কুন্তলকাহন I চুলের মাল্টি-মাস্কিং
পরিচর্যার নতুন কৌশল। চুলের স্বাস্থ্য রক্ষা ও সৌন্দর্যের জন্য। এর চর্চা বাড়িতেও সম্ভব। লিখেছেন আহমেদ বুবলি
চুলে ব্যবহার্য উপকরণের প্রতি মনোযোগী হওয়া দরকার। হেয়ার ড্রায়ার, স্ট্রেইটনার বা কার্লার, খসখসে টাওয়েল, অস্বাস্থ্যকর কেমিক্যাল প্রডাক্ট, ডাই ইত্যাদি ব্যবহারের ফলে চুলের ক্ষতি হয়। অন্যদিকে পরিবেশদূষণ চুলের স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
রূপচর্চার জগতে একটি নতুন ট্রেন্ড যুক্ত হয়েছে, যা চুল পরিচর্যায় পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। বাড়িতে সহজেই চুলের যত্ন নেওয়া যায়। কয়েক বছর ধরে ত্বকের মাল্টি-মাস্কিং ট্রেন্ড চলে আসছে। ত্বকের কোন অংশে কী প্রয়োজন, তার ওপর ভিত্তি করে মাস্ক তৈরি হচ্ছে। রূপচর্চায় চুলের জন্য একই ধারণায় বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছে সৌন্দর্যপিয়াসীরা।
হেয়ার স্পেশালিস্টরা মাল্টি-মাস্কিং ট্রেন্ড হিসেবে ন্যাচারাল হেয়ার মাস্কের নতুন রেঞ্জ ব্যবহার করছেন। স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ও মজবুত চুলের জন্য।
এই মাল্টি-মাস্কিং হলো চুলের পরিচর্যায় নিবিড় ও উচ্চমানের রেডি ফেসিয়াল। চুলের গোড়া থেকে ডগা তুলনামূলক পুরোনো। তাই ভালো দেখাতে বা সুস্থ রাখতে এর বিভিন্ন অংশের ভিন্ন ভিন্ন ট্রিটমেন্ট দরকার।
হেয়ারস্টাইলিস্টরা সাধারণত যেকোনো ট্রিটমেন্টের আগে চুলের অবস্থা, সমস্যা ও বিশেষ কিছুর প্রয়োজন রয়েছে কি না, তা জানার বা বোঝার জন্য লাইফস্টাইল, স্বাস্থ্য, ডায়েট এবং সাধারণ সুস্থতা সম্পর্কে জেনে নেন। এসবের ওপর ভিত্তি করে তারা চুলের ভিন্ন ভিন্ন অংশে একটি হেয়ার মাস্কের সিরিজ প্রয়োগ করেন, যাতে মাস্কটি চুলের অবস্থা ভালো করার জন্য সহায়তা করতে পারে। জানিয়ে দেন- কোন মাস্কটি লাগানো যাবে, বাড়িতে তা ব্যবহার অব্যাহত রাখা ইত্যাদি।
কম্বিনেশন স্কিনের মতো কম্বিনেশন হেয়ারও হতে পারে। মানে সেবেসিয়াস গ্রন্থিগুলোর চারপাশে তৈলাক্ত, একই সঙ্গে ডগাগুলো জটযুক্ত ও শুষ্ক হতে পারে। এ ক্ষেত্রে তিন ধরনের মাস্ক ব্যবহার করা যায়। মাথার ত্বক তৈলাক্ত হলে একটি পিউরিফাইং মাস্ক, নিস্তেজ চুলে উজ্জ্বলতা যোগ করতে দ্বিতীয় এবং তৃতীয়টি চুলের ডগাকে আর্দ্র ও কোমল করে তোলার জন্য। চুলের ভিন্ন ভিন্ন অংশে এই তিনটি মাস্ক প্রয়োগ করার পর একটি টাওয়েল হালকা গরম পানিতে ভিজিয়ে পানি ঝরিয়ে নিতে হয়। পরে টাওয়েলটি দিয়ে মাথা কভার করে নিতে হবে। এতে মাথায় কিছুটা তাপ উৎপন্ন হবে এবং উপকরণগুলোকে আরও সক্রিয় ও চুলে শোষিত করতে সহায়তা করবে।
