এডিটরস কলাম I সুন্দরের জন্য
এতে সৃষ্টি হয় বৈচিত্র্য। সঞ্চারিত হয় সৌন্দর্য-সম্পর্কিত নতুনতর ধারণা এবং আবেগ। জীবন ও জগৎ শেষ পর্যন্ত সুন্দর
বিশ্বজুড়ে জীবনধারার অংশ হিসেবে ফ্যাশন ও সৌন্দর্যচর্চায় বদল ঘটে চলেছে। তবে এই পরিবর্তন স্বাভাবিক সময়ের মতো নয়। এর মূলে রয়েছে বিশেষ এক পরিস্থিতি এবং তা সামলে ওঠার তাগিদ। সুস্থ থাকাই যখন জীবনের মৌলিক চেষ্টা ও উদ্দেশ্য, তখন সবকিছুই, এমনকি, ফ্যাশন এবং সৌন্দর্যচর্চা একে ঘিরে চলতে থাকে। তাতে নিয়ন্ত্রণ তো বটেই, নতুন কোনো ধারণার সন্ধানও চলে। এখন যেমন সাসটেইনেবল ও রিসাইকেলেবল ফ্যাশন এবং বিউটি প্রডাক্টের কথা আগের চেয়ে বেশি জোরালোভাবে উচ্চারিত হচ্ছে। অনুশীলনও চলছে দেশে দেশে। ভাবা হচ্ছে প্রকৃতি ও পরিবেশ টিকিয়ে রাখার কথা। স্বাস্থ্যবান্ধব খাদ্যাভ্যাসের বিষয়টিও—জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে বিশুদ্ধ, প্রাকৃতিক ও সহজলভ্য খাদ্য গ্রহণের প্রসঙ্গ। সবই শেষ পর্যন্ত সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকবার জন্য।
দুই
যা-ই ঘটুক না কেন, সব সময় আমি ইতিবাচক দিকগুলো নিয়ে ভাবতে পছন্দ করি। মানুষের এগিয়ে যাওয়ার ইতিহাস থেকেই বোঝা যায়, যত দুর্যোগ এসেছে, শেষ পর্যন্ত সবই কাজে লেগেছে। মহামারি, বন্যা, দুর্ভিক্ষ, যুদ্ধ—কোনোটিই ভালো নয়। কিন্তু এর ভেতর থেকে মানুষ কেমন করে বের হয়ে আসে, সেটি খেয়াল করলে বুঝতে পারা যায়, ইতিবাচক মনোভাবই তাকে বারবার জিতিয়ে দিয়েছে। মূল বিষয়টি হলো যেকোনো ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়া। তা ছাড়া আজকের দুনিয়ায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এতই অগ্রসর যে, কোনো অবস্থাতেই ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। কোভিড-১৯-এর কথাই ভাবুন না! বছরখানেকের মধ্যেই মানুষ নিজেকে বাঁচানোর জন্য ভ্যাকসিন আবিষ্কার করে ফেলেছে। শুধু তা-ই নয়, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়িয়ে কীভাবে সুস্থ থাকা যায়, সেই অনুশীলনও আয়ত্ত করে নিয়েছে। অন্যদিকে এটাও ঠিক, কেবল সুস্থতা নিয়ে টিকে থাকার মধ্যেই মানুষের জীবনাবেগ সীমাবদ্ধ নয়। প্রয়োজন হয় আনুষঙ্গিক অনেক কিছুই। ফ্যাশন, সৌন্দর্য, বিনোদন এবং শিল্পকলা সেগুলোরই এক একটি অংশ।
তিন
শুরুতে সাসটেইনেবল এবং রিসাইকেলেবল ফ্যাশন ও বিউটি প্রডাক্ট নিয়ে কথা বলেছি। আবারও মনে পড়ছে, গত শতকের শুরুতে যে স্প্যানিশ ফ্লু দেখা দিয়েছিল ইউরোপজুড়ে, তাতে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দা, দুর্ভিক্ষ ও ব্যাপক স্বাস্থ্যহানির মোকাবিলায় মানুষ তার জীবনব্যবস্থা একেবারেই পাল্টে ফেলেছিল। সেই আপৎকালীন উদ্যোগগুলো সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে কেবল প্রভাব ফেলেনি, এগিয়েও দিয়েছিল। আজকের অতিমারিজনিত দুর্যোগ কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে জীবনধারার যেসব ধারণা গড়ে উঠছে, মানবসভ্যতার অগ্রগমনের নিয়ামক হয়ে উঠতে পারে সেগুলো। টেকসই ফ্যাশনের কথা বিশদ করে বলতে গেলে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লেগে যাবে। সংক্ষেপে শুধু এটুকু বলা যায়, এ হলো পরিবেশ ও জীবনবান্ধব, জুতসই ও সাশ্রয়ী অথচ সুন্দর এমন এক পোশাকের ধারা, যাতে একদিকে অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব, অন্যদিকে সৌন্দর্যবোধের নবায়ন ঘটিয়ে প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ককে সুসংহত করে তোলা যায়। এ তো গেল সাসটেইনেবল ফ্যাশনের কথা। এবার আসা যাক রিসাইকেলেবল বিউটি প্রডাক্টের ধারণা নিয়ে। সৌন্দর্যশিল্পে বহু পণ্য, এমনকি সেসবের কনটেইনারও ব্যবহারের পর বর্জ্য হয়ে যাচ্ছে, যা পরিবেশের জন্য অশেষ ক্ষতিকর। এর থেকে রেহাই পাবার চিন্তাও এখন গুরুত্ব পাচ্ছে। সে অনুযায়ী শুরু হয়েছে কাজ। ব্যবহৃত, পরিত্যক্ত কিংবা মেয়াদ-উত্তীর্ণ পণ্য ও কনটেইনার পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলার কর্মযজ্ঞ ইতিমধ্যে উন্নত বিশ্বে শুরু হয়ে গেছে। মোদ্দা কথা হলো, একটা জীবনবান্ধব সবুজ গ্রহ নির্মাণের প্রয়াস চলছে।
চার
বোঝা যাচ্ছে, প্রতিটি দুর্যোগই মানুষকে নানামুখী নিরাপত্তা নিশ্চিতের উপায় বাতলে দেয়। নতুন জীবন গড়ে তোলার পথ দেখায়। এইভাবে সভ্যতা ও সংস্কৃতি অগ্রগমনের রাস্তা তৈরি করে। ফ্যাশন ও সৌন্দর্য এর বাইরে নয়। ফলে তা-ও পাল্টে যায়। কিংবা পুরোনোর নবায়ন ঘটে। এতে সৃষ্টি হয় বৈচিত্র্য। সঞ্চারিত হয় সৌন্দর্য-সম্পর্কিত নতুনতর ধারণা এবং আবেগ। জীবন ও জগৎ শেষ পর্যন্ত সুন্দর।