skip to Main Content

সাক্ষাৎকার I নাচের মাধ্যমে বদলে দিতে চাই সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি—মোবাশশীরা কামাল ইরা

চলতি পথের নানা বাধা পেরিয়ে, দৃপ্ত পায়ে লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছেন এ দেশের অনেক নারী। নিজ নিজ সেক্টরে ইতিমধ্যে অনেকেই নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছেন অনুসরণীয় ব্যক্তিত্বে। এমনই ১০ জন প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তির সঙ্গে আলাপচারিতা…
নাচের মাধ্যমে বদলে দিতে চাই সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি
—মোবাশশীরা কামাল ইরা
নৃত্যশিল্পী

ক্যানভাস: নাচের সঙ্গে আপনার সম্পৃক্ততা কখন থেকে? নিজেকে কীভাবে প্রস্তুত করেছেন?
মোবাশশীরা কামাল ইরা: আমার বয়স যখন পাঁচ কিংবা ছয় বছর, তখন নাচের শুরু। কিন্তু বেশ কিছু কারণে দু-তিন মাস নাচ শেখার পর বন্ধ করে দিতে বাধ্য হই। এর প্রায় ৭ বছর পর, ২০১৭ সালে আবার শুরু করি। আমি তখন নওগাঁয় পারসোনালি নাচের শিক্ষকের কাছে নাচ শিখতাম। তিনি বাসায় এসে শেখাতেন। বাসায় নাচের প্র্যাকটিস করতাম। ছোট ছোট কম্পিটিশনে অংশ নিতাম। তার মাধ্যমে নিজের উন্নতি বুঝতাম। এ ছাড়া প্রতিটি স্টেপ করেই মাকে দেখাতাম। মা অনেক সাহায্য করেছেন। তার অভিমত আমার কাছে ছিল অনেক বড় ব্যাপার। এভাবেই নিজেকে প্রস্তুত করেছি। আমার তো মনে হয়, যতক্ষণ জেগে থাকি, কোনো না কোনোভাবে নাচের চর্চা চালিয়ে যাই। এমনকি রাতে ঘুমোনোর আগে শুয়ে শুয়ে নাচের বিভিন্ন মুদ্রা আর এক্সপ্রেশন নিয়ে মেমোরাইজ করতে থাকি।
ক্যানভাস: ব্যালে নৃত্য কোথায় শিখেছেন?
ইরা: ব্যালে শিখেছি ইউটিউব দেখে। বলে রাখা ভালো, আমি আসলে ব্যালে নৃত্য করি না; করি কনটেম্পরারি ড্যান্স। ইচ্ছে ছিল এসএসসি পরীক্ষা শেষে ভারতে যাব ক্লাসিক্যালের ওপর ওয়ার্কশপ করতে। কিন্তু আমার পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরদিনই লকডাউন শুরু হয়ে যায়। তাই কোথাও যাওয়া হয়নি। এ কারণে একটু মন খারাপ ছিল। মা তখন বললেন, বাসায় মন খারাপ করে বসে না থেকে যেন নিজে নিজে চর্চা চালিয়ে যাই। তার পরামর্শ মেনে চর্চা চালিয়ে গেলাম ইউটিউবের সাহায্য নিয়ে। এভাবে ফ্লেক্সিবিলিটি নিয়ে কাজ শুরু করি। কনটেম্পরারি ড্যান্সের প্রতি আমার আগ্রহের কারণ, ক্লাসিক্যাল ড্যান্সে অনেক বাধ্যবাধকতা আছে, বিপরীতে কনটেম্পরারিতে মনের ভাব প্রকাশ ইচ্ছেমতো করা যায়। আসলে নাচ নিয়ে নতুন কিছু করার আকাঙ্ক্ষা আমার মধ্যে সব সময় ছিল।
ক্যানভাস: জয়িতা তৃষার ‘ব্যালেরিনা’ ফটো সিরিজে কীভাবে সম্পৃক্ত হলেন?
ইরা: করোনাভাইরাস লকডাউনের পুরো সময়টা আমি বাসাতেই নাচের ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করতাম। সেই সূত্রে একজন ফটোগ্রাফারের সঙ্গে কথা হয়। তার আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে ফটোশুট করতে ঢাকায় গিয়েছিলাম। সেই ছবিগুলো একটি ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করা হলে বেশ সাড়া ফেলে। সেখান থেকেই জয়িতা আপু ছবিগুলো দেখে আমাকে নক দেন। এভাবেই তার সঙ্গে কাজটি করা। আমরা ২ নভেম্বর (২০২১) ফটোশুট করি।
ক্যানভাস: এই ফটোশুট ঘিরে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন?
ইরা: ফটোশুটটি করতে বেশ ভুগতে হয়েছে ভিড়ের কারণে। যেমন ধরুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে এমনিতেই বেশ ভিড় থাকে। সেখানে ব্যালে নৃত্যের ভঙ্গিমায় ছবি তোলা সহজ ছিল না। তবে ছবিগুলো যে এত সাড়া ফেলবে, ভাবতে পারিনি। এই ফটোশুট আমাকে অনেক প্রেরণা জুগিয়েছে এগিয়ে যাওয়ার জন্য।
ক্যানভাস: আপনার ছবিগুলো এখন ভাইরাল। হঠাৎ পাওয়া এই খ্যাতিকে কীভাবে দেখেন?
ইরা: সবাই যেভাবে অ্যাপ্রিশিয়েট করেছে, অ্যাকসেপ্ট করেছে, তাতে আমি আপ্লুত। হঠাৎ পাওয়া খ্যাতিকে ধরে রাখার জন্য নতুন নতুন কাজ করছি। যেন সবাই আমাকে সব সময় অ্যাপ্রিশিয়েট করে।
ক্যানভাস: কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়েছে?
ইরা: অনেক রকম প্রতিবন্ধকতার সামনেই দাঁড়াতে হয়েছে আমাকে। কেননা, আমি একটি ছোট্ট শহর থেকে নাচ শুরু করেছি। এখানে সে রকম শিক্ষক ছিলেন না। তা ছাড়া সমাজে অনেকেই অনেক কথা বলত। কিন্তু মা আমাকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছেন। বন্ধুরাও। ফলে কোনো প্রতিবন্ধকতাকে বড় মনে হয়নি।
ক্যানভাস: নাচ নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
ইরা: আমি নওগাঁ সরকারি কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ছি। আপাতত ইচ্ছে, এইচএসসি শেষ করে ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া; পাশাপাশি নাচ চালিয়ে যেতে চাই। এ ছাড়া নাচ নিয়ে পড়াশোনা করারও ইচ্ছে আছে। আমাদের সমাজে নাচ নিয়ে অনেক নেতিবাচক ভাবনা আছে। নৃত্যকে অনেকেই খারাপ দৃষ্টিতে দেখে। আমি নাচের মাধ্যমেই সেসব ভাবনা বদলে দিতে চাই। খেয়াল করে দেখেছি, আমরা যখন কথা বলি, বা যেকোনো কাজ করি, তখন কিন্তু অজান্তেই নাচের ব্যবহার করি। যেমন ধরুন, চোখ ও হাতের ব্যবহার। তার মানে, আমরা যতটা না মুখে উচ্চারিত শব্দের মাধ্যমে, তার চেয়ে বেশি নাচের মাধ্যমে কথা বলি। তাই নাচ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটা অংশ। এ কারণে নাচ ঘিরে আমি সবার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে চাই। তা ছাড়া যেভাবে অন্য দেশের একটা নাচ নিজের দেশে আলোচনায় এনেছি, সেভাবে নিজের দেশের একটা নাচ অন্য দেশে আলোচনায় আনার ইচ্ছে রাখি। ব্যালে বা কনটেম্পরারি ড্যান্স নিয়ে এটাই আমার স্বপ্ন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top