কুন্তলকাহন I হেয়ারশিয়াল
ফেশিয়ালের প্রেরণা থেকে সৃষ্টি হয়েছে চুল পরিচর্যার এই প্রক্রিয়া। নতুন ও কার্যকর। এর রয়েছে তিনটি ধাপ। লিখেছেন শিরীন অন্যা
চুলের যত্ন আজকাল কেবল ওয়াশিং ড্রাইং কিংবা ডিপ কন্ডিশনিংয়ে সীমাবদ্ধ নয়। ফেশিয়ালের মতো কিছু ধাপ মেনে হেয়ারশিয়ালও ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। প্রতি মাসেই এটি অনুসরণ করলে চুলও হয়ে উঠতে পারে প্রাণবন্ত আর স্বাস্থ্যোজ্জ্বল।
প্রি-ওয়াশ ট্রিটমেন্ট
হেয়ারশিয়ালের জন্য চুল এবং স্ক্যাল্পকে প্রস্তুত করে নিতে হয়। এটিই প্রি-ওয়াশ ট্রিটমেন্ট। দু ধরনের স্ক্যাল্পের ক্ষেত্রে আলাদা ট্রিটমেন্টের পরামর্শ। তৈলাক্ত স্ক্যাল্পের জন্য অবশ্যই প্রথমে স্ক্যাল্প ডিটক্স করে নিতে হবে। এটা স্ক্যাল্পে থাকা অতিরিক্ত তেল, ময়লা কিংবা টক্সিন দূর করে পরবর্তী সময়ে হেয়ারশিয়ালের যেকোনো ধাপের উপাদান স্ক্যাল্পে বসতে সাহায্য করবে। এ জন্য অবশ্যই প্রাকৃতিক একটি মাস্ক বেছে নিতে হবে। এটি সহজেই ঘরে তৈরি করা যায়। ২ টেবিল চামচ করে ক্লে পাউডার, অ্যাকটিভেটেড চারকোল পাউডার, অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার ও ২ টেবিল চামচ পানি একসঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হয়। মিশ্রণটি তৈরির সময় অবশ্যই প্লাস্টিক কিংবা কাঠের চামচ বা বাটি ব্যবহার করতে হবে। মেটালে অ্যাকটিভেটেড চারকোলের প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। ভালো করে প্যাকটি চুলের গোড়ায় মাখাতে হবে। পুরো স্ক্যাল্পে লাগিয়ে নেওয়ার পর চুল ভালোভাবে বেছে নিতে হয়। চাইলে শাওয়ার ক্যাপও ব্যবহার করা যেতে পারে। ২০ থেকে ৩০ মিনিট রেখে ভালো করে মাথা ধুয়ে নিতে হবে। তারপর স্বাভাবিক উপায়েই শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার দিতে হবে। অন্যদিকে শুষ্ক ও ক্ষতিগ্রস্ত চুল কিংবা শুষ্ক স্ক্যাল্পের জন্য প্রয়োজন নারিশিং অয়েল ট্রিটমেন্ট। এর জন্য নারকেল তেল কিংবা অলিভ অয়েল কুসুম গরম করে চুলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত ভালোভাবে লাগিয়ে নিতে হবে। এবার চুল বেঁধে শাওয়ার ক্যাপ পরে তার ওপর একটা গরম তোয়ালে মাথায় প্যাঁচাতে হয়। ৩০ মিনিট এভাবে রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। শুষ্ক চুলের জন্য কন্ডিশনার মাস্ট!
ডাবল/ডিপ ক্লিনজিং
প্রি-ওয়াশ ট্রিটমেন্টের পর, একটা ভালো ব্র্যান্ডের ক্ল্যারিফাইয়িং শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিতে হবে। নিউট্রিজেনার অ্যন্টি-রেসিডিউ শ্যাম্পু এ ক্ষেত্রে বেশ কার্যকর। এর ফর্মুলা তাৎক্ষণিকভাবেই স্ক্যাল্প পরিষ্কার করবে এবং এতে জমে থাকা প্রডাক্ট বিল্ডআপ সরিয়ে চুলে ভলিউম আনবে। এ ছাড়া বাম্বল বি ব্র্যান্ডের সানডে শ্যাম্পুও ব্যবহার করা যেতে পারে। এর রোজমেরি লিফ কিংবা রুট এক্সট্র্যাক্টের মতো উপাদান স্ক্যাল্পকে সতেজ রাখবে। ক্ল্যারিফাইয়িং শ্যাম্পু না থাকলে প্রতিদিনকার শ্যাম্পুও ব্যবহার করা যায়। এ ক্ষেত্রে চুল ধুয়ে নিতে হবে দুবার।
নারিশিং
চুলের বেশির ভাগ সমস্যারই শুরু রুক্ষতা থেকে। তা হয় চুল যথাযথ পুষ্টি না পেলে। তাই হেয়ারশিয়ালের তৃতীয় ধাপটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ডিটক্সিং কিংবা ডিপ ক্লিনজিংয়ের পরে চুলের ময়শ্চার ফিরিয়ে আনতে নারিশিং অত্যন্ত জরুরি। চুলে একটা নারিশিং হেয়ার মাস্ক লাগিয়ে নেওয়া যেতে পারে। বাজারে এখন বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ভালো হেয়ার মাস্ক পাওয়া যায়। স্ক্যাল্প কিংবা চুলের ধরন বুঝে তা বেছে নিতে হবে। কালার করা থাকলে কিংবা বেশি ড্যামেজড হয়ে গেলে এমন একটা মাস্ক কিনতে হবে, যা চুলে পুষ্টি জোগানোর পাশাপাশি ক্ষতি কমিয়ে আনতেও সাহায্য করবে। অলাপ্লেক্স ব্র্যান্ডের হেয়ার পারফেক্টর এমনই একটি মাস্ক। কোঁকড়া চুলের জন্যও আলাদা কিছু মাস্ক রয়েছে- বম্বা কার্লসের ফরবিডেন। এর পিস্তাচিও ওয়েল আর সিনামন এক্সট্র্যাক্ট চুলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত পুষ্টি জোগায় এবং হেয়ার ফলিকলে ময়শ্চার ও ভিটামিনের সঞ্চার করে। ফলে চুল মজবুত হয়। মাস্ক যেটাই হোক না কেন, চুল ভেজা থাকা অবস্থায় ব্যবহার করতে হবে। এরপর ৫-৭ মিনিট তা রেখে খুব ভালো করে চুল ধুয়ে নিতে হবে। পরে মাইক্রোফাইবারের তোয়ালে কিংবা একটা টি-শার্ট দিয়ে ধীরে ধীরে চেপে মুছতে হয়। অতঃপর স্বাভাবিকভাবেই শুকিয়ে নেওয়া যায়। চুল শুকানোর পর একটা ভালো মানের লিভ-ইন কন্ডিশনার মাখানো জরুরি। জ্যামাইকান ব্ল্যাক ক্যাস্টর অয়েল লিভ-ইন কন্ডিশনার বেশ জনপ্রিয়। এ ছাড়া প্যানটিন, সানবাম, লিভিং প্রুফ ইত্যাদি ব্র্যান্ডেরগুলোও ভালো মানের।
হাইড্রেটিং
ভালোভাবে শুকিয়ে নেওয়ার পর হেয়ারশিয়ালের শেষ ধাপে এমন একটা হেয়ার অয়েল লাগিয়ে নিতে হবে, যা চুলে মসৃণ এবং চকচকে ভাব আনার পাশাপাশি ময়শ্চার ধরে রাখতে সহায়ক। এ ছাড়া তেলের ফ্যাটি অ্যাসিড স্ক্যাল্পের ওপর একটা প্রতিরক্ষামূলক লেয়ার তৈরি করবে। ধাপটি অবশ্যই চুল পুরোপুরি শুকিয়ে যাওয়ার পর সম্পন্ন করতে হবে। কারণ, ভেজা চুলে তেলের কার্যকারিতা কোনোভাবেই পুরোপুরি পাওয়া যাবে না। এই ধাপে তেল হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে জুন ব্র্যান্ডের স্যাফরন হেয়ার অয়েল। দাম একটু বেশি হলেও এর সব উপাদান যথেষ্ট কার্যকর। এটা সব ধরনের চুলের উপযোগী। এমনকি ড্যামেজড হলেও। দুফোঁটা তেল হাতের তালুতে ঘষে আগে চুলের গোড়ায় ও পরে মাঝামাঝি অংশে আলতো করে লাগিয়ে নিতে হবে। এটা ছাড়াও মেলানিনের মাল্টি ইউজ পিওর অয়েল ব্লেন্ডও এখন জনপ্রিয়। কারণ, এটি একেবারেই তেলতেলে ভাব তৈরি করে না। অরগান অয়েল, আমন্ড অয়েল, জোজোবা অয়েল এবং ভিটামিন ই-র মতো উপাদান দিয়ে তৈরি এই তেল চুল রুক্ষ হওয়া থেকে বিরত রাখে। এ দুটো না থাকলেও এসব উপাদান আছে এমন তেলও ব্যবহার করা যেতে পারে।
মডেল: ইফা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: জিয়া উদ্দিন