ই-শপ I ধবল
আমাদের দেশে খাবারে ভেজাল নতুন নয়। নির্ভেজাল খাদ্য এবং এর উপাদান খুঁজতে কতই না ঝক্কি পোহাতে হয়! কিন্তু এক ক্লিকেই এখন পাওয়া যাচ্ছে বিশুদ্ধ খাবার। তা চলেও আসে বাড়ির দরজায়। এমনই সেবা দিচ্ছে ই-শপ ধবল।
২০১৫ সালের মে মাসে খাঁটি দুধ হোম ডেলিভারি দেওয়ার মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে ধবল। ব্যবসায়িক মনোভাবের মেয়ে কান্তার চাকরির ইচ্ছা ছিল না কখনোই। তবে এটাই তার প্রথম ব্যবসা নয়। ২০০৮ সাল থেকে তিন বন্ধু মিলে একটা আইটি প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন। সেখানকার অ্যাডমিন, ফিন্যান্স আর অনলাইন কমিউনিকেশনের দায়িত্বে আছেন তিনি। সুতরাং এই ব্যবসার শুরু যে হুট করেই, তা বলা যায় না। তিনি জানিয়েছেন, এর শুরু কিছুটা পাগলামি থেকেই। কান্তার শাশুড়ি একবার অনেক পরিমাণে গরুর দুধ নিয়ে আসেন টাঙ্গাইল থেকে। সেই খাঁটি দুধের স্বাদে মুগ্ধ কান্তা ঠিক করলেন, প্রোডাক্টটা হোম ডেলিভারি দেবেন। যেহেতু তিনি ইতিমধ্যেই একটা আইটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত, অনলাইন প্ল্যাটফর্মটা তার জন্য সহজ ছিল। গরুর খাঁটি দুধ সরাসরি গ্রাহকের দরজায় পৌঁছে দেওয়ার একটা অনলাইন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেন ধবলের উদ্যোক্তা কান্তা।সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা পেজ খুলতেই অভাবনীয় সাড়া পান তিনি। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। মাঝে মাঝে নিজেই চলে যেতেন টাঙ্গাইলে গরুর দুধ আনতে।
এরপর খাঁটি ঘি, মধু, তেল যোগ হলো প্রোডাক্টের তালিকায়। গ্রাহকদের চাহিদা দেখে এরপর শুরু করলেন ঘরে তৈরি আচার সরবরাহ। প্রায় সব রকমের আচারই পাওয়া যায় ধবলে। গুড়-বরইয়ের আচার, তেঁতুলের আচার, খুরমা-খেজুরের আচার, চালতার আচার, জলপাইয়ের আচার, কাঁচা মরিচের কিংবা বোম্বাই মরিচের আচার— আরও কত কী! সব আচার কান্তা নিজেই তৈরি করেন। এরপর লক্ষ করলেন, ঘরে তৈরি পিঠারও একটা বড় চাহিদা রয়েছে। তাই ধবলের প্রোডাক্ট তালিকায় যোগ হলো পিঠা এবং দারুণ সফল হলো সেটা। একে একে মসলা স্ন্যাকস ইত্যাদি নিয়ে এলেন। অচিরেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যোগ করার পরিকল্পনা আছে ধবলের। বর্তমানে এখানে ১২ জন মহিলা কর্মী নিয়োজিত। সঙ্গে আছেন ৩ জন ডেলিভারি ম্যান। ধবলে পণ্যের দামের তারতম্য রয়েছে ধরন অনুযায়ী। মসলার দাম যেমন শুরু হয়েছে ১৫-২০ টাকায়, তেমনি রয়েছে ১২০ টাকার ঘি এবং ২৫০০ টাকার কালোজিরার তেল। এ ছাড়া স্ন্যাকস, পিঠা— এজাতীয় খাবারগুলোর দাম বাজারের কাঁচামালের মূল্যের ওপর নির্ভর করে। স্ন্যাকসের মধ্যে চিকেন পিঠা, চিকেন টিকিয়া, ভেজিটেবল সমুচা— এমন অনেক আইটেম আছে যা ফ্রোজেন প্রোডাক্ট হিসেবে বিক্রি হয়। বিভিন্ন উপলক্ষ অনুযায়ী নিত্যনতুন অনেক প্রোডাক্টের সমারোহ দেখা যায়। বিভিন্ন প্যাকেজ অফারও থাকে নানা সময়। যেমন শবে বরাতে হালুয়া, বৈশাখে নানা রকমের মসলার আর তেলের প্যাকেজ ইত্যাদি। ধবলের পেজ লিঙ্ক: https://www.facebook.com/dhabolbd/
কান্তার পরিকল্পনা আছে একটা ই-কমার্স শপ তৈরি করার এবং কাস্টমার সার্ভিসের মান আরও উন্নত করার। ব্যবসার পরিসর আরও বড় করার আর দেশব্যাপী ধবলের আউটলেট তৈরির ইচ্ছা থাকলেও এজাতীয় ব্যবসায় মূলধন একটা বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন তিনি। তবে একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি। শিক্ষাজীবন থেকেই কান্তার ইচ্ছা ছিল উদ্যোক্তা হবার, যেন সরাসরি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন। তিনি জানান, স্বল্প পরিসরে হলেও তার স্বপ্নটা সত্যি হচ্ছে। প্রবল আত্মবিশ্বাস এবং লেগে থাকার ধৈর্যকে পুঁজি করে তিনি ধবলকে এত দূর নিয়ে আসতে পেরেছেন।
ছবি: ধবল