ফিচার I এবার ভিএআর
প্রযুক্তির উৎকর্ষের শেষ নেই। আসন্ন বিশ্বকাপেও সেটা দেখা যাবে। এবার থাকছে ভিএআর প্রযুক্তি। সবিস্তারে জানাচ্ছেন তৌহিদুল ইসলাম তুষার
শুরু হচ্ছে ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপের ২১তম আসর। তবে এবার ফুটবলপ্রেমীদের একটু বেশি সময় টিভির পর্দায় ধরে রাখবে। কারণ, এবারই প্রথম গোল, পেনান্টি বা খেলার যেকোনো ধরনের ত্রুটি বারবার চোখের সামনে তুলে ধরবে। ক্রিকেটে যেমন রয়েছে থার্ড আম্পায়ার, তেমনি ফুটবলে থার্ড রেফারি। যাকে বলা হচ্ছে ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি বা ভিএআর। বিশ্বকাপ ফুটবলে প্রথমবারের মতো যুক্ত হচ্ছে এই প্রযুক্তি। ফলে রেফারির চোখ ফাঁকি দিলেও তা ধরে ফেলবে ভিএআর।
কীভাবে কাজ করবে
ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি শুনে মনে হতে পারে, এটা হয়তো বা গুগল অ্যাসিস্ট্যান্টের মতো নিজেই সব করবে। আসলে তেমনটি নয়। আক্রমণ ভাগ, বলের গতিবিধি ও খেলোয়াড়দের পর্যবেক্ষণ করবে অ্যাসিস্ট্যান্ট ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি। যাদের বলা হচ্ছে এভিএআর১, এভিএআর২ ও এভিএআর৩। আর এই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করবে ফিফার উচ্চপদস্থ ম্যাচ অফিশিয়ালদের একটি টিম। এর সদস্য ১৩ জন। ফিফার প্রায় ৩৬ জন রেফারি এবং ৬৩ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির মধ্য থেকে এই টিম করা হয়েছে। ফিফার টিমটি অনেক দিন ধরে এই প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে আসছে। তারা মাঠ থেকে সরাসরি ধারণ করা খেলার খুঁটিনাটি খুব কম সময়ে বিশ্লেষণ করে ফলাফল জানিয়ে দিতে পারবেন। তাই মাঠে থাকা রেফারি আগের থেকে একটু বেশি সময় নেবেন যেকোনো ফলাফল জানাতে। আর কোনোটি যদি একেবারেই চোখ এড়িয়ে যায় বা বোঝা না যায়, তবে রিভিউ চাইতে পারবেন ক্রিকেট খেলার মতো। আর্জেন্টিনার সাবেক খেলোয়াড় ম্যারাডোনা জানান, এই প্রযুক্তি কিছুটা হলেও খেলোয়াড়দের অসন্তোষ কাটাবে। এখানে রেফারির ভুল ডিসিশন মেনে নেওয়ার সুযোগ থাকছে না। উল্টো তাকে চ্যালেঞ্জ করার সময় এসেছে। এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, এটা আরও আগে আনা উচিত ছিল।
ম্যাচ পরিবর্তনে ভিএআর
যেকোনো ত্রুটিপূর্ণ বা বিতর্কিত সিদ্ধান্তকে রিপ্লে করতে পারবে ভিএআর, যেখান থেকে সঠিক রেজাল্ট জানা যাবে। এর জন্য ক্যামেরার অ্যাঙ্গেলগুলো সেভাবে সাজানো হয়েছে। যখন ভিএআর ক্যামরার একটি অ্যাঙ্গেল বিশ্লেষণ করবে, তখন এভিএআর অন্য দুটি ক্যামেরা অ্যাঙ্গেলেরও তথ্য জানিয়ে দেবে। ফলে অনেক দ্রুত সঠিক ফল জানাতে পারবে ভিএআর। ভিএআর রেফারি প্রজেক্ট লিডার রবার্ট রোজেতি জানান, ম্যাচের পুরো অবস্থা সব ধরনের অ্যাঙ্গেলের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করবেন তৃতীয় রেফারি। মূলত ম্যাচ চেঞ্জিং অবস্থাগুলো সঠিকভাবে ফুটবলের নিয়ম মেনেই খেয়াল রাখা হবে। যেমন প্রযুক্তিটি প্রতিটি গোলকে সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করবে। ফলে অফসাইডগুলো নিখুঁতভাবে চোখে পড়বে। যেটা অনেক সময় মাঠে থাকা রেফারি ধরতে পারেন না। আর একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থাকে প্যানাল্টি শটগুলোতে। খেলোয়াড়দের ভিড়ে অনেক সময় রেফারি খেয়াল করতে পারেন না, ফাউল হয়েছিল না হয়নি। তৃতীয় আম্পায়ার নিখুঁতভাবে এর সমাধান দিতে পারবেন। খেলায় সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ রেড কার্ড। এটি অনেক সময় একজন ভালো মানের খেলোয়াড়কে মাঠ থেকে উঠিয়ে দিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। বেশির ভাগ সময়েই রেফারি বুঝতে পারেন না আসলে কী হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ভুল-বোঝাবুঝির সৃষ্টি হতে পারে। বদলে যেতে পারে ম্যাচের ফলাফল। তাই এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিও খেয়াল রাখবে ভিএআর। এভাবে হলুদ কার্ডও সঠিক খেলোয়াড়কে দেখাতে পারবেন রেফারি।
ভিএআর পরিচালনা
বিশ্বকাপ ফুটবল অনুষ্ঠিত হবে রাশিয়ার ১২টি মাঠে। প্রতিটি মাঠেই উপস্থিত থাকবে না ১৩ জনের এই টিম। ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির এই সাপোর্ট দেওয়া হবে মস্কোর ইন্টারন্যাশনাল ব্রডকাস্ট সেন্টার (আইবিসি) থেকে। ক্যামেরার মাধ্যমে প্রতিটি মাঠ থেকে অতিদ্রুত তথ্য পৌঁছে যাবে আইবিসিতে থাকা ভিডিও অপারেশন রুমে (ভিওআর)। ফাইবার লিংকড রেডিও প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রতিটি মাঠের একজন রেফারি যুক্ত থাকবেন ভিএআর টিমের সঙ্গে। তবে ফলাফল দিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করবে মাঠে থাকা ক্যামেরা। একেকটি খেলায় ৩৩টি অ্যাঙ্গেলের ব্রডকাস্ট ক্যামেরা অ্যাক্সেস নিতে পারবে ভিএআর। এগুলোর মধ্যে থাকছে ৮টি সুপার-স্লো মোশন ক্যামেরা এবং চারটি আল্ট্রা স্লো মোশন ক্যামেরা। এ ছাড়া দুটি অফসাইড ক্যামেরা, শুধু ভিএআর টিমের জন্য।
রিভিউ দেখবেন দর্শকেরা
মাঠে বা টিভি পর্দায় চোখ রাখা সব দর্শক দেখতে পারবেন এই ভিএআর পর্যালোচনা। টিমের পুরো কার্যক্রমের সারসংক্ষেপ টিভির পর্দায় এবং স্টেডিয়ামে থাকা ব্যাক স্ক্রিনে দেখানো হবে। ফলে দর্শকদের মনেও কোনো সংশয় থাকবে না। রিভিউ প্রদর্শনের জন্য প্রথমবারের মতো যুক্ত হচ্ছে ক্রিকেটের অনুরূপ হ্যান্ড সিগন্যাল। তখন কিছুটা সময় পাবেন রেফারি ফলাফল জানাতে। অবশ্য বাকি কাজ আর রেফারিকে করতে হবে না। স্টেডিয়ামের স্ক্রিনে ভেসে উঠবে ফলাফল।