skip to Main Content

সেলুলয়েড I র‌্যাপসোডি ইন আগস্ট

চিত্রনাট্য ও পরিচালনা: আকিরা কুরোসাওয়া
চিত্রগ্রহণ: তাকায়ো সাইতো, শোজি উয়েদা
সংগীত: শিনিচিরো ইকেবে
অভিনয়: সাচিকো মুরাসে, হিদেতাকা ইয়োশিয়োকা, রিচার্ড গিয়ার
ভাষা: জাপানিজ ও ইংরেজি
ব্যাপ্তি: ৯৮ মিনিট
দেশ: জাপান
মুক্তি: ২৫ মে ১৯৯১

এশিয়ান সিনেমাকে পাশ্চাত্য দুনিয়ায় প্রথমবারের মতো ব্যাপক পরিচিতি এনে দেওয়া জাপানি মাস্টার ফিল্মমেকার আকিরা কুরোসাওয়ার ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলার দারুণ সৃষ্টি ‘র‌্যাপসোডি ইন আগস্ট’। এই চলচ্চিত্র মুক্তির সময় ৮২ বছর বয়সে পা রেখেছিলেন তিনি। এরপর আর একটি চলচ্চিত্রই বানাতে পেরেছিলেন এই কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার।
র‌্যাপসোডি ইন আগস্ট মূলত একটি মামুলি পারিবারিক গল্পের ভেতর দিয়ে মানবেতিহাসের এক নৃশংস ঘটনার রেশ বহন করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে, ১৯৪৫ সালের ৯ আগস্ট জাপানের নাগাসাকিতে যুক্তরাষ্ট্র যে অ্যাটম বোমা নিক্ষেপ করে, সেটির প্রভাব প্রায় অর্ধশতাব্দী পরও স্থানীয়দের জনজীবনে কী ট্রমা হয়ে রয়েছে, সেই কাহিনিই নিজস্ব শিল্পসুধায় দেখিয়েছেন কুরোসাওয়া। জঘন্য ওই ঘটনার ৪৫তম বার্ষিকী সামনে রেখে, অ্যাটম বোমায় স্বামী হারানো এক বৃদ্ধাকে ঘিরে তার চার নাতি-নাতনির গ্রীষ্মকালীন ছুটি কাটানোর ভেতর দিয়ে ভাঁজ খুলতে থাকে চলচ্চিত্রটির কাহিনি।
ওই বৃদ্ধার নিজের সন্তানেরা তখন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইতে; বৃদ্ধার দীর্ঘদিন আগে লাপাত্তা হয়ে যাওয়া ভাইয়ের কাছে, যে ভাই ১৯২০ সালে দেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানোর এত দিন পর এসে, মৃত্যুর আগে আবারও পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চায়। তার খোঁজ পাওয়ার খবরটি পরিবারে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। যে দেশের অ্যাটম বোমা তাদের নিজেদের শহরকে মৃত্যুকূপে পরিণত করেছিল, আধুনিক সময়ে নিজেদের পরিমণ্ডলে সেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবকে ইতিবাচকভাবে দেখতে চায় এ প্রজন্মের ওই চার পাশ্চাত্য-ঘরানার নাতি-নাতনি। নিজ দেশের নানাবিধ না পাওয়ার আবহমণ্ডল থেকে তারা বরং আমেরিকায় পাড়ি জমাতে চায় আরেকটু উন্নত জীবনের প্রত্যাশায়। কিন্তু বয়সের ভারে স্মৃতিভ্রষ্ট নানি নিজের ভাইকে মনে করতে না পারলেও, অ্যাটম বোমায় হারানো স্বামী ও পরিজনদের কথা কিছুতেই ভুলতে পারে না; ফলে আমেরিকা তার কাছে তার নাতি-নাতনির মনোভাবের চেয়ে ভিন্ন ভাবনারই ক্ষরণ ঘটায়। আর, ওই পরিবারের জাপানিজ-আমেরিকান সদস্য ক্লার্কের আগমনে তা পৌঁছায় চরমে।
এভাবেই বৃদ্ধার হাসিমুখ ও তার নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিদের রোমাঞ্চবোধের আড়ালে অ্যাটম বোমার দগদগে ক্ষতের বিষাক্ত বেদনাবোধ আকিরা কুরোসাওয়া এই চলচ্চিত্রে নিজ মুনশিয়ানায় ফুটিয়ে তুলেছেন। বলে রাখা ভালো, দুনিয়াজুড়ে এই চলচ্চিত্রকারের অনুরাগীদের দীর্ঘ তালিকায় ছিলেন নোবেলজয়ী কলম্বিয়ান সাহিত্যিক গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসও। র‌্যাপসোডি ইন আগস্ট-এর শুটিং চলাকালে কুরোসাওয়ার কাছে সশরীরে হাজির হয়ে প্রকাশ করেছিলেন মুগ্ধতা। একান্ত আলাপে মার্কেসকে এই চলচ্চিত্র সম্পর্কে কুরোসাওয়া বলেছিলেন, ‘এটি স্রেফ অ্যাটম বোমার ধ্বংসযজ্ঞ থেকে বেঁচে যাওয়া নাগাসাকি অঞ্চলের এক বৃদ্ধার গল্প।… অসহনীয় হয়ে উঠতে পারে—এমনতর গায়ে কাঁটা দেওয়ার মতো বাস্তবধর্মী দৃশ্যের শুটিং আমি করিনি, এবং কাহিনিটির ভয়াবহতা সম্পর্কে কোনো ব্যাখ্যাও রাখিনি, এমনকি ওদেরকে [নাতি-নাতনি] সম্পৃক্তও করিনি। আমাদের মানুষগুলোর হৃদয়ে অ্যাটম বোমা কী ক্ষত রেখে গেছে, এবং কীভাবে তারা তা ধীরে ধীরে সারিয়ে তুলতে শিখেছে—সেটিই আমি ধারণ করতে চেয়েছিলাম।’
 আরিফুল ইসলাম

কুইজ
১। ‘র‌্যাপসোডি ইন আগস্ট’-এ কোন ধ্বংসযজ্ঞের প্রভাব দেখানো হয়েছে?
[ক] অ্যাটম বোমা হামলা
[খ] পারমাণবিক চুল্লি বিস্ফোরণ
[গ] ঘূর্ণিঝড়
[ঘ] সুনামি

২। এর কেন্দ্রীয় চরিত্র কে?
[ক] একটি শিশু
[খ] একজন যুবক
[গ] এক বৃদ্ধ
[ঘ] এক বৃদ্ধা

৩। চলচ্চিত্রটি নির্মাণের সময় আকিরা কুরোসাওয়ার বয়স কত ছিল?
[ক] ষাটোর্ধ্ব
[খ] সত্তরোর্ধ্ব
[গ] আশি-উর্ধ্ব
[ঘ] নব্বই-উর্ধ্ব

গত পর্বের বিজয়ী

১. মণি, মীরবাড়ী, সুন্নিয়া মাদ্রাসা রোড, নাজিরপাড়া, চট্টগ্রাম।
২. নাফিজা, ধানমন্ডি, ঢাকা।
৩. সুমাইয়া (পিউ), মোহাম্মদপুর, ঢাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top