এই শহর এই সময় I চিত্র ও চলচ্চিত্রের আবহে
একটি ব্যস্ত শহর। জটপাকানো গলিতে ক্লান্তির শ্বাস। একটু বিশ্রামের নিমিত্তেই এই শহরে বসে শিল্প-সংস্কৃতির পসরা। করোনার ভীতি সামলে জানুয়ারি মাসেও ঢাকার এখানে-ওখানে হয়েছে মনছোঁয়া আয়োজন। এ ক্ষেত্রে চলচ্চিত্র উৎসবের ফিরিস্তি দেওয়া যেতে পারে। জানুয়ারিতে হয়ে গেল ২০তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদের উদ্যোগে এবারের আসর ১৫ জানুয়ারি শুরু আর শেষ হয় ২৩ জানুয়ারি। উৎসবের স্লোগান ছিল ‘নান্দনিক চলচ্চিত্র, মননশীল দর্শক, আলোকিত সমাজ’। আয়োজনে দেশি-বিদেশি ২২৫টি সিনেমা প্রদর্শিত হয়।
রেইনবো ফিল্ম সোসাইটি থেকে প্রকাশিত ‘উৎসব প্রতিদিন’ পত্রিকার এক্সিকিউটিভ এডিটর রবিন ফকির ক্যানভাস ম্যাগাজিনকে জানিয়েছেন, করোনা সতর্কতা অবলম্বন করেই অনুষ্ঠিত হয়েছে এবারের আয়োজন। আসরটি বেশ জমে উঠেছিল বলে জানান তিনি। তার সঙ্গে কথা বলে আরও জানা গেল, মোট ছয়টি মিলনায়তনে সিনেমাগুলো প্রদর্শিত হয়েছে।
২২৫টি সিনেমার মধ্যে ৫০ মিনিটের বেশি পূর্ণদৈর্ঘ্যরে ছিল ১২৯টি। এ ছাড়া স্বল্পদৈর্ঘ্য ও স্বাধীন সিনেমা ৯৬টি। বাংলাদেশি সিনেমা ছিল ৪০টি। যেগুলোর মধ্যে ২২টি স্বল্পদৈর্ঘ্য ও স্বাধীন এবং ১৮টি ছিল পূর্ণদৈর্ঘ্য।
প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টায় প্রদর্শনী শুরু হতো। বিশতম আসরে বাংলাদেশ ছাড়াও আফগানিস্তান, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, বাহরাইন, বেলজিয়াম, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, কিউবা, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, ফিলিস্তিন, জার্মানি, গ্রিস, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইতালি, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, মেক্সিকো, নেপাল, নরওয়ে, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, রাশিয়া, স্পেন, দক্ষিণ কোরিয়া, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভেনেজুয়েলা, সাইপ্রাসসহ ৭০টি দেশের সিনেমা প্রদর্শিত হয়েছে। মোট ১০টি বিভাগের অধীনে চলচ্চিত্রগুলো দেখানো হয়। উল্লেখ্য, ১৯৯২ সাল থেকে রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদ এই উৎসব আয়োজন করে আসছে।
সংস্কৃতিমনস্ক মানুষের আনন্দের খোরাক জোগায় চিত্র প্রদর্শনী। জানুয়ারিতেও সেই ব্যবস্থা ছিল। রাজধানীর ধানমন্ডির ইএমকে সেন্টারে জানুয়ারির শেষার্ধে চলেছে চিত্রশিল্পী সুবর্না মোর্শেদার তৃতীয় একক চিত্র প্রদর্শনী ‘অন্বেষণ’। ১৫ জানুয়ারি শুরু এবং শেষ হয় ৩০ জানুয়ারি। তাতে লিথোগ্রাফ, সায়ানোটাইপ, পেনসিল স্কেচ, জলরংসহ বিভিন্ন মাধ্যমের ৪২টি শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে।
প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন আর্ট ফ্যাকাল্টির ড্রইং ও পেইন্টিং বিভাগের প্রফেসর জামাল আহমেদ, প্রিন্টমেকিং বিভাগের প্রফেসর আনিসুজ্জামান এবং মানসিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ‘মনের বন্ধু’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদা শিরোপা। কিউরেটর ছিলেন রেজাউর রহমান।
প্রদর্শনীর বিষয়ে চিত্রশিল্পী সুবর্না মোর্শেদা ক্যানভাসকে বলেন, ‘অন্বেষণ মানে তো খোঁজ। এই খোঁজ হলো আত্ম-অন্বেষণ। নিজেকে খোঁজার যে তাগিদ, আমার মধ্যে সেটা সব সময়ই কাজ করে। এই তাগিদ থেকেই আমার কাজের শুরু বলা যেতে পারে। সব সময় মনে হয়, নিজেকে খোঁজার চেয়ে কঠিন কিছু নেই। গত দুই বছরে সেই খোঁজার তাগিদ আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। এই সময়ে অন্যদের সঙ্গে যখন কথা বলেছি, তাদের মাঝেও নিজেকেই খোঁজার চেষ্টা চলত।’
শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত প্রদর্শনীটি সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল।
লাইফস্টাইল ডেস্ক
ছবি: সংগ্রহ