সাজসারাই I অসমতায় সাজ
খাপছাড়া ত্বকের মেকআপ কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়। কিছু কৌশলেই তা সহজ হয়ে ওঠে
আনইভেন স্কিন টোন এখনকার আলোচিত একটি সমস্যা। বিভিন্ন কারণে এমনটি হতে পারে। ত্বকে মেলানিনের পরিমাণ বেড়ে গেলে কিংবা হাইপারপিগমেন্টেশনের জন্য এই সমস্যা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থাকে। এমনকি রোদ থেকেই উৎপত্তি হতে পারে এই সমস্যার। সমাধানও রয়েছে। তবে সেটা সময়সাপেক্ষ। আনইভেন স্কিন টোন থেকে অল্প সময়েই রেহাই দিতে পারে সঠিক মেকআপ। কিছু বিষয় খেয়াল রাখলেই খুব সহজে ঢেকে ফেলা যায় এই টোন।
টিপটপ স্কিন
যেকোনো ধরনের মেকআপে ত্বকের সুস্থতার বিষয়টি মনে রাখতে হবে সবার আগে। যত সুস্থ ত্বক, মেকআপের দরকার ততটাই কম পড়বে। সঠিকভাবে ত্বক ক্লিন, স্ক্রাব আর এক্সফোলিয়েট করলে কনসিলার ব্যবহারের প্রয়োজন কমে আসে অনেকাংশেই।
প্রাইম অ্যান্ড ময়শ্চারাইজ
অনেকেই মেকআপ ব্যবহারের আগে প্রাইমার লাগানোকে বেশি প্রাধান্য দেন না। এই প্রক্রিয়া যেকোনো ধরনের ত্বকে মেকআপ মসৃণ হয়ে বসতে সহায়তা করে। আনইভেন স্কিন টোনের ক্ষেত্রে প্রাইমার মাস্ট! এটি ফাউন্ডেশনের বেইজ হিসেবে কাজ করে। ত্বককে ময়শ্চারাইজ করার পাশাপাশি যেকোনো সূক্ষ্ম রেখা, ছিদ্র এবং রিঙ্কেলগুলো সমানভাবে ঢেকে দেয়, যেন ফাউন্ডেশন এসবে আটকে না থাকে। তবে ত্বক তৈলাক্ত হলে অবশ্যই একটি অয়েল ফ্রি প্রাইমার ব্যবহার করা জরুরি। প্রাইমার দেওয়ার এক মিনিটের মাথায় অর্থাৎ ত্বক সম্পূর্ণ শুষ্ক হয়ে ওঠার আগেই ফাউন্ডেশন লাগিয়ে নিতে হবে।
কনসিল
মেকআপ আর্টিস্টদের অনেকের মতে, প্রাইমার ব্যবহার করলেই ফাউন্ডেশন লাগানোর পরিমাণ কমিয়ে আনা যায়। তাই ঠিকমতো কনসিলার ব্যবহারে খেয়াল রাখা জরুরি। চোখের নিচে, বিশেষ করে নাকের চারপাশে এবং গালের উপরের অংশে ফোঁটা ফোঁটা কনসিলার লাগাতে হবে। তারপর ধীরে ধীরে আলতো করে ঘষে মিশিয়ে নিতে হয়।
কভার ইট আপ
অনেকের মধ্যে গাল ভরে ফাউন্ডেশন দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। তবে সবার ক্ষেত্রে তার প্রয়োজন নেই। বুঝে-শুনে ফাউন্ডেশন নির্বাচন করতে হবে। যেখানে আনইভেন টোন রয়েছে, শুধু সেসব জায়গায়ই তা লাগাতে হয়। সাধারণত নাক কিংবা ঠোঁটের চারপাশের এলাকায় এটির দরকার পড়ে। শীতে গালের ত্বক লালাভ হয়ে এলেও মেখে নেওয়া যায়।
ব্লেন্ডিং
ফুল ফেস কভারেজের জন্য একটা ভালো মানের ফাউন্ডেশন ব্রাশ ব্যবহার করা জরুরি। হাতের উল্টো পিঠে অল্প ফাউন্ডেশন নিয়ে সেখান থেকে ব্রাশে লাগিয়ে তারপর মুখত্বকে মাখিয়ে নিতে হবে। মুখের মাঝখান থেকে বাইরের দিকে ব্রাশ দিয়ে স্ট্রোক করে ধীরে ধীরে ফাউন্ডেশন ব্লেন্ড করতে হয়। গলার অংশেও ভালো করে ফাউন্ডেশন ব্লেন্ড করে নিতে হবে। ব্রাশ ছাড়াও ব্লেন্ডিংয়ের আরও দুটি উপায় রয়েছে, স্পঞ্জ কিংবা বিউটি ব্লেন্ডার, এবং হাতের আঙুল। সৌন্দর্যবিশেষজ্ঞদের মতে, আঙুল দিয়ে ফাউন্ডেশন লাগালে হাতের স্বাভাবিক তাপে সুন্দরভাবে সেটি ত্বকে মিশে যায়। বিউটি ব্লেন্ডার ত্বকে অতিরিক্ত ফাউন্ডেশন না রেখে নিজেই তা শুষে নেয়।
