ট্রেন্ড I সামার বিউটি ২০১৯
সিজনের সেরা সাজের সাজেশন। গরমের মাত্রা বুঝে। স্বাভাবিক সৌন্দর্যকে অন্যতর করে তোলার জন্য। উৎস আন্তর্জাতিক র্যাম্প, রেড কার্পেট আর বিশেষজ্ঞদের আলাপ
বসন্ত পেরিয়ে সময় এখন গনগনে গরম বাতাস আর তেতিয়ে ওঠা সূর্যদিনের। সঙ্গে অসহ্য গরম আর ঘাম। রোদের কড়া চোখরাঙানিতে মেকআপও যখন বিপন্ন, তখনই বুঝতে হবে সৌন্দর্যবিশ্বের সমকালীন প্রবণতায় চোখ ফেরার সময় এসেছে। স্প্রিং বিউটি ট্রেন্ডকে হটিয়ে সৌন্দর্যভাবনা এখন সামার প্রুফ। গরম এবং এর পারিপার্শ্বিকতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সুন্দর দেখানোর জন্য।
সামার সান কিসড
রোদের কড়া চোখরাঙানি যখন এড়িয়ে যাওয়া মুশকিল, তখন একে সঙ্গী করেই তৈরি হচ্ছে সামার লুক। ফেক ট্যান অর্থাৎ রোদে পুড়ে তামাটে হয়ে যাওয়া স্পষ্ট হয়ে উঠছে মুখত্বকে। সোনামাখা উজ্জ্বলতাসমেত। এর জন্য সাধারণত চেহারার যেসব অংশে সূর্য সহজে স্পর্শিত হয় অর্থাৎ হাই পয়েন্টগুলোতে বুলিয়ে নেওয়া হয় ব্রোঞ্জার। ত্বকে বাড়তি উষ্ণতা তৈরির লক্ষ্যে। বেজ মেকআপ সেরে ব্রোঞ্জার মাখানোর শুরুটা হয় কপালের উঁচু অংশে। তারপর গালের উঁচু হাড় আর নাকের উঁচু অংশটায় বুলিয়ে নেওয়া হয়। অনেকটা ‘W’ এর মতো করে। এরপর গালে মাখাতে হবে কোরাল রঙা ব্লাশ। হালকা হাতে। সাজে বাড়তি চমক যোগ করতে হালকা পিচ ঘেঁষা আইশ্যাডো মেখে নেওয়া যেতে পারে চোখের পাতাজুড়ে। একদম আইব্রাওয়ের নিচ অব্দি। ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নেওয়া চাই। তারপর দিতে হবে কয়েক কোট মাসকারা। ব্যস! তৈরি ব্রোঞ্জ গডেস লুক।
গেট গ্লসি
গরমের দিনে চেহারায় মন ভালো করে দেওয়া রঙের ছোঁয়া আনতে অনায়াসেই ব্যবহৃত হতে পারে গ্লসি প্যাস্টেল শেডগুলো। তবে গ্লস ব্যবহারের আগে প্রস্তুতি প্রয়োজন। যেমন চোখের পাতায় গ্লসি শ্যাডো ব্যবহার করার আগে প্রাইমার মাস্ট। তা-ও হতে হবে ক্রিম বেসড প্রাইমার। এর উপর গ্লসি আইশ্যাডো বসতে যেমন সুবিধা, তেমনি এর উজ্জ্বলতার জাদুও সুরক্ষিত থাকে দীর্ঘ সময়। আর হাতের কাছে যদি গ্লসি আইশ্যাডো না থাকে, তাতেও খুব বেশি অসুবিধা নেই। সাধারণ শ্যাডোতে গ্লসি লুক আনতে চোখের পাতায় বুলিয়ে নেওয়া যেতে পারে লিপবাম অথবা দেওয়া যায় পেট্রোলিয়াম জেলির প্রলেপ। আর ঠোঁটে গ্লসি লিপস্টিকের সংগতে তো আরও আকর্ষণীয় দেখাবে সাজ। গরমের দিন আর রাত তো বটেই, শান্ত দুপুরও মুহূর্তে হয়ে উঠবে চনমনে তরতাজা।
ডাম্পলিং স্কিন
