ফিচার I স্টে সাসটেইনেবল
ত্বক পরিচর্যা চলুক পরিবেশের ক্ষতি না করে। সহজ সব উপায় ও বিকল্পে তা সম্ভব
সাসটেইনেবল, জিরো ওয়েস্ট— শব্দগুলো এখন দারুণ জনপ্রিয় বিশ্বজুড়ে। সৌন্দর্যবিশ্বও এর বাইরে নয়। ফলে বাঘা বাঘা বিউটি ব্র্যান্ড তৈরি করছে প্রডাক্টের সাসটেইনেবল রেঞ্জ। বিউটি স্টোরগুলোতে চোখে পড়ছে এ ধরনের পণ্যের আলাদা কর্নার। সৌন্দর্যসচেতনদের মধ্যেও এগুলোর জনপ্রিয়তা বাড়ছে হু হু করে। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, শুধু ত্বকচর্চা কিংবা মেকআপের পণ্য কিনেই সন্তুষ্ট থাকছেন না তারা; বরং তৈরি করে নিচ্ছেন পুরোদস্তুর পরিবেশবান্ধব বিউটি রুটিন। তো আপনি পিছিয়ে রইবেন কেন?
রাইট রিসাইকেলিং
ব্র্যান্ড জনসন অ্যান্ড জনসনের সমীক্ষামতে, শুধু আমেরিকাতেই বছরে ৫৫২ মিলিয়ন শ্যাম্পুর বোতল বর্জ্যে পরিণত হয়। তাহলে পুরো বিশ্বে এর ব্যাপকতা চিন্তা করে চোখ কপালে উঠতেই পারে! আর কেবল শ্যাম্পুই বোতলে ভরা হয় না, ত্বকযত্নের সিরাম থেকে শুরু করে ক্লিনজার, ময়শ্চারাইজার— সবকিছুর জন্যই প্রয়োজন কনটেইনার। আর ব্যবহারের পর এগুলোই যখন বর্জ্যে পরিণত হয়, তখনই বাধে বিপত্তি। বাড়ে বিপদ। তবে মুক্তির উপায় আছে। রিসাইকেলিং। ব্যবহারের পর বোতলগুলো ফেলে না দিয়ে তা থেকেই যদি পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী কিছু তৈরি করে নেওয়া যায়, মন্দ কী! মেকআপ ব্রাশ হোল্ডার থেকে মেকআপ অর্গানাইজার হিসেবে দিব্যি চলতে পারে এগুলো। এ ছাড়া যেকোনো ধরনের সৌন্দর্যপণ্য কেনার আগে রিফিলেবলগুলো কেনার চেষ্টা করা উচিত। এতেও বর্জ্য পরিকল্পনা সহজ হবে। রিসাইকেলেবল উপাদানে তৈরি সাধারণ বোতলের সৌন্দর্যপণ্য কেনা গেলে আরও ভালো।
মোড়ক মুক্ত
মিনিমাল প্যাকেজিং অথবা একদম মোড়কমুক্ত পণ্য ব্যবহারের চেষ্টা করা উচিত। এখন অনেক ব্র্যান্ডই সাবান ও শ্যাম্পুর প্যাকেজিংয়ে ব্যবহার করছে রিসাইকেলেবল পেপার। সঙ্গে জিরো ওয়েস্ট বিউটি ব্র্যান্ডগুলো তো মোড়ক ছাড়াই দেদার বিক্রি করছে সৌন্দর্যপণ্য। কারণ, অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে বার আকারে তৈরি এসব শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, ক্লিনজার আর সিরামের সংরক্ষণে আলাদা কোনো মোড়কেরই প্রয়োজন পড়ে না।
রিইউজেবল রেডি
সৌন্দর্যচর্চায় এমন পণ্য চাই, যা পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী। এর সবচেয়ে চমৎকার উদাহরণ হচ্ছে রিইউজেবল কটন প্যাড। কটন আর টেরি ক্লথে তৈরি এসব ইকো-ফ্রেন্ডলি প্যাড সহজে সরায় ত্বকের সব ধরনের মেকআপ। আর ব্যবহারের পর প্যাডগুলো ধুয়ে নিলেই আবার নতুনের মতো হয়ে ওঠে। হয়ে ওঠে ব্যবহারের উপযোগী। রিইউজেবল বিউটি প্রডাক্ট হিসেবে মাসকারা ওয়ান্ডও চমৎকার। মাসকারা শেষ হয়ে যাবার পর ফেলে না দিয়ে এগুলো ব্রাও ব্রাশ হিসেবে ব্যবহার করা যায় অনায়াসে।
মাল্টিপারপাস ম্যাজিক
একের ভেতর দুই বা তিন— এমন গুণসম্পন্ন পণ্য কিন্তু সাসটেইনেবল বিউটি রুটিনের জন্য দারুণ। এতে কম পণ্য ব্যবহারে সেরে নেওয়া যায় সম্পূর্ণ সৌন্দর্যচর্চা। এর মানে কম প্যাকেজিং। ফলাফল কম বর্জ্য এবং সহনীয় দূষণ। ব্র্যান্ডগুলো তো তৈরি করছিলই, কিন্তু বর্তমানে জনপ্রিয়তার ব্যাপকতায় এ ধরনের মাল্টিপারপাস পণ্যের ব্যবহার বাড়ছে। যেমন বিউটি রুটিনে যোগ করা যেতে পারে এমন স্ক্রাব, যা মুখত্বকের সঙ্গে সঙ্গে ঠোঁটের মৃতকোষ দূর করতে সক্ষম। এমন লিপ বাম ব্যবহার করা যেতে পারে, যা ঠোঁটে শুধু আর্দ্রতাই জোগাবে না, কাজ করবে মেকআপ ক্লিনজার হিসেবেও। মেকআপের এ রকম প্রডাক্ট তো বাজারে মিলবে অহরহ। শুধু বিউটি রুটিনে যোগ করার দেরি। ব্যবহার করা যেতে পারে এমন সব প্রাইমার, যেগুলো ত্বকে আর্দ্রতা জোগাবে, মেকআপও ধরে রাখবে দীর্ঘ সময়। ফলে আলাদা করে সেটিং স্প্রে ব্যবহারের প্রয়োজন পড়বে না। একইভাবে লিপ প্রডাক্ট, যা ব্লাশঅন হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে। ফাউন্ডেশন যেন হাইলাইটারেরও কাজ করে, সেদিকে খেয়াল রাখা যেতে পারে।
পানির অপচয় রোধ
বিস্ময়ের ব্যাপার! কিন্তু প্রায় প্রতিদিনের বিউটি রুটিনের অংশ এটি। ক্লিনজিংয়ের পুরোটা সময় পানির ট্যাপ ছেড়ে রাখার অভ্যাস অনেকেরই সহজাত। এটা বন্ধ করা উচিত। আজ থেকেই। কারণ, পানি ছেড়ে রাখলে কাজটা হয়তো সহজ হয়ে যায়; কিন্তু বিপদ বাড়ায় পৃথিবীর জন্য। তাই শুধু দরকারের সময় পানি ব্যবহার করা উচিত। আরও ভালো হয় যদি মুখ ধোয়ার সময় পাত্রে পানি নিয়ে তারপর তা ব্যবহার করা যায়।
পড়া চাই পণ্যের লেবেল
খুব কম সময় প্রয়োজন হয়, কিন্তু এর প্রভাব দারুণ। ফিলেটস, মার্কারি, টলিউইন, লিড, ফরমালডিহাইড, পেট্রোলিয়াম ডিস্টিলেটস, প্যারাবেন যুক্ত পণ্য একদম মানা। ত্বকের জন্য তো ক্ষতিকর, পৃথিবীবান্ধবও নয়। সাসটেইনেবিলিটিকে সহায়তা করছে এমন ফেয়ার ট্রেন্ড ব্র্যান্ডের বিউটি প্রডাক্ট ব্যবহার করতে পারলে তো আরও ভালো। কারণ, এগুলোতে পরিবেশের জন্য কোনো ক্ষতিকর উপাদান থাকে না। তৈরি হয় শক্তিশালী প্ল্যান্ট বেসড ফর্মুলায়। ত্বকের জন্যও উপকারী।
জাহেরা শিরীন
মডেল: মায়িশা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: ক্যানভাস