skip to Main Content

ফিচার I ঈদভোজে সাবধান

এক মাস রোজা রাখার পর ঈদের দিন বাহারি খাবার একসঙ্গে দেখে লোভ সামলানো মুশকিল। কিন্তু হুট করেই অনেক খাবার খেলে শরীরে সমস্যা হতে পারে। চাই সতর্কতা। জানাচ্ছেন সিফাত বিনতে ওয়াহিদ

ঈদে সুস্থ থাকতে হলে খাবার খেতে হবে হিসাব করে। অনেকেই মনে করেন, দু-এক দিন বেশি খেলে ক্ষতি নেই। তা না থাকলেও দীর্ঘ এক মাস পাকস্থলী যে খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত হয়েছে, তাকে হুট করেই বাড়তি চাপ দেওয়া ঠিক হবে না। তাই ঈদের কয়েক দিন খাওয়া উচিত রয়েসয়ে। ঈদের দিন সকাল থেকেই বাড়িতে-বাড়িতে নানা প্রকার লোভনীয় খাবার তৈরি হতে থাকে। সকালে ভারী খাবার না খেয়ে বরং সেমাই বা ফিরনি দিয়ে শুরু করা যেতে পারে। এর আগে খালি পেটে এক গ্লাস হালকা গরম লেবুপানি বা ভিনেগার পানি পান করে দিন শুরু করলে হজমব্যবস্থা ভালো থাকবে। সকালে হালকা খাবার খাওয়ার ২০ থেকে ৩০ মিনিট পরে অল্প পানি পান করতে হবে। এর ঘণ্টা দেড়েক পর যেকোনো একটি ফল, ফলের জুস বা ফলের স্যালাড খাওয়া যেতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের অতিরিক্ত শর্করা না খাওয়াই ভালো।
ঈদের দিন দুপুরে খুব বেশি তেলযুক্ত খাবার খাওয়া ঠিক হবে না। দুপুরে ভাত, পোলাও, খিচুড়ি বা বিরিয়ানি—যেটাই রান্না হোক, তা অল্প তেলে রান্না হতে হবে। এর সঙ্গে মাংস খেতে চাইলে যেকোনো একধরনের বেছে নিতে হবে। মুরগি খেতে চাইলে তা-ই খাওয়া যেতে পারে। যদি গরু বা খাসি খেতে ইচ্ছে করে, সে ক্ষেত্রে দুয়ের মধ্যে একটি বেছে নিতে হবে। এ সময় যেকোনো সবজি বা স্যালাড রাখা ভালো। এতে টক দই ব্যবহার করলে উপকার মিলবে। ঈদের দিন দুপুরে নানা কারণে সময়মতো খাওয়া হয় না। খাবারের সময়সীমায় গরমিল হলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা, মাথাব্যথা, বদহজমসহ নানা রকম শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ঈদের রাতের খাবারও ভারী না হওয়া ভালো। রাতের তালিকায় এমন খাদ্য রাখতে হবে যেন পেট ভরার সঙ্গে সঙ্গে ক্লান্তি ভাবটাও দূর হয়। ভাত অথবা রুটির সঙ্গে যেকোনো মাংস, ডাল ও সবজি এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে উপযোগী খাবার। সঙ্গে রাখা যেতে পারে যেকোনো একটি টক ফল অথবা শসা।
অনেকেই ঈদের সময় মাংস এবং ভারী খাবার খাওয়ার পর কোমল পানীয় পান করেন। এটা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তবে বিশেষ দিনে এসব পানীয় পরিমিত পান করা যেতে পারে। অবশ্য সবচেয়ে ভালো হয় কোমল পানীয়ের পরিবর্তে যদি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ লেবুর শরবত বা টক দই খাওয়া যায়। এ ছাড়া হালকা মসলাযুক্ত বোরহানিও স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। পাশাপাশি পরিমিত পানি, তাজা ফলের রস বা ডাবের পানি খেলে এই গরমের ঈদে স্বস্তি মিলতে পারে।
অনেকেই ঈদের দু-তিন দিন নানা জায়গায় দাওয়াতে গিয়ে অথবা নিজের বাড়িতেই প্রচুর মাংস খেয়ে ফেলেন। কিন্তু সে তুলনায় তারা আঁশযুক্ত খাবার যেমন স্যালাড বা শাকসবজি পর্যাপ্ত খান না, অথবা শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী পানি পান করেন না। এসব কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার ঝুঁকি থাকে। পাইলসের রোগীদের পায়ুপথে রক্তক্ষরণও হতে পারে।
ঈদে মুখরোচক খাবারের পাশাপাশি হাই ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যেমন স্যালাড, শসার রায়তা, সিজনাল ফ্রুট জুস ও ইসবগুলের ভুসি খাওয়া যেতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্য বা পেটের ব্যথা বেড়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ দ্রুত নিতে হবে। যাদের আলসারের সমস্যা আছে, তাদের বেশি গরম, শক্ত, ঝাল এবং তেল, চর্বি ও মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলাই নিরাপদ। আইবিএস থাকলে তাদের দুগ্ধজাত খাবার এড়িয়ে চলা উত্তম।
খাবার সামনে থাকলেই সারাক্ষণ খাওয়া চালিয়ে যাওয়া উচিত হবে না। অতিমাত্রায় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা চাই। যাদের ওজন বেশি, তাদের জন্য ঘরে তৈরি কম ক্যালরিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া ভালো। এ ছাড়া নিয়মিত ব্যায়াম ও কায়িক পরিশ্রম করলে শরীর ঠিক রাখা যায়। আজকাল ইউটিউবে নানা ধরনের ওয়ার্ক আউটের নিয়ম দেওয়া থাকে। চাইলে সেগুলো দেখে ঘরে বসেই ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করা যেতে পারে। নিয়মমাফিক ব্যায়াম করলে ঈদের দু-এক দিন কিছুটা ভারী খাবার খেলেও ওজন ঠিক রাখা যায়।
যারা হৃদ্রোগ এবং উচ্চ রক্তচাপজনিত রোগে ভুগছেন, তাদের অবশ্যই খাবার সম্পর্কে বাড়তি সচেতনতা জরুরি। এ ছাড়া যাদের কোলেস্টেরলের পরিমাণ অনেক বেশি, যারা ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত, তারা অবশ্যই তৈলাক্ত খাবার এবং লাল মাংস পরিমিত খাবেন। সুস্থতার কথা মাথায় রেখে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ডায়াবেটিসের রোগীরা মিষ্টিজাতীয় খাবার যে একদমই খেতে পারবেন না, তা কিন্তু নয়। তবে খেতে হবে পরিমিত। যারা কিডনি রোগে ভুগছেন, তাদেরকে অবশ্যই প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার পরিমিত খেতে হবে। পাশাপাশি যাদের রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেশি, তাদের ক্ষেত্রেও লাল মাংস খাওয়া বিপজ্জনক।
আরও কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি। অতিরিক্ত খাবার খেলে চর্বি কাটানোর জন্য কুসুম গরম লেবুপানি অথবা গ্রিন টি পান করা যেতে পারে। তাতে চর্বি কেটে যায়। শরীরের ক্যালরির চাহিদা অনুযায়ী যেদিন প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার খাওয়া হয়ে যাবে, সেদিন হাঁটা ও ব্যায়ামের মাধ্যমে অতিরিক্ত ক্যালরি বার্ন করে নেওয়া ভালো। তা ছাড়া যাদের ওজন অতিরিক্ত বেশি, তাদের উচিত হবে খাবার খাওয়ার অন্তত ১৫ মিনিট আগে পর্যাপ্ত পানি পান করা। তাহলে বেশি ভারী খাবার খাওয়ার চাহিদা থাকবে না।
ঈদের কয়েক দিন খাদ্যতালিকায় বেশি করে শাকসবজি এবং টকজাতীয় ফল রাখা যেতে পারে। যেন শরীরে অতিরিক্ত চর্বি না জমে। অতিরিক্ত চিনি জাতীয় খাবার ও তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলা নিরাপদ। রাতে ভারী খাবার না খাওয়াই ভালো।
এই সময়ে যেহেতু ছুটি থাকে, তাই পুরোটা সময় ঘরে না বসে হাঁটাহাঁটি করলে উপকার মিলবে। ঈদের তিন দিন পর থেকে খাবারের লিস্টে এক বেলা স্যুপ, স্যালাড এবং টক দই রাখা যেতে পারে। এতে করে খাবার সহজে হজম হবে এবং মেটাবলিজম বাড়বে।
ঈদে বেশি খাওয়া-দাওয়ার কারণে ক্যালরি বার্ন করাটাও জরুরি হয়ে পড়ে। কয়েকটি সহজ ইয়োগা আসন করলে খাবার যেমন সহজে হজম হবে, তেমনি ক্যালরি পোড়ানোও সহজ হয়। ফলে রক্তচাপ, ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে। সব বয়সী মানুষের জন্য সহজ কিন্তু খুবই উপকারী আসনগুলোর মধ্যে আছে বজ্রাসন, শশাঙ্গাসন, ক্যাট অ্যান্ড কাউ পোজ, পবনমুক্তাসন, সেতুবন্ধাসন এবং সুপাইন টুইস্ট। এসব আসন খুব সহজেই ইউটিউব দেখে শিখে নেওয়া যায়।

ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top