সাজসারাই I চোখ মেনে লাইনার
চোখের সাজে এখন লাইনারের কারিশমা মূল ভরসা। কেমন করে আঁখিজোড়া হয়ে উঠবে আরও মায়াময়, সে চর্চাই পাচ্ছে প্রাধান্য
আজকাল মাস্ক ব্যবহারের ফলে চোখই দৃশ্যমান থাকছে। তাই সংক্ষিপ্ত হয়েছে মুখসজ্জা। জোর দেওয়া হচ্ছে চোখের সাজে। ভিন্নতা আনার চেষ্টা চলছে শ্যাডো, লাইনার প্রয়োগে। এর মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে উইংড লাইনার। এটি এমন একটি মেকআপ লুক, যা চেহারায় মায়াময়তা আনে। প্রয়োগে ঝক্কি নেই মোটেও। একেবারে সহজ আয়ত্তে আনাটা। ইউটিউবার অ্যাড্রিয়ানা ব্রজের বারো মিলিয়ন ফলোয়ারের সঙ্গে টিউটরিয়ালটি দেখার জন্য আপনিও যোগ দিতে পারেন। মেকআপ আর্টিস্ট ল্যাভন অ্যান্থনি দেখিয়েছেন, কীভাবে এটি করে নিতে হয়।
উইংড আইলাইনার ক্যাট আই মেকআপ নামেও পরিচিত। এই ফ্রিলাইন ফ্লিক নিখুঁতভাবে শুরু করার আগে প্রথম ধাপ হলো চোখের আকৃতি বুঝে নেওয়া। তবেই সেটি নিজের চোখে প্রয়োগ সহজ হবে। এই মেকআপের জন্য লং লাস্টিং এবং ভালো মানের আইলাইনার বেছে নিতে হবে, যা নিখুঁত আই মেকআপের জন্য সহায়ক।
চোখের শেপ বুঝে উইং এঁকে নেওয়া জরুরি। এতে সাজ বেমানান লাগবে না। লুকে যোগ হবে আবেদনময়তা। এবার দেখে নেওয়া যাক কেমন শেপে কোন সাজ।
খোলা অবস্থায় যদি চোখের পাতার ভাঁজ দৃশ্যমান না হয়, তবে তার ধরন হলো হুডেড আই। এটির ধারকেরা অনেকেই দুশ্চিন্তায় থাকেন। কেননা বেশির ভাগ টিউটরিয়ালে দেখানো হয় চোখের ভাঁজ থেকে মেকআপ শুরুর পদ্ধতিটি। তবে হুডেড আইতে ফ্ললেস উইংড আইলাইনার অ্যাপ্লাই করা খুব সহজ। খেয়াল রাখতে হবে, তা যেন পাতায় লেগে না যায়। বাইরের দিকে উইং টিপ তৈরি করে নিতে হবে। যেখানে লিডস হুড বা চোখের পাতার হুডটি শুরু হয়েছে। ভেতরের দিক থেকে কাজ শুরু করতে হবে। পাতলা স্ট্রোকে লাইনার অ্যাপ্লাই এবং পছন্দ অনুসারে চওড়া করতে হবে।
ক্লোজ আইয়ের জন্য ল্যাভনের রয়েছে একটি সহজ মেকআপ ট্রিক। ডাবল উইং এঁকে নিয়ে চোখ চওড়া করে নেওয়া যায়।
চোখের উপরের ল্যাশলাইন লাইনার দিয়ে এঁকে নিতে হবে। এবার বাইরের দিকে একটি ছোট্ট ফ্লিক তৈরি করার পালা। নিচের ল্যাশলাইনেও একইভাবে আঁকতে হবে। তবে মনে রাখা দরকার, এ ধরনের চোখের মাঝ বরাবর কখনো লাইনার প্রয়োগ করা যাবে না। চোখগুলো পপআপ করে নিতে উইং দুটির মধ্যে সামান্য কনসিলার প্রয়োগ করে নেওয়া যায়।
এই লুকে পছন্দসই শেপ এঁকে নিতে পাউডার ব্যবহার করা যেতে পারে। এরপর লিকুইড দিয়ে এটি আরও গাঢ় করে নিতে হবে। লাইনার ছড়িয়ে গেলে মেকআপ রিমুভার দিয়ে ক্লিন করতে হয়।
