ডিল ব্রেকার I সুগন্ধির স্বপ্নে
বাংলাদেশে সুগন্ধিপ্রেমীদের মন ভরিয়ে চলেছে বাংলা পারফিউমস। বিশ্বখ্যাত সব ব্র্যান্ডের সমাহার নিয়ে। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার খন্দকার নজরুল ইসলাম। তাঁর সঙ্গে আলাপচারিতা…
ক্যানভাস: কবে থেকে শুরু বাংলা পারফিউমস?
খন্দকার নজরুল ইসলাম: ১৯৯৮ সালের শেষ দিকে কাজ শুরু করি বাংলা পারফিউমস নিয়ে।
ক্যানভাস: শুরুর গল্পটা জানতে চাই…
খন্দকার নজরুল ইসলাম: প্রায় ২২ বছর আগের কথা। তখন দেশের বাইরে থাকি। ওখানকার লাক্সারি পারফিউমের ব্র্যান্ডশপগুলো আমাকে বেশ আকর্ষণ করত। নিজেও একজন পারফিউমপ্রেমী। ভাবলাম, আমাদের দেশের মানুষের কাছে কীভাবে এই প্রোডাক্টগুলো সহজলভ্য করা যায়। এখানে এগুলো ডিস্ট্রিবিউট করার চিন্তা থেকে একজন বন্ধুকে নিয়ে বাংলাদেশের বাজারের সঙ্গে ইউরোপ-আমেরিকার মার্কেটের তুলনামূলক কাজ শুরু করলাম।
ক্যানভাস: ‘বাংলা পারফিউমস’ নামকরণ কেন?
খন্দকার নজরুল ইসলাম: সহজ ভাষায় বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করা। যখন বিভিন্ন ব্র্যান্ড কনফারেন্সগুলোতে যাই, তখন বলতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি যে আমার কোম্পানি বাংলা পারফিউমস, আর দক্ষিণ এশীয় একটি দেশ থেকে এসেছি। বাংলাদেশে ব্যবসাটা পরিচালনা করছি বলে দেশের সঙ্গে সম্পৃক্ততা আছে এমন একটা নামই মাথায় এসেছে। এভাবেই ‘বাংলা পারফিউমস ডিস্ট্রিবিউটরস লিমিটেড’ (বিপিডিএল) নামে কাজ শুরু হলো।
ক্যানভাস: কোন কোন ব্র্যান্ড নিয়ে কাজ করছেন?
খন্দকার নজরুল ইসলাম: লাক্সারি প্রিমিয়াম মিলিয়ে ২৫টির বেশি ব্র্যান্ড নিয়ে কাজ করছি। গুচি, বারবেরি, ভারসাচি, ডলশে অ্যান্ড গ্যাবানা, জর্জিও আরমানি, ওয়াই এস এল, জিমি চু, মন্টব্ল্যাংক, বস হুগো বস- এগুলোর কথা না বললেই নয়।
ক্যানভাস: বিভিন্ন ক্যাটাগরির পারফিউমের মধ্যে কোনটি কাস্টমারদের বেশি আকর্ষণ করে?
খন্দকার নজরুল ইসলাম: জনপ্রিয় ব্র্যান্ডগুলোই কাস্টমারদের পছন্দের তালিকার শুরুতে থাকে। পুরুষদের প্রথমে আছে ফ্রেশ ফ্লেভার। একটু লাইট উডি ফ্লেভারও তারা পছন্দ করেন। মেয়েরা মোটামুটি ফ্লোরাল ফ্লেভারটাই বেশি চান। কাস্টমারদের চাহিদার আরেকটি বিষয় দেখেছি, তারা পারফিউমের স্থায়িত্ব চান। আমাদের দেশের আবহাওয়ার কারণে তাদের এটা আকর্ষণ করে।
ক্যানভাস: এত বছরের যাত্রায় পারফিউম ব্যবহারে বিবর্তনটা কেমন দেখছেন?
