skip to Main Content

ফিচার I উৎসবে উঁকি

প্রকৃতিতে যখন শরতের বিচরণ, ক্যালেন্ডারের পাতায় তখন সেপ্টেম্বর। এ মাসে দুনিয়ার নানান প্রান্তে জমে ওঠে বিভিন্ন উৎসব। এমনই কয়েকটির খোঁজ
অক্টোবরফেস্ট, জার্মানি

অক্টোবরফেস্ট

নাম শুনে মনে হতে পারে, এই উৎসব অক্টোবরে শুরু; আসলে তা নয়। বরং উৎসবটির সমাপ্তি ঘটে অক্টোবরে। আর সূচনা? ১৭ সেপ্টেম্বর। চলে পরের মাসের ৪ তারিখ পর্যন্ত। এর রেশ ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র ইউরোপে। এটি আসলে অন্যান্য সাধারণ উৎসবের মতো নয়; বরং এ হলো বিয়ার উৎসব! এতে অংশ নিতে হলে আপনাকে যে বিয়ার-অনুরাগী হতেই হবে, তা নয় অবশ্য। বরং উৎসবের বিভিন্ন ঐতিহ্য এবং একে ঘিরে বসা ট্র্যাডিশনাল ফুডের পসরা পরখ করে নিতে পারেন।
পৃথিবীর এই বৃহত্তম বিয়ার উৎসবের মূল কেন্দ্র জার্মানির মিউনিখ শহর। ইতিহাস বলে, জার্মান রাজা (তৎকালীন ক্রাউন প্রিন্স) প্রথম লুদভিগ ১৮১০ সালের ১২ অক্টোবর প্রিন্সেস থেরেস অব সাক্স-হিল্ডবুর্গহাউসেনকে বিয়ে করেন। সেই বিয়ে ঘিরে নগর ভবনের সামনের মাঠে অনুষ্ঠিত হয় এক জমকালো উৎসব। এরই ধারাবাহিকতায় পরের বছর একই সময়ে আবারও উৎসব বসে। আর কালের বিবর্তনে বার্ষিক উৎসব হিসেবে উদযাপিত হয়ে আসছে অক্টোবরফেস্ট। তবে সাবধান, এই উৎসবে অংশ নেন কিংবা না নেন, পানাহার কিন্তু স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর!

মামা নিগ্রো

লা মার্সি, স্পেন

লা মার্সি

এমনিতেই বছরজুড়ে নানান উৎসব লেগে থাকে স্পেনে। এর প্রতিটিরই রয়েছে নিজ নিজ সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যগত ব্যাকগ্রাউন্ড। আপনি যদি এ মাসের ২৩ থেকে ২৫ তারিখে বার্সেলোনা শহরে যান, তাহলে স্বচক্ষে উপভোগ করতে পারবেন লা মার্সি উদযাপন। এটি মূলত ধর্মীয় উৎসব। ভার্জিন অব গ্রেসের প্রতি নিবেদিত।
উৎসবটির সূচনা মধ্যযুগে। ১৬৮৭ সালে পঙ্গপালের আক্রমণে বার্সেলোনায় জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে পড়েছিল। পরিত্রাণের জন্য দ্য ভার্জিনের কাছে প্রার্থনার সিদ্ধান্ত নেয় নগর প্রশাসন। সেই থেকে শুরু। অবশ্য ধর্মীয় এই উৎসব গির্জা কর্তৃপক্ষ স্বীকৃতি দিয়েছে অনেক পরে, ১৮৬৮ সালে। তখন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই বার্ষিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
উৎসবটি ঘিরে শহরজুড়ে আয়োজিত হয় শত শত ইভেন্ট। শুধু স্থানীয়রাই নন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আসা পর্যটকেরাও অংশ নেন। জমকালো রঙে সজ্জিত হয় বার্সেলোনা। রাস্তাজুড়ে চলতে থাকে একের পর এক প্যারেড; আকাশ রাঙিয়ে জ্বলতে থাকে হাজারো আতশবাজি। এ সময়ে ঐতিহ্যবাহী খাবার ও পানাহারেরও বইতে থাকে জোয়ার। তবে এই উৎসব মূলত শিল্প ও নৃত্যের।
লা মার্সির অন্যতম অতুলনীয় অংশ হলো হিউম্যান টাওয়ারস। এগুলো কাস্টেলারস নামে পরিচিত। এতে লোকেরা একে অন্যের ওপর দাঁড়িয়ে বিরাট মানব-ভবন গড়ে তোলে! সেই ভবনের একদম চূড়ায় রাখা হয় শিশুদের। আর সবার ওপরে যে থাকে, সে ক্রিসমাস ট্রির অ্যাঞ্জেলের মতো মুকুট পরে মাথায়।

লেক অব স্টারস, মালাউই
পশ্চিম আফ্রিকান দেশ মালাউইতে আফ্রিকান মিউজিকের চমৎকার আসর বসে এই উৎসব ঘিরে, প্রতিবছরের ২৫ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর। মালাউই লেকের কিনারে চার স্তরে চলে ৬০টির বেশি পারফরম্যান্স। সে এক জাদুকরি আবহ! লোকে এখানে প্রাণভরে কথা বলে, গান গায় আর নাচে।
উৎসবটির সূচনা ব্রিটিশ পর্যটক উইল জেমসনের হাতে। ১৯৯৮ সালে তিনি মালাউইতে গিয়ে এক বছর ওয়াইল্ডলাইফ সোসাইটির সঙ্গে কাজ করেন। সেই অভিজ্ঞতার প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাতে নিজ দেশে তিনি ২০০৪ সালে প্রথমবার এই উৎসবের আয়োজন করেন। সেখানে অংশগ্রহণকারী প্রায় ৭০০ জনের অধিকাংশই ছিলেন আফ্রিকান। ২০১১ সালে লেক অব স্টারস উৎসবে অংশ নেন ইউরোপ ও আফ্রিকার তিন হাজারের বেশি মানুষ। এই সাফল্যের রেশ ধরে, মালাউইয়ের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে উৎসবটি আনুষ্ঠানিক রূপ লাভ করে। আফ্রিকান মহাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসবগুলোর একটি হিসেবে একে গণ্য করা হয়। এই উৎসবের বিশেষ বৈশিষ্ট্য, এখানে আপনি কখনোই একা থাকতে পারবেন না! কারও না কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে যাবেই।

মিড-অটাম ফেস্টিভ্যাল

মিড-অটাম ফেস্টিভ্যাল, চীন
চীনের সবচেয়ে বড় বার্ষিক উৎসবগুলোর অন্যতম মিড-অটাম ফেস্টিভ্যাল। সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যগতভাবে এর গুরুত্ব ব্যাপক। চীনা চান্দ্রবর্ষের অষ্টম মাসের ১৫ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়। ইংরেজি ক্যালেন্ডারের হিসাবে সাধারণত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে। এ বছর হচ্ছে ১০ সেপ্টেম্বর। এই উৎসবে চাঁদকে শান্তিপূর্ণ সময়ের প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়। পূর্ণ চন্দ্রিমার আলোয় ভেসে যায় চরাচর।
উৎসবটির বয়স ৩ হাজার বছরের বেশি। একে ঘিরে থাকে নানান আলোকসজ্জা ও খাদ্যসম্ভারের পসরা।
রেগাত্তা স্তরিকা, ইতালি
সেপ্টেম্বরে ইতালির ভেনিসে শুধু মর্যাদাপূর্ণ ফিল্ম ফেস্টিভ্যালই বসে না, আয়োজিত হয় রেগাত্তা স্তরিকাও। এর ইতিহাস অবশ্য অনেক পুরোনো; সূচনা ১৪৮৯ সালে। শহরটির গ্র্যান্ড ক্যানেলে বসে বর্ণিল নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা। সঙ্গে থাকে মুখরোচক নানান খাবার। এ সময়ে উৎসবে অংশগ্রহণকারীদের মুখে থাকে টিপিক্যাল ভেনেসিয়ান মাস্ক, পরনে ইতিহাসবাহী পোশাক। প্রতিবছরের সেপ্টেম্বরের প্রথম রোববার বসে এই আসর।

