ফরহিম I ম্যাসকুলিন মাস্কনে
নিউ নরমালে পুরুষদের নতুন সমস্যা। নিয়মিত মুখাবরণ পরার ফলেই মুখত্বকে এটি দেখা দেয়। তবে সমাধানও আছে। জানাচ্ছেন শিরীন অন্যা
দিনের পর দিন মাস্ক পরার কারণে সৃষ্টি হয় ‘মাস্কনে’। মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।
মাস্ক এখন সবার সুস্থতা নিশ্চিতের সবচেয়ে বড় উপকরণ। শিগগিরই এই পরিস্থিতির অবসান ঘটছে না। ফলে নিজের সুরক্ষার পাশাপাশি ত্বকের সুস্থতাও জরুরি। তাই জেনে নেওয়া প্রয়োজন মাস্কনের খুঁটিনাটি।
মাস্কনের সমস্যা নতুন নয়। বেশি সময় ধরে হেলমেট, প্যাড- এসব পরে থাকার ফলে খেলোয়াড়দের মধ্যে এটা প্রায় দেখা দেয়। এখন দীর্ঘক্ষণ মাস্ক পরিধানের জন্য ছেলেদের মুখত্বকের হেয়ার ফলিকলগুলো তেল, মরাকোষ, ময়লা কিংবা ব্যাকটেরিয়ার কারণে বন্ধ হয়ে যায়। ফলে চুলকানি, জ্বালাপোড়া, র্যাশ কিংবা একনে হতে পারে। এ ছাড়া মাস্কের নিচে ঘাম ও ময়শ্চার তৈরি হয়ে তা পোরগুলোকে আরও আটকে দেয়, এতে ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি হয়, যা একনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ ছাড়া নাক, গাল কিংবা থুতনির আশপাশে ব্ল্যাকহেডস, হোয়াইট হেডস, পিম্পলের মতো সমস্যাও দেখা দেয়।
কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চললেই রেহাই মিলবে এই সমস্যা থেকে।
সঠিক ফেস মাস্ক
ত্বকের জন্য আরামদায়ক এবং খচখচে ভাবের সৃষ্টি করবে না এমন ফ্যাব্রিকের ফেস মাস্ক বেছে নিতে হবে। প্রতিদিন ব্যবহারের জন্য সার্জিক্যাল মাস্ক আরামদায়ক, একবার পরেই ফেলে দিতে হয়। দীর্ঘ সময় ব্যবহারের জন্য বেছে নেওয়া যেতে পারে আরামদায়ক প্রাকৃতিক ফাইবারে তৈরি মুখাবরণ। কাপড়ের মাস্ক ২-৩ দিন পরপরই ভালোভাবে ধুয়ে ব্যবহার করা যায়। তা ছাড়া মাস্ক জীবাণুমুক্ত রাখতে ব্যাগ বা পকেটের ভেতরের দিক পরিষ্কার থাকা জরুরি। কাপড়ের মাস্ক ধোয়া খুবই সহজ। মুখাবরণটি ভিজিয়ে পরিমাণমতো বডি ওয়াশ নিতে হবে। এবার ভালো করে ঘষে ধুয়ে ফেলতে হবে মাস্কটি। সারা রাত শুকিয়ে নিলেই পরদিন আবার নতুনের মতো ব্যবহার করা যাবে!
