আলাপন I থিয়েটার আমার একমাত্র আরাধনা —নুনা আফরোজ
অভিনেত্রী এবং নির্দেশক। দেশের অন্যতম নাট্যসংগঠন প্রাঙ্গণে মোর-এ কাজ করছেন। ক্যারিয়ার, পারিবারিক এবং সমসাময়িক নানা প্রসঙ্গে কথা বলেছেন ক্যানভাসের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাহমুদ সালেহীন খান
ক্যানভাস : কেমন আছেন?
নুনা আফরোজ : করোনা নামক মহামারির হাত থেকে এখনো বেঁচে আছি। এটাই তো অনেক। এখন সুস্থ থাকাটাই অনেক জরুরি।
ক্যানভাস : করোনাকালীন উপলব্ধি কী?
নুনা আফরোজ : পৃথিবীজুড়ে মানবজাতির ওপর এত বড় বিপর্যয় বোধ হয় আর কখনো আসেনি। খুব দুঃসময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। বিশ্ব প্রকৃতির কাছে আমরা খুব অসহায়। আমাদের অহংকার করার মতো কিচ্ছু নেই। চোখে দেখছি না এমন একটি জীব মানবজাতিকে কেমন কোণঠাসা করে ফেলল। আমাদের সবাইকে সবার পাশে দাঁড়াতে হবে। ভরসা দিতে হবে, সান্ত¦না দিতে হবে। বিশেষ করে সরকারের বেঁধে দেওয়া স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলতে হবে। আমরা যদি সচেতন না হই, তাহলে এই ভাইরাস থেকে মুক্ত হওয়া খুব কঠিন হয়ে পড়বে।
ক্যানভাস : করোনাকালীন বন্দিজীবন কেমন কাটছে?
নুনা আফরোজ : আমার পুরো পরিবার থিয়েটারের সঙ্গে জড়িত। থিয়েটার ছাড়া আমাদের ভাবনায় অন্য কিছু নেই। এখন থিয়েটারের কাজ অনেকটা কমে গেছে। পরিবারকে সময় দিচ্ছি। বই পড়ছি। নতুন ক্যারেক্টার, গল্পের থিম মাথায় আসছে। সেগুলো নিয়ে আলোচনা করছি। এসব নিয়েই কাটছে।
ক্যানভাস : কদিন আগে প্রাঙ্গণে মোর-এ একটি বড় ভাঙন দেখা গেছে। এটি নিয়ে কী বলবেন?
নুনা আফরোজ : আসলে এটি বলার কিছু নেই। দল যখন বড় হয়, নানা ধরনের সংকট তৈরি হয়। যোগ্যরা বেশি কাজ করার সুযোগ পায়। যারা পায় না, তারা মনে করেন বঞ্চিত হচ্ছেন, এতে ক্ষোভ তৈরি হয়। পেশাগত জায়গা থেকে এটা হতেই পারে। দিন শেষে আমরা সবাই থিয়েটারকর্মী। থিয়েটার করি। থিয়েটারের জন্য ভালো কিছু করতে চাই। যারা দলত্যাগ করেছেন, তাদের জন্য শুভকামনা থাকল। আমরা যারা একই পরিবারে আছি, সবাই মিলে চেষ্টা করছি—আরও ভালো কীভাবে করা যায়।
ক্যানভাস : আমাদের দেশে তো থিয়েটার এখনো পেশাদারত্বের জায়গায় পৌঁছায়নি? এটা নিয়ে আপনার অভিমত কী?
নুনা আফরোজ : এটি খুব দুঃখজনক। আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছর অতিক্রম করেছি কিন্তু আমাদের থিয়েটার এখনো পেশাদারত্বের জায়গায় পৌঁছায়নি। করোনার এই দুঃসময়ে আমাদের থিয়েটারকর্মীরা শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গেছেন। অনেকে ভ্রাম্যমাণ পেশার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। আমরা একটি প্রতিবাদী কর্মসূচি নিয়েছিলাম। থিয়েটারকর্মীদের রুটি-রুজির জন্য ভ্রাম্যমাণ ভ্যানে করে সবজি বিক্রির কর্মসূচি। সবজি বিক্রির টাকা দিয়ে কিছু থিয়েটারকর্মীর এক বেলা খাবারের ব্যবস্থা হয়েছে। সরকার এক বছর ধরে গার্মেন্টস মালিকদের যে পরিমাণে প্রণোদনা দিয়েছে, থিয়েটারকর্মীরা সেই তুলনায় নগণ্য প্রণোদনা পেয়েছেন। ঢাকাতেই শিল্পকলা থিয়েটারের জন্য মঞ্চ রয়েছে তিনটি আর বেইলি রোডের মহিলা সমিতির মঞ্চ। এই চারটি মঞ্চে থিয়েটারের কর্মীরা ভাগাভাগি করে তাদের নাটক মঞ্চস্থ করছে। বাইরের দেশের তারকারা এলে বড় বড় স্পনসর প্রতিষ্ঠান পাশে দাঁড়িয়ে যায়। অথচ আমাদের দেশে এত ভালো নাটক হচ্ছে, আমরা স্পনসরের জন্য ভালো নাটক বারবার মঞ্চস্থ করতে পারছি না। একটি ভালো উৎসব করতে গেলে ভিখারির মতো স্পনসর প্রতিষ্ঠানের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়। এই হলো ঢাকা শহরের চিত্র। আমাদের দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের চিত্র আরও ভয়াবহ। শুধু থিয়েটারকেই পেশা হিসেবে নিয়ে সংসার চালাবে, এ রকম দুঃসাহস স্বাধীনতার ৫০ বছরেও আমরা অর্জন করতে পারিনি। কিন্তু কেন পারিনি? এখানে সরকারের দায়বদ্ধতা আছে। প্রতিটি জাতি সভ্য হয়েছে তার সংস্কৃতির ওপর ভর করে। সংস্কৃতিকর্মী আর নাট্যকর্মীরা জাতির আলোকবর্তিকা। আমাদের সবাইকে চেষ্টা করতে হবে।
ক্যানভাস : আপনি টিভি নাটক থেকে দূরে সরে এলেন কেন?
নুনা আফরোজ : আমার একমাত্র আরাধনার জায়গা হচ্ছে থিয়েটার। আগে ঢাকা শহরে তেমন জ্যাম ছিল না। সহজেই এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়া যেত। এখন ট্রাফিক জ্যাম আমাদের অনেকটা সময় নিয়ে যায়। থিয়েটার ভালোভাবে না করলে অন্য মাধ্যমেও ভালোভাবে কাজ করা যায় না। তাই থিয়েটার করে যতটুকু সময় বাঁচে, নাটকে আর মুভিতে অভিনয় করি। এখন অবশ্য মোটেও টেলিভিশন নাটকে আগ্রহ পাই না।
ক্যানভাস : আগ্রহ না পাওয়ার কারণ কী?
নুনা আফরোজ : ভালো গল্প নেই। চরিত্র নেই। দর্শকদেরকে জোর করে নাটক দেখানো হচ্ছে। আমি বলছি না, আমাদের দেশে ভালো নাটক হয় না, ভালো নাটক হচ্ছে। কিন্তু মানসম্পন্ন নাটকের খুব অভাব।
ক্যানভাস : আমাদের টিভি নাটক নিয়ে দর্শকদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। বিদেশি সিরিয়ালের দিকে দর্শকের আগ্রহ দেখে চ্যানেলগুলো বিদেশি সিরিয়াল প্রচার করছে বেশি। এ প্রসঙ্গে আপনার অভিমত কী?
নুনা আফরোজ : টিভি নাটক থেকে দর্শকেরা অনেকটা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। তার অন্যতম কারণ, এখনকার নাটকে ভালো গল্প নেই। মনে রাখার মতো চরিত্র নেই। একই শিল্পী ঘুরেফিরে একই চরিত্রে অভিনয় করছেন। আর নির্মাতারা জোর করে নাটক বানাচ্ছেন। দর্শকদের জোর করে হাসানোর চেষ্টা করছেন। দর্শক কিন্তু রিমোট কন্ট্রোল হাতে নিয়ে ভারতীয় কোনো চ্যানেলে ঢুকে যাচ্ছে, পরে আর দেশের নাটকে ব্যাক করছে না। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে বিজ্ঞাপন। আমাদের দেশে ৩০ মিনিটের নাটকে যদি ১০ মিনিটের বিজ্ঞাপন দেখানো হয়, তাহলে কী করে দর্শকদের আগ্রহ থাকে। দুই বছর হলো দর্শকদের একটি অংশ বিদেশি সিরিয়ালে ঝুঁকেছে। দীপ্ত টিভিতে সুলতান সুলেমান প্রচারিত হওয়ার পর থেকেই এ প্রবণতা বেশি। বিদেশি সিরিয়ালগুলোতে সুন্দর গল্প থাকে, চরিত্রে থাকে উত্তেজনা। এটিই দর্শকদের টানছে বেশি। দর্শক ধরে রাখতে হলে দেশি নির্মাতাদের ভাবতে হবে দর্শকের রুচি সম্পর্কে। ইচ্ছেমতো সেটে এসে নাটক বানালাম আর দর্শকদের গেলানোর চেষ্টা করলাম, তাহলে কিন্তু হবে না। ভালো নাটক যে হচ্ছে না, তা নয়। কিন্তু খারাপ নাটকের ভিড়ে ভালো নাটকগুলো ফোকাস হচ্ছে না।
ক্যানভাস : অভিনয় থেকে নির্দেশনায় আসার গল্পটি কী ছিল?
নুনা আফরোজ : অভিনয় করব, সে কারণেই আমি নির্দেশনায় এসেছি। আসলে সব অভিনেতার মধ্যেই একজন পরিচালক বসবাস করে। ভালো স্ক্রিপ্ট করব, ভালো চরিত্রে অভিনয় করব—আসলে সেই ইচ্ছা থেকেই নির্দেশনায় আসা। আমি রবীন্দ্রনাথের উপন্যাস চার অধ্যায় থেকে প্রথম মঞ্চনাটকে নির্দেশনা দিই। আমি যখন উপন্যাসটি পড়লাম, তখন ভাবছিলাম কাকে দিয়ে নাট্যরূপ দেওয়াব। সে কত দিনে কাজটি করবে, আমার মনের মতো করতে পারবে কি না, নানা প্রশ্ন। এসব ভাবতে ভাবতে নিজেই কাগজ-কলম নিয়ে বসে গেলাম। এভাবেই আমার নাট্য নির্দেশনায় আসা।
ক্যানভাস : আবৃত্তি, অভিনয়, নির্দেশনা এবং মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র—কোন মাধ্যমে আপনি কাজ করে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?
নুনা আফরোজ : আগেই বলেছি, থিয়েটার আমার জীবন। আমার আরাধনা। থিয়েটারকেই আমি সময় দিই বেশি। একজন শিল্পীর কাজ হচ্ছে সমাজকে, রাষ্ট্রকে, সংস্কৃতিকে প্রতিনিধিত্ব করা। মাধ্যম যেখানেই হোক, তাতে আপত্তি নেই। তবে সবার আগে থিয়েটার।
ক্যানভাস : আপনার সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবার গল্প শুনতে চাই।
নুনা আফরোজ : আমার জন্মের আগেই বাবা হারমোনিয়াম কিনে রেখেছিলেন। তার শখ ছিল, মেয়ে হলে তাকে গান শেখাবেন। তিনি পেশায় ব্যবসায়ী হলেও খুব সংস্কৃতিমনা ছিলেন। বরিশালে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। ছোটবেলায় গানের শিক্ষক রেখে দিলেও পরে আর গান শেখা হয়নি। তবে কবিতা আবৃত্তি ও অভিনয় করতাম। আমি যখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ি, তখন থেকে রবীন্দ্রনাথের বই পড়তে ভালো লাগত। বাবা সঞ্চয়িতা কিনে দিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে এভাবেই পরিচয়। স্কুলের পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি আমার রবীন্দ্রনাথের কবিতার বই এবং গানের সঙ্গে পরিচয় হয়। বুঝে না বুঝে তখন থেকেই রবীন্দ্রনাথের প্রেমে পড়ে যাই আমি। নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক সাংস্কৃতিক চর্চার সঙ্গে যুক্ত হই। বরিশাল আবৃত্তি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আবৃত্তি করতে করতে প্রথম মঞ্চনাটকে অভিনয় করি লালসালুতে। আমি তখন কিশোরী জামিলার চরিত্রে অভিনয় করেছি। সাবসিডিয়ারি দিয়ে ঢাকায় এসে নাগরিকে যোগ দিই। আর বর্তমানে আছি আমাদের নাট্যদল প্রাঙ্গণে মোর-এ। এর মাঝখানে কিছু টিভি নাটক এবং চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছি।
ক্যানভাস : আপনার শৈশবের কথা জানতে চাই?
নুনা আফরোজ : ভীষণ রকমের ঘরকুনো মেয়ে ছিলাম। বাড়ির উঠোন পর্যন্ত ভালোভাবে চিনতাম না। আমার শৈশব ঘরের মধ্যেই কেটেছে বলা যায়। বন্ধুরা ছিল সিনিয়র। যেমন বাবার বন্ধুরা ছিল আমারও বন্ধু।
তবে সবচেয়ে ভালো বন্ধু ছিল আমার বাবা। স্কুলে পড়লে তো কিছু বন্ধু হয়, কিন্তু বাবার চেয়ে ভালো বন্ধু কেউ ছিল না। খুব বন্ধুবৎসল পরিবেশে বড় হয়েছি। যেহেতু শান্ত স্বভাবের মেয়ে ছিলাম, তাই আমার শৈশবের দুষ্টুমির কোনো স্মৃতি নেই।
ক্যানভাস : বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের শৈশব চার দেয়ালে যন্ত্রের মধ্যে বন্দি—অনেকেই অভিযোগটি করেন। আপনার অভিমত কী?
নুনা আফরোজ : এর জন্য ছেলেমেয়েরা যত না দায়ী, তার চেয়ে বেশি দায়ী হচ্ছি আমরা বাবা-মায়েরা। আমরা কতটুকু তাদেরকে সময় দিচ্ছি। তাদের নিয়ে ঘুরতে বের হচ্ছি। সবাই যে যার মতো ব্যস্ত। এখন পারিবারিক আড্ডা কমে গেছে। ক্রিয়েটিভ আড্ডাও নেই। এই জায়গাটা দখল করে নিয়েছে ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ। আমি মনে করি, বাংলাদেশ অনেক দিক থেকে এগিয়েছে ঠিক, কিন্তু একদিক দিয়ে পিছিয়ে আছে অনেক। আমাদের ছেলেমেয়েরা মেধার দিক দিয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে এবং নানা রকমের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে।
ক্যানভাস : এর থেকে উত্তরণের পথ কী?
নুনা আফরোজ : বাবা-মাকে সচেতন হতে হবে। ছেলেমেয়েদের সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ করতে হবে। আর বাবা-মায়েদেরও সন্তানদের যথেষ্ট সময় দিতে হবে।
ক্যানভাস : বর্তমান নাট্যচর্চা নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ এবং মতামত কী?
নুনা আফরোজ : এ ক্ষেত্রে আমি খুবই আশাবাদী। কারণ, পেশাগত সমর্থন ছাড়াও দিনের পর দিন অনেক তরুণ এ মাধ্যমে শ্রম দিয়ে যাচ্ছে। সৃজনশীল সত্তার সঙ্গে পরিচয়ের কারণেই এটি সম্ভব। এ সৃজনশীলতার সন্ধান যে পাবে, সে এ অঙ্গনে অবশ্যই টিকে থাকবে। এ জন্য তাদের সুযোগ করে দেওয়াটা বড়দেরই কর্তব্য। অন্যদিকে দর্শক নিয়েও আমাদের ভাবতে হবে। আমার ধারণা, এ জন্য নাট্যকর্মীদের নাটকের মান নিয়ে আরও সচেষ্ট হওয়া উচিত। কারণ, হলভর্তি দর্শকের জন্য ভালো নাটকের কোনো বিকল্প নেই।
ক্যানভাস : একই সঙ্গে আপনি যখন নির্দেশক ও অভিনয়শিল্পী। ব্যাপারটাকে কীভাবে ম্যানেজ করেন?
নুনা আফরোজ : আসলে দুটি তো আলাদা সত্তা। তবে একসঙ্গে করতে গেলে কখনো অভিনেত্রী নির্দেশককে ডমিনেট করে, আবার কখনো নির্দেশক অভিনেত্রীকে ডমিনেট করে। যখন নাটক তৈরি হতে থাকে, তখন নির্দেশক ডমিনেট করে অভিনেত্রীকে। নাটকটি যখন তৈরি হয়ে যায়, তখন আমি মাথায় রাখি না আমি নির্দেশক। তখন স্বার্থপর হয়ে যাই আমার অভিনয়ের ক্ষেত্রে। অনেক নির্দেশক যখন নাটকটি মঞ্চে যায়, তখন তাদের টেনশন শুরু হয়ে যায়। তবে মঞ্চে যখন নাটকটি চলে যায়, তখন কোনো টেনশন নিই না। আমার মনোযোগ থাকে শুধু অভিনয়ের দিকে। তখন আমি শুধুই অভিনেত্রী। নাটক শুরু হয়ে গেলে আমি আর অন্যের অভিনয় দেখি না। আমি জানি, গুলি ছোড়া হয়ে গেছে। কে কী ভুলভাল করল, সেটি দেখতে রাজি নই। কারণ, সেটি দেখতে দেখতে আমার অভিনয় নষ্ট করতে চাই না। এখানে আমার নির্দেশক সত্তা আলাদা। আমার অভিনয়ের সত্তা আলাদা।
কানভাস : নাট্যকার না হলে কী হতেন?
নুনা আফরোজ : ভাববার সুযোগ পাইনি। তবে ছোটবেলায় মা চাইতেন, আমি ডাক্তারি পড়ি, আর বাবা চাইতেন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ি। তবে আমার বাবা সংস্কৃতিমনা ছিলেন, এটি আগেই বলেছি। ছোটবেলা থেকেই থিয়েটার করতাম। ৩৩ বছর ধরে থিয়েটার করি। আমি বা আমরা প্রাঙ্গণে মোর-এ যত বাধা এসেছে, আমরা তত এগিয়ে গেছি। এ ক্ষেত্রে আমি কখনো ভাবিনি থিয়েটারকর্মী না হলে কী হতাম। সেটি ভাবার সুযোগই হয়নি কখনো। তবে হ্যাঁ, আমি যদি থিয়েটার না করতাম, তাহলে হয়তো আরও বেশি আয়েশি জীবন কাটাতে পারতাম। আরও বিলাসী জীবন যাপন করতে পারতাম। তবে সেই বিলাসী জীবন বোধ হয় আমাকে ভালো লাগাবে না; বরং থিয়েটারটাই করতে চাই। এখনো সমান আগ্রহে সমান সিনসিয়ারিটি নিয়ে থিয়েটারটা করি। মৃত্যুর শেষ দিন পর্যন্ত থিয়েটার করে যেতে চাই। এমন যেন না হয়, আমি বেঁচে আছি, কিন্তু থিয়েটারের মঞ্চে আমি দাঁড়াতে পারছি না। এমনটা যেন না হয়।
ছবি: সংগ্রহ