ডার্টি ড্যান্সিং ফেস্টিভ্যাল

হেরমানুস হোয়েল ফেস্টিভ্যাল, দক্ষিণ আফ্রিকা
এটি সম্ভবত ইকো-ফ্রেন্ডলি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া পৃথিবীর সবচেয়ে দক্ষিণাঞ্চলীয় উৎসবগুলোর অন্যতম। স্থানীয় জলসীমায় তিমির ফিরে আসাকে উদযাপন করতেই এর উৎপত্তি। এটি দক্ষিণ আফ্রিকার একমাত্র এনভায়রো-আর্টস ফেস্টিভ্যাল হিসেবেও খ্যাত। বছরের নির্দিষ্ট সময়ে বিশেষত সাউদার্ন রাইট হোয়েলসের ফিরে আসা পর্যবেক্ষণ করাই এই উৎসবের মূলে।
উৎসবটির সূচনা ১৯৯২ সালে। সাধারণত সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে শুরু হওয়া সপ্তাহব্যাপী এই বার্ষিক উৎসবে তিমি দেখার জন্য ভিড় করেন দেড় লক্ষাধিক ভিজিটর। তাদের অভ্যর্থনা জানাতে বর্ণিল সাজে সজ্জিত হয় উপকূলীয় শহর হেরমানুস।
ডার্টি ড্যান্সিং ফেস্টিভ্যাল, যুক্তরাষ্ট্র
শিরোনামে থাকলেও ব্যাপারটি মোটেই ‘ডার্টি’ নয়; বরং আমেরিকান অভিনেতা ও ড্যান্সার প্যাট্রিক সোয়েজির প্রতি ট্রিবিউট হিসেবে এর সূচনা। ১৯৮৭ সালে মুক্তি পাওয়া ‘ডার্টি ড্যান্সিং’ চলচ্চিত্রের কেন্দ্রীয় চরিত্রের এই অভিনেতা ক্যানসারের সঙ্গে দুই বছরের লড়াই শেষে ২০০৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর মারা যান। তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে, নর্থ ক্যারোলাইনার যে জায়গায় চলচ্চিত্রটির শুটিং হয়েছিল, সেখানে মোমবাতি হাতে জড়ো হন সহস্রাধিক সোয়েজি-অনুরাগী। এর মধ্য দিয়েই ১৩ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর—তিন দিনের এই বার্ষিক উৎসবের সূত্রপাত। উৎসব প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করেছে সোয়েজি ফাউন্ডেশন। এতে জড়ো হওয়া অনুরাগীরা ‘ডার্টি ড্যান্সিং’য়ের প্রদর্শনী উপভোগের পাশাপাশি ওই চলচ্চিত্রে দেখানো বিভিন্ন ড্যান্স স্টেপের পাঠ নেন; আর মেতে ওঠেন উচ্ছ্বাসে।
উৎসবটিতে অংশ নিতে অবশ্য গুনতে হয় টাকা; কাটতে হয় টিকিট।

মামা নিগ্রো

মামা নিগ্রো, ইকুয়েডর
লাতিন আমেরিকান দেশ ইকুয়েডরের লাতাকুঙ্গা শহরে বছরে দুবার বসে মামা নিগ্রো উৎসব। প্রথমবার সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে; দ্বিতীয়বার নভেম্বরে। ভার্জিন অব মার্সির প্রতি সম্মান জানানো এই উৎসব দ্য হলি ট্র্যাজেডি নামেও পরিচিত। বলা হয়ে থাকে, ১৭৪২ সালে কোতোপাক্সি আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত থামিয়ে নাগরিকদের প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন ভার্জিন অব মার্সি। এ ছাড়া লাতাকুঙ্গা শহরের স্বাধীনতা উদযাপনের অংশ হিসেবেও করা হয় এই উৎসব।
আদিবাসী, স্প্যানিশ ও আফ্রিকান সংস্কৃতি থেকে মামা নিগ্রো উৎসবের উৎপত্তি। এর স্বতন্ত্র থিম দুটি—লাতাকুঙ্গায় কলম্বিয়ান-পূর্ব সময়কালের আদিবাসী ফোকলোর চরিত্রগুলো এবং উপনিবেশকালে স্প্যানিশ ও আফ্রিকান সংস্কৃতির প্রভাব।
যেকোনো উৎসবেরই অন্তর্নিহিত সৌন্দর্য হলো, সেটি কোনো গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ থাকে না। রেশ ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। তাই সেপ্টেম্বরজুড়ে উপভোগ করুন উৎসবের আনন্দ!

 লাইফস্টাইল ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top