আরও কিছু বিষয় জেনে রাখতে হবে-
মাস্কটি যেন মুখে আঁটসাঁট হয়ে বসে, কিন্তু ত্বকে খুব বেশি চেপে না থাকে
মুখাবরণটিতে দুটো কিংবা তার বেশি স্তর থাকতে পারে
কাপড়ের মাস্ক হলে যেন আরামদায়ক হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। এ জন্য সুতির ফ্যাব্রিক ভালো
কার্যকর ডিটারজেন্ট
মাস্ক ধোয়ার জন্য ডিটারজেন্ট ব্যবহার করতে চাইলে সেটি সম্পর্কেও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। যতটা সম্ভব গন্ধ ছাড়া ডিটারজেন্ট বা ডাই ব্যবহার করা যেতে পারে। কারণ, মাস্ক অন্য কাপড় থেকে আলাদা, এটা সরাসরি মুখের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। সুগন্ধি ডিটারজেন্টে তুলনামূলকভাবে ত্বকে বেশি ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
ফেস পরিষ্কার রাখা
মাস্ক পরার আগেই ভালোভাবে মুখ ধুয়ে নেওয়া জরুরি। এ ক্ষেত্রে সফট উপাদানে তৈরি ক্লিনজার বেছে নেওয়া দরকার। যেটি খুব সহজেই ত্বকের ময়লা, তেল, ঘাম ও ব্যাকটেরিয়া দূর করে। বেশি সুগন্ধি কিংবা অ্যালকোহলযুক্ত ক্লিনজার এড়িয়ে চলাই ভালো। মুখ ধোয়ার পর অবশ্যই ভালো মানের হালকা একটা ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। এটি ত্বক আর মাস্কের মধ্যে একটি হালকা প্রতিবন্ধক হিসেবে আজ করবে। মাস্কনের পরিমাণ বেশি হলে ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিয়ে বেনজয়েল পারঅক্সাইড কিংবা স্যালিসাইলিক অ্যাসিডযুক্ত ক্লিনজার ব্যবহার করা যেতে পারে।
ত্বকের বিশ্রাম
মাস্কের ব্যবহার থেকে ত্বককে খানিকটা বিশ্রাম দেওয়া দরকার। টানা সর্বোচ্চ ৪ ঘণ্টার বেশি মুখাবরণ পরে থাকা ঠিক নয়। ৪ ঘণ্টা পরপর অন্তত ১৫ মিনিটের জন্য মাস্ক খুলে রাখা ভালো। এতে ত্বক একটু শ্বাস নেওয়ার সময় পাবে। তবে এই মাস্ক ব্রেক কখনোই খুব বেশি মানুষের মাঝে বসে নেওয়া যাবে না। নিজের বাসায় অথবা বাইরে হলে সামাজিক দূরত্ব মেনেই এই ব্রেক নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। তবে তার আগে হাত ধুয়ে নেওয়া জরুরি।
প্রতিকার
এত সব প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়েও মাস্কনে সৃষ্টি হলে তা প্রতিকারেরও কিছু উপায় রয়েছে-
ডিপ ক্লিনজিং ফেস মাস্ক : প্রতিদিন রুটিন করে মুখ ধোয়াই যথেষ্ট নয়। সপ্তাহে অন্তত এক দিন ডিপ ক্লিনজিং করা দরকার। বেছে নেওয়া যায় প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি যেকোনো ভালো মানের ফেস মাস্ক। বাসায়ও তৈরি করা যায়। কমলা আর মধু দিয়ে তৈরি হতে পারে একটা ফেস মাস্ক। আধা কাপ বিশুদ্ধ মধুর সঙ্গে তিন টেবিল চামচ কমলার রস ও এক টেবিল চামচ সি সল্ট মিশিয়ে নিতে হবে। এবার মিশ্রণটি ত্বক শুকনো অবস্থায় লাগিয়ে রাখতে হবে ১৫ মিনিট। শুকিয়ে এলে কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হয়। এ ছাড়া প্রতিটি উপাদান এক টেবিল চামচ করে গ্রিন টি, মধু, লেবুর রস আর চিনি মিশিয়েও একই উপায়ে ব্যবহার করা যায়। এগুলোর পাশাপাশি ভালো ব্র্যান্ডের ক্লে মাস্কও ব্যবহার করা যেতে পারে।
নাইট টাইম ময়শ্চারাইজার: মাস্কনে থেকে রেহাই পেতে বেডটাইম স্কিনকেয়ার রুটিনে মনোযোগ দিতে হবে একটু বেশি। রাতে ঘুমানোর আগে ব্যবহার করার জন্য ত্বক মেরামত ও সুস্থতা পুনরুদ্ধারের উপাদান আছে এমন একটি ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন নিয়াসিনামাইড, ক্যাক্টাস এক্সট্র্যাক্ট কিংবা রোজহিপ অয়েল। এসব উপাদান ত্বকের মসৃণতা বৃদ্ধির পাশাপাশি তেলের জমাট বাঁধার প্রবণতা রোধ করে।
টপিক্যাল অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম: মুখাবরণের নিচে ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার খুবই স্বাভাবিক, যার থেকে মাস্কনে হয়। তাই প্রায় সময়ই ডার্মাটোলজিস্টরা টপিক্যাল অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম কিংবা জেল ব্যবহারের পরামর্শ দেন। এই ক্রিম মাস্ক পরার আগে যেসব অংশে মাস্কনে রয়েছে, সেখানে লাগাতে হয়। তবে এসব ত্বক বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার না করাই শ্রেয়।
মডেল: হান্নান
ছবি: ফারাবী তমাল
মেকওভার: পারসোনা মেনজ