skip to Main Content

ফিচার I কাতারের কুজিন

বল ও জালের লড়াই দেখতে উড়ে গিয়ে পড়লেন কাতারে। কিন্তু খাবার? সারা মাসের রসদ তো আর সঙ্গে নেওয়া যায় না। তা ছাড়া কাতারে গিয়ে তাদের খাবার চেখে না দেখলে কি চলে! খোঁজ দিচ্ছেন আহমেদ সজিব

মাসটা ফুটবল উন্মাদনার। ২০ নভেম্বর কাতারে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ফুটবল বিশ্বকাপ মহাযজ্ঞ। ৮টি গ্রুপের ৩২টি দলের মধ্যে হবে শিরোপার লড়াই। সেটি টিভি তো দেখাবেই। তবে যাদের শখের তোলা ৮০ টাকার বেশি, তারা হয়তো খেলা দেখবেন কাতারে গিয়েই। ডিসেম্বরের ১৮ তারিখে এই আসর শেষ হওয়ার কথা। ফলে সময়টা লম্বা। তাই ফুটবল উপভোগ করার পাশাপাশি ক্রীড়ামোদীদের যুঝতে হবে সে দেশের আবহাওয়া আর খাবারের সঙ্গেও। অবশ্য এ জন্য কাতারের কুজিনে রয়েছে বিপুল খাদ্যসম্ভার। তবে দীর্ঘ প্রবাসে যদি দেশি খাবারের জন্য জিভ আকুল হয়, তাহলে ঢুঁ দেওয়া যেতে পারে কাতারের বিভিন্ন জায়গায় শিকড় গাড়া বাঙালি রেস্তোরাঁগুলোতে। খাবারের পাশাপাশি দেশি আদর-আপ্যায়নও মিলবে।
মোট ৮টি স্টেডিয়ামে চলবে জালে বল জড়ানোর যুদ্ধ। দিনক্ষণ দেখে ক্রীড়ামোদীদের ঘুরতে হবে সেসব ভেন্যুতে। খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামের অবস্থান দোহায়। আল ওকারায় আছে আল জানোব স্টেডিয়াম। কাতার ফাউন্ডেশনের এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামের অবস্থান আল-রাইয়ানে। মধ্য দোহার ১২ কিলোমিটার দক্ষিণে আল-থুমামা স্টেডিয়াম। মধ্য দোহা থেকে ১০ কিলোমিটার পূর্বে স্টেডিয়াম ৯৭৪। লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামের অবস্থান কাতারের লুসাইলে। দোহা থেকে ২০ কিলোমিটার পশ্চিমে আল রায়ান শহরে আহমেদ বিন আলী স্টেডিয়াম। তা ছাড়া দোহা থেকে ৩৫ কিলোমিটার উত্তরে আল খোর শহরে রয়েছে আল-বায়াত স্টেডিয়াম। ভোজনরসিকদের চোখ থাকবে এই আল খোর শহরেই। কারণ, এখানে রয়েছে উদর পূর্তির বাহারি সব আয়োজন। তবে খরচা আছে। কাতারের প্রধান খাবার ম্যাসবুস মিলবে সেখানেই। মাংসের বিশেষ এই পদ দেশটির লোকজন গোগ্রাসে খায়।
আল খোর শহরের রেস্টুরেন্টগুলোতে মিলবে কাতার ও ইন্ডিয়ান কুজিনের খাবার। কাতারের কুজিন অনেকটাই আরব প্রভাবিত। সেসব খাবার মিলবে বার্ড অব প্যারাডাইস, চিলিস, পার্ল অব বৈরুত রেস্টুরেন্ট, শাওকাহ আফান্দি রেস্টুরেন্ট, তুর্কিয়ে কাবাব, সাঙ্গাই গার্ডেন, নাইস ডে রেস্টুরেন্ট, দ্য গার্ডেন রেস্টুরেন্ট ও টেস্টিং কিং রেস্টুরেন্টে। হারেস, থারেড, বালালেট, মারগং, লাকাইমাট ও গুযি খাবারগুলো চেখে দেখা যাবে ওসব রেস্তোরাঁয়। তবে ভিনদেশি স্বাদে ক্লান্ত হয়ে গেলে ভারতীয় খাবার খেতে ঢুঁ দেওয়া যেতে পারে পানর রেস্টুরেন্ট, রয়্যাল তন্দুর, বে ক্লাব ক্যাফেটেরিয়া, সারাভানা ভবন রেস্তোরাঁয়। তা ছাড়া পিৎজা হাট, ম্যাকডোনাল্ড’স ও কেএফসি তো আছেই।
কাতারের ম্যাসবুস স্থানভেদে একেক স্বাদের হতে পারে। তবে কাতারি ম্যাসবুসে চাল, মাংস ও পেঁয়াজের সঙ্গে স্থানীয় মসলা যোগ করে রান্না করা হয়। সে দেশের আরেকটি মুখরোচক খাবারের নাম কাবসা। এটি চাল, মাংস ও মসলার মিশ্রিত পদ। থাকে শাকসবজিও। খাবারটি অনেকটাই বিরিয়ানির মতো। মাদরুবা নামে আরেকটি পদ হয় শাকসবজি দিয়ে। এর সঙ্গে মাংস মিশিয়ে তৈরি হয় জিভে পানি আনা এই পদ। কোনো রেস্তোরাঁয় যদি বাদামি ভাত সহযোগে বাচ্চা ভেড়ার কাবাব টেবিলে আসে, বুঝতে হবে সেটি গুযি। আল খোর ছাড়াও কাতারের আরও কিছু অঞ্চলে এটি মিলতে পারে।
কাতারের লোকজনের খাবারের খ্যাতির জন্য সে দেশের তরুণ-বৃদ্ধদের স্থূলতা নিয়ে চিন্তিত দেশটির স্বাস্থ্য খাত। তা নিয়ে পত্রপত্রিকায় লেখালেখিও হয় বেশ। তেমনই একটি চর্বিযুক্ত পদ হলো হারিস। প্রথমে গম পিষে তাতে চর্বি বা ঘি মেশানো হয়। পরে মুরগির মাংস, লবণ ও পানি মেশান রাঁধুনিরা। পেষা গম ও মুরগির আরেকটি পদ হলো জারিশ।
ভাতের পদের পাশাