ফিচার I যত্নে থাকুক শিশু
আরামের আবেদন জারি রাখা এ সময়ে শিশুদের রাখা চাই যথাযোগ্য যতনে। এড়িয়ে চলা দরকার অনাকাঙ্ক্ষিত বালাইয়ের কালো ছায়া
শীত আসছে—এই বার্তা মনে যেমন পুলক জাগায়, কিছুটা দুশ্চিন্তার বলিরেখাও ফেলে কপালে। কারণ, শীত মানেই শ্বাসতন্ত্রে প্রদাহ। জ্বর-ঠান্ডা-কাশি-নিউমোনিয়াসহ নানা রোগের উঁকিঝুঁকি। সচেতনতায় প্রতিরোধ করতে পারেন বড়রা। কিন্তু শিশুরা? তাদের নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান অভিভাবকেরা। শীতে শিশুর সুস্থতায় সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে থাকেন বাবা-মা। কেউ কেউ বুঝে উঠতে পারেন না কীভাবে নিরাপদ আর সুস্থ রাখবেন শিশুকে।
এই শীতে শিশুকে কীভাবে সুস্থ রাখা যায়, তার পরামর্শ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিশু চিকিৎসক সুমাইয়া জলিল।
শিশুর বয়স যখন এক বছরের নিচে
ছোট্ট শিশু অনেক স্পর্শকাতর। তাই তার যত্ন নিতে হবে সচেতনভাবে। শিশুকে প্রয়োজন অনুযায়ী উষ্ণ রাখতে হবে। ঠান্ডা পরিবেশে রাখা যাবে না। ঘর যেন স্যাঁতসেঁতে না থাকে, সেদিকে নজর দিতে হবে।
শিশুকে বুকের দুধ নিয়মিত খাওয়াতে হবে। ফিডারে খাওয়ালে অল্প গরম দুধ দিন। ঠান্ডা দুধ দেওয়া যাবে না।
শিশুর বয়স যখন ছয় মাসের বেশি হবে, তাকে বুকের দুধের পাশাপাশি অন্য খাবার দিতে হবে। খিচুড়িতে ডিমের সাদা অংশ, পালংশাক, লালশাক অল্প করে দেওয়া যায়। লেবুর রস দিতে হবে, খাওয়াতে হবে কমলার রস। এতে বাচ্চার রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়বে।
শিশুরা হামাগুড়ি দেওয়া শেখার পর পুরো ঘরে ঘুরে বেড়ানোর চেষ্টা করে। খেয়াল রাখতে হবে তারা যেন ঠান্ডা মেঝেতে হামাগুড়ি না দেয়। কার্পেট ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ, কার্পেটের রোয়া বা ধুলা থেকে অ্যালার্জি হয়। এ ক্ষেত্রে মাদুর বা ম্যাট ব্যবহার করা ভালো।
শিশুর গোসলের ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে। কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে হবে গোসলে। শীতে কখনোই শিশুকে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করানো যাবে না। গোসলের পর বেবি লোশন লাগাবেন। তেলজাতীয় কিছু লাগাবেন না। অনেকে নবজাতককে নিয়মিত গোসল করান না। ফলে বাচ্চার গায়ে ফুসকুড়ি ওঠে এবং এর মধ্যে পুঁজ জমে যায়।
শীতের কারণে এ সময় অনেকেই শিশুকে বেশি বেশি গরম কাপড় পরান। এটা পরিহার করতে হবে। মোটা সুতি কাপড় পরানো যেতে পারে। আঁটসাঁট বা উলের কাপড় পরালে শিশুর শরীর ঘেমে ঘামাচি উঠতে পারে। বাচ্চাকে নরম কাপড়ের জুতা পরানোর অভ্যাস করাতে হবে। রাতে ঘুমানোর সময় মোজা পরিয়ে ঘুম পারাতে পারেন। কিন্তু উলের মোজা ত্যাগ করতে হবে।
এমন বয়সী শিশুর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম থাকে। সর্দি, কাশি সহজেই লেগে যায়। শিশুকে খুব জনবহুল জায়গায়, যেমন—মেলা, পিকনিকে না নিয়ে যাওয়াই ভালো।
বয়স যখন এক থেকে আট
শিশুর বয়স যখন এক থেকে সাত-আট বছর হয়, তখন খেলাধুলা ও দৌড়াদৌড়ি বেশি করে। তাই খুব বেশি গরম ও ভারী কাপড় পরার প্রয়োজন হয় না। তবে সকালে স্কুলে ও বিকেলে খেলতে যাওয়ার সময় প্রয়োজনীয় উষ্ণতা নিশ্চিত করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে শিশুর ত্বকের প্রতি। স্কুলে পরস্পরের মাধ্যমে শীতকালে কিছু ছোঁয়াচে চর্মরোগ হতে পারে। নিয়মিত লোশন ব্যবহার করলে ত্বকের শুষ্কতাজনিত এমন রোগবালাই থেকে সাবধানে থাকা যাবে।
গোসল
অনেকেই শীতকালে বাচ্চাদের গোসল করাতে ভয় পান। গোসল করালে বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে পড়বে—এটাই বেশির ভাগ বাবা-মায়ের ধারণা। কিন্তু ব্যাপারটি পুরোটাই ভিন্ন। বাচ্চাদের শীতকালে আরও বেশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। শিশুর শরীরের তেল ও ময়লা ধুয়ে ফেলতে গোসল করানো জরুরি। অনেকে গোসলে সরিষার তেল ব্যবহার করেন। গোসলের আগে সরিষার তেলের বদলে জলপাই তেল ব্যবহার করা ভালো। গোসল করানোর সময় বাচ্চাদের উপযোগী সাবান ব্যবহার করতে হবে। কেননা বড়দের সাবানে অনেক বেশি ক্ষার থাকে এবং এই ক্ষার শিশুর ত্বকের জন্য ক্ষতিকর।
গোসলের জন্য কুসুম গরম পানি ব্যবহার করা ভালো। খুব বেশি সময় ধরে শিশুকে গোসল করানো যাবে না। গোসল শেষে দ্রুত শরীর ও মাথা ভালোভাবে মুছে ফেলতে হবে। গোসল শেষ করে হালকা রোদে বসতে পারলে বেশ আরাম পাবে শিশু।
ত্বক যেন শুষ্ক না হয়
শীতে যেকোনো শিশুর ত্বকের যত্নে সবচেয়ে বেশি জরুরি ময়শ্চারাইজার। শিশুর ত্বক শুষ্ক থেকে আর্দ্র করার প্রক্রিয়াকে ময়শ্চারাইজার বলে। গোসলের পর বাচ্চাদের উপযোগী অলিভ অয়েল অথবা ময়শ্চারাইজিং বেবি লোশন ব্যবহার করতে হবে। শিশুকে গোসল করানোর পর নরম কোনো বেবি টাওয়েল দিয়ে শরীর মুছিয়ে তারপর ময়শ্চারাইজার লাগাতে হয়। বলে রাখি, ত্বকের আর্দ্রতা অনেক জটিল সমস্যা থেকে মুক্ত রাখবে শিশুকে।
ঠান্ডায় আক্রান্ত হলে
শীতে অনেক সময় শিশুদের ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। তখন শিশুর নাক বন্ধ হয়ে রাতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। রাতে শোবার আগে দুই নাকে দুই ফোঁটা ন্যাজাল ড্রপ দিলে শিশুর ঘুমের আরাম হবে। শীতে ঠান্ডা লেগে কাশি, শ্বাসকষ্ট কিংবা বুকের ভেতর ঘড়ঘড় আওয়াজ অথবা শ্বাস নেওয়ার সময় বুকের হাড় ভেতরের দিকে দেবে গেলে সঙ্গে সঙ্গে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে হালকা গরম পানির সঙ্গে মধু মিশিয়ে পান করালে ভালো ফল পাওয়া সম্ভব।
শীতের খাবার
শিশুর শীতের খাবার বেছে নিতে একটু বিবেচনা করে পছন্দ করতে হয়। শীতে শিশুরা অতিরিক্ত ভিটামিন সি পাবে, এমন খাবার দিতে হবে। লেবু, কমলা, মাল্টা, আমলকী—এসব ফল খেতে দেওয়া ভালো। তবে যেসব শিশু চিবিয়ে খেতে পারে না, তাদেরকে ফলের রস করে খাওয়াতে হবে।
মনে রাখুন
শীত শুরু হলে শিশুর লেপ, তোশক, কম্বল, চাদর ইত্যাদি রোদে দিতে হবে। রোদ থেকে তোলার পর তা ঝেড়ে ঘরে রাখতে হবে। রোদ উঠলে মাঝেমধ্যেই লেপ রোদে দিতে হবে। ধুলাবালু থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এসবের ওপর কাপড়ের কভার ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো।
আরও খেয়াল রাখুন, শীতকালে নবজাতকের মাথা ন্যাড়া না করাই ভালো। শিশুর নাক বা মুখের ওপর কাপড়, লেপ, কম্বল ইত্যাদি দেবেন না। জ্বর হলে শিশুকে অতিরিক্ত জামাকাপড় পরিয়ে রাখবেন না। কেননা, এর ফলে শরীরের তাপ আরও বেড়ে যায়।
মৃন্ময়ী হাসান
ছবি: ইন্টারনেট
ধন্যবাদ অনেক সুন্দর লিখেছেন