রূপরসদ I ত্বক মেনে…
ত্বকের সুরক্ষা ও সৌন্দর্যের জন্য চাই জুতসই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। প্রকৃতি থেকে। ব্যবহার করতে হয় সময়ের মর্জি মেনে
সানস্ক্রিনের বাইরে সম্ভবত অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের চেয়ে আর কোনো জনপ্রিয় উপাদান নেই। ফ্রি র্যাডিক্যাল থেকে ত্বক রক্ষায় এগুলো যথেষ্ট কার্যকর।
বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দৈনন্দিন রুটিনে যুক্ত হতে পারে। ত্বককে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করার কাজ করে এগুলো। অন্য উপাদানগুলোর সঙ্গে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মিশিয়ে ব্যবহার করলে ত্বক উপকৃত হতে পারে। তবে এমন একটাকে বেছে নিতে হবে, যা ত্বকের ধরন অনুযায়ী ভালো কাজ করে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কীভাবে কাজ করে
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের জন্য এত গুরুত্বপূর্ণ কেন, বুঝতে হলে জানতে হবে এগুলো কীভাবে কাজ করে। স্কিনকেয়ার রুটিনে এই উপাদান বিশেষভাবে জরুরি। মূলত, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো ত্বকের কোষগুলোকে তাদের কিছু ইলেকট্রনের মাধ্যমে ফ্রি র্যাডিক্যাল থেকে রক্ষা করা।
ত্বক প্রতিনিয়তই পরিবেশগত আক্রমণের শিকার হয়। যেমন বাতাসের দূষণ এবং কম্পিউটার স্ক্রিনের নীল আলো, যা প্রতিদিন অক্সিডেটিভ স্ট্রেস সৃষ্টি করতে পারে। এসব ক্ষতি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে। অক্সিডেটিভ স্ট্রেস অকাল বলিরেখা, ইলাস্টিনের ক্ষতি, আর্দ্রতা কমে যাওয়া ইত্যাদির কারণ হতে পারে। যদি ফ্রি র্যাডিক্যাল ড্যামেজ থেকে ত্বককে রক্ষা করতে হয়, তাহলে যেকোনো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সাহায্য করবে।
ভিটামিন সি
এটি (অ্যাসকরবিক অ্যাসিড) অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের বিরুদ্ধে তার প্রতিরক্ষামূলক ক্ষমতা এবং কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য অন্যান্য ফ্রি-র্যাডিক্যালের সঙ্গে মিলে চমৎকার কাজ করে। ভিটামিন সি ত্বকের সাধারণ সমস্যা যেমন অমসৃণ ত্বক, রুক্ষ গঠন, সূক্ষ্ম রেখা, ব্রণের দাগ এবং সাধারণ নিস্তেজতা দূর করতে পারে।
ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই ফেরুলিক অ্যাসিডের মতো সহকারী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলোর সঙ্গে সবচেয়ে ভালো কাজ করে, যা ওট, বাদামি চাল এবং আপেলের মতো উদ্ভিদের কোষে পাওয়া যায়। প্রতিদিন সূর্য রশ্মি থেকে রক্ষা করার জন্য ভিটামিন সি দুর্দান্ত। যদিও এসপিএফ সূর্যের ইউভি রশ্মি থেকে বাঁচায়, কিন্তু এটা ত্বককে ফ্রি র্যাডিক্যাল থেকে রেহাই দেয় না। ব্রড-স্পেকট্রাম সানস্ক্রিনের সঙ্গে ভিটামিন সি-এর মতো একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের যুক্ত হওয়া ত্বকের সম্পূর্ণ সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।
ভিটামিন সি-এর স্থিতিশীল ময়শ্চারাইজার ত্বকের ওপরে বসে থাকার পরিবর্তে ভেতর থেকে হাইড্রেট করে। এর ফলে প্রিবায়োটিকস, ক্রিয়েটিন এবং ওয়ে প্রোটিনের সংযোজন ত্বককে শক্তিশালী এবং দৃঢ় করে। কিছু ভিটামিন সি ত্বকের সংবেদনশীলতা বাড়ায়। এটাকে ময়শ্চারাইজার হিসেবে পৃথকভাবে ব্যবহার করতে হয় অথবা ক্রিম বা সানস্ক্রিনের নিচে লেয়ার করা যায়।
ভিটামিন ই
শুষ্ক ত্বকের সমস্যায় ভিটামিন ই জুতসই। কারণ, এটি আর্দ্রতা জোগায় এবং প্রদাহ প্রতিরোধ করে। ভিটামিন ই ক্ষত নিরাময়ের ক্ষমতার জন্যও সুপরিচিত। ভিটামিন সি, ই এবং ফেরুলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ সেরাম চর্মরোগ বিশেষজ্ঞদের কাছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। মুখই শরীরের একমাত্র অংশ নয়, যেখানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ব্যবহার প্রয়োজন। শরীরের বাকি স্থানগুলোরও সুরক্ষা প্রয়োজন। সূক্ষ্ম ঠোঁটের অংশও অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের জন্য সংবেদনশীল। তাই ঠোঁটেও ভিটামিন ই সমৃদ্ধ লিপ অয়েলের প্রয়োজন আছে। যা ফ্রি র্যাডিক্যাল থেকে রক্ষার পাশাপাশি আর্দ্র এবং কোমল রাখবে ঠোঁটকে।
নিয়াসিনামাইড