ফাইন্ড দ্য ফাউন্ডেশন
স্কিন টোনের সবচেয়ে কাছাকাছি রঙের ফাউন্ডেশন নির্বাচন করতে হবে। মুখত্বকের চেয়ে উজ্জ্বল কিংবা গাঢ় বর্ণের ফাউন্ডেশন নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট না করাই ভালো। কেননা তা ত্বকের অসমান ভাব আরও বেশি ফুটিয়ে তুলতে পারে। শীতে এবং গরমে অনেকেরই স্কিন টোনে পার্থক্য দেখা দেয়। সে ক্ষেত্রে দুটি আলাদা রঙের ফাউন্ডেশন ব্যবহার করা যেতে পারে। আবার কখনো দুটো মিলিয়েও প্রয়োগ করা যায়। ফাউন্ডেশন কেনার আগে হাতের উল্টো পিঠে শেড মিলিয়ে কেনা হয়, যা কখনোই ভালো উপায় নয়। সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি হলো থুতনির নিচের অংশে লাগিয়ে দেখা। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য বেছে নেওয়া যায় ম্যাট ফাউন্ডেশন আর শুষ্ক ত্বকের পরিচর্যায় হাইড্রেটিং ফর্মুলাযুক্ত ফাউন্ডেশন।
পিক দ্য প্রপার কালার
ত্বক লালচে হলে বেছে নেওয়া যেতে পারে ইয়েলো বেইজড ফাউন্ডেশন। কারণ, পিঙ্ক বেইজড ফাউন্ডেশন ত্বকের লালচে ভাব আরও বাড়িয়ে দেবে। ডার্ক সার্কেল ঢেকে ফেলার জন্য ব্যবহার করতে হবে গ্রিন কিংবা অরেঞ্জ টোনের কনসিলার।
ব্রিং দ্য ব্রোঞ্জ ভাইব
ত্বকে একধরনের উষ্ণতা ধরে রাখতে ব্রোঞ্জারের জুড়ি নেই। এটি ব্যবহার করতে অনেক বড় একটা মেকআপ ব্রাশ লাগবে। তাতে একটুখানি ব্রোঞ্জার নিয়ে অতিরিক্ত অংশ ব্রাশ থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। এবার আলতো করে কপালের উপরের অংশ, নাক আর চিকবোনে ব্লেন্ড করতে হয়। এর সঙ্গে একটা ক্রিমি ব্লাশ ব্যবহার করা যায় মুখের একই অংশে।
যেসব বিষয় মনে রাখতে হবে
মেকআপ প্রডাক্ট কেনার ক্ষেত্রে সতর্কতা জরুরি। একটু বেশি টাকা খরচ করে সেরাটা মিললেই ভালো!
ফাউন্ডেশন, কনসিলার, কারেক্টর কিংবা লুজ পাউডার- যা-ই কেনা হোক, খেয়াল রাখতে হবে, যাতে তা স্কিন টোনের সঙ্গে মানিয়ে যায়।
ত্বকে মেকআপ প্রডাক্ট ব্যবহারের সময় অতিরিক্ত ঘষাঘষি করা যাবে না। এতে ডার্ক প্যাচ দেখা দিতে পারে, যা ত্বকের টোন আরও আনইভেন করে দেবে।
মেকআপের পর সেটিং স্প্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে মসৃণভাব আসবে।
অবশ্যই ভালো মানের ব্রাশ কিংবা মেকআপ সরঞ্জাম ব্যবহার করা জরুরি। ত্বককে যত সুস্থ রাখা যাবে, তা ভেতর থেকে ততটাই উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।
মেকআপের সরঞ্জাম নিয়মিত পরিষ্কার এবং যত্নের সঙ্গে সঠিক স্থানে সংরক্ষণ করতে হবে। অপরিষ্কার সরঞ্জামের ব্যবহারও স্কিন টোনে বাজে প্রভাব ফেলতে পারে।
স্কিন টোনের অসমান ভাব বেশি চোখে লাগার মতো হলে ভালো ত্বক বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া যেতে পারে।
শিরীন অন্যা
মডেল: স্মৃতি
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: ফারাবী তমাল