ্যের চাহিদা, ক্রেতার ভাবনাসহ সবকিছুই থাকে রাডারে। পুরো দুনিয়ার বিভিন্ন জায়গা থেকে কালার কি ফোরকাস্টাররা মিলিত হন ডব্লিউজিএসএনের সভায়। অংশ নেন কর্মশালায়। তুলে ধরেন গবেষণার ফলাফল। সেখান থেকেই রংটি বেছে নেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়। সিজনাল কালার প্যালেট নির্বাচন করার সময়ে সতর্কতার সঙ্গে খেয়াল রাখা হয়, মাথা থেকে পা অব্দি স্টাইলিং কেমন হবে। সবকিছু ভেবে তবেই নেওয়া হয় সিদ্ধান্ত। পুরো প্রক্রিয়া কঠিন মনে হলেও একটি বেশ মজার তথ্য পাওয়া যায় সামবার বক্তব্য থেকে। তিনি বলেন, আলাদা করে একেকটি শেড নির্ধারণ করা হলেও কালার প্যালেটের সব রং সমন্বয় করা হয়। গ্লোবাল কালার অথরিটি প্যান্টন এ বছরের রং নির্ধারণ করেছে মোকা মুজ। ফ্যাশন বিশ্বের বিভিন্ন পণ্যে এই রং ব্যবহার করা হবে বোঝাই যাচ্ছে। কিন্তু শুধু এই একটি রংই কি রাঙাবে দুনিয়া? না, মোটেই তেমনটা নয়। আরও বেশ কিছু বর্ণচ্ছটার রোশনাই দেখবে জগৎ। বেশ কিছু নতুন রঙের সঙ্গে এ বছর পরিচয় হবে ফ্যাশনের মাধ্যমে।
 ফিউচার ডাস্ক: নীল আর বেগুনির মাঝামাঝি এক শেড; যা মনের টানাপোড়েন, দর্শন, ভাবনাকে প্রকাশ করে
 চকলেট ব্রাউন: টাইমলেস নিউট্রাল; কালো আর চারকোল গ্রে এর সহাবস্থান
 ডাস্টি ব্লু: প্রশান্তিদায়ক একটি রং; শান্তিময় পরিবেশকে মনে করিয়ে দেয়
 ট্রপিক্যাল ব্লু: গভীর সমুদ্রের নীল; যা চিরচেনা হলেও রহস্যাবৃত
 কোরাল: লালের এক উজ্জ্বল শেড; লাস্যময় এক রং
 রুবি: এটিও লালের একটি শেড; সতেজতা প্রস্ফুটিত হয় বেশ
 টিল: নীলের এক দারুণ শেড; শান্ত, সতেজতাকে প্রতিনিধিত্ব করে
 আকাশি: শীতল এক রং; সজীবতার শতভাগ
 ডিপ ব্রাউন: আরদি টোন; প্রকৃতির সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক প্রকাশ করে
 মিউটেড বেজ: এটিও প্রাকৃতিক রং; প্রকৃতির সঙ্গে হাতে হাত রেখে বসে থাকার মতো।
ফ্যাশন কোরের কীর্তি
২০১৯ এর শেষ থেকে ২০২১ পর্যন্ত স্থবিরতা গ্রাস করেছিল সবকিছুকে। বাদ যায়নি ফ্যাশন দুনিয়াও। এরপরে গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা শুরু হয় ধীরে ধীরে। ২০২৩ সালে ঘুরে দাঁড়ায় সবটা। ২০২৩ ও ২০২৪ সালে কোয়াইট লাক্সারির ছিল দোর্দণ্ড প্রতাপ। তার রাজত্বে রং নিয়ে হইচই হয়েছে কম। কারণ, এই ফ্যাশন অ্যাসথেটিক কোরের রেসিপিতে নিজের মতো করে কোনো উপাদান যোগ করার উপায় ছিল না। তাই কালো, আইভরি, নেভি ব্লুতে আটকে ছিলেন ফ্যাশনিস্তারা। সুইম ওয়্যার থেকে শু—সবেতেই দেখা গেছে এই তিনের জয়জয়কার। এর মাঝে উঁকিঝুঁকি দিয়ে কখনো কখনো জায়গা করে নিয়েছিল লাল আর বারগেন্ডি। এই ফ্যাশন কোরে ব্যবহৃত হয়েছে যেসব রং, সবই প্রকৃতিপ্রাণিত। বদলের সুর শোনা যাচ্ছে গেল বছরের শেষ থেকেই। স্প্রিং-সামার রানওয়ে ২০২৫ মিলিয়ে দেয় সেই অঙ্ক। কোয়াইট লাক্সারি যেন হয়ে যায় কোয়াইট কালারফুল। রানওয়েতে দেখা গেল সমুদ্র শীতল নীল, বেগুনি, সাগরের নিচের কোরালের লাল এবং সূর্যমুখীর উজ্জ্বল হলুদ। বোঝা গেল, রঙের ছটা থাকবে নতুন বছরের প্রথমার্ধজুড়ে। জাদুর কাঠি এবার কালার প্যালেট হাতে। ফ্যাশনের রাজত্বে রং এবার প্রতাপ দেখাবে। কোরের ক্রেজকে পিছে ফেলে।
সামার-স্প্রিং কালার ২৫
আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ক্যালেন্ডার মূলত দুই ভাগে বছরকে ভাগ করে। সামার-স্প্রিং এবং উইন্টার-ফল। রং পরিকল্পনাতেও দেখা যায় এই সূত্রের প্রভাব। প্যারিস ফ্যাশন উইকের রানওয়েতে পাউডার পিংক দেখা গেছে বেশির ভাগ লেবেলের কালেকশনে। এই সফট শেড স্নিগ্ধতা বিলায় উদার হয়ে। প্রকাশ ঘটায় নম্রতার। আবার এমারেল্ড গ্রিনের জেল্লাও নজর কেড়েছে দারুণভাবে। এই দুই রঙের অবস্থান থেকে একটি ব্যাপার পষ্ট, সেইফ শেডের খোঁজে আর চিন্তিত নন ডিজাইনাররা; বরং নিরীক্ষার পরিমাণ বেড়েছে বহু গুণে। বোত্তেগা ভেনেতা, জে ডব্লিউ অ্যান্ডারসন, প্রাদার মতো ব্র্যান্ডগুলো ভাইব্রেন্ট শেডের মধ্যে উজ্জ্বল নীল আর কমলার ব্যবহার করেছে বেশ। আবার আলিয়া, কেট, কোলে ব্যবহার করেছিল বাটার ইয়েলো আর মিন্ট। একসময় এক্সপেনসিভ লুক মানে ভরসা ছিল নিউট্রালে। এবারের রানওয়ে বুঝিয়েছে, এমারেল্ড গ্রিনেও হতে পারে লাক্সারিয়াস লুক। চকলেট ব্রাউন, ক্যামেল, নেভি ব্লু মোটেই আবশ্যক নয়। ভিক্টোরিয়া বেকহামের অ্যাওয়ে-স্প্রিং ২৫ শোতে দেখা গেছে এর বাস্তব শৈলী। মিউটেড শেডের থেকে বাইরে বেরিয়ে লাউডে মনোযোগ বাড়বে এমন আভাসও পাওয়া যায় সেখানে। ফলে ক্রিম আর আইভরির জায়গায় বর্তমানে নজর কাড়ছে বাটার ইয়েলো। মাখনের মতো নরম হলুদ গোলাপ যেন। পেয়ার আপে দেখা যাচ্ছে কালোর জৌলুশ। শিয়াপারেল্লি আর মিউ মিউর কালেকশনে ইলেকট্রিক শেড দেখা গেছে বেশ; বিশেষ করে নীল টপ ট্রেন্ডিং। অরেঞ্জকে বলা হয় স্টাইলিংয়ের জন্য সবচেয়ে জটিল রং। কিন্তু এটাও সত্য, এই কমলাতেই দুর্দান্ত স্টাইলিং সম্ভব। সেই অরেঞ্জ শেড থেকেই এবারে আলোচনায় আছে ট্রিকি শেড ট্যাঞ্জারিন।
কালার অব প্রি-ফল
প্রি-ফল কালেকশন ২০২৫ এ গোলাপি আর সবুজের শেডের দৌরাত্ম্য দেখা যাবে বলে ধারণা করা হয়েছে ফ্যাশন ফোরকাস্টে। শুধু চকচকে গোলাপি আর উজ্জ্বল সবুজ নয়; ডাস্টি পিংক আর এমারেল্ড নিয়েও হবে কাজ।
কালার অব উইন্টার
শীতের সময়ে সাধারণত গাঢ় রঙের রাজত্ব দেখে অভ্যস্ত আমরা। কিন্তু এবারে সেখানেও রয়েছে কালার ড্যান্স। হার্টবিট রেডের মতো উজ্জ্বল লাল, মোকা মুজ, এমারেল্ড গ্রিনও থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। যোগ হবে আইসি ব্লু ও ওয়ার্ম ট্যান।
ওয়ান কালার অন অর কম্বিনেশন?
২০২৫ সালে শুধু একটি রং ব্যবহারেই রাঙানো হবে একটি প্রোডাক্ট, এমন কোনো সূত্র নেই। কন্ট্রাস্টও থাকবে ইন ট্রেন্ড। এর পাশাপাশি অনুপ্রাণিত করবে অ্যাকুয়াটিক ইনফ্লুয়েন্সের মারমেইড কোর, ম্যাক্সিমালিজম, নিজস্বতা এবং স্বস্তি।
শেষ সূচনা
মিউচ্চা প্রাদা, বিশ্ববিখ্যাত ফ্যাশন ব্র্যান্ড প্রাদার প্রধান ডিজাইনারের ভাষ্যে রং নিয়ে একটি মজার বিষয় জানা যায়। তিনি তার ব্র্যান্ডের একটি প্রদর্শনীতে বলেছিলেন, ‘আমার মনে হয়, আমাদের রং নিয়ে পছন্দ-অপছন্দ প্রভাবিত হয় বাহ্যিক বিভিন্ন বিষয়ে। আমাদের অবচেতন মন সামাজিক সংকেতগুলোকে গ্রহণ করে এবং তার ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেয়। মনের ওপরে এখানে কোনো জোর চলে না। মনের ইচ্ছাই শতভাগ প্রকাশিত হয়। তাই রং জীবনের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।’ ২০২৫ সালের ফ্যাশন বাজারের ক্রেতারা নিজস্বতা নিয়ে আরও বেশি সরব হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ‘ইনডিভিজ্যুয়ালিজম’ বর্তমান সময়ের সম্ভাব্য ক্রেতাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার কারণে কালার প্যালেট এবারের শো স্টপার। কারণ, ইউনিক স্টাইল, ভিন্ন লুকের নিরীক্ষা, ট্রেন্ডের পূর্ণ ব্যাখ্যা—সবেতেই রং পালন করে মুখ্য ভূমিকা।

মডেল: তাজরিয়ান ও আহনাফ
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: সাফিয়া সাথী, সিকোসো, আইকনিক ফ্যাশন গ্যারেজ ও ক্লোদেন
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top