ভিটামিন বি থ্রি-এর দুটি প্রধান রূপের মধ্যে একটি। এটা প্রায়ই ব্রণ, রোজেসিয়া, পিগমেন্টেশন সমস্যা এবং বলিরেখা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়াসিনামাইড দীর্ঘমেয়াদি ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতিতেও সাহায্য করতে পারে। এর প্রদাহবিরোধী বৈশিষ্ট্য ছাড়াও আছে দাগ এবং ব্ল্যাকহেডস দূর করার ক্ষমতা। নিয়াসিনামাইড, ম্যাগনেশিয়াম, দস্তা এবং তামার মিশ্রণ মসৃণ, প্রশান্ত এবং সংবেদনশীল ত্বকের লালচে ভাব কমায়।
নিয়াসিনামাইড সমৃদ্ধ লাইটওয়েট সেরামের সাহায্যে ত্বকের উজ্জ্বলতা এবং টেক্সচার বাড়ানো যায়। এর সঙ্গে মাশরুম এবং গোলাপের ক্যানিনা নির্যাসের মিশ্রণ ব্যবহার করলে ত্বকের তৈলাক্ততা কমে।
রেটিনল
এটি (ভিটামিন-এ নামে পরিচিত) জনপ্রিয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে বিবেচিত। রেটিনল স্কিন সেল টার্নওভারে সাহায্য করে। কোলাজেনকে উদ্দীপিত করে। কোষ নবায়নে সাহায্য করে এবং ক্ষতিগ্রস্ত ডিএনএকেও সারিয়ে তোলে। তবে সংবেদনশীল ত্বকের জন্য এটা কিছুটা বিপজ্জনক হতে পারে। তাই অল্প ডোজ (শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ) দিয়ে ধীরে ধীরে শুরু করা ভালো। রেটিনল পণ্য ব্যবহার করার সময় এসপিএফ ৫ বা তার বেশি ব্যবহার করা দরকার। বেশি ঘনত্বের রেটিনল সন্ধ্যার স্কিন কেয়ার রুটিনেই প্রযোজ্য।
দিনের রেটিনলে আর্দ্রতা এবং উজ্জ্বলতা সঞ্চারিত হয় ত্বকে। এটি স্থিতিশীল রেটিনল ডেরিভেটিভ এবং অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মিশ্রণ, যার মধ্যে রয়েছে নিয়াসিনামাইড, ভিটামিন সি এবং হায়ালুরনিক অ্যাসিড। এগুলো মিলিতভাবে র্যাডিক্যাল থেকে সুরক্ষা দেয়, স্কিন টোন
ও সেলুলার টার্নওভার বাড়ায় এবং ত্বকের গঠন উন্নত ও দৃঢ় করে। ১% ভেগান রেটিনলের সঙ্গে অ্যান্টি-এজিং ক্রিম পেপটাইড, ভিটামিন এবং তেল মেশালে তা ত্বককে সমান টোন এবং টেক্সচার দেয়। মারুলা, অ্যাপ্রিকট, জোজোবা এবং প্যাশনফ্রুট অয়েল ত্বকের লিপিড লেয়ার শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।
পলিফেনল
উদ্ভিদ এবং ফলে পাওয়া বিভিন্ন ধরনের জৈব যৌগের পলিফেনল শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। প্রকৃতিতে পলিফেনল রয়েছে যেমন রেসভেরট্রোল, গ্রিন টি, ব্ল্যাক টি। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়ারহাউসগুলো সূর্যে ক্ষতিগ্রস্ত ত্বক মেরামতের ক্ষেত্রে কার্যকর। এগুলো ত্বকের প্রদাহ প্রশমিত করে। পলিফেনলে তৈরি লাইটওয়েট সেরাম শুষ্ক ত্বকে তেলমুক্ত আর্দ্রতা দেয়। আঙুরের পলিফেনল সব ধরনের ত্বকে হাইড্রেশনের কাজ করে। সারা দিনের সুরক্ষা দেয়। এতে তৈরি ক্রিম ত্বক নরম করে এবং ফ্রি র্যাডিক্যাল থেকে রক্ষা করে। চিটচিটে অনুভূতি ছাড়াই জরুরি আর্দ্রতা সরবরাহ করে, যা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস প্রতিরোধে বিশেষভাবে কার্যকর। পলিফেনল প্রদাহবিরোধী এবং হাইড্রেটিং, যা ত্বকে দীর্ঘমেয়াদি ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
হায়ালুরনিক অ্যাসিড
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, এই অ্যাসিড অত্যন্ত কার্যকর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ফ্রি র্যাডিক্যালগুলো পরিষ্কার করে এবং ত্বককে সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর অবস্থায় রাখে। এটি পরিবেশগত উপদ্রব থেকে ত্বকের সুরক্ষায় সাহায্য করে। এ ছাড়া হায়ালুরনিক অ্যাসিড ফ্রি র্যাডিক্যাল ড্যামেজ রোধের পাশাপাশি ক্ষত নিরাময় ত্বরান্বিত করে। এটা ত্বকে আর্দ্রতা ধরে রাখার সময় সূক্ষ্ম রেখা এবং বলিরেখার দৃশ্যমানতা কমাতে সাহায্য করে। যখন ত্বক সুরক্ষিত এবং হাইড্রেটেড থাকে, তখন ত্বকের কোষের উৎপাদন বাড়ে, ফলে স্কিন নরম ও মসৃণ হয়।
এই অ্যান্টিএজিং সেরামটি ১.৫% হায়ালুরনিক অ্যাসিড, পেপটাইড এবং প্রো-ভিটামিন বি ফাইভ দিয়ে তৈরি করা হয়। এটা ত্বকের হারানো আর্দ্রতা পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে মসৃণতা দেয়। স্কিনের লেয়ারগুলোকে সুরক্ষিত করে, উজ্জ্বলতা দেয়।
সিফাত বিনতে ওয়াহিদ
মডেল: স্নিগ্ধা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: তানভীর খান