কভারস্টোরি I সময়ের প্রয়োজনে
প্রচলিত সমাজব্যবস্থায় বৈষম্যমূলক বিধিনিষেধের বেড়াজালে বহুকাল ধরেই একপ্রকার বন্দি রাখা হয়েছে নারীদের। এমনকি কেড়ে নেওয়া হয়েছে নিজের শরীরসংক্রান্ত মহাগুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার। তবু ছাইচাপা আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়েছে ‘মাই বডি মাই চয়েস’ আন্দোলন। এর সুফলও মিলছে। লিখেছেন নওরিন আক্তার
শরীর আমার, কষ্ট আমার, স্বস্তি আমার, দায় আমার—তবে সিদ্ধান্ত কেন অন্যের? এই ভাবনা প্রথম জেগে উঠেছিল গর্ভপাত অধিকার আন্দোলনের সময়ে। সেটা ১৯৬০ সালের কথা। গর্ভপাতের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করে সে সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নারীবাদী সংস্থাগুলো সোচ্চার হয়ে ওঠে ‘মাই বডি মাই চয়েস’ স্লোগানে। এরপর শব্দগুলোর শক্তি ছড়িয়ে পড়ে দেশ থেকে দেশে। নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য, নরওয়ে, ফ্রান্স, জার্মানি ও ইতালির পর এশিয়া আর আফ্রিকাতেও দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে এই আন্দোলন। ধীরে ধীরে গর্ভপাতের অধিকারের পাশাপাশি নিরাপদ ও স্বেচ্ছা যৌনতার অধিকার, পোশাকের স্বাধীনতা, সন্তান ধারণের অধিকারসহ নানা বিষয়ে উচ্চারিত হতে থাকে ‘মাই বডি মাই চয়েস’ স্লোগান।
পুরুষতন্ত্র ও নারীবাদ
বৈষম্যমূলক সমাজব্যবস্থা বা মতবাদই পুরুষতন্ত্র। পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় সুবিধাভোগী শ্রেণি হিসেবে পুরুষ আধিপত্য বিস্তার করেন নারীর ওপর। পুরুষের এই আধিপত্য বিস্তার বা শোষণের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে যুগ যুগ ধরে চলে আসছে পুরুষতন্ত্রের দাপট। পুরুষতন্ত্র কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি নয়, বরং ব্যক্তির ধারণ করা সামাজিক তত্ত্ব। কেবল পুরুষই যে পুরুষতন্ত্র টিকিয়ে রাখেন, তা নয়। পুরুষতন্ত্র লালন করেন সমাজের অনেক নারীও। কোনো ছেলেকে ‘মেয়েলি’ বলা, ছেলেদের কাঁদতে নেই ধরনের মনোভাব পোষণ বা পুরুষকে দুর্বল বোঝাতে নারীর সঙ্গে তুলনা করা পুরুষতন্ত্রের নিত্যনৈমিত্তিক উদাহরণ।
নারীকে দুর্বল প্রমাণ করতে পারলেই যেন শক্তিশালী হয়ে ওঠে পুরুষতন্ত্র। সুবিধাভোগী হিসেবে পুরুষসমাজের এই বৈষম্য টিকিয়ে রাখতে বেশ সচেষ্ট হলেও নারী কেন লালন করে চলেছেন এই মতবাদ? যুগের পর যুগ ধরে চলতে থাকা মানসিকতাই এর জন্য দায়ী।
সমাজে চলতে থাকা নারীর প্রতি নিপীড়ন, বঞ্চনা, বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করতে বিংশ শতাব্দীতে শুরু হওয়া নারীবাদ আন্দোলনের মূল কথা ছিল নারী-পুরুষের সমান অধিকার। নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে এরপর ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ও লক্ষ্য সামনে রেখে একাধিক নারীবাদী আন্দোলন দেখেছে বিশ্ব। ‘মাই বডি মাই চয়েস’ নারীবাদী আন্দোলনগুলোর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ।
নিজের শরীরকে জানা
নিজের শরীরের ওপর অন্যের খবরদারি রোধ করতে চাইলে জানতে হবে শরীর ও তার অধিকার সম্পর্কে—এমনটি বলেছে মানবাধিকারবিষয়ক আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। নিজের শরীরসংক্রান্ত যেকোনো সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারা একজন ব্যক্তিমানুষের অন্যতম অধিকার। শরীর নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের চাপ প্রদানকে অপরাধ বলেও গণ্য করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সঙ্গী বাছাই, যৌন জীবন, সন্তান ধারণ, গর্ভপাতসহ শরীরসংক্রান্ত সব সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার কেবল যার শরীর, তারই।
বডি পজিটিভিটি
ছিপছিপে কোমর, মেদহীন শরীর, ফর্সা চামড়া—সমাজ আরোপিত সৌন্দর্যের এই মাপকাঠির চর্চা চলে আসছে যুগের পর যুগ। বডি শেমিং বা বাহ্যিক শারীরিক গঠন নিয়ে কটাক্ষ করতে এখানে দেখা যায় অহরহ। তুমি কালো মানে অসুন্দর, তুমি ফর্সা মানেই সুন্দর বা তোমার ত্বকে দাগ মানেই তুমি দেখতে ভালো না—এমন সব কথা শুনতে হয় একেবারে শিশুকাল থেকে। তবে বডি পজিটিভিটি বা শরীরকে ইতিবাচকভাবে নেওয়ার মতবাদ বলে, নিজের শরীরকে জানা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি একে ভালোবেসে গ্রহণ করাও জরুরি। শারীরিক গঠন নিয়ে অন্যকে কটাক্ষ না করা এবং আত্মগ্লানিতে না ভোগাই বডি পজিটিভিটির মূল কথা। মোটা, চিকন, কালো, ফর্সা, খাটো, লম্বা—সব বিশেষণ ছাপিয়ে নিজের শরীর যেমন আছে, ঠিক সেভাবেই একে গ্রহণ করা ও ভালোবাসা প্রয়োজন। কালো হলে অমুক রঙের পোশাক পরা যাবে না কিংবা মোটা হলে তমুক পোশাক ভালো দেখাবে না—এমন মনোভাব উড়িয়ে দিতে হবে তুড়ি মেরে।
সামাজিক এই মতবাদের জন্ম ঊনবিংশ শতাব্দীতে হলেও বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি এসে এটি আমেরিকায় বিস্তার লাভ করতে শুরু করে। ১৯৬৭ সালে নিউইয়র্কের রেডিও হোস্ট স্টিভ পোস্ট এ-সংক্রান্ত একটি ইভেন্ট আয়োজন করেন। ফ্যাট ইন নামের সেই ইভেন্টে শারীরিকভাবে মোটা হওয়ার কারণে কাউকে কটাক্ষ করতে নিরুৎসাহিত করা হতো; পাশাপাশি নিজের শরীর নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হতে উদ্বুদ্ধ করা হতো।
নব্বইয়ের দশকে বডি পজিটিভিটি মতবাদের সেকেন্ড ওয়েভ শুরু হয়। সব ধরনের শারীরিক গঠনে সবাইকে একসঙ্গে ইয়োগা ও এক্সারসাইজ করতে উদ্বুদ্ধ করার শুরু এ সময়ে। তৃতীয় ওয়েভে সোশ্যাল মিডিয়াগুলো সরগরম হয়ে ওঠে বডি পজিটিভিটি নিয়ে। ২০১২ সালে আমেরিকান ওভারসাইজ মডেল টেস হলিডে বডি পজিটিভিটি-সংক্রান্ত একটি ক্যাম্পেইনের আয়োজন করেন। এর কয়েক বছর পর ইউরোপের একটি স্বনামধন্য বিজ্ঞাপনী সংস্থার সঙ্গে তিনি চুক্তিবদ্ধ হন মডেল হিসেবে।
ট্যাবু ভাঙার আন্দোলন
শারীরিক সৌন্দর্যের মানদণ্ড নির্ধারণ করে দেওয়ার পাশাপাশি নারীর শরীর নিয়ে বহু ট্যাবু রয়েছে সমাজে। নারীর শরীরে পুরুষের আধিপত্য বিস্তার বা শোষণের রীতি যুগ-যুগের। নারীর যৌনতার আগ্রহ বা শারীরিক চাহিদাকে সমাজ কখনোই স্বীকৃতি দেয়নি। অথচ যৌনতা নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই খুব সুস্থ ও স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। বিবিসির এক জরিপ অনুযায়ী, বেশির ভাগ পুরুষই সেসব নারীকে ভালো চোখে দেখেন না, যারা তাদের শারীরিক চাহিদা নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করেন। নারীকে অবদমনের জন্য তাদের যৌনজীবনের ওপর চালানো হয় এই শোষণ। নারীর প্রতি যৌন সহিংসতাও ঠিক একই কারণে করা হয়। ধর্ষণ পুরুষের যৌন চাহিদা পূরণের উদ্দেশ্য নয়, বরং তাদের ক্ষমতা ও শক্তি প্রদর্শনের একটি কৌশল মাত্র। বিবাহিত নারী বা স্ত্রী মানেও বেশির ভাগ পুরুষের কাছে যৌনদাসী, যার কাজ শুধু পুরুষকে আনন্দ দেওয়া। সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে নারীর ইচ্ছা বা অনিচ্ছার কোনো দাম সাধারণত দেওয়া হয় না। নারীর শারীরিক সুস্থতা বা অসুস্থতার বিষয়ও আমলে নেওয়া হয় না। মানসিক সুস্থতার বিষয় তো একেবারেই নস্যি।
সমাজে নারীর সতীত্ব নিয়েও রয়েছে বিভিন্ন ট্যাবু। বিয়ের আগে তাকে সতীত্ব পরীক্ষার সার্টিফিকেট দিতে হয় অনেক সমাজে। অনেক সমাজে আবার সেই পরীক্ষা নেওয়া হয় বিয়ের পরে। বিয়ের পর সতীত্বের পরীক্ষায় পাস না করলে সেই নারীর জীবন পরিণত হয় নরকে।
পুরুষতান্ত্রিক ও পুঁজিবাদী সমাজের যৌথ প্রয়াসে নারীর শরীরকে পণ্য হিসেবে লেনদেন করা হয়। গণমাধ্যমে নারী উপস্থাপিত হয় পণ্য রূপে। সেই পণ্য বিক্রি হয় সমাজের বিভিন্ন স্তরে। কখনো রং ফর্সাকারী ক্রিম, কখনো ফেশিয়াল বা রূপচর্চায় ব্যবহৃত প্রসাধনী হয়ে সেগুলো মস্তিষ্ক থেকে মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়ে। নিজের অজান্তেই মুনাফালোভী বিক্রেতা বা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের কাছে পণ্য হয়ে পড়েন নারীটি।
নারীর পোশাকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয় পুরুষ বা পুরুষতান্ত্রিক সমাজ। কোন পোশাক পরলে তাকে ‘শালীন’ দেখাবে, কোন পোশাক পরলে পুরুষ ‘প্রলুব্ধ’ হয়—সবই জোর করে আরোপ করা হয় নারীর ওপর। এখানে তাদের মতামত বা ইচ্ছার কোনো দাম থাকে না। ধর্ষণের কারণ হিসেবেও নারীর পোশাককে দোষারোপ করা হয় অনেক সময়। শরীর নিয়ে এসব সামাজিক ট্যাবু ভেঙে নারীর সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা আদায়ে শুরু হয় ‘মাই বডি মাই চয়েস’ আন্দোলন।
দীপিকার ‘মাই চয়েস’
এশিয়া ‘মাই বডি মাই চয়েস’ আন্দোলন নিয়ে নড়েচড়ে বসে ভোগ ইন্ডিয়ার একটি শর্টফিল্ম নিয়ে তুমুল হইচইয়ের পর থেকে। বলিউড অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোনসহ ৯৯ জন নারী অংশ নেন ‘মাই চয়েস’ শর্টফিল্মে। এর মূল কথা ছিল, আমার শরীর নিয়ে আমি কী করব—সেটা একান্তই আমার সিদ্ধান্ত। আমার ইচ্ছে হলে বিয়ে করব, না হলে করব না। আমার পোশাক কী হবে—সেই সিদ্ধান্তও একান্তই আমি নেব। আমার জীবন, আমার স্বাধীনতা। এখানে অন্য কারও সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো অবকাশ নেই।
গর্ভপাতের অধিকার ও তারকা সংহতি
গেল বছর যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৭০০ বিক্ষোভ হয়েছে গর্ভপাতের অধিকার বিষয়ে। দেশটির টেক্সাস রাজ্যে করা একটি নতুন আইন ঘিরে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের প্রতিবাদী মানুষ। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ৬ সপ্তাহ পর গর্ভপাত করা যাবে না—এমন আইনের বিরোধিতা করতে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে রাস্তায় জড়ো হন সাধারণ মানুষ। ‘মাই বডি মাই চয়েস’, ‘অ্যাবরশন ইজ আ পার্সোনাল চয়েস’, ‘নট আ লিগ্যাল ডিবেট’সহ নানা ধরনের স্লোগানে মুখর হয় রাজপথ। তারকারাও আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করতে তাদের গর্ভপাতের ঘটনা তুলে ধরেন। এর মধ্যে অ্যাশলে জাড, স্টিভ নিকস, কেকে পালমার, লরা প্রিপন অন্যতম।
বিতর্কের আগুন
নারীবাদ ও পুরুষতন্ত্র নিয়ে সমাজে অসংখ্য গোঁড়ামি ও কুসংস্কার প্রচলিত। নারীর শরীরের ওপর পুরুষতন্ত্রের শাসন বন্ধে উচ্চারিত ‘মাই বডি মাই চয়েস’ স্লোগানকেও প্রশ্নবিদ্ধ হতে হয়েছে যুগ যুগ ধরে। নারীর শরীরের ওপর অন্যের শোষণ বন্ধের এই মনোভাবকে অবাধ যৌনতার নাম দিয়ে আন্দোলনের রাশ টেনে ধরার চেষ্টা করেছে পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা। বেশির ভাগ মানুষের কাছেই এখনো শরীরের স্বাধীনতা মানে কেবল যৌনতার স্বাধীনতা। আর যৌনতার স্বাধীনতা মানে নারীর শরীর ‘অশুদ্ধ’ হয়ে যাওয়া! নারীর শরীরের তথাকথিত শুদ্ধতা রক্ষায় সমাজ সব সময়ই ব্যতিব্যস্ত।
বলে রাখা ভালো, পুরুষতন্ত্র মানেই যেমন পুরুষ নয়, নারীবাদ মানেও পুরুষবিদ্বেষ নয়। ঠিক তেমনি নারীর শরীরের স্বাধীনতা মানেই কেবল যৌনতার স্বাধীনতা নয়। যদিও যৌনতার স্বাধীনতাও অনেকটুকু অংশ জুড়ে আছে।
শরীর আমার, সিদ্ধান্ত কেন সবার?
একজন নারীকে সন্তান জন্ম দিতে হলে দীর্ঘ নয়-দশ মাস শরীরে ধারণ করতে হয়। শারীরিক পরিবর্তন, হরমোনের পরিবর্তন, মানসিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয় একটা লম্বা সময় ধরে। কেউ যদি স্বেচ্ছায় এসব পরিবর্তন মেনে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত না থাকেন, তাকেও কেন সমাজ বাধ্য করে মা হওয়ার জন্য?
মা হওয়াকে গ্লোরিফাই করা একটি চলমান চর্চা। মা হতে না পারলে জীবন বৃথা—এই মনোভাবের চর্চা হতে হতে সেটা কেবল সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েই যায়নি, গেঁথে গেছে মানুষের মস্তিষ্কের একেবারে গভীরে। মা হওয়া যথেষ্ট আনন্দের বিষয়, সন্দেহ নেই। কিন্তু যিনি স্বেচ্ছায় সেই আনন্দ লাভে আগ্রহী নন, তাকে সমাজ মানতে নারাজ। কেউ সন্তান না চেয়ে কেবল ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবতে চাইলে তাকে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করা হয় গর্ভধারণের জন্য। সব সময়ই নারীর শরীরের ওপর এমন সব সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়ে আসছে সমাজ ও পুরুষ। একজন নারী কবে বিয়ে করবেন, কবে মা হবেন, কয়টা বাচ্চার জন্ম দেবেন—এগুলো বেশির ভাগই নারীর ওপর আরোপিত। এই আরোপ করা সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে চাইলেই নারীকে নানা প্রতিকূলতা ডিঙাতে হয়।
সম্প্রতি মা হয়েছেন বলিউড অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। অন্যের গর্ভে সন্তান জন্ম দিয়েছেন, যা সারোগেসি পদ্ধতি হিসেবে পরিচিত। প্রিয়াঙ্কার এ সিদ্ধান্ত নিয়ে নতুন করে সমালোচনার তুফান বয়ে যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে। ‘নিজে জন্ম না দিলে মা হওয়া যায় না’—এমন জাজমেন্টে মেতে উঠেছে সমাজ। একজন নারী যতই সফল হোন, ট্যাবু ভাঙতে চাওয়ার দুর্নিবার সাহস দেখানোকে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ কখনোই স্বাগত জানায় না।
তবে আশার ব্যাপার, গর্ভধারণ, গর্ভপাত কিংবা যৌনতার স্বাধীনতার বিষয়ে নারীর সিদ্ধান্তই শেষ কথা হওয়ার আন্দোলনের পালে হাওয়া লাগছে ধীরে ধীরে। ট্যাবু ভাঙার আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ছে দেশ থেকে দেশে। বৈবাহিক ধর্ষণের বিরোধিতায় সোচ্চার হচ্ছেন নারীরা। বিয়ে করা মানেই নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার শরীরে অধিকার দেখানো নয়। একইভাবে গর্ভধারণ কিংবা গর্ভপাতের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অন্যের চাপ প্রয়োগ অন্যায়। প্রিয়াঙ্কা যেমন মা হয়েছেন সারোগেসিতে, আবার অভিনেত্রী কারিনা কাপুর কিংবা আনুশকা শর্মা প্রচলিত নিয়মেই জন্ম দিয়েছেন সন্তানের। অভিনেত্রী সুস্মিতা সেন এসবের কোনোটাই বেছে নেননি। তিনি সন্তান দত্তক নিয়েছেন। এখানে কারও সিদ্ধান্ত নিয়েই জাজমেন্টের সুযোগ নেই। নারীর নিজের শরীর বিষয়ে নেওয়া সিদ্ধান্তকে সম্মান জানানোর মানসিকতা গড়ে ওঠাই ‘মাই বডি মাই চয়েস’ আন্দোলনের শেষ কথা।
নতুন সময়ের ডাক
আশার কথা, দীর্ঘ আন্দোলনের সুফল দেখা যাচ্ছে এখন বিভিন্ন সমাজে। নিজের শরীরসহ বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাহস দেখাচ্ছেন অনেক নারী। খেলার মাঠ, উড়োজাহাজ চালিয়ে আকাশে চক্কর দেওয়া, দাপুটে রিপোর্টার হয়ে প্রতিকূল পরিবেশে খবর ও খবরের পেছনের খবর তুলে আনা—অপ্রচলিত অনেক পেশায়ই এখন নারীদের জয়জয়কার। কোনো কাজই শুধু ছেলেদের কিংবা শুধু মেয়েদের নয়। নিজেকে ঠিকমতো বুঝতে পারলে, নিজেকে নিজের পরিচয়ে মেনে নিয়ে প্রয়োজনে লড়াই করার মানসিকতা রাখলে একসময় সমাজব্যবস্থার সেকেলে ঘেরাটোপ পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে জায়গা করে নেওয়া সম্ভব, নারীদের এমন উদাহরণ এখন অসংখ্য। তাই সিদ্ধান্ত গ্রহণের সামর্থ্য নিজে থেকেই অর্জন করে নেওয়া চাই।
মডেল: নাজিফা তুশি, জেসিয়া ও বর্ণ
মেকওভার: পারসোনা
জুয়েলারি: আমিসে
ওয়্যারড্রোব: আদ্রিয়ানা এক্সক্লুসিভ
ছবি: জিয়া উদ্দীন