এডিটরস কলাম I উৎসব হোক উপভোগ্য
সুস্থতা সৌন্দর্যের ভিত্তি, একইভাবে সৌন্দর্যও মন ও শরীর সতেজ রাখে
উৎসব এবারও বাড়িতেই, পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে। সময়ের প্রয়োজনে। কিন্তু এটা তো কথার কথা। কেননা, আজকের ভার্চ্যুয়াল দুনিয়ায় ঘর আর বাহির, পরিবার ও সমাজ- সব একাকার। সুতরাং প্রয়োজন হোক কিংবা বিনোদনই হোক, কোনো কিছুতেই অপূর্ণতা থাকছে না। কিন্তু আমরা যে আরও বেশি গ্যাজেট-নির্ভর হয়ে যাচ্ছি! এর অনেক ক্ষতিকর প্রভাব তো পড়ছেই শরীর ও মনে। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে নতুন পথ খোঁজা দরকার আনন্দে সময় কাটানোর জন্য। খুব জরুরি কাজ ছাড়া গ্যাজেটের ব্যবহার পরীক্ষামূলকভাবে কিছুদিনের জন্য বন্ধ করে দিলেই দেখা যাবে, শরীর আগের চেয়ে সতেজ হয়ে উঠছে। মাথাধরা, অনিদ্রা ইত্যাদি কমে এসেছে।
দুই
গ্যাজেট-নির্ভর বিনোদনের জগৎ থেকে বের হয়ে আমরা কীভাবে উৎসবের এই দিনগুলোকে আনন্দে ভরিয়ে তুলব? নিজেকে ব্যস্ত রাখার মাধ্যমেই হতে পারে সময় উদযাপনের ভালো উপায়। দৈনন্দিন কাজের বাইরে বই পড়া, গান শোনা ও গাওয়া, সিনেমা দেখা, বারান্দা বা অন্দরের গাছগাছালি পরিচর্যা, রান্নায় নতুন নিরীক্ষা, সাজপোশাকের যত্ন নেওয়া, নানান ধরনের ইনডোর গেমস ইত্যাদির মধ্য দিয়ে অবসরের একঘেয়েমিও দূর করা যায়। এতে মন প্রফুল্ল থাকবে, শরীরও হয়ে উঠবে চাঙা। তা ছাড়া নিয়মিত শরীরচর্চা তো রয়েছেই। এমনকি গৃহসজ্জার নানান উপকরণ ঝেড়ে-মুছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা যেতে পারে। এতেও নিজের মনকে আনন্দিত করে তোলা যায়। অনিদ্রা দূর করারও ভালো উপায় এগুলো। অবসর মুহূর্তগুলো ভরিয়ে তোলা যায় সুন্দর ও গঠনমূলক চিন্তার মধ্য দিয়ে। সেগুলো প্রিয়জনের সঙ্গে শেয়ার করেও মন আনন্দময় হয়ে উঠতে পারে। এখন অনেকেই বাড়িতে এসব কাজের মাধ্যমে নিজেদের ব্যস্ত রাখছেন। শরীর ও মন ভালো থাকলে তা চেহারায়ও প্রতিফলিত হয়। কেননা, আমরা সবাই জানি, সুস্থতাই সৌন্দর্যের ভিত্তি।
তিন
এবারও ঈদের দিনগুলোতে আমরা কোথাও ঘুরতে যাব না। বাড়িতে সময় কাটাব পরিবারের সঙ্গে। এটা কেবল প্রয়োজন নয়। বিনোদনও। কীভাবে? উৎসবের স্বাভাবিক সময়ে আমরা আউটিংয়ে চলে যাই যে যার মতো, ফলে পরিবারের সব সদস্য নিয়ে একসঙ্গে উদযাপন হয়ে ওঠে না। এখনকার নতুন বাস্তবতা ঘরের মধ্যে সবার সঙ্গে উৎসব উদযাপনের সুযোগ করে দিয়েছে। বাগধারায় যাকে আমরা ‘শাপে বর’ বলি। এবারও যদি এমনটি হয়, তাতে আমাদের সময়টা যেমন সুন্দর হয়ে উঠবে, তেমনি সংক্রমণের ঝুঁকিও এড়াতে পারব। উদ্বেগ থেকে মুক্তি পাব।
চার
সাজতে তো হয়ই। কিন্তু বাইরে যাওয়ার জন্য আমাদের যেভাবে নিজেকে সাজাতে হয়, সেটি করা যাচ্ছে না। জমকালো পোশাক আমরা হয়তো পরব না। আবহাওয়া ও ঘরে থাকার উপযোগী পরিধেয়গুলোই এ সময়ে গুরুত্ব পাবে। হোক তা নতুন ও ফ্যাশনেবল। তবে যে কথা আগেই বলেছি, সুস্থতা সৌন্দর্যের ভিত্তি, একইভাবে সৌন্দর্যও মন ও শরীরকে সতেজ রাখে। সে জন্যই সাজপোশাকের দিকে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। অবসরের একটা মুহূর্ত বেছে নিতে হবে নিজেকে সাজানোর কাজে। পরিবারের সবাই মিলে মিনিমাল পোশাকের ঔজ্জ্বল্যে, হালকা রূপচর্চার মধ্য দিয়ে উৎসবমুখর হয়ে ওঠা যায়। কৃত্রিম উপকরণ এড়িয়ে ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক উপাদানে সেরে নেওয়া যায় ত্বক আর চুলের যত্ন ও পরিচর্যা। সবাইকে নিয়ে প্রাণবন্ত থাকা যায় নিজ বাড়িতেই।
পাঁচ
শুরু হয়েছে করোনার নতুন তরঙ্গের পালা। গত বছরের ধকল কাটিয়ে আমরা নিশ্চয় নিজেদের নিরাপদ রাখার শারীরিক ও মানসিক শক্তি অর্জন করেছি। জীবনের জন্য যা কিছু দরকার- সবই আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে। সতর্কতার মধ্যেই। মেকআপের ব্যক্তিগত উপকরণগুলো অন্যকে ব্যবহার করতে দেব না। নিজেও অন্যেরটি ব্যবহার করব না। নিজের কাজগুলো নিজেই করব। প্রত্যেকের সুস্থতাই জরুরি। কিন্তু উৎসবের আনন্দ যেন অটুট থাকে। জীবন কেবল সংগ্রামে অতিবাহিত করার বিষয় নয়, একে উপভোগ্য করে তুলতে হয়। সেজন্য সাজাতে হয় নিজেদের। তাতেই দেহ-মন ফুর্তিতে ভরে ওঠে।