skip to Main Content

বহুরূপী I মধু

তোমার মুখে মধু, অন্তরেতে বিষ…এমন গানে প্রিয়জনকে যতই দোষারোপ করা হোক না কেন, মধুর ঔষধি গুণের শেষ নেই। এই তরল খাদ্যের প্রধান উপকরণ সুগার। স্বাস্থ্যসচেতন অনেকেই সাধারণত সুগার এড়িয়ে চলেন। তাদের বলে রাখি, মধুতে গ্লুকোজ ও ফ্রুকটোজ—এ দুটি উপাদান সরাসরি মেটাবলাইজড হয়ে যায় এবং শরীরে ফ্যাট হিসেবে জমা হয় না। রাশিয়ার মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ে মধুর নমুনা পরীক্ষায় দেখা গেছে, এতে অ্যালুমিনিয়াম, বোরন, ক্রোমিয়াম, কপার, লেড, টিন, জিংক ও জৈব অ্যাসিড (যেমন ম্যালিক অ্যাসিড, সাইট্রিক অ্যাসিড, টারটারিক অ্যাসিড ও অক্সালিক অ্যাসিড), বেশ কিছু ভিটামিন, প্রোটিন, হরমোনস, এসিটাইল কোলিন, অ্যান্টিবায়োটিকস, ফাইটোনসাইডস, সাইস্টোস্ট্যাটি ও পানি (১৯-২১%) ছাড়াও অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে।
জগতের সব মধুই যে একই রকম, তা কিন্তু নয়। এরও রয়েছে রকমফের। যেমন ধরুন, মানুকা মধু বেশ ব্যয়বহুল আইটেম। তবে এই মধুর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান অন্যান্য মধুর চেয়ে অনেক বেশি। তাই একে অনেকে মধুর রাজাও বলে থাকেন। এই মধুতে থাকা একধরনের অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল শরীরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করে। খাঁটি মানুকা মধু মূলত নিউজিল্যান্ডে উৎপাদিত হয় মানুকা নামক একধরনের ঝোপজাতীয় উদ্ভিদের অনিন্দ্যসুন্দর ফুল থেকে। পেটের পীড়া, গলার সমস্যা, সর্দি, কাশি, ক্ষতসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় এই মধু দারুণ কার্যকর।
দাম বেশি হলেও মানুকাই পৃথিবীর সবচেয়ে দামি মধু নয়; বরং সেই খ্যাতি এলভিস মধুর। এর উৎপত্তিস্থল তুরস্ক। প্রায় ১ হাজার ৪০০ মিটার গভীর গুহা থেকে সংগ্রহ করা হয় এই মধু। সংগ্রহ করেন উচ্চ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পর্বতারোহীরা। অতি উচ্চ খনিজ সমৃদ্ধ এলভিস মধুর বর্তমান বাজারমূল্য প্রতি কেজি সাড়ে ছয় হাজার ডলার; মানে প্রায় ৬ লাখ ১৮ হাজার টাকা।
আমাদের দেশে এত দামি না থাকলেও স্বাদে-গন্ধে অনন্য অনেক মধু রয়েছে। আর এই হরেক মধুর মাঝে সবচেয়ে এলিট হলো সুন্দরবনের খলিশা ফুলের মধু। স্থানীয় অধিবাসীরা একে পদ্ম মধু নামেও ডাকেন। আবহাওয়াগত কারণে লবণাক্ত শ্বাসমূলীয় বনভূমি সুন্দরবনেই শুধু খলিশা ফুলের দেখা মেলে। অনেকটা সোনালি রঙের এই ফুলের মধুর বিরাট কদর। এ কারণে দামও একটু বেশি।
অন্যদিকে, ইউক্যালিপটাস মধুর উৎপত্তিস্থল মূলত অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া। সাধারণত নভেম্বর-ডিসেম্বর সময়কালে ফুল ফোটে ইউক্যালিপটাস গাছে। তখনই সেই ফুল থেকে এই মধু সংগ্রহের শ্রেষ্ঠ সময়। শরীরের বাইরের অথবা ভেতরের কোনো ক্ষত বা আলসার নিরাময়ে সাহায্য করে ইউক্যালিপটাস মধু। এ ছাড়া মাথাব্যথা ও সর্দি সারানো এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতেও এর জুড়ি মেলা ভার।
ক্লোভার মধুর উৎপত্তিস্থল কানাডা ও নিউজিল্যান্ড। পৃথিবীজুড়ে এর বেশ জনপ্রিয়তা। এর হালকা হলুদ বর্ণ ও ফুলেল সুবাস যেকোনো খাবারকে করে তুলতে পারে অতুলনীয়। অবশ্য এই মধু সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় চা-কফি, বারবিকিউ সস ইত্যাদিতে।
আলফালফা মধুর উৎপাদন মূলত কানাডায়, হালকা নীল ও হালকা বেগুনি বর্ণের আলফালফা ফুল থেকে। এই মধুতে রয়েছে হালকা ফুলেল সুবাস। সাধারণত যেসব খাবার বেক করে বানানো হয়, সেগুলোতে এর ব্যবহার বেশি। যেমন কেক, বিস্কিট, দই ইত্যাদি। আলফালফা মধুর রয়েছে বিশেষ রোগ প্রতিরোধক্ষমতা। বিশেষ করে যারা অ্যানিমিয়া ও ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তাদের জন্য এই মধু বেশ উপকারী।
এদিকে, ল্যাভেন্ডার ফুল থেকে উৎপন্ন ল্যাভেন্ডার মধুতে রয়েছে প্রচুর অ্যামিনো অ্যাসিড, চিনি এবং দেহের জন্য উপকারী এনজাইম, ভিটামিন সি প্রভৃতি। তা ছাড়া প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদানও রয়েছে। ত্বকের বিভিন্ন ধরনের চুলকানি, অ্যালার্জি, ফাঙ্গাল ইনফেকশন সারাতে সাধারণত এই মধু উপকারে আসে।
জারাহ মধু অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে উৎপাদিত হয়। এই মধুর রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান। এতে থাকা উচ্চ হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড স্তর গোল্ডেন স্টাফ ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি এবং কম গ্লাইসেমিক সূচককে বাধা দিতে সক্ষম। এটি আলসার সারাতেও কার্যকর। মানুকা মধুর তুলনায় জারাহ মধুর রয়েছে ক্ষত, ত্বকের সংক্রমণ এবং পোড়া নিরাময়ে অনন্য সক্ষমতা।
তবে মধু যতই মধুর হোক, ইচ্ছেমতো না খাওয়াই ভালো। অন্যথায় হিতে বিপরীত হতে পারে। পুষ্টিবিদ ও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে এ ক্ষেত্রে।

 ফুয়াদ রূহানী খান
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top