skip to Main Content

ফুড বেনিফিটস I মুগ্ধতার দুগ্ধ

শরীর গঠন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রয়োজনীয় প্রায় সব উপাদানই এতে রয়েছে। সৌন্দর্যচর্চায়ও এটি বিকল্পহীন। এতে তৈরি সুস্বাদু খাবারের তালিকা দীর্ঘ

‘দুধে আলতা গায়ের রং’- ত্বকের সৌন্দর্য বর্ণনায় রূপক অর্থে এভাবেই এর ব্যবহার। বিয়েতেও খাবারটি থাকা চাই। বিশেষ করে মিষ্টান্নে। এটি দিয়ে প্রথা পালনও হয়। সাদা তরল হওয়ায় দুধকে রেতঃ-এর সঙ্গে তুলনা করে গড়ে উঠেছে আচার। আলতাকে ভাবা হয় রজঃ। এ দুয়ের মিশ্রণ মিলনেরই প্রতীক। তাতে বর-কনের মঙ্গলসূত্র ও গাঁটছড়া ডোবানোর রীতি আছে কিছু বিয়েতে। বধূবরণকালে উনুনে উথলে ওঠা দুধ দেখানো হয়; যা বরের অর্থনৈতিক প্রাচুর্য নির্দেশ করে। কোনো অঞ্চলের বিয়েতে বরের হাত দুধ দিয়ে ধুইয়ে দেন শাশুড়ি। এসব প্রথামূল্য ছাড়াও খাবারটির কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা আছে। বিভিন্ন রোগ সারানোর পাশাপাশি তা শরীরে পুষ্টির জোগান দেয়। প্রয়োজনীয় উপকারী উপাদানগুলো থাকায় দুধকে সুষম খাবার বলে।
প্রক্রিয়াকরণের ভিত্তিতে গরুর দুধের তিনটি অবস্থা রয়েছে। সর ছাড়া, সর ও ননি ছাড়া, অন্যটি সরসহ ননিযুক্ত। এই তিনের গুণও ভিন্ন। ননি তোলা দুধে চর্বি প্রায় থাকেই না। তবে প্রচুর ক্যালরি মেলে। ওজন কমাতে তা পান করা যেতে পারে। ননিযুক্ত দুধে থাকে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ও চর্বি। শিশুদের জন্য উপযোগী হলো সরসহ দুধ। তাতে উচ্চমাত্রায় চর্বি থাকে। ক্যালরিও অনেক। দুধ পানে বেশ উপকার মেলে। যেমন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে লো ফ্যাট দুধ পানে কোলেস্টেরল কমে। এ খাবারে থাকা প্রোটিন শরীর থেকে মন্দ চর্বি হটায়। ভিটামিন এ, ডি ও ক্যালসিয়াম থাকায় তরলটি নিয়মিত পান করলে হৃৎপিন্ড ভালো থাকে। তা ছাড়া ঘুমটাও ব্যাঘাতহীন হয়। দুধের বায়োঅ্যাকটিভ গুণ স্ট্রেস কমায়, সুখনিদ্রা নিশ্চিত করে। এর উপাদানগুলো হাড় মজবুত করে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে অস্টিওআর্থ্রাইটিসের সমস্যা হতে পারে; বিশেষ করে নারীদের। দুধ পানে রোগটির প্রতিরোধ হয়। বাতের সমস্যাও সারে। সারা দিন কাজ করার প্রয়োজনীয় শক্তি জোগায় দুধ। এর ল্যাকটিন ক্লান্তি দূর করে শরীর চাঙা রাখে। তাই রাতে দুধ পান করলে সকালে বেশ চনমনে লাগে। পেশি গঠনেও কার্যকর এটি। এ ছাড়া মাংসপেশির আড়ষ্টতা দূর করে। নিয়মিত ব্যায়ামের পাশাপাশি দুই গ্লাস দুধ পান করলে পেশির রোগবালাই সারে। অ্যাসিডের সমস্যাও দূর হয়। এটি পানে পাকস্থলী ঠান্ডা হয়, হজমশক্তি বাড়ে। বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যা থেকেও রেহাই মেলে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পান করা যেতে পারে দুধ। এতে আছে পটাশিয়াম; যা রক্তনালি সতেজ রাখে। মলাশয় ও ব্রেস্ট ক্যানসার প্রতিরোধ করে। কম চর্বিযুক্ত দুধ পানে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে। কোষ্ঠকাঠিন্য সারাইয়ে এটি ভালো দাওয়াই। দৃষ্টিশক্তিও বাড়ায়।
শরীরের ভেতরের রোগবালাই দূর করার পাশাপাশি ত্বকচর্চায়ও কাজে লাগে দুধ। কোমলতা বাড়াতে এর সর চামড়ায় মাখা যেতে পারে। দুধ পান করলেও উজ্জ্বলতা বাড়ে। এতে থাকা ভিটামিন বি১২ চামড়ার স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখে। ফলে ত্বক সহজে ঝুলে যায় না। নরম ও তাজা থাকে। চুলের পুষ্টি বাড়াতেও নিয়মিত দুধ পান করা যেতে পারে। কাজটি করে এর ফ্যাটি অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন। কাঁচা দুধেও মেলে উপকার। গরমকালে তা চামড়াকে সুন্দর রাখে। বিশেষ করে রোদে পোড়া ত্বকের সারাইয়ে কাজ করে এটি। এ উদ্দেশ্যে রোজ ঠান্ডা দুধ মুখে মাখা যেতে পারে। ত্বক সতেজ করতে কাঁচা দুধের সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে গোসল করলে উপকার মেলে। খাদ্যটির কিছু ব্যতিক্রমী ব্যবহারও আছে। যেমন ঘরে রাখা গাছের পাতা শুকিয়ে যেতে থাকলে কাঁচা দুধে তুলা ভিজিয়ে মুছে দেওয়া যেতে পারে। গাড়ির কাচ চকচকে করতেও তা ব্যবহার করে অনেকে।
গরুর দুধ ছাড়া অন্য সব গবাদির দুধেও উল্লিখিত উপকারগুলো মেলে। তবে সব প্রাণিজ দুধে রাসায়নিক উপাদান এক নয়। ভিটামিন, খনিজ ও চর্বির পরিমাণ কমবেশি থাকে। সব ধরনের উপাদান সবার শরীরে সয়ও না। তাই দুধ পানের ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। বিশেষ করে যাদের কিডনিতে পাথর আছে, তাদের জন্য এটি সুখাদ্য নয়। শরীরে ল্যাকটোজ এনজাইমের ঘাটতি থাকলে খাবারটি সহজে হজম হয় না। সে ক্ষেত্রে পেটের পীড়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ক্ষুদ্রান্ত্রে আলসার কিংবা গলব্লাডারের রোগীদের দুধ পান না করাই ভালো। কোনো কারণে যাদের পেটে অপারেশন হয়েছে, ক্ষত না সারা পর্যন্ত এ খাদ্য খেতে বারণ করেন চিকিৎসকেরা। নিয়মিত আয়রন ট্যাবলেট সেবনকারীদের জন্যও নিষেধ। সিসা কিংবা এ ধরনের ধাতু নিয়ে যাদের কাজ, তাদের দুধ এড়িয়ে যাওয়া ভালো। এর ল্যাকটোজ ও সিসার বিষ মিলে শরীর অসুস্থ করে দিতে পারে। গ্যাস্ট্রিক আলসারের রোগীদের জন্যও এটি ভালো খাবার নয়। অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য দুধ অনুপযোগী। অ্যালার্জি থাকলেও এটি পানের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা ভালো।
প্রাণিজ দুধে সমস্যা থাকলে বিকল্প গ্রহণ করা যেতে পারে। যেমন সয়া দুধ। এতে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও কার্বোহাইড্রেট মেলে। গরুর দুধের বিকল্প হিসেবে অনেকেই তা পান করেন। বেশি কার্বোহাইড্রেট মেলে রাইস মিল্কেও। অ্যালার্জির প্রবণতা থাকলে প্রাণিজ দুধের বদলে ভাতের দুধকেই উপযুক্ত মনে করেন পুষ্টিবিদেরা। এটি সহজে হজম হয়। সেদ্ধ চালের গুঁড়া থেকে তা তৈরি করা যায়। এতে প্রোটিনের পরিমাণ গরুর দুধের চেয়ে কম। বিকল্প হতে পারে নারকেল দুধও। এটি উচ্চমাত্রার ফ্যাটসমৃদ্ধ। বেকড খাবারে এই উপাদানই বেশি ব্যবহৃত হয়। বাদামের দুধও ভালো। কাঠ ও কাজু, উভয়টি দিয়েই দুধ হতে পারে। কাঠবাদামের দুধ ক্যালরি ও ক্যালসিয়ামে ভরপুর। কাজুরটিতে আছে চর্বি। বেশ সুগন্ধিযুক্তও। গরুর তুলনায় কাজুর দুধে প্রোটিন কম। রান্নাতেও এটি ব্যবহৃত হয়। হজমে সমস্যা থাকলে পান করা যেতে পারে ল্যাকটোজ ফ্রি দুধ। খাদ্যটি খেলেই যাদের গ্যাস, পেট ফোলা ভাব কিংবা ডায়রিয়া হয়, তাদের জন্য এটি উপযোগী। এর পুষ্টিমান গরুর দুধের মতোই। অ্যালার্জি-আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য উপযোগী আরেকটি দুধ হলো হেম্প। সাধারণ দুধের চেয়ে এটি বেশিক্ষণ সংরক্ষণ করা যায়।
শেষ করা যাক আমাদের দেশে অপ্রচলিত কিছু দুধের কথা বলে। যেমন উটের দুধ। গরুর দুধের তুলনায় তা ত্রিশ গুণ বেশি দামি। মূলত অপ্রতুলতার কারণেই এর দাম এত চড়া। এ ছাড়া রয়েছে গাধার দুধ। সাইবেরিয়ায় বিশেষ জাতের গাধার দুধ থেকে এক প্রকার পনির তৈরি হয়। যার এক কেজির দাম বাংলাদেশি সাড়ে ৯৫ হাজার টাকা। যত মূল্যবানই হোক না কেন, পুষ্টিমান ও স্বাস্থ্যগুণে এই দুধ অন্যান্য দুধের মতোই।
 ফুড ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top