মাল্টি-মাস্কিংয়ের ফলে চুল ঝরঝরে থাকবে এবং সহজে আঁচড়ানো যাবে। কোমলতা অনুভূত হবে। এতে রঙের ন্যাচারাল হাইলাইট আরও দৃশ্যমান হয়ে উঠবে। মাস্ক চুলে বিদ্যমান ক্ষতিকর উপাদানগুলো সরিয়ে দেবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চুলকে সিল্কের কাপড়ের মতো ভাবা উচিত। সূক্ষ্ম এবং বিলাসী পোশাকের মতো সাবধানে এর যত্ন নেওয়া, সঠিকভাবে ধোয়া দরকার। সে জন্য পরিমিত তাপমাত্রা ও জুতসই পরিষ্কারক উপকরণের প্রয়োজন হয়। মাল্টি-মাস্কিং পদ্ধতিতে বোঝা যায় যে, চুল প্রত্যেকের নিজের মতোই ইউনিক। ত্বকের যত্নের মতো এর যত্নও ব্যক্তিভেদে স্বতন্ত্র। সিঙ্গেল হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করলে তা হয়তো শুষ্ক ডগাগুলো মেরামতে সাহায্য করবে, কিন্তু মাথার ত্বক এবং চুলের গোড়া অতিরিক্ত সিক্তও করে ফেলবে।
মাল্টি-মাস্কিংয়ের সুবিধা হলো, এর জন্য প্রতিবার স্যালনে বা পার্লারে গিয়ে ট্রিটমেন্ট নিতে হবে না। কিছু নিয়ম বা টিপস মেনে চলাই এর মূল কথা।
হেয়ার এক্সপার্টরা এক গোছা চুল নিয়ে ডগা থেকে গোড়ার দিকে আঙুল চালিয়ে চুলের আর্দ্রতা পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন। লো-পোরোসিটির চুল আঙুল চালানোর সময় খুব মসৃণ মনে হয়। এ ধরনের চুলের কিউটিকলগুলো বেশ শক্তভাবে বন্ধ থাকে। আর্দ্রতারোধী। পানিতে রাখলে তা ভেসে ওঠে। হাই-পোরোসিটির চুল বেশ রুক্ষ। এ ধরনের চুলের কিউটিকল একেবারে খোলা থাকে। পানিতে রাখলে ডুবে যায়। মাঝামাঝি পর্যায়ের পোরোসিটিকেই আদর্শ বলা যায়। চুলের শোষণ ক্ষমতা বেশি হলে সহজেই নিস্তেজ ও তৈলাক্ত হয়ে পড়ে। এমনকি দুর্বল ও লম্বা দেখাতেও পারে। তা যথেষ্ট কম থাকলে শুষ্ক ও জটযুক্ত হয়ে যায়, উজ্জ্বলতার অভাব ঘটে।
চুল আলাদা ভাগে ভাগ করে নিতে হবে। পুরো চুলের অবস্থা সম্পর্কে জেনে এবং পোরোসিটি লেভেল নির্ণয়ের পর এর আলাদা অংশগুলো নিয়ে ভাবা যেতে পারে। মাথার ত্বকের অবস্থা, গোড়ার দিকের চুল, মিড লেন্থ এবং চুলের গোড়ার দিকে মনোযোগ দেওয়া জরুরি। তাতে এর প্রতিটি অংশের জন্য আলাদা হেয়ার মাস্ক বেছে নেওয়া সম্ভব হবে। মাল্টি-মাস্কিংয়ে সাধারণত দৈর্ঘ্য ও অবস্থার ওপর ভিত্তি করে চুলের বিভিন্ন অংশে দুই থেকে চার ধরনের মাস্ক প্রয়োজন হয়।
চুল পরিষ্কার ও আর্দ্র থাকলে ঠিকঠাক জায়গায় মাস্ক প্রয়োগ করার নিয়ম। লক্ষ রাখা দরকার, ভেজা যেন না থাকে। হেয়ার শ্যাফট নিয়ে কাজ করার আগে প্রতিটি অংশ আঙুল দিয়ে সাবধানে ঘষে নেওয়া জরুরি। এটি চওড়া দাঁড়ার চিরুনি দিয়ে আঁচড়াতেও সহায়তা করে। প্রতিটি মাস্ক ব্যবহারের পর হাত ধুয়ে নিতে হয়, যাতে একটির সঙ্গে আরেকটি মিশে না যায়। লাগানোর পর মাথা থেকে প্রাকৃতিকভাবে তাপ উৎপন্নের জন্য একটি প্লাস্টিক র্যাপ দিয়ে চুল ঢেকে নেওয়া দরকার। তারপর পনেরো মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে হয়। এর বেশি সময় না রাখাই নিয়ম।
ভালো করে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। এয়ার ড্রায়ার দিয়ে শুকানোর আগে পানি মুছে নেওয়া দরকার। চুলে শুষ্কতার উপর ভিত্তি করে প্রক্রিয়াটি দশ দিন বা তার বেশি সময় পরপর প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। খুব শুষ্ক বা ক্ষতিগ্রস্ত চুলের ক্ষেত্রে অবশ্য আরও কম সময় পরপর মাল্টি-মাস্কিং করলেই চলবে।
মডেল: নাজ
ছবি: ক্যানভাস
মেকওভার: পারসোনা