skip to Main Content

ফিচার I ট্রেস ট্রাবল

সাজাতে গিয়ে চুলের বারোটা বেজে যাচ্ছে না তো? আগে থেকেই প্রয়োজন সতর্কতা। লিখেছেন শিরীন অন্যা

চুলে বিভিন্ন ধরনের স্টাইলিং পছন্দ করলে এর যত্নে হতে হবে আরও বেশি মনোযোগী। বুঝে নিতে হবে, কোন হেয়ারস্টাইল মানিয়ে গেলেও চুলের অভ্যন্তরীণ ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়াচ্ছে। আঁটসাঁট বেণি কিংবা উঁচু স্লিক বেণি পছন্দ করেন অনেকেই, তবে এসব সাধারণ হেয়ারস্টাইলও চুলের ক্ষতি করতে পারে নিমেষে। তালিকায় আছে আরও কিছু নাম, যেগুলো অজান্তেই চুলের ক্ষতির কারণ।
প্রতিদিন পনিটেইল
যেখানে-সেখানে, যখন-তখন সব চুল একসঙ্গে করে নিয়ে একটা ঝুঁটি বেঁধে ফেলার মতো সহজ হেয়ারস্টাইল আর হতে পারে না। চুল যেমনই হোক, দুই মিনিটের মধ্যে সুন্দর ও মসৃণ লুক পেতে এর জুড়ি নেই। অথচ এটিই হতে পারে চুলের ক্ষতির কারণ। যদি একই ধরনের পনিটেইল প্রতিদিন একই জায়গায় করে নেওয়া হয়, তাহলে চুলের ওই জায়গায় বারবার চাপ পড়বে। ফলে ঝুঁটির মাথা থেকে চুল ভাঙা শুরু হবে। সে ক্ষেত্রে জিম করার সময় কিংবা হুটহাট চুলে পনিটেইল করাই যায়। কিন্তু সেটি প্রতিদিনকার গো-টু হেয়ারস্টাইল হলে মুশকিল। শুধু ঝুঁটি নয়, এই সমস্যা হতে পারে খোঁপার ক্ষেত্রেও। তাই প্রতিদিন খোঁপা কিংবা ঝুঁটি ছাড়া চলতে না পারলে চেষ্টা করতে হবে মাথার ভিন্ন ভিন্ন স্থানে চুল বাঁধতে। এ ছাড়া রাবার কিংবা ইলাস্টিকের ব্যান্ড বাদ দিয়ে চুলের জন্য বেছে নেওয়া যায় মোটা কাপড়ের হেয়ার ব্যান্ড।
ব্রেইডে বারণ
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্টাইলিং বদলালেও ট্রেন্ড থেকে একেবারে হারিয়ে যায়নি ব্রেইড। এই হেয়ারস্টাইলে কিছুটা ঢিলেঢালা ভাব আনা চুলের জন্য উপকারী। খুব বেশি শক্ত করে বাঁধা ব্রেইড টেনসাইল স্ট্রেসের কারণ হতে পারে। ব্রেইড যত বেশি শক্ত ও ভারী হবে, চুল পড়ার আশঙ্কা তত বেশি। কারণ, খুব শক্ত করে বাঁধলে হেয়ার ফলিকল ক্ষতিগ্রস্ত এবং চুল ভঙ্গুর হয়ে পড়ে; যা ট্যাকশন অ্যালোপেসিয়ার মতো সমস্যা তৈরি করে অস্বাভাবিক চুল পড়ার কারণ হতে পারে। তাই বলে ব্রেইড করা যাবে না, এমনটা নয়। ব্রেইডেড হেয়ারস্টাইলের ক্ষতি যতটা সম্ভব কমিয়ে আনতে স্ক্যাল্প থেকে খুব শক্ত করে ব্রেইড না বাঁধাই উত্তম। বরং বাঁধার সময় কিছু অংশ বাদ দিয়ে তা করা যায়। এর আগে চুল খুব ভালোভাবে ময়শ্চারাইজ করে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করা যায়।
ওয়েট আপডু
ভেজা চুল বেঁধে রাখার কারণে চুলের ক্ষতি বাড়তে পারে দ্বিগুণ। ভেঙে যেতে পারে সহজেই। তাই যখন ভেজা চুল বাঁধা হয়, বিশেষ করে উঁচুতে, তখন চুলে অতিরিক্ত টান লাগে, ফলে চুল পড়া বেড়ে যেতে পারে। তাই ওয়েট গ্লসি হেয়ারস্টাইল স্টাইলিশ দেখালেও এটি হয়তো চুল পাতলা হয়ে যাওয়ার কারণ। তাই চুল উঁচু করে বাঁধতে চাইলে শুকানোর পরই বাঁধা উচিত। এ ক্ষেত্রে ওয়েট গ্লসি লুকের জন্য একটা ভালো ব্র্যান্ডের শাইন স্প্রে ব্যবহার করা যেতে পারে প্রথমেই।
পিন স্ট্রেইট হেয়ার
অনেকেই একদম পিনের মতো সোজা চুল খুব বেশি পছন্দ করেন। এমন চুল পেতে হলে চুলের কিছুটা ক্ষতি মেনে নিতেই হবে! সেলিব্রিটি হেয়ারস্টাইলিস্ট বিয়াঙ্কা হিলিয়ার বলেন, প্রতিনিয়ত চুল স্ট্রেইট করলে স্ট্রেইটনারের থার্মাল হিট চুলের অভ্যন্তরীণ মলিকিউলের গঠন বদলে দিতে পারে। এর ফলে চুলের আউটার কিউটিকল লেয়ার ভেঙে যায় এবং চুল ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। এটি চুলের আগা ফাটার মূল কারণ। যদি স্ট্রেইট চুল ছাড়া একদমই না চলে, সে ক্ষেত্রে চুলে কেরাটিন ট্রিটমেন্ট করানো যায়, যা ক্ষতি কমিয়ে আনতে পারে। এ ছাড়া হেয়ার ক্লিনার হিসেবে এমন প্রোডাক্ট বেছে নিতে হবে, যাতে এমিনো অ্যাসিড রয়েছে। এতে চুল কোনো ধরনের তাপের সংস্পর্শে না এসে কিছুটা হলেও স্ট্রেইট দেখাবে। ফলে চুলের ক্ষতিও কমবে অনেক গুণ।
লং লকস
স্পোর্টিং লং লক সব সময়ই ইন স্টাইল। এটি চুলের টেক্সচারের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। লম্বা ভারী ড্রেডলকের ওজন এবং স্বাভাবিক মাধ্যাকর্ষণ শক্তি চুলকে পাতলা করে ফেলতে পারে। এমনকি চুলগুলো যেখানে ভাগ করা হয়, সেখান থেকেও চুল পড়া শুরু হতে পারে। লং লকের কারণে চুল আগা থেকেই ভঙ্গুর হতে শুরু করে এবং চুলে গিঁট লাগার প্রবণতা বেড়ে যায়। তবে ক্ষতির হার কমিয়েও লং লক ধরে রাখা সম্ভব, যদি নিয়ম মেনে স্যালনে যাওয়া যায়। অনেক বেশি বড় ড্রেডলক থাকলে চুলের ক্ষতি কমিয়ে আনার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো ৮ থেকে ১২ সপ্তাহ পরপর ট্রিমিং করা। এতে চুলের আগা পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল দেখাবে।
কালার ট্রিটেড হেয়ার
চুলে কালার করা অনেক দিক থেকেই ক্ষতিকর। এটি চুল রুক্ষ করার পাশাপাশি পড়ার অন্যতম কারণ। স্বাভাবিক চুলের চেয়েও অনেক বেশি হালকা কোনো রঙে চুল রাঙাতে চাইলে ক্ষতি হতে পারে দ্বিগুণ। তাই হেয়ার এক্সপার্টরা পরামর্শ দেন, চুলের যে স্বাভাবিক রং, তার কাছাকাছি শেডের হেয়ার কালার ব্যবহার করতে। এতে চুলের ক্ষতির আশঙ্কা কমে যায়। এখন বাজারে ভালো ব্র্যান্ডের টেম্পরারি হেয়ার কালার পাওয়া যায়, যেগুলো চুলের কম ক্ষতিকারক।
হেয়ার এক্সটেনশন
দীর্ঘমেয়াদি এক্সটেনশন ব্যবহার করে এর যত্ন নিতে না পারলে চুলের অসম্ভব ক্ষতি হতে পারে। দেশি কিংবা বিদেশি যত ভালো এক্সটেনশনই ব্যবহার করা হোক না কেন, এটি কোনোভাবেই প্রাকৃতিক চুলের পরিপূরক নয়। এক্সটেনশনে প্রতিটি চুলের সঙ্গে আলাদাভাবে আরও অনেকগুলো চুল ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এই অতিরিক্ত চুলগুলোর ভার আসল চুলকে ভেতর থেকে স্ক্যাল্পের কাছাকাছি টেনে নিয়ে আসে এবং চুল পড়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এমনকি যে অংশে হেয়ার এক্সটেনশন জোড়া লাগানো হয়, ওই স্থান থেকেও চুল ভেঙে যেতে পারে। তাই পার্মানেন্ট হেয়ার এক্সটেনশন বাদ দিয়ে টেম্পরারি হেয়ার এক্সটেনশন ব্যবহার করা যেতে পারে সুবিধামতো। এ ছাড়া ক্লিপ-অন হেয়ার এক্সটেনশনও হতে পারে ভালো বিকল্প।

মডেল: স্নিগ্ধা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: তানভীর খান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top