সেলুলয়েড I সাড়ে চুয়াত্তর
কাহিনি : বিজন ভট্টাচার্য
চিত্রনাট্য ও পরিচালনা : নির্মল দে
সংগীত পরিচালনা : কালীপদ সেন
ধরন : রোমান্টিক কমেডি
অভিনয় : উত্তমকুমার, সুচিত্রা সেন, তুলসী চক্রবর্তী, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, মলিনা দেবী, নবদ্বীপ হালদার, পদ্মা দেবী প্রমুখ।
মুক্তি : ১৯৫৩
দৈর্ঘ্য : ১ ঘণ্টা ৩৮ মিনিট
এ সিনেমার প্রতিটি সিকোয়েন্সে রয়েছে কমেডির আবহ। কাহিনির শুরু সাদামাটাভাবে হলেও একটি বিয়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছবির উত্তেজনা এবং হাস্যরসের মাত্রা ঊর্ধ্বগামী হতে থাকে।
কলকাতায় অন্নপূর্ণা বোর্ডিং নামে একটি মেস পরিচালনা করেন রজনীবাবু। সেখানকার বাসিন্দারা যুবক ও যৌবনোত্তীর্ণ। বয়োজ্যেষ্ঠ শিববাবু কিছুটা ব্যতিক্রম হলেও সবার মধ্যে সদ্ভাব রয়েছে। একদিন রজনীবাবুর এক আত্মীয় অঘোর তার ভাড়া বাড়ি থেকে উৎখাত হয়ে স্ত্রী ও কন্যা রমলাকে নিয়ে বোর্ডিংয়ে উপস্থিত হন। মেসের বাসিন্দাদের অধিকাংশই অবিবাহিত। সেখানে একটি পরিবারের বসবাস করার মতো পরিবেশ না থাকায় শিববাবু আপত্তি করেন। কিন্তু অন্য সবার মতামত পেয়ে অঘোর বোর্ডিংয়ে থেকে যান।
মেসের আরেকজন বাসিন্দা রামপ্রীতি। ধনীর ছেলে। অঘোর সপরিবারে বোর্ডিংয়ে এসে ওঠার সময় সে মেসে ছিল না। তাই ফেরার দিন চাকর মদনকে খাবার রেখে দিতে বলার জন্য সে ফোন করে। এ সময় মেসে কেউ না থাকায় ফোন রিসিভ করে রমলা। ছেলেদের বোর্ডিংয়ে নারীকণ্ঠ শুনে রামপ্রীতি রং নাম্বার ভাবে এবং উভয়ের মধ্যে বাগ্বিতন্ডা হয়। মেসে ফিরে সে এ ঘটনা অপর বাসিন্দা কেদারকে বলে এবং রমলা সম্পর্কে কটু মন্তব্য করে। পাশের ঘর থেকে এসব শুনে রমলা এসে উপস্থিত হয় রামপ্রীতির সামনে। প্রাথমিক আলাপে দুজনের মধ্যে এমন তিক্ততা ঘটলেও একপর্যায়ে ভুল-বোঝাবুঝির অবসান ঘটে এবং প্রেমে রূপ নেয়। চাকর মদনের মাধ্যমে দুজনের গোপন চিঠিপত্রের আদান-প্রদান হতে থাকে। এ ঘটনা একদিন জানাজানি হয়ে গেলে মেসের বাসিন্দারা মদনের কাছ থেকে রমলার একটি চিঠি জোর করে ছিনিয়ে নেয়। তারা রজনীবাবুর কাছে বিচার চায়। তিনি তখন সাপ্তাহিক ছুটি কাটাতে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হচ্ছিলেন। বাসিন্দারা চিঠিটা রজনীবাবুর পকেটে গুঁজে দেয়। কাহিনি নতুন দিকে মোড় নিতে থাকে।
রজনীবাবুর স্ত্রী মলিনা দেবী স্বামীর পোশাক গুছিয়ে রাখতে গিয়ে পকেটে চিঠি পান। তার সন্দেহ হয় যে, রজনীবাবু কোনো অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়েছেন। এ নিয়ে দুজনের মনোমালিন্য তুঙ্গে ওঠে। এদিকে সবার মত নিয়ে রজনীবাবু রামপ্রীতির বাবার কাছে তার বিয়ের প্রস্তাব পাঠালেন। বিয়ের আয়োজন হলো। বোর্ডিংয়ের ছাদে মেরাপ বাঁধার খবর পেয়ে মলিনা দেবী অধৈর্য হয়ে উঠলেন। তিনি বিয়ের দিন কলকাতায় এসে উপস্থিত হলেন। রজনীবাবু তখন চিঠির রহস্য বললেন। এতে ভুল-বোঝাবুঝির অবসান হলো।
সাধারণ এই গল্পকে পরিচালক সিনেমাটিক করে তুলেছেন। মিউজিক কম্পোজিশনে সময় ও পরিবেশের মেলবন্ধন দেখা যায়। বোর্ডিংয়ে বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজনও সামঞ্জস্যপূর্ণ।
সাড়ে চুয়াত্তর সিনেমায় পাত্র-পাত্রীদের পোশাক ও সাজসজ্জায় পঞ্চাশের দশকের ট্রেন্ড বিদ্যমান। নারী চরিত্রদের, বিশেষত গৃহিণীদের পেঁচিয়ে পরা চওড়া পাড়ের শাড়ির সঙ্গে হাতে সাদা শাঁখা, কপালে বড় টিপ, কানে ছোট পাথরের দুল, গলায় চিকন নেকলেস বেশ মানানসই। কলেজপড়–য়া রমলা চরিত্রে সুচিত্রা সেনের চুল এলো খোঁপা করা। তার পোশাকে কিছুটা বৈচিত্র্য রয়েছে। ছোট প্রিন্টের শাড়ির সঙ্গে কখনো স্ট্রাইপ চেকের কনট্রাস্ট ব্লাউজ, কখনো গাঢ় এক রঙের। কানে ছোট পাথরের দুল, চিকন নেকলেস আর চোখে কাজল তার প্রতিদিনের সাজ। ‘ফাগুনের গান শুরু হলো প্রিয় বাদলে’ গানের সঙ্গে রমলার সিল্কি চুল খোলা দেখা যায়। তবে মাথার একদিকে ছিল কিছু চুল আটকে চওড়া ফিতার ফুল বাঁধা। এ দৃশ্যে তার কানে ঝুমকো দেখা গেছে।
বিয়ের অনুষ্ঠান আটপৌরে হলেও ব্লাউজের হাতায় লেসের কাজ, চওড়া নেকলেস, চুল পাফড সেটিংয়ে এলো খোঁপা এবং স্বচ্ছ ওড়নায় ঢাকা সুচিত্রা সেনকে পঞ্চাশের দশকের সাজে মানিয়েছে দারুণ।
সে সময়ের পোশাকের চল মেনেই ছেলেদের ক্যাজুয়াল কস্টিউম দৃশ্যমান। ধুতি, ফতুয়া বা হাতাওয়ালা গেঞ্জি। তবে রমলার সঙ্গে রাস্তায় দেখা করতে যাওয়ার দৃশ্যে রামপ্রীতির পরনে ঢোলা পাজামা ও ব্যাপারী শার্ট বেশ ব্যতিক্রমী। বিয়ের আসরে উত্তমকুমারকে খালি গায়ে উত্তরীয়, কাঁচা ফুলের মালা, ধুতি ও শোলার টোপর পরতে দেখা গেছে।
তিনটি গান রয়েছে এ সিনেমায়। ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র, মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ও সনৎ সিংহ- এই পাঁচজন সমকালীন গায়কও এই চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। ৬৭ বছর পরে এ সিনেমার আবেদন এখনো ম্লান হয়নি।
প্রিয়ঙ্কর অর্ঘ
কুইজ
১. রজনীবাবু গ্রামের বাড়ি যেতেন কেন?
[ক] মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে
[খ] স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে
[গ] সাপ্তাহিক ছুটি কাটাতে
২. বিয়েতে রমলার চুলের স্টাইল কেমন ছিল?
[ক] দুই বেণি করা
[খ] পাফড সেটিংয়ে এলো খোঁপা
[গ] কাঁচা ফুলের মালা জড়ানো খোঁপা
৩. মলিনা দেবী কোন দিন কলকাতায় এসে উপস্থিত হন?
[ক] রামপ্রীতির বিয়ের দিন
[খ] বোর্ডিংয়ে মেরাপ বাঁধার দিন
[গ] রমলার প্রেমে পড়ার দিন
গত পর্বের বিজয়ী
১. ফারিয়া খানম, বাড্ডা, ঢাকা। ২. সুলতানা পারভীন, ধানমন্ডি, ঢাকা। ৩. নাজমুল হাসান, খামার মোড়, রংপুর।