ফিচার I ফিজপ্যাট্রিক ফর্মুলা
সূর্যরশ্মির প্রভাব দেখে ত্বকের ধরন শনাক্তের অভিনব উপায়। শতভাগ বিজ্ঞানসম্মত। সুরক্ষার পথও দেখানো যায়
ফিজপ্যাট্রিক স্কিন ফটোটাইপ হিসেবেও পরিচিত এ পদ্ধতি। ১৯৭৫ সালে উদ্ভাবিত। মূলত ত্বকের সঙ্গে মিলিয়ে জুতসই শেডের ফাউন্ডেশন কিংবা কনসিলার বেছে নেওয়ার জন্য নয় ফিজপ্যাট্রিক পদ্ধতি। এর মাধ্যমে শনাক্ত করা যায় ত্বকের ওপর সূর্যের প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া। ফলে সূর্যালোকে বের হওয়ার আগে পরিপূর্ণ সতর্কতা নেওয়া যায় সহজে। সঠিক উপকরণ এবং পণ্য ব্যবহারের কার্যকর উপায়ে।
ফিজপ্যাট্রিক স্কিন টাইপ নির্ণয়ে শুধু ত্বক নয়, চুল, চোখের রঙও গুরুত্বপূর্ণ। সূর্যের আলোয় মেলানিনের উপস্থিতির হেরফের বুঝে সাধারণত সংখ্যা দিয়ে চিহ্নিত করা হয় ত্বকের ধরন। এ ক্ষেত্রে ছয় ভাগে বিভক্ত করা যায় ত্বককে।
স্কিন টাইপ ওয়ান
ফ্যাকাশে ফর্সা ত্বক, হালকা নীল, ধূসর কিংবা সবুজ চোখ আর প্রাকৃতিকভাবে সোনালি অথবা লালচে চুল যাদের, তারাই এ ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত। এ ধরনের ত্বক সহজেই সূর্যরশ্মিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রোদে এটি সাধারণত তামাটে হয় না। সরাসরি পুড়ে যায়। দেখায় রক্তিম আর চামড়া উঠতে শুরু করে। দেখা দেয় মেছতা আর ফ্রেকেলসের মতো সমস্যা। অকালে ত্বক বুড়িয়ে যেতে শুরু করে। মেলানোমা এবং স্কিন ক্যানসারের আশঙ্কাও রয়েছে। তাই সানস্ক্রিন মাস্ট। ন্যূনতম এসপিএফ ৩০ কিংবা তার বেশি হলে ভালো হয়। সূর্যরশ্মি এড়িয়ে চলতে হবে। অন্তত ছায়ায় থাকা জরুরি। মাথায় হ্যাট আর চোখে ইউভি ব্লকিং সানগ্লাস চাই। আরও ভালো হয়, যদি ইউপিএফ রেটিং দেওয়া সান প্রটেক্টিভ পোশাক পরে নেওয়া যায়। মাসে একবার ত্বক পরীক্ষা খুব জরুরি।
স্কিন টাইপ টু
স্কিন টাইপ ওয়ানের মতোই। তবে একটু কম ফর্সা। চোখের রঙটাও নীল, ধূসর আর সবুজের মধ্যেই। চুল লালচে হয় না, কিন্তু সোনালি হয়। সাধারণত রোদে গেলে পুড়ে যায় ত্বক। উঠতে শুরু করে চামড়া। এ ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত খুব কম ত্বকই সূর্যরশ্মিতে তামাটে হয়। তবে দেখা দেয় মেছতা। তাই বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন। রোদে বেরোনোর আগে ন্যূনতম এসপিএফ ৩০ যুক্ত সানস্ক্রিন মাখতে হবে ত্বকে। যতটা সম্ভব সূর্যরশ্মি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা চাই। ছায়াতেই থাকা উচিত। চওড়া ব্রিমের হ্যাট আর ইউভি প্রটেকশনযুক্ত রোদচশমা ব্যবহার করতে হবে। প্রতি মাসে তো বটেই, বছরে একবার ত্বক পরীক্ষা করা জরুরি।
স্কিন টাইপ থ্রি
ফর্সা থেকে বেইজ হয়ে থাকে এ ধরনের ত্বক। থাকে গোল্ডেন আন্ডারটোন। সঙ্গে প্রাকৃতিকভাবে হ্যাজেল অথবা বাদামি রঙের চোখ আর ন্যাচারালি ডার্ক ব্লন্ড (সোনালি) অথবা হালকা বাদামি চুল। সাধারণত রোদে গেলে এ ক্যাটাগরির ত্বকে জ্বালাপোড়া হতে পারে। তামাটেও হয়ে যেতে পারে। মেছতার দাগও অস্বাভাবিক নয়। রোদে গেলে সাধারণত মেলানিন অ্যাকটিভ হয়ে ত্বক কালো হতে শুরু করে। তাই সতর্কতা প্রয়োজন। শুরুতেই দরকার সানস্ক্রিন। ন্যূনতম এসপিএফ ১৫ যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে রোদে বেরোনোর আগে। সঙ্গে থাকা চাই হ্যাট আর সানগ্লাস।
স্কিন টাইপ ফোর
প্রাকৃতিকভাবেই অলিভ অথবা গম রঙা হয়ে থাকে এ ক্যাটাগরির ত্বক। সঙ্গে গাঢ় বাদামি চোখ আর চুলও এর বৈশিষ্ট্য। রোদে সাধারণত পুড়ে যাওয়ার শঙ্কা না থাকলেও ত্বক তামাটে হয়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকে। থাকে হাইপার পিগমেন্টেশনের আশঙ্কা। তাই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। অন্তত এসপিএফ ১৫ যুক্ত। বাড়তি সতর্কতায় প্রয়োজনে ব্যবহার করা যেতে পারে টুপি আর রোদচশমা।
স্কিন টাইপ ফাইভ
বাদামি ত্বক, গাঢ় বাদামি চোখ আর কালো চুলের ব্যক্তিদের এই ভাগে ফেলা যায়। রোদে তামাটে হয়ে গেলেও, পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কা এই ত্বকে একদমই থাকে না। মেছতাও পড়ে না সহজে। তাই সূর্য থেকে সুরক্ষা তুলনামূলকভাবে সহজ। প্রয়োজন হবে এসপিএফ ১৫ যুক্ত সানস্ক্রিন। সঙ্গে ছাতা আর সানগ্লাস হলেই চলবে। তবে রোদে তামাটে হয়ে যাওয়া যাদের অপছন্দ, তারা সূর্যরশ্মি এড়িয়ে চলুন যতটা সম্ভব। এমনিতেই এ ধরনের ত্বকের রঙ চাপা থাকে, ফলে রোদে পুড়ে আরও কালো হয়ে যেতে পারে কম সময়ে।
স্কিন টাইপ সিক্স
যারা একদম কালো, তাদের এই ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করা যায়। মাত্রাতিরিক্ত মেলানিন এর প্রধান কারণ। সঙ্গে কালো চোখ আর চুল এ ধরনের ত্বকের প্রধান বৈশিষ্ট্য। পুড়ে যায় না, মেছতাও হয় না। কিন্তু রোদে আরও কালো হয়ে যায় ত্বক। সেটা না চাইলে সূর্যরশ্মি থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখাই একমাত্র উপায়।
জাহেরা শিরীন
মডেল: আফরোজ
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন