ফিচার I বর্ষাবদল
গনগনে গরম থেকে বর্ষার ঘনঘটা। প্রকৃতির এই ট্রানজিশনে ত্বকচর্চার উপকরণেও চাই বদল। সাজের উপাদান তো পাল্টাতে হবেই
বর্ষার মৌসুমও বদলে গেছে। এই ঝরছে বৃষ্টি তো পর মুহূর্তেই তেতিয়ে উঠছে রোদ। প্রকৃতির এই মুড সুয়িংয়ের প্রভাবে ত্বক, চুল আর মেকআপের অবস্থা বেহাল। তার ওপর গরমে মেকআপের উপাদানগুলো প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এ সময় তাই দরকার অদলবদল। সহজ এবং সামান্য। রেইন রেডি হয়ে ওঠার জন্য।
ক্রিমের বদলে ফোম
গরমে ব্যবহৃত ক্রিম ক্লিনজারের বদল দরকার এখনই। কারণ, বর্ষায় ফোমিং ক্লিনজার বেশি কার্যকর। ফোমিং ক্লিনজারে ক্রিমি কাউন্টারপার্টের বদলে ভিন্ন ধরনের উপাদান থাকে; যা ঘাম, তেল আর ওয়াটারপ্রুফ প্রডাক্ট দূর করতে বেশি সক্ষম। সব ধরনের ত্বকের জন্য মিলবে ফোমিং ক্লিনজার। কিন্তু শুষ্ক ত্বক যাদের, তারা একটু সাবধান। তেল অথবা ইমোলিয়েন্টযুক্ত ময়শ্চারাইজিং ফোমিং ফেসওয়াশ তাদের জন্য বেশি জুতসই।
জেলই জরুরি
বর্ষায় প্রয়োজন লাইট ওয়েট অর্থাৎ হালকা ওজনের ফেস ক্রিম। যা ত্বককে চটচটে আঠালো করে তুলবে না। তাই হেভি ক্রিম বেসড ফেস ক্রিমের বদলে বর্ষায় বেছে নেওয়া চাই জেল বেসড ফর্মুলারগুলো। এ ধরনের ক্রিম আর লোশন ত্বকে জোগাবে জরুরি আর্দ্রতা। বাড়তি তেলে ভাব তৈরি না করেই। বর্ষায় যা বেশ স্বস্তির ব্যাপার। ত্বক যাদের বেশি শুষ্ক, তাদের জেল বেসড ক্রিমে যেন হায়ালুরনিক অ্যাসিড থাকে। এই একটি উপাদানই ত্বকের শুষ্কতা তো সারায়ই, খড়খড়ে ড্রাই প্যাচও রোধ করে।
শ্যাম্পুতে সতর্কতা
বর্ষার পানি চুলের আর্দ্রতা কেড়ে নেয়। ফলাফল শুষ্ক, রুক্ষ আর বিবর্ণ চুল। সে ক্ষেত্রে সাধারণ শ্যাম্পু ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ, এগুলোতে সালফেটসহ নানা ধরনের কেমিক্যাল থাকে। যা বর্ষায় চুলের জন্য ক্ষতিকর। সমাধান? একদম সহজ। বর্ষায় শ্যাম্পু কেনার সময় উপাদান তালিকা যাচাই করে নেওয়া চাই। বেছে নিতে হবে সালফেটবিহীনগুলো। যা আলতোভাবে, কিন্তু কার্যকর উপায়ে পরিষ্কার করবে চুল। করে তুলবে কোমল, মসৃণ। মাথার ত্বকেরও ক্ষতি করবে না।
ফাউন্ডেশন ফেলে টিন্ট
