কুন্তলকাহন I টায়িং ট্রাবল
সামলে ওঠার সেরা সমাধান রয়েছে হাতের কাছেই। পাল্টাতে হবে পুরোনো অভ্যাস আর বেসিক হেয়ার অ্যাকসেসরিজ। ব্যস!
বিভিন্ন কারণে চুলের ড্যামেজ বা ক্ষতি কমবেশি সবারই হয়। চুলে রং করা, হাইলাইটস, চুল স্ট্রেইট করা, কার্ল করা ইত্যাদি কারণে চুল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তার ওপর রাস্তার ধুলাবালি, ধোঁয়া—এগুলো তো আছেই। তবে আশ্চর্যজনক হলেও এটি প্রমাণিত, চুল ঝরে পড়া কিংবা চুলের আয়ু কমে যাওয়ার কয়েকটি কারণের মধ্যে একটি হচ্ছে অতিরিক্ত টানটান করে চুল বাঁধা। হাই পনিটেইল বা খোঁপা দেখতে সুন্দর লাগলেও দীর্ঘক্ষণ বেঁধে রাখায় চুলের গোড়া আলগা হয়ে যাওয়ার শঙ্কা বাড়ে। এতে চুল পড়ার হারও বেড়ে যায়।
কিন্তু বড় চুল বেঁধে নেওয়ার রোজকার অভ্যাস তো আর রাতারাতি পাল্টে ফেলা যায় না। তাই কবজিতে কিংবা ব্যাগের এক কোণে চুল বাঁধার জন্য রাবার ব্যান্ড রাখার অভ্যাসও চিরন্তন। সে ক্ষেত্রে উপায়? চুল বাঁধা বন্ধ? তা তো হয় না! বরং চুলের ধরন অনুযায়ী রাবার ব্যান্ড অথবা সঠিক হেয়ারস্টাইল বেছে নিলে এই ঝক্কি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
এবার জেনে নিতে হবে চুলের ক্ষতি কমাতে ঠিক কীভাবে পনিটেইল কিংবা অন্যান্য উপায়ে চুল বাঁধা উচিত।
প্রথমত, চুল বাঁধার জন্য এমন রাবার ব্যান্ড বেছে নিতে হবে, যেগুলোর ওপর কাপড়ের প্রলেপ দেওয়া থাকে। অর্থাৎ প্লাস্টিক বা অন্যান্য ম্যাটেরিয়ালের রাবার ব্যান্ড এড়িয়ে যাওয়া মঙ্গল। চুল বাঁধতে সবচেয়ে ভালো হলো নরম কাপড়ে মোড়ানো ইলাস্টিক ব্যান্ড। চুলের জন্য চিকন ও সিনথেটিক ইলাস্টিক বেশ ক্ষতিকর।
দ্বিতীয়ত, পনিটেইল, টাইট ব্রেইড বা খোঁপা—যে হেয়ারস্টাইলই হোক না কেন, চুল কখনোই খুব টানটান করে বাঁধা যাবে না।
চুল খোলার সময়েও থাকতে হবে সচেতন। ব্যবহার করা যেতে পারে—
হেয়ার টাই কাটার: চুল থেকে রাবার ব্যান্ড খোলার জন্য বিশেষভাবে তৈরি টুল হচ্ছে এই হেয়ার টাই কাটার। এরপর আর চুলের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হবে না। হাতের কাছে এই কাটার থাকলেই কাজ হবে সহজ।
সিম রিপার: কাপড়ের সেলাই খোলার জন্য যে বস্তু ব্যবহৃত হয়, সেটির নামই সিম রিপার। যখন হাতের কাছে আর কিছু পাওয়া যাবে না, চুলের ব্যান্ড খোলার জন্যও অনায়াসে এটি ব্যবহৃত হতে পারে।
কার্লিং ওয়ান্ড: কার্লিং মেশিনের আগার দিক কয়েক সেকেন্ড গরম করে সেটি রাবার ব্যান্ড খোলার কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।
হেয়ার টাইড বা ব্যান্ডের সঙ্গে যুদ্ধ এড়িয়ে সঠিকভাবে চুল খুলতে চাইলে পদ্ধতিগুলো বেছে নেওয়া যেতে পারে। তবে কাঁচি ব্যবহার করা যাবে না কিন্তু। আর হেয়ার টাইগুলো পাল্টে নিতে পারলে সবচেয়ে ভালো। বেশ কিছু বিকল্প রয়েছে এ ক্ষেত্রে।
সিল্ক হেয়ার টাই: ঘুমানোর ক্ষেত্রে সিল্ক বা স্যাটিনের বালিশের কভার যেমন উপকারী, তেমনি সিল্ক বা স্যাটিনের ব্যান্ডও চুল বাঁধার জন্য জুতসই। চুলের তেমন ক্ষতি হয় না এগুলো ব্যবহারে।
স্ক্রাঞ্চি: নব্বইয়ের দশকের দিকে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই হেয়ার অ্যাকসেসরিজ। মেসি বান, লো বান, ব্রেইডেড বান, পাইনঅ্যাপেল—সব ধরনের হেয়ারস্টাইলের সঙ্গে স্ক্রাঞ্চি যোগ্য সঙ্গত। চুলের ক্ষতি এড়াতে।
কয়েল হেয়ার টাই: ফোনের তারের মতো দেখতে রাবার ব্যান্ড এগুলো। চুল বাঁধার জন্য বিশেষভাবে তৈরি এই টাই পনিটেইল কিংবা খোঁপা করার জন্য বেশ ভালো।
বাঞ্জি ব্যান্ড: মোটা বা শক্ত চুলের জন্য বাঞ্জি ব্যান্ড বেশ কার্যকর। যেকোনো হেয়ারস্টাইল করা যায় এই ব্যান্ড দিয়ে।
হেয়ার স্কার্ফ: চুল বাঁধার জন্য সেরা ট্রেন্ডি টুল। যেকোনোভাবে হেয়ারস্টাইল করা যেতে পারে হেয়ার স্কার্ফ দিয়ে, চুলের ক্ষতি না করেই।
চুল সুস্থ রাখতে
ঘুমানোর আগে শক্ত করে বেণি না করাই ভালো। এতে চুল একসঙ্গে থাকবে, কিন্তু টানটান হবে না। ফলে ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি কম। ভেঙে যাওয়া থেকে পরিত্রাণ পেতে চুলের স্টাইলে বিরতি দিয়ে স্বাভাবিকভাবে খোলা রাখা যেতে পারে।
ভেজা চুল কখনো বাঁধা ঠিক নয়। তাহলে তা শুকাতে পারে না। ভালোভাবে শুকিয়ে নিয়ে তবেই চুল বাঁধা উচিত।
বেশি শক্ত করে চুল বেঁধে রাখলেও চুলের ক্ষতি হতে পারে। তাই চুল খোলার সময় ইলাস্টিক ব্যান্ড ধরে বেশি জোরে টানাটানি করা ঠিক নয়। ববি পিন বা হেয়ার ক্লিপ খোলার সময়ও চুলে যেন টান না পড়ে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
সুরবি প্রত্যয়ী
মডেল: অন্তরা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: ক্যানভাস