ফরহিম I ওয়ার্কআউট ওয়ার্নিং
স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে গিয়ে সৌন্দর্যের বারোটা বাজিয়ে ফেললে তো চলবে না! পেশির পাশাপাশি ত্বকও থাকুক সযত্নে
সৌন্দর্য শুধু মেয়েদের বিষয় যেমন নয়, সৌন্দর্যচর্চাও ঠিক তেমনি। ত্বকের যত্ন এখন আর লিঙ্গভিত্তিক বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়না। সবারই যেহেতু ত্বক আছে, এর পরিপূর্ণ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন; বিশেষ করে ব্যায়ামের আগে ও পরে। কারণ ত্বকে ঘাম, তেল আর ব্যাকটেরিয়া জমার মোক্ষম সময় এটি। যা পরিপূর্ণভাবে পরিষ্কার না করলে লোমকূপ বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা বাড়ে। ত্বকে অ্যাকনে, ব্রেকআউট আর শুষ্কতার শঙ্কা বাড়ায়। এ ছাড়া ব্যায়ামের সময় শরীরে ওভার হিটিংয়ের ফলে ত্বক লালচে হয়ে যায়, যা যত্নের অভাবে রোজাসিয়ার মতো সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। তাই পুরুষদের জন্য প্রি অ্যান্ড পোস্ট- স্কিনকেয়ার রুটিন থাকলে ত্বক সুরক্ষিত থাকবে; থাকবে যত্নে। কীভাবে—সেটাই জানার বিষয়।
ক্লিনজিং
প্রি অ্যান্ড পোস্ট-ওয়ার্কআউট সেশনে ত্বকের যত্নে চাবিকাঠি হলো ক্লিনজিং। ওয়ার্কআউট শুরু করার আগে একটি ফোমিং ফেসওয়াশ দিয়ে মুখত্বক ধুয়ে নিতে হবে। ছেলেদের জন্য ফোমিং ফেসওয়াশ বেশ কার্যকর। ছেলেদের ত্বকের ধরন তৈলাক্ত হওয়ার কারণে স্ট্রং ক্লিনজারের প্রয়োজন পড়ে। আর ফোমিং ফেসওয়াশ জেল-বেসড ফেসওয়াশের তুলনায় বেশ স্ট্রং ইফেক্ট তৈরি করতে পারে। ত্বকের উপরিভাগের ব্যাকটেরিয়া বা ময়লা ও লোমকূপ পরিষ্কার করতে এটি বেশ সহায়ক। ওয়ার্কআউট শেষ হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঠান্ডা পানিতে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। ত্বক থেকে ক্ষতিকর সব উপাদান দূর করতে ওয়ার্কআউটের পর গোসলের সময় একটি ডিপ ক্লিনজিং ফেসওয়াশ ব্যবহার জরুরি। এটি অ্যান্টি-অয়েল ফর্মুলার হলে ভালো হয়। আরও ভালো হয় স্যালিসাইলিক অ্যাসিড, বেনজয়েল পার-অক্সাইড ও গ্লাইকোলিক অ্যাসিডের মতো উপাদানে তৈরি ক্লিনজার বেছে নিলে।
ময়শ্চারাইজিং
পুরুষালি ত্বকযত্নের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে হালকা ওজনের ও সুগন্ধিমুক্ত ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করা। তবে নন-কমেডোজেনিক ময়শ্চারাইজার ব্যবহার এ ক্ষেত্রে নিশ্চিত করতে হবে। এটি লোমকূপের মুখ আটকে না রেখে কোমল ত্বকের নিশ্চয়তা দেবে। ভারী, তৈলাক্ত ফর্মুলাগুলো এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। এগুলো ঘাম সৃষ্টি করবে, লোমকূপের মুখ আটকে দেবে এবং ব্রেকআউটের কারণও হতে পারে। তাই ওয়ার্কআউটের আগে ও পরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ময়শ্চারাইজার প্রয়োগ করতে হবে।
সানস্ক্রিন
বাইরে গেলে সানস্ক্রিন প্রয়োগ করাটা অবশ্যকর্তব্য। এটি ত্বককে কঠিন অতিবেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা করে, যা ত্বকের ক্ষতির জন্য যথেষ্ট। তাই প্রি-ওয়ার্কআউটের সময় ময়শ্চারাইজারের পরপরই ৩০ বা তার বেশি এসপিএফ যুক্ত নন-কমেডোজেনিক সানস্ক্রিন ত্বকে মাখিয়ে নিতে হবে। ওয়ার্কআউটের সময় ঘাম হয় বলে ওয়াটারপ্রুফ ফর্মুলারগুলোই বেছে নেওয়া ভালো। অয়েল-বেসড বা ভারী সানস্ক্রিন লোমকূপের মুখ বন্ধ করে দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে হালকা সানস্ক্রিনগুলো বেশি কার্যকর।
এক্সফোলিয়েশন
পুরুষদের যেহেতু শেভ করতে হয়, সে ক্ষেত্রে ইনগ্রোন হেয়ার হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তাই সপ্তাহে দুবার ওয়ার্কআউট সেশনের পর কোমল ফেশিয়াল স্ক্রাব ব্যবহার করা যেতে পারে, যাতে ইনগ্রোন হেয়ার রোধ করা যায়। এটি দ্রুত ত্বক পরিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করবে, যেকোনো ধরনের ময়লা বা মৃতকোষ ত্বক থেকে দূর করে দেবে।
হাইড্রেশন
ওয়ার্কআউট-পরবর্তী ক্লিনজিংয়ের পর ত্বকে হাইড্রেশনের একটি বাড়তি বুস্ট প্রয়োজন। তাৎক্ষণিক সতেজতা পেতে ফেস মিস্ট বা টোনার স্প্রে করে নেওয়া যায়। ত্বক স্যাঁতস্যাঁতে থাকা অবস্থায় একটুখানি ময়শ্চারাইজার লাগিয়ে নিতে হবে, এতে ত্বক আরও ভালোভাবে প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা শুষে নেবে।
আই ক্রিম
ওয়ার্কআউটের পর গোসল করা হয়ে গেলে ময়শ্চারাইজার, এর পরেই আই ক্রিম মাখিয়ে নিতে ভুললে চলবে না। চোখের চারপাশের ত্বক পাতলা হওয়ার কারণে এখানে বয়সের ছাপ বা বলিরেখা দ্রুত পড়ে। নারীদের মতোই একটি ভালো আই ক্রিম ব্যবহার করা পুরুষদের জন্যও ঠিক ততটা গুরুত্বপূর্ণ।
এ ছাড়া মনে রাখা প্রয়োজন, জিমের সরঞ্জামগুলো জীবাণুর প্রজননক্ষেত্র, যা হাতের মাধ্যমে শরীরের অন্যান্য অংশে পৌঁছায়। তাই ওয়ার্কআউটের সময় বা তারপর মুখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকা চাই। এবং যত দ্রুত সম্ভব হাত সাবান দিয়ে ধুতে হবে বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে। যখনই সম্ভব সরঞ্জামগুলো মুছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ওয়াইপস বা স্প্রে ব্যবহার করে পরিষ্কার করা নেয়া জরুরি।
তাসমিন আহমেদ
মডেল: হাসিন
মেকওভার: পারসোনা মেনজ
ছবি: জিয়া উদ্দীন