ফিচার I বাংলা গানের ইউটিউবার
কুঁড়েঘর
একটি ব্যান্ডের ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড হয়েছে ৫০টির বেশি গান। যেগুলো দেখা হয়েছে ১৫০ মিলিয়নের অধিক। ১ দশমিক ২ মিলিয়নের অধিক মানুষের সাবস্ক্রাইব করা এই চ্যানেল চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে জনপ্রিয়তার স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছে ইউটিউবের গোল্ডেন প্লে বাটন; যা বাংলাদেশের কোনো ব্যান্ডের জন্য প্রথম। ব্যান্ডটির নাম কুঁড়েঘর। বর্তমান সদস্য তাসরিফ খান, তানজীব খান, তানভীর সিদ্দিকী, আজিজুল হক, প্রিয়ম মজুমদার, শান্ত, মিঠু, প্রান্ত ও শামস।
শ্রোতাদের কাছে অতি পরিচিত এই ব্যান্ডের শুরু সম্প্রতি, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে। ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তাসরিফ ও তার ছোট ভাই তানজিব কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে বাসার ছাদে বসেই গান গেয়ে সেগুলো রেকর্ড করতেন। এডিটিংয়ের পর সেসব আপলোড হতো রাতে। শুরুতে মোবাইল হ্যান্ডসেটে হতো রেকর্ডিং। পরবর্তীকালে তারা সাউন্ড রেকর্ডার ব্যবহার করতে শেখেন। পুরো গান এক টেকে করতে হতো। যে কারণে একটা গান অনেকবার রেকর্ড করতে হয়েছে নির্ভুল একটা ভিডিও পাওয়ার জন্য। এভাবেই ভিডিও আপলোড করতে করতেই কুঁড়েঘর শিখেছে অডিও ও ভিডিও এডিটিং, ইউটিউবের নানা কায়দাকানুন। ক্রমান্বয়ে বেড়েছে তাদের গানের ভিউ আর চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার।
এভাবে পথ চলতে চলতেই ব্যান্ডটি পায় প্রথম কনসার্টের আমন্ত্রণ। এরপর দু-তিন বছরের মধ্যেই অংশগ্রহণ করা হয়ে গেছে ১২০টির বেশি কনসার্টে। ভারতে গিয়ে পারফর্মও করেছে।
প্রায় শূন্য থেকে শুরু এই ব্যান্ডের এত অল্প সময়ের মধ্যে জনপ্রিয়তা পাওয়ার কারণ একাধিক। ইউটিউবসহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ার প্রশংসনীয় ব্যবহার করতে পারা একটি ফ্যাক্টর, কিন্তু তার চেয়েও বড় ভূমিকা রেখেছে তাদের গানের সহজ কথা আর সুর। শুধু গান গাওয়া নয়, কুঁড়েঘর সব সময় মানুষের আরও কাছে কীভাবে যাওয়া যায়, সে চেষ্টা করে থাকে। এভাবেই জন্ম হয় তাদের ভিন্নধর্মী উদ্যোগ ‘কুঁড়েঘর আড্ডা’র। কোনো কনসার্ট বা অনুষ্ঠান ছাড়াই কুঁড়েঘর ফেসবুকে ইভেন্ট/স্ট্যাটাস কিংবা ফোনে যোগাযোগ করে কোনো একটা নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে অপরিচিত মানুষের সঙ্গে আড্ডা দেয়, গান গায়। এটাই কুঁড়েঘর আড্ডা। এ ছাড়া মানুষের জীবন এবং অপরের বেদনাকে নিজেদের মধ্যে অনুভব করার তাগিদ থেকে ব্যান্ডটির সদস্যরা রাত কাটিয়েছেন রেলস্টেশনে, হাসপাতালে। তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে সারা দিন থেকেছে বৃদ্ধাশ্রমে, শীতের রাতে ঘুরে ঘুরে তহবিলের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছে গান গেয়ে। এভাবেই মানুষের কাছে থেকে, ভালোবাসা পেয়েই এগিয়ে যাচ্ছে কুঁড়েঘর।
গান ফ্রেন্ডস
বাংলাদেশি ব্যান্ড। পাঁচ বছর ধরে এ দেশে ও প্রবাসীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ব্যান্ডটির যাত্রা শুরু ইউটিউবেই। প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য হিসেবে এই ব্যান্ডের মিউজিশিয়ানরা সবাই জনপ্রিয় ইউটিউব ও টিভি তারকা। তামিম মৃধা ও সৌভিক আহমেদই মূলত গান গেয়ে এবং সুর দিয়ে থাকেন। তারা জানান, শুরুতে তাদের সঙ্গে আদনান বাপ্পি। ইউটিউব কনটেন্ট হিসেবে প্যারোডির সঙ্গে কমেডি ব্লেন্ড করে বিনোদন দেওয়াই এই ব্যান্ডের মূল লক্ষ্য। ২০১৫-এর ১৩ মে ব্যান্ডটির জন্ম। সেদিন ঠিক করা হয় তাদের প্রথম প্যারোডি গান ‘আলগা ক্ল্যাসিক্যাল এক্সপার্ট’। এই গানের সাউন্ড রেকর্ড করা হয় ডিএসএলআর ক্যামেরা দিয়ে। পরে দ্বিতীয় ও তৃতীয় গানগুলো রেকর্ডিং হয় আইফোনে এবং পরে লিপসিং করে নেওয়া হয় ভিডিওতে। এভাবে হাতের কাছে পাওয়া ডিভাইস দিয়ে ধারণ করা এই গানগুলো আশাতীত জনপ্রিয়তা পায়।
তামিম ও সৌভিক ছোটকাল থেকে গান করে আসছেন। বেশ কিছু ইনস্ট্রুমেন্ট বাজানোতেও আছে দারুণ দক্ষতা। যা তামিম তার মায়ের কাছ থেকেই পেয়েছেন। দুজনের বাবা-মা গান বা অন্য যেকোনো ক্ষেত্রেই অনেক সাপোর্ট দিয়েছে। তাদের চতুর্থ ও পঞ্চম গান রেকর্ড করেন এবং মিউজিক দেন অকালপ্রয়াত শিল্পী পৃথ্বীরাজ। এরপর ‘রেডিও নেক্সট’ তাদেরকে সুযোগ করে দেয় একটি শোতে অংশ নেওয়ার। ৬ নম্বর গান থেকেই তাদের সঙ্গে মিউজিক কম্পোজার তাহসিন আহমেদ যোগ দেন। তাদের প্রায় তিরিশটি গান রয়েছে ইউটিউবে। তা ছাড়া শর্ট ফিকশন সিরিজ ‘দৌড়া বাজান’-এর টাইটেল গানের মিউজিক দেন প্রীতম হাসান। মাস্টার ডির মতো ইন্টারন্যাশনাল আর্টিস্টের সঙ্গেও আছে তাদের একটি গান। এককথায়, অনেক প্রতিভাবান শিল্পীই গানফ্রেন্ডসের সঙ্গে নানা সময়ে নানা মাত্রায় সম্পৃক্ত হয়েছেন এবং ভবিষ্যতে এ রকম কোলাবোরেশন আরও দেখা যাবে।
তারা নিজেদের কনটেন্টকে শুধু গানেই সীমাবদ্ধ রাখেননি; অভিনয় যোগ করে বিনোদনকে নিয়ে গেছেন অন্য এক মাত্রায়। অনেক টিভি ও ইউটিউব তারকা তাদের কন্টেন্ট নিয়ে প্রায়ই ফিচার করেছে। শামীম হাসান সরকারের মতো জনপ্রিয় টিভি তারকা সৌভিকের বাবার চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তা ছাড়া শাহ্তাজ, জাকি, রুদ্র, আইমান, সৌমিক আহমেদ, সালমান- এ রকম আরও অনেকেই ভিডিওতে এসেছেন।
এখন তারা তাদের অরিজিনাল গান নিয়ে কাজ করছে। প্রস্তুতি নিচ্ছে ২০২১ সালজুড়ে শ্রোতা-দর্শকদের মজার সব কন্টেন্ট দেওয়ার জন্য।
ইফতেখার ইনান
ছবি: সংগ্রহ