চোখের কোণ চিকবোনের দিকে ঝুঁকে গেলে বা নেমে গেলে সেটিকে সাধারণত ডাউনটার্ন আই বলা হয়। এমন আইয়ের জন্য ল্যাভনের পরামর্শ হলো, চোখের ভেতরের কোণ থেকে বাইরের কোণের দিকে একটি পাতলা লাইন টেনে দেওয়া। পাতার ভাঁজ থেকে আইব্রাওয়ের কোণের দিকে লাইনার প্রসারিত করতে হবে। পুরো লুকটিকে কালারআপ করে নিতে বেছে নিতে হবে একটি প্রিটি শেড, যা মেকআপটিকে আরও উজ্জ্বল করে তুলবে।
চোখের পাতায় একেবারে মিনিম্যাল বা প্রায় দেখা যায় না এমন ভাঁজ থাকলে একে মনোলিড আই বলা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে পাতলা বা সরু উইং আদর্শ।
লুকটি পেতে ল্যাভন লিকুইড লাইনার ব্যবহারের পরামর্শ দেয়। মনোলিড আইয়ের ক্ষেত্রে বেশি জায়গা পাওয়া যায় না। তাই লাইনার ক্রিসপ ও স্ট্রেইট করে নেওয়ার মাধ্যমে এটি ম্যাক্সিমাইজ করা প্রয়োজন। যতটুকু সম্ভব সরু রেখা টেনে নিতে হবে। লাইনারের ডগাটি ল্যাশলাইনে চোখের তারা বরাবর রেখে বাইরের কোণের দিকে টেনে দিতে হবে। এরপর ভেতরের কোণ থেকে মাঝ পর্যন্ত এনে যোগ করে নিতে হয়।
ক্যাট আই মেকআপের নানান ভার্সন রয়েছে। মনোলিড আই এসব ভার্সন এক্সপেরিমেন্ট করার জুতসই ক্যানভাস। বিভিন্ন ধরনের ড্রামাটিক স্টাইলের জন্য ল্যাভন খুব ঘন ও মোটা লাইন এঁকে নেওয়ার কথা বলেন। গাঢ় লুকটি পেতে চোখের পাতাজুড়ে একটির পর একটি লেয়ার দিতে হবে, যতক্ষণ না কাঙ্ক্ষিত গাঢ় রঙ পাওয়া যায়।
রাউন্ড আইয়ের জন্য ল্যাভন পরামর্শ দেন চোখের বাইরের দিকের কোণ থেকে একটি অ্যাঙ্গলড ব্রাশ ও ক্রিম আইশ্যাডো বা লাইনার দিয়ে শুরু করার।
এরপর চোখের বাইরের কোণের দিকে কিছুটা ডাউনওয়ার্ড অ্যাঙ্গল টাওয়ার্ডে আঁকতে হবে। লাইনার ভেতরের দিকে টেনে চোখের মাঝ বা মণি বরাবর এসে থামতে হবে।
যেহেতু স্টাইলটি চোখের পাতার সব জায়গায় পৌঁছায় না, তাই উজ্জ্বল ও নিয়ন শেডগুলো সাধারণত কিছুটা ওয়াইল্ড দেখায়, এ ক্ষেত্রে ততটা মনে হবে না। মেতে ওঠা যায় এমনই কিছু রঙ নিয়ে দেখা যেতে পারে কোনটি চোখের সঙ্গে মানিয়ে যাবে।
ন্যারো কর্নারের ওভাল-শেপড চোখ সাধারণত আমন্ড-শেপড আই হিসেবে পরিচিত। ল্যাভনের মতে, এ ধরনের চোখের ওপরের অংশ থেকে কিছুটা বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়। ভেতরের কোণ থেকে শুরু করে পুরো ল্যাশলাইনটি এঁকে নিতে হবে। এবার বাইরের দিকে টেনে নিয়ে যেখানে ক্রিজ শুরু হয়েছে সেখানে থামা দরকার।
এবার শেপ বুঝে করে নিতে হবে চোখের মেকআপ।
তাসমিন আহমেদ
মডেল: আলো, নিকি, মীম মানতাসা ও আইশা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: ক্যানভাস