ফাউন্ডেশন তুলে রাখার দিন এখন। অন্তত অনার্দ্র দিনগুলো ফিরে আসা পর্যন্ত। সময় এখন এমন মেকআপ ব্যবহারের, যা মাখার পর ত্বক থেকে গলে পড়তে শুরু করবে না। থাকবে নিখুঁত, ভাঁজমুক্ত। লোমকূপগুলো বন্ধ না করে ত্বককে নিঃশ্বাস নিতে দেবে স্বাভাবিকভাবে। বি বি ক্রিম কিংবা টিন্টেড ময়শ্চারাইজার এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর। লাইট কাভারেজ দেওয়ার পাশাপাশি এগুলো ত্বককে করে তুলবে স্বাভাবিক সুন্দর। শিশিরসিক্ত। আর এসপিএফ যুক্ত হলে তো সোনায় সোহাগা। ব্যবহার করা যেতে পারে কুশন ফাউন্ডেশনও। তবে হাইড্রেটিং প্রোপার্টিসমেত হলে ভালো।
ব্লাশঅনের বদলে
বর্ষায় ব্লাশঅন ঘেঁটে যাওয়া খুব সাধারণ সমস্যা। সে ক্ষেত্রে চিক টিন্ট সেরা সমাধান। ত্বকে মাখনের মতো মসৃণভাবে মেখে নেওয়া যায়। সহজেই শুষে নেয় ত্বক। তাতে উজ্জ্বল প্রাকৃতিক আভা ফুটে ওঠে নিমেষেই। শুধু তা-ই নয়, স্যাঁতসেঁতে বর্ষাদিনেও ঘাম আর আর্দ্রতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ত্বকে টিকে থাকে দীর্ঘ সময়। কোনো টাচ আপ ছাড়াই।
গ্লস নয় ম্যাট
এই মৌসুমের ভ্যাপসা গরমে গ্লস ঘেঁটে নষ্ট হয়ে যায়। তা ছাড়া ঝড়-বাদলার দিনে চুল চট করে এসে পড়ে ঠোঁটের গ্লসে। সে আরেক বিরক্তির ব্যাপার। তাই গ্লসের বদলে ম্যাট লিপ টিন্ট মেখে নিন ঠোঁটে। এগুলো ফেটে যায় না, টিকে থাকে দীর্ঘ সময়, নিখুঁতভাবে। তবে ব্যবহারের আগে ঠোঁট স্ক্রাব করে নিতে ভুলবেন না। এতে ঠোঁটের মৃতকোষগুলো ঝরে পড়বে। ম্যাট টিন্ট সুন্দরভাবে বসবে। নিখুঁতভাবে টিকে থাকবে দীর্ঘ সময়।
ওয়াটারপ্রুফ ওয়ান্ডার
বছরের অন্যান্য মৌসুমে সাধারণ মেকআপে কাজ চলে গেলেও বর্ষা কিন্তু ব্যতিক্রম। এ সময় চাই ওয়াটারপ্রুফ ফর্মুলায় তৈরি বিশেষ ধরনের মেকআপ। মাসকারা, আইলাইনার আর আইশ্যাডো পানিরোধী হলেই চলবে। তৈরি হবে পারফেক্ট মনসুন মেকআপ। তবে এগুলো ব্যবহারের আগে প্রাইমার মাখতে ভোলা যাবে না। এটা ত্বকে মেকআপের স্থায়িত্ব বাড়ায়।
মনসুনপ্রুফ মেকআপ ব্যাগ
মেকআপের উপকরণগুলো রাখার ব্যাগও হওয়া চাই মনসুনপ্রুফ। বৃষ্টি আর আর্দ্রতা থেকে বাঁচাতে। কারণ, এ দুটোই মেকআপের বড় দুশমন। ওয়াটারপ্রুফ জিপড পাউচ এ ক্ষেত্রে দারুণ সমাধান। ব্যবহার আর বহনে সুবিধাজনক।
মনে রাখা চাই
অয়েল ব্লটিং শিট সঙ্গে রাখা চাই বর্ষায়। চটজলদি টাচ আপের জন্য
ওয়াটারপ্রুফ মেকআপে সব সময় চাই ব্রাশের ব্যবহার। এতে করে নিখুঁত, সুন্দর ফিনিশিং পাওয়া যায়
মেকআপ পরিপূর্ণভাবে তোলার জন্য দরকার অয়েল বেসড রিমুভার।
জাহেরা শিরীন
মডেল: আনিকা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন