সেলুলয়েড I দি রেইন
চিত্রনাট্য ও পরিচালনা : এস এম শফি
সম্পাদনা : আমিনুল ইসলাম মিন্টু
সংগীত পরিচালনা : আনোয়ার পারভেজ
কাহিনি : নাজমুল মাসরিক
চিত্র গ্রহণ : আনোয়ার হোসেন
পরিবেশনা : চিত্রাঞ্জলি
অভিনয় : ওয়াসিম, অলিভিয়া, রোজী সামাদ, সৈয়দ হাসান ইমাম, কাজী মেহফুজুল হক, রাজপুত, রবিউল, জহির চৌধুরী প্রমুখ।
মুক্তি : ২৬ নভেম্বর ১৯৭৬
দৈর্ঘ্য : ১৩১ মিনিট
প্রেমের সিনেমা বললেই ‘রোমান হলিডে’র কথা আসে। গ্রেগরি পেক ও অড্রে হেপবার্ন অভিনীত কালজয়ী প্রেমের চলচ্চিত্র। প্রাসাদ থেকে পালিয়ে যাওয়া রাজকন্যা আর মার্কিন সাংবাদিক- দুই ভুবনের দুই বাসিন্দার ভালোবাসা। রোম শহরে তাদের স্বল্প সময়ের রোমান্স এবং পরিণতিতে বিচ্ছেদ। কিন্তু সেই প্রেম দর্শকের মনে অমলিন হয়ে আছে। কিংবা ‘ক্যাসাব্লাংকা’ সিনেমার নায়ক রিকের ভূমিকায় হামফ্রে বোগার্টের মুখে সেই অসাধারণ সংলাপ ‘ইউ প্লেইড ইট ফর হার, ইউ ক্যান প্লে ইট ফর মি’- প্রেমের জন্য নিজের জীবন দানের কাহিনিও চিরায়ত হয়ে উঠেছে। এমন অনেক চলচ্চিত্রের কথাই বলা যায়। দি রেইন সিনেমাও বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে তেমনই একটি উজ্জ্বল সংযোজন। যদিও তা রোমান হলিডে বা ক্যাসাব্লাংকার সমপর্যায়ের নয়। তথাপি এ দেশের সিনেমা-দর্শকের মনে এটি গেঁথে আছে।
দি রেইন সিনেমার কাহিনিতে দেখা যায়, খানবাহাদুর নিজামউদ্দীন অঢেল সম্পদের মালিক হলেও সে নিঃসন্তান হওয়ায় অসুখী। তার স্ত্রী প্রতিবারই মৃত সন্তান প্রসব করে। একদিন স্বপ্নে এক সাধুর দৈববাণী শুনে রাজিয়া নামের ধার্মিক মহিলার প্রার্থনায় খানবাহাদুরের স্ত্রী একটি ছেলেসন্তান জন্ম দেয়। খানবাহাদুর রাজিয়াকে বোন হিসেবে গ্রহণ করে। ভাস্কর্য তৈরিতে ছেলের আগ্রহ দেখে তার ভবিষ্যৎ নিয়ে খানবাহাদুর চিন্তিত হয়ে পড়েন। তাই ছেলেকে সম্পত্তি দেখাশোনার জন্য পাহাড়ি এলাকায় পাঠান। সেখানে তার দেখা হয় রানির সঙ্গে। পরিচয় ও প্রেম শেষ পর্যন্ত তাদের জীবনে দুঃখ বয়ে আনে।
প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন ওয়াসিম ও অলিভিয়া। অন্যদের মধ্যে ছিলেন রোজী সামাদ, সৈয়দ হাসান ইমাম, কাজী মেহফুজুল হক প্রমুখ। সিনেমার দৃশ্যে ‘চঞ্চল হাওয়া রে, ধীরে ধীরে চল রে, গুন গুন গুঞ্জনে ঘুম দিয়ে যা রে’- গানটি গেয়ে হাত নেড়ে ঘুমন্ত বন্ধুর জন্য মেঘেদের ডাকে অলিভিয়া। পাহাড়ি ঢলে দুজনের প্রেমের পরিণাম দি রেইন নামের সার্থকতা পেয়েছে। চলচ্চিত্রটিকে বলা হয় তুমুল প্রেমের সিনেমা। বাংলাদেশের রোমান্টিক চলচ্চিত্রে প্রথম খোলামেলা দৃশ্য এসেছিল এই কাহিনিচিত্রে। পরিচালক এস এম শফি দেখিয়েছিলেন, ঢাকার সিনেমার অভিনেত্রী কতটা গ্ল্যামারাস হতে পারে। দি রেইনকে বলা হয় ঢালিউডের সফল সিনেমাগুলোর একটি।
২৬টি দেশে মুক্তি পেয়েছিল সিনেমাটি। বাংলা এবং উর্দু- দুই ভাষাতেই চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়েছিল। এর বাংলা টাইটেল ছিল ‘যখন বৃষ্টি এলো’। বিজ্ঞাপনে লেখা হয়েছিল ‘বিশ্ববাজারের জন্য তৈরি বাংলাদেশের প্রথম রঙিন ছবি’। আনোয়ার পারভেজের সুরে এই সিনেমার প্রতিটি গানই অসম্ভব জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। আর কণ্ঠশিল্পীরা পেয়েছিলেন জাতীয় পুরস্কার। বাংলা ভাষার গানগুলোর গীতিকার ছিলেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার এবং উর্দু সংগীত রচয়িতা যাকাউর রহমান। আলাউদ্দীন আলীর আবহ সংগীতও ছিল প্রশংসনীয়। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন রুনা লায়লা ও মাহমুদুন্নবী। রুনা লায়লার কণ্ঠে ‘একা একা কেন ভালো লাগে না’ এবং ‘চঞ্চল হাওয়া রে’ গান দুটি আজও শ্রোতাদের কাছে অসম্ভব প্রিয়। অন্যদিকে অলিভিয়া-ওয়াসিম জুটিও অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ধারাবাহিকভাবে তারা একসঙ্গে বেশ কিছু সিনেমায় অভিনয় করেন।
অলিভিয়ার পাহাড়ি ঘাঘরা পোশাক, হেয়ারস্টাইল, মাথায় জড়ানো স্কার্ফ, পাহাড়ি অলংকার, চুলের গোঁজা ফুল; অন্যদিকে ওয়াসিমের কেতাদুরস্ত শার্ট-প্যান্ট এবং কটি তখনকার সময়ের ফ্যাশন-সচেতনদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল।
প্রিয়ঙ্কর অর্ঘ
কুইজ
কয়টি ভাষায় দি রেইন সিনেমাটি নির্মিত হয়?
[ক] ৩টি
[খ] ২টি
[গ] ৫টি
[ঘ] ১টি
২. আবহ সংগীত পরিচালনা করেন কে?
[ক] আনোয়ার পারভেজ
[খ] শেখ সাদী
[গ] সত্য সাহা
[ঘ] আলাউদ্দীন আলী
৩. সিনেমাটি কয়টি দেশে মুক্তি পেয়েছিল?
[ক] ৩৩টি
[খ] ২৬টি
[গ] ৪৫টি
[ঘ] ১০টি
গত পর্বের বিজয়ী
রুপম খান, নাটোর। ২. রাব্বি রহমান, যশোর। ৩. অনন্যা বিশ্বাস, বরিশাল।