নরম, পুষ্ট আর আর্দ্র— এমনভাবেই একে বিশেষায়িত করছেন বিশেষজ্ঞ মেকআপ আর্টিস্টরা। যা দেখলেই চেখে দেখার অনুভূতি জাগবে। মূলত ডাবল ডিউই ইফেক্ট তৈরি করা হয় এই মেকআপে। যেন বাড়তি শিশিরসিক্ততা তৈরি হয় চেহারাজুড়ে। গরমে যা সাজে জোগাবে সতেজতা। এ জন্য দরকার বাড়তি প্রস্তুতি। ত্বককে তৈরি করে নিতে হবে প্রথমে। ত্বকে ভাপ দিয়ে পরিষ্কার করে নিয়ে, পছন্দসই কোনো মাস্ক ব্যবহারের পর যদি ফেস রোলার দিয়ে একটু ম্যাসাজ করে নেওয়া যায়, তাতেই চলবে। তারপর মেকআপ বেজ তৈরির পালা। লাইটওয়েট, লুমিনাস পার্টিকেল দেওয়া ফাউন্ডেশন আর কনসিলার ব্যবহারে তৈরি করতে হবে দাগছোপমুক্ত উজ্জ্বল ত্বকের ক্যানভাস। তারপর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ— হাইলাইটারের ব্যবহার। ক্রিমি, শিশিরসিক্ত ভাব তৈরি করা হাইলাইটারগুলো এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে উপযুক্ত। মাখতে হবে ‘c’ এর শেপে। কপালের দুধার থেকে গালের উঁচু হাড়ের অংশ অব্দি। দেখবেন উজ্জ্বলতা ঠিকরে বেরোচ্ছে ত্বক থেকে।
বিটেন বাট বিউটিফুল
২০০০ সালের গোড়ার দিকে লিপস্টিক পরার এই ট্রেন্ড জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল সৌন্দর্যবিশ্বে। এবার আবার তা ফিরে এসেছে। কিন্তু নতুনভাবে। কোরিয়াকরণ সেরে। ফলে জাস্ট বিটেন লিপস লুক দিয়ে যেমন দুর্দান্ত হাই ইমপ্যাক্ট লুক তৈরি করা যায়, তেমনি একেবারে আন্ডার স্টেটেড মেকআপ লুকেও এর জুড়ি মেলা ভার। এভাবে সাজাতে প্রথমেই সুগার স্ক্রাব দিয়ে ঠোঁট এক্সফোলিয়েট করে নিতে হবে। তারপর লিপবাম কিছুক্ষণ দিয়ে রেখে মুছে নিতে হবে। কনসিলার দিয়ে ঠোঁটের চারপাশের অংশ ঢেকে দিতে হবে প্রথমে। এরপর ঠোঁটের ঠিক মাঝের অংশে লিপস্টিক মাখিয়ে আউটওয়ার্ক স্ট্রোকে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে বা ব্রাশের সাহায্যে পুরোটা এমনভাবে মিশিয়ে নেওয়া চাই, যেন ফ্লেক ফ্রি গ্রেডিয়েন্ট লুক তৈরি হয়।
আই অ্যামেজিং
এবারের গরমের আইমেকআপ অন্য বছরগুলোর থেকে আলাদা। আরও সাহসী, আগের চেয়ে বেশি পরীক্ষাপ্রাণিত। জলরঙের কথাই ধরা যাক। ক্যানভাস ছেড়ে ফুটে উঠবে চোখের পাতায়। সূর্যাস্তের স্তিমিত রূপ থেকে এলোমেলো রেখা— চোখের পাতাই যেন হয়ে উঠবে শিল্পীর মাস্টারপিস। যাদের উজ্জ্বল সব রঙ পছন্দ, তাদের জন্যও থাকছে সুখবর। খুব সহজে ট্রেন্ড লিস্ট ছাড়ছে না কালারফুল আইশ্যাডো। পিঙ্ক, ডিপ গ্রিন, ব্রাইট ইয়েলো এমনকি ডার্ক রেড আইশ্যাডোও যেন থাকে সামার বিউটি বক্সে। এমনকি চোখধাঁধানো নিয়ন রঙগুলোও যুক্ত হতে পারে। এত সাহসী উজ্জ্বলতায় যারা স্বচ্ছন্দ নন, তাদের জন্যও থাকছে অপশন। টপ রঙা আইশ্যাডোতে অনেকটাই স্বাভাবিক সুন্দর দেখায় চোখের সাজ। যোগ করে বাড়তি আবেদন। কিন্তু কোমলতার ব্যাঘাত না ঘটিয়ে। ব্যবহৃত হতে পারে প্যাস্টেল পিচ, ব্লু আর ইয়েলোর মতো নরম রঙগুলোও। চেহারার নমনীয়তাকে উসকে দিতে। উৎসবে উজ্জ্বল দেখাতে সোনালির সংগতই যথেষ্ট। করা যেতে পারে স্মোকি আইজই। কিন্তু সনাতন রঙগুলোতে নয়। কফি আর অ্যামেথিস্টে তৈরি হোক স্মোকির অন্যতর লুক।
জাহেরা শিরীন
মডেল: নিকি
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন