skip to Main Content

রূপরসদ I মারুলা অয়েল

একে বলা হয় যৌবনের অমৃত। কেননা, ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষা ও বিকাশে এর কার্যকারিতা অসামান্য। রূপচর্চার বিভিন্ন পণ্যে এই অয়েলের ব্যবহার দেখা যায়

এ সময়ের একটি জনপ্রিয় বিউটি ট্রেন্ড ফেস অয়েল। ইনস্টাগ্রাম থেকে পিন্টারেস্ট- সবখানেই এর জয়জয়কার। ত্বকের যত্নে সচেতন সবাই এখন মজেছে ফেস অয়েলে। কোকোনাট, অলিভ, আরগান, রোজহিপ, জোজোবা, আমন্ড ইত্যাদি অনেক ধরনেরই পাওয়া যায় বাজারে! একেক রকম ত্বকের জন্য ভিন্ন ভিন্ন অয়েল। কাজেরও পার্থক্য রয়েছে। তবে এর এমন একটি ধরন আছে, যা সব ত্বকের জন্য মানানসই। মারুলা অয়েল।
মারুলা গাছের সুমিষ্ট ফলের শ্বাস ও বাদাম থেকে তৈরি। চুল ও নখের যত্নেও ব্যবহার করা হয়। ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখা, উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি, ব্রণের সমস্যা রোধ ও বুড়িয়ে যাওয়া কমাতে খুব ভালো একটি উপাদান এটি।
দক্ষিণ ও পশ্চিম আফ্রিকা এবং মাদাগাস্কারে মারুলা গাছ বেশি জন্মে। প্রত্নতাত্ত্বিক তথ্য অনুযায়ী খ্রিস্টপূর্ব দশ হাজার বছর আগে আফ্রিকানদের পুষ্টির উৎস ছিল এর ফল। এ অঞ্চলের মানুষের কাছে ফলটির আধ্যাত্মিক গুরুত্ব রয়েছে। এটি তাদের কাছে বিয়ে ও উর্বরতার প্রতীক। অ্যানাকারডিয়াসি গোত্রের বাদামজাতীয় ফল। মিষ্টি স্বাদের জন্য মানুষের পাশাপাশি পশুদেরও খুব প্রিয়; বিশেষ করে হাতির। এতে রয়েছে প্রচুর সুগার। যে কারণে পেকে যাওয়ার পর মাটিতে পড়লে এতে দ্রুত পচন ধরে। পচা ফল খেয়ে মাতাল হয়ে যায় বন্য প্রাণী। এ জন্য একটি মারুলা অয়েলের ব্র্যান্ডের নামই রাখা হয়েছে ড্রাঙ্কেন এলিফ্যান্ট। আগে দিগন্তবিস্তৃত তৃণভূমিতে জন্মালেও এখন ব্যাপক চাহিদার জন্য মারুলাগাছ বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়। ফলটির বীজের ভেতরের শাঁস এবং বাইরের শক্ত খোসা অর্থাৎ পুরো ফল থেকে তেল বের করা হয়। মারুলা তেলের অনেক ঔষধি গুণ রয়েছে। বহু বছর ধরে আফ্রিকান ভেষজ চিকিৎসায় এর প্রয়োগ হয়ে আসছে। এমনকি রান্নায়ও এই তেল ব্যবহার করা যায়।
মারুলা তেল ত্বকের পুষ্টির একটি শক্তিশালী উৎস। এতে রয়েছে উপকারী অ্যামাইনো অ্যাসিড, ফ্যাটি অ্যাসিড, প্রোটিন, ভিটামিন সি ও ই এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি উচ্চমানের অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল অয়েল। তাই সহজেই ব্রণ দূর করতে পারে। ব্ল্যাকহেডস, হোয়াইটহেডস, একজিমা ও সেরিইয়াসিসের মতো মারাত্মক চর্মরোগ সারে। মারুলা অয়েলকে বলা হয় এলিক্সায়ার অব ইয়ুথ। অর্থাৎ যৌবনের অমৃত। এর ভেতরে থাকা এল আরজিনিন আর গ্লুটামিক অ্যাসিডের মতো অ্যামাইনো অ্যাসিড ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে। এতে বিদ্যমান ফ্যাটি অ্যাসিড হাইড্রেট করে। ফলে ত্বকে আর্দ্রতা ধরে সম্ভব হয়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেমন ফেনলিক যৌগ আর ভিটামিন সি ও ই ফ্রি র‌্যাডিকেলের বিরুদ্ধে লড়াই করে রিঙ্কেল আর ফাইন লাইন কমায়। হাইপারপিগমেন্টেশন হ্রাস করে। এ ছাড়া সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ও নানা ধরনের দূষণের ফলে হওয়া ড্যামেজ থেকে ত্বককে রক্ষা করে। ভিটামিন সি ও ই ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
শুষ্ক থেকে অতি সংবেদনশীল- সব ত্বকের জন্যই এই অয়েল উপযোগী। তবে মারুলা ফলে অ্যালার্জি থাকলে এটি এড়িয়ে যেতে হবে। এর মলিকিউল খুব সূক্ষ্ম, তাই সহজে ত্বকের সঙ্গে মিশে যায়। ননস্টিকি এই অয়েল তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারীদের জন্য আদর্শ ময়শ্চারাইজার। এমনিই এটি ব্যবহার করা যায়। অ্যান্টিএজিং ক্রিম, ময়শ্চারাইজার ক্রিম বা লোশন, ডিপ ক্লিনজিং ফেসওয়াশ বা সাবান- এসবেও এই অয়েল ব্যবহৃত হয়।

উপকরণের ধরন: অ্যান্টিএজিং হাইড্রেটর, ময়শ্চারাইজার ব্রাইটনার, অ্যাকনে রিমুভার।
মূল কাজ: ত্বকের আর্দ্রতা ও উজ্জ্বলতা বাড়ানো, ব্রণ ও বয়সের যেকোনো ছাপ দূর করা।
যে ধরনের ত্বকে ব্যবহার করা যায়: অ্যালার্জি না থাকলে সব ত্বকের জন্যই বেশ ভালো।
ব্যবহারবিধি: ফেস অয়েল ফর বেস্ট রেজাল্ট। এ ছাড়া মারুলা অয়েল সমৃদ্ধ ক্রিম বা লোশন ব্যবহৃত হতে পারে।

 ফাহমিদা শিকদার
মডেল: মিম
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top