খন্দকার নজরুল ইসলাম: অবশ্যই চোখে পড়ার মতো। একটা সময় মানুষ ভাবত, বড় কোনো অনুষ্ঠানে গেলেই শুধু পারফিউম ব্যবহার করতে হবে। সেই ধারণা থেকে বেরিয়ে এসেছে। এখন মানুষ আগের চেয়ে অনেক বেশি ফ্যাশনসচেতন। পোশাকের সঙ্গে পার্সোনালিটি অনুযায়ী অনেকেই পারফিউম ব্যবহার করছেন। বেল্ট, ওয়ালেটের মতো দৈনন্দিন ব্যবহার্য সামগ্রী হয়ে উঠেছে এখন পারফিউম।
ক্যানভাস: পারফিউম ব্যবহারে আপনারা মূলত কোন শ্রেণির কাস্টমারের চাহিদার কথা চিন্তা করেন?
খন্দকার নজরুল ইসলাম: পারফিউম ব্যবহারে শ্রেণিবিভাজন এখন অনেক কমে এসেছে। উচ্চবিত্তরাই শুধু নয়, উচ্চমধ্যবিত্ত এমনকি মধ্যবিত্তরাও এখন পারফিউম ব্যবহার করছেন। আরেকটা কথা, শুধু ব্র্যান্ড হিসেবে নয়, যে নামগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষ আগে থেকেই পরিচিত; যেমন বারবেরি, ভারসাচি, ডলশে অ্যান্ড গ্যাবানা, জর্জিও আরমানি, মন্টব্ল্যাংক, বস হুগো বস- এগুলোর চাহিদা কাস্টমারদের কাছে বেশি। চাহিদা অনুযায়ী জনপ্রিয় ব্র্যান্ডগুলোই আনার চেষ্টা করি।
ক্যানভাস: বাজারে বাংলা পারফিউমস কেন ব্যতিক্রম?
খন্দকার নজরুল ইসলাম: বাংলাদেশে পারফিউম বিপণনের শুরুটা আমাদের হাতেই। শহরে শুধু এসবের একটা শপ হবে- সেই ধারণাটাও প্রথম আমরাই শুরু করি রিটেইল শপ ‘পারফিউম ওয়ার্ল্ড’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। দীর্ঘ ২২ বছরের যাত্রায় পারফিউমপ্রেমীদের চাহিদা পূরণে আমরা সচেষ্ট থেকেছি। প্রতিষ্ঠানটির আলাদা একটা ব্র্যান্ড ভ্যালু তৈরি হয়েছে। অথেনটিক পারফিউম বলতে এখন মানুষ এটিকেই বোঝেন।
ক্যানভাস: কোভিডের বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলা পারফিউমসের সার্বিক অবস্থা কেমন?
খন্দকার নজরুল ইসলাম: এটা আসলে বৈশ্বিক একটা ব্যাপার। বাংলাদেশ সরকারের সব নীতিমালাই আমরা অনুসরণ করেছি এবং লকডাউন-পরবর্তী সময়ে আমাদের সার্বিক অবস্থা আগের রূপে ফিরেছে।
ক্যানভাস: বাংলা পারফিউমসের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
খন্দকার নজরুল ইসলাম: এটা নিয়ে বাংলাদেশে আমাদের অনেক বড় স্বপ্ন আছে। দেশের প্রতিটি বড় শহরে রিটেইল শপ হবে। সব লাইফস্টাইল স্টোরে আমাদের পারফিউম থাকবে। আরও বেশ কিছু খ্যাতনামা ব্র্যান্ডের ডিস্ট্রিবিউটর আনার চেষ্টা করছি। পারফিউম যে শুধু উচ্চবিত্ত বা উচ্চ মধ্যবিত্তের নাগালে থাকবে, তা নয়। আমরা চাচ্ছি, সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে সর্বাধিক ব্র্যান্ড ডিস্ট্রিবিউট করতে।
ক্যানভাস: বাংলা পারফিউমসের কতটি আউটলেট আছে?
খন্দকার নজরুল ইসলাম: এখন পারফিউম ওয়ার্ল্ডসহ ৩০টির বেশি আউটলেট আছে।
ছবি: ক্যানভাস এবং বাংলা পারফিউমস