skip to Main Content

ফিচার I আমে কাঁঠালে ঈদ

গ্রীষ্মে আম-কাঁঠাল বাঙালির ঘরে ঘরে উৎসবের আমেজ নিয়ে আসে। এ দুটি ফল ব্যবহার করে তৈরি করা যায় মুখরোচক নানা খাবার। ঈদে অতিথি আপ্যায়নে মেনুতে রাখা যেতে পারে এমন কিছু পদ

পাকা অথবা কাঁচা আম—দুটোরই শরবত তৈরির খ্যাতি আছে। এ ছাড়া ম্যাংগো স্ল্যাশি, ম্যাংগো স্মুদি কিংবা আমের লাচ্ছিও এখন পৃথিবীজুড়ে বিখ্যাত। ঈদের সকালে এক গ্লাস আমের শরবত বা স্মুদি প্রাণ জুড়িয়ে দেবে যে কারও। ফলে ঈদের শুরুটা হতে পারে আম দিয়ে। এতে গতানুগতিক খাবার মেনু থেকে বেরিয়ে ঈদ উদযাপন হবে ভিন্ন আমেজে। গ্রীষ্মের এই প্রচণ্ড দাবদাহে আমের কুলফি বা আমের আইসক্রিমও চমৎকার আইটেম হতে পারে, বিশেষ করে শিশুদের জন্য। আমের কুলফি বা আইসক্রিম যেমন একদিকে ক্লান্তিকর গরমের শেষে শান্তির স্পর্শ দেয়, অন্যদিকে প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদাও মেটায়। আমের পিঠা কিংবা মিষ্টি আমাদের দেশে বেশ প্রচলিত। এ ছাড়া ফলটি দিয়ে তৈরি করা যায় পুডিং কিংবা ম্যাংগো ফ্লেভারড কেক। এর বাইরেও ডেজার্ট হিসেবে আমের তৈরি প্যানাকোটা কিংবা মাহালাবিয়া ঈদের খাবারে ভিন্নতা আনবে অনায়াসেই।
ম্যাংগো ইয়োগার্ট থেকে ম্যাংগো জ্যাম কিংবা সান্ডে, ম্যাংগো মুজ, ম্যাংগো টার্ট, ম্যাংগো পাই বা ম্যাংগো ডোনাট বাচ্চাদের ঈদকে আরও এক কাঠি সরেস করে দিতে পারে। তাই ঈদের সন্ধ্যায় নাশতা অথবা ডিনারের পর ডেজার্ট হিসেবে এর যেকোনো এক পদ রাখা যেতে পারে মেনুতে। বর্তমানে আম দিয়ে তৈরি আরেকটি জনপ্রিয় খাবার হলো ম্যাংগো স্টিকি রাইস। তরুণ প্রজন্মের কাছে অতিদ্রুতই এই খাবার পছন্দের শীর্ষে চলে আসছে। আমের তৈরি স্যালাডও সকল বয়সীর কাছে পছন্দের হয়ে উঠছে। অন্যান্য ফলের সঙ্গে তো বটেই, সবজি স্যালাডেও আম ব্যবহৃত হচ্ছে ইদানীং। চিকেন দিয়ে আমের স্যালাড কিংবা মাছের সঙ্গে আম দিয়ে তৈরি সুইট-ট্যাঙ্গি খাবারের নাম এখন অহরহ শোনা যায়। বিভিন্ন অভিজাত রেস্তোরাঁয় স্বাদ নেওয়া যায় এসব পদের। ঈদে এসব পদ তৈরি করে অতিথিদের কাছ থেকে প্রশংসা কুড়িয়ে নেওয়া যেতে পারে। এমনকি বারবিকিউতেও আজকাল আম ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলটি আগুনে পুড়িয়ে মরিচ দিয়ে খাওয়ার মতো অসংখ্য রেসিপি আছে। আমের আরেকটি পদ হলো হলুদ দিয়ে কাঁচা আমের হামুস। এই পদটি মূলত খাওয়া হয় পাউরুটি বা চাপাতি দিয়ে। এটি ছোলা, হলুদ, কাঁচা আম ও কাঁচা মরিচ দিয়ে তৈরি করা হয়। অন্তর্জালে এর রেসিপি মেলে। ঈদে তৈরি করা যেতে পারে এই পদও।
আম দিয়ে হয় সসও। কাঁচা আমের সিমিসুরি আর্জেন্টিনায় খুবই জনপ্রিয় একটি সস; যা পার্সলে, সিলেন্ট্রো, রসুন, ভিনেগার ও তেল দিয়ে তৈরি হয়। আমের আরেকটি পদ হচ্ছে আম দিয়ে চিংড়ি। এটি ভিয়েতনামের খাবার। তৈরি করা হয় আমের টুকরা, মাছের সস ও চিংড়ি দিয়ে। মিষ্টি তৈরিতেও আম কাজে লাগে। পাকা আম দিয়ে রসগোল্লা হয়। গতানুগতিক রসগোল্লার স্বাদে পরিবর্তন আনতে বাঙালিদের মিষ্টিতে এটি বৈচিত্র্য এনে দেবে। ঈদেও মিলবে ভিন্ন স্বাদ।
শুধু আম নয়, কাঁঠালেরও হয় নানান পদ, বিশেষ করে কাঁঠালের বিরিয়ানি। ঈদে অন্যান্য বিরিয়ানির সঙ্গে এ পদ দিয়েও করা যেতে পারে অতিথি আপ্যায়ন। কাঁঠালের হালুয়াও একটি সুস্বাদু খাবার। বীজ ছাড়িয়ে কাঁঠালের কোষের সঙ্গে ঘি, দারুচিনি, এলাচি, চিনি, কনডেন্সড মিল্ক, গুঁড়া দুধ, কিশমিশ ও কাজু মিশিয়ে তৈরি করা হয় পদটি। ঈদের সকালে জর্দা, ফিরনির সঙ্গে মিষ্টান্ন হিসেবে এটিও রাখা যেতে পারে মেনুতে। তৈরি করতে পারেন কাঁঠালের ঠান্ডাই। কাঁঠাল, তরল ঠান্ডা দুধ, ক্রিম, চিনি এবং পরিমাণমতো বরফকুচি দিয়ে তা বানানো যায়। বাচ্চারা পদটি চেটেপুটে খায়। বানানো যেতে পারে কাঁঠালের সন্দেশও। এটি তৈরিতে লাগবে সেদ্ধ কাঁঠালের বিচি, তরল দুধ, চিনি, গুঁড়া দুধ, ঘি, এলাচি ও দারুচিনি।
ঈদে তৈরি করা যেতে পারে কাঁঠালের প্যান কেক। এ পদ বানাতে লাগে কাঁঠালের ক্বাথ, ময়দা, বেকিং পাউডার, চিনি, তরল দুধ, লবণ ও বাটার। ঈদের বিকেলে বাচ্চাদের নাশতায় রাখা যেতে পারে এই কেক। কাঁচা কাঁঠাল দিয়ে চিংড়ির তরকারিও হয়। পদটিকে কেউ কেউ কাঁঠালি চিংড়ি বলে থাকেন। কেউ বলেন এঁচোড় চিংড়ি। এটি রান্না করা সহজ। তৈরি করতে লাগবে কাঁচা কাঁঠাল, চিংড়ি, পেঁয়াজবাটা, রসুনবাটা, আদাবাটা, জিরাবাটা, মরিচবাটা, হলুদগুঁড়া, শুকনা মরিচ, দারুচিনি, এলাচি, লবঙ্গ, পাঁচফোড়ন, তেজপাতা, লবণ ও তেল।
ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে কাঁচা কাঁঠাল দিয়ে নিরামিষ তরকারি কমবেশি সব বাঙালি হেঁসেলেই রান্না হয়। অনেকে কাঁচা কাঁঠাল দিয়ে গরুর মাংসও রান্না করেন। শুধু আমাদের দেশে নয়, কাঁচা কাঁঠাল খাওয়া হয় বিদেশেও। দেশভেদে আছে এর ভিন্ন ভিন্ন রেসিপি। তেমনই একটি রেসিপি কাঁচা কাঁঠালের স্টু। খেতে হয় স্যুপের মতো। সাদা ভাত বা ফ্রায়েড রাইসের সঙ্গে এই স্টু খাওয়ার চল। এ ছাড়া কাঁচা কাঁঠালের সঙ্গে গরুর মাংসের একটি পদ রাখা যেতে পারে ঈদ আইটেমে। এটি রাঁধতে কাঁচা কাঁঠালের সঙ্গে লাগবে গরুর মাংস, পেঁয়াজকুচি, মরিচগুঁড়া, রসুনবাটা, আদাবাটা, জিরাগুঁড়া, হলুদগুঁড়া, ধনেগুঁড়া, তেজপাতা, সাদা গোলমরিচ, লং, গরমমসলা (দারুচিনি ও এলাচিগুঁড়া), লবণ ও সয়াবিন তেল।

 সিফাত বিনতে ওয়াহিদ
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top