তনুরাগ I ব্রাজিলিয়ান ওয়াক্স
এক্সট্রিম গ্রুমিং ট্রিটমেন্ট। জেনিটাল এরিয়ার যত্নে। চাই সঠিক পরিকল্পনা, প্রস্তুতি আর নিয়মমাফিক পরিচর্যা
সত্তর থেকে আশির দশক। ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোর সমুদ্রসৈকতে ভিড় বাড়তে শুরু করে থং বটম পরিহিত নারীদের। ফলাফল—জেনিটাল এরিয়া পুরোপুরি ওয়াক্স করে নেওয়ার চলও জনপ্রিয় হতে শুরু করে। পরবর্তীকালে ব্রাজিলিয়ান এ ওয়াক্সিং ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী। ১৯৮৭ সালে ইন্টারন্যাশনাল গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ডে এর পরিচিতি বাড়ে। ব্রাজিলিয়ান সাত বোনের হাত ধরে। নিউইয়র্কের ম্যানহাটানে একটি ওয়াক্সিং স্যালন চালু করেন তারা। ব্রাজিলিয়ান ওয়াক্সিংয়ের হরেক রকম প্রক্রিয়া আর ধারণা তারা তুলে ধরেন সৌন্দর্যসচেতনদের সামনে। কিছুদিনের মধ্যে সেলিব্রিটিদের আনাগোনা শুরু হয় স্যালনে। জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ব্রাজিলিয়ান ওয়াক্সিং। পরবর্তী তিন দশকে এর ক্রেজ তো কমেইনি, বরং বিভিন্ন প্রযুক্তির অগ্রগতির কারণে ওয়াক্সিংয়ের ফলে সৃষ্ট অস্বস্তি কমে গেছে কয়েক গুণ।
বিকিনি এরিয়ার সব অবাঞ্ছিত লোম তুলে ফেলতে ব্রাজিলিয়ান ওয়াক্স অনেক বেশি কার্যকর। বিকিনি ওয়াক্সের সঙ্গে এর মূল পার্থক্য, ব্রাজিলিয়ার ওয়াক্সে বিকিনি এরিয়ার সব লোম তুলে ফেলা হয়, আর বিকিনি ওয়াক্সে শুধু বিকিনি বটম পরলে যেটুকু দেখা যায়, ওই অংশেরই লোম তোলা হয়। ব্রাজিলিয়ান ওয়াক্সের ক্ষেত্রে স্ট্রিপ ওয়াক্স ব্যবহার না করে হার্ড ওয়াক্সের ব্যবহারই বেশি কার্যকর। অথবা ব্যবহার করা যেতে পারে সঠিক ভারসাম্যের টাইটানিয়াম ডাই-অক্সাইড এবং গ্লিসারল রোজিনাটেটো সমৃদ্ধ সফট ওয়াক্স। হার্ড ওয়াক্স ব্যবহারে ওয়াক্সিংয়ের ব্যথাদায়ক যন্ত্রণা কমে আসে, কেননা হার্ড ওয়াক্স শুধু লোম তুলে নিয়ে আসে। যেখানে ওয়াক্সিং স্ট্রিপ অনেক ক্ষেত্রে লোমের পাশাপাশি চামড়ার ওপরের স্তরও তুলে নিয়ে আসতে পারে। বিসওয়াক্সের সঙ্গে আরও কিছু সুদিং ইনগ্রেডিয়েন্টের সমন্বয়ে হার্ড ওয়াক্স তৈরি করা হয় বলে এর ব্যবহার তুলনামূলক আরামদায়ক। তাই যেকোনো স্যালনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার আগে খোঁজ নেওয়া দরকার, তারা কোন ধরনের ওয়াক্স ব্যবহার করে।
প্রস্তুতি
ওয়াক্সিংয়ে যাওয়ার আগে খেয়াল রাখতে হবে পিউবিক এরিয়ার লোম অন্তত ১/৪ ইঞ্চি লম্বা আছে কি না। ওয়াক্সিংয়ের অন্তত পাঁচ দিন আগে থেকেই এই এরিয়া শেভিং থেকে বিরত থাকতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় ১০-১২ দিন শেভ না করলে। ওই অংশের ত্বকে এক্সফোলিয়েট করতে চাইলে চেষ্টা করতে হবে ওয়াক্সিংয়ের ২৪-৪৮ ঘণ্টা আগেই তা সেরে নিতে। আরও কিছু বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন। যেমন সম্প্রতি সমুদ্র থেকে ঘুরে কিংবা যেকোনো সুইমিংপুলে সাঁতরে এলে সঙ্গে সঙ্গেই ওয়াক্সিং না করানো ভালো। কেননা সমুদ্রের লবণাক্ত আর পুলের ক্লোরিনযুক্ত পানি—দুটোই ত্বককে মারাত্মক রুক্ষ ও শুষ্ক করে দিতে পারে। এতে ওয়াক্সিংয়ের সময় ত্বকের ক্ষতির পরিমাণ তুলনামূলক বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই ওয়াক্সিং অ্যাপয়েন্টমেন্টের অন্তত দুই সপ্তাহ আগে থেকে সাগর কিংবা পুলের পানি এড়িয়ে চলা জরুরি।
মনে রাখা চাই
শরীরের এমন সংবেদনশীল অংশে ওয়াক্সিং করা বেশ অস্বস্তিকর হতে পারে, বিশেষ করে যখন প্রথমবার ব্রাজিলিয়ান ওয়াক্স করা হবে। তবে যেহেতু এই ধরনের ওয়াক্সিংয়ে লোমগুলো একদম গোড়া থেকে উঠে আসে, পরবর্তীকালে তা আরও সূক্ষ্ম ও নরম হয়ে গজায়; তাই যত বেশি ওয়াক্স করা হবে, ধীরে ধীরে ব্যথা কিংবা অস্বস্তি কমে আসবে। এসবের পাশাপাশি আপনি কোন স্যালনে এই ট্রিটমেন্ট নিচ্ছেন, সেটাও খুব ভালো করে ভাবতে হবে। অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার আগে সেখানকার ওয়াক্সিং সেবা সম্পর্কে ধারণা থাকা জরুরি। অনেকেই ওয়াক্সিংয়ের আগে প্যারাসিটামল খেতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, তবে তা বাধ্যতামূলক নয়। এ ছাড়া শ্বাসপ্রশ্বাসের বিষয়টা খেয়াল রাখতে হবে—ওয়াক্সিংয়ের সময় লম্বা লম্বা শ্বাস নেওয়া, ওয়াক্স মাখানোর সময় জোরে শ্বাস নেওয়া এবং টান দিয়ে ওঠানোর সময় নিশ্বাস ছাড়া। সব মিলিয়ে এটি একটি ২০ মিনিটের প্রক্রিয়া। তাই কষ্ট করে এই সময়টুকু এভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস চালিয়ে নিতে পারলে ব্যথার ব্যাপারটা সামলে নেওয়া যায় অনেকখানি।
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
অন্য সব ধরনের ওয়াক্সিংয়ের মতোই ব্রাজিলিয়ান ওয়াক্সও ত্বকে জ্বালাপোড়া কিংবা অস্বস্তির সঞ্চার করতে পারে। তবে আশার কথা, ওয়াক্সিংয়ের পরবর্তী দিনগুলোতে অস্বস্তি কমানোর কিছু উপায় রয়েছে। প্রথমত, পিউবিক এরিয়ার ইনগ্রোন হেয়ার দূর করে ফেলতে হবে। সে জন্য এক্সফোলিয়েশনের ধাপ এড়িয়ে চলা যাবে না একদমই। সঠিকভাবে এক্সফোলিয়েট করার পরেও যদি আপনার ইনগ্রোন হেয়ার থেকেই যায়, তাহলে ত্বক ওয়ার্ম কমপ্রেসের সাহায্যে ধীরে ধীরে এক্সফোলিয়েট করে নিতে পারেন। যদি ইনগ্রোন হেয়ারে কোনো ইনফেকশন থাকে, তাহলে আগেই ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া চাই। ওয়াক্সিংয়ের পর যদি রেজর বাম্পের মতো ছোট ছোট লাল গোটাসদৃশ দেখা যায়, সে ক্ষেত্রে পিউবিক এরিয়া খুব ভালোমতো ময়শ্চারাইজ করে রাখতে হবে। এর জন্য আন্টিব্যাকটেরিয়াল লোশন কিংবা কর্টিসোল ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে। যদি গরম ওয়াক্স লেগে ত্বক পুড়ে যায়, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে পরিষ্কার, জীবাণুনাশক তুলা লাগাতে এবং ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিতে হবে।
ডিআইওয়াই ব্রাজিলিয়ান ওয়াক্স
বাইরে কোনো স্যালনে গিয়ে ব্রাজিলিয়ান ওয়াক্সিং করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ না করলে বাসায় নিজেই করা যেতে পারে এই ওয়াক্সিং। তবে বাসায় বসে ব্রাজিলিয়ান ওয়াক্সিংয়ের প্রথম ধাপই হলো রিল্যাক্স থাকা। কেননা স্নায়ু স্থির রাখতে সেখানে কোনো পেশাদার বিউটিশিয়ান থাকবেন না। কখনো কখনো ওয়াক্সিংয়ের ব্যাপারে উদ্বেগের কারণে ব্যথা আরও বেশি অনুভূত হয়। পাশাপাশি যে প্রোডাক্টের সাহায্যে ওয়াক্সিং করা হবে, আগেই সেই প্যাকেটের সতর্কতা ও নির্দেশাবলি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পড়ে নেওয়া চাই।
ওয়াক্সিং করার আগে এমন একটি অবস্থান খুঁজে বের করা উচিত, যে অবস্থান থেকে ওয়াক্সিং করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ হয়। পুরো পিউবিক এরিয়া যেন পরিষ্কারভাবে দৃশ্যমান হয়, এটা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। এই জন্য একটা আয়নার সাহায্য নেওয়া যায়।
শুরু থেকেই ছোট ছোট অংশ ধরে কাজ এগিয়ে নিতে হবে। বাহির দিক থেকে ওয়াক্সিং শুরু করে ধীরে ধীরে অপেক্ষাকৃত বেশি সংবেদনশীল অংশে পৌঁছাতে হবে।
হার্ড ওয়াক্স ব্যবহার করে থাকলে ওয়াক্স লাগানোর পর ৩০ সেকেন্ডের মতো অপেক্ষা দরকার। ওয়াক্স নরম থাকতেই তুলে ফেলতে হবে। কিন্তু যতক্ষণ না ওয়াক্স আপনার হাতে আঠার মতো লাগতে থাকে, ততক্ষণ তোলা যাবে না।
ওয়াক্সিং শেষে অবশ্যই তেল দিয়ে ত্বকে লেগে থাকা অবশিষ্ট ওয়াক্স আলতো করে ঘষে তুলতে হবে। চাইলে অয়েল ওয়াইপসও ব্যবহার করা যায়।
সাধারণত ব্রাজিলিয়ান ওয়াক্সের ফলাফল তিন থেকে চার সপ্তাহ অব্দি থাকে। তবে একেকজনের লোমের বৃদ্ধির হার একেক রকম হওয়ায় সময়ের তারতম্য দেখা দিতে পারে। ওয়াক্সিংয়ের পরে ব্যবহার করার জন্য কিছু বিশেষ উপাদানযুক্ত প্রোডাক্ট বেছে নেওয়া যেতে পারে। যেমন টি ট্রি অয়েল—যা আপনার ত্বক ও পোর পরিষ্কার রাখে, অ্যালোভেরা—যা ত্বককে ঠান্ডা ও সতেজ রাখতে সহায়তা করে, ক্যামোমাইল—যা ওয়াক্সিং-পরবর্তী লালচে ভাব দূর করে এবং গ্লিসারিন—যা ত্বককে ময়শ্চারাইজ করে। এগুলো ব্যবহারে ওয়াক্সিং-পরবর্তী অস্বস্তি কমে আসে।
শিরীন অন্যা
ইলাস্ট্রেশন: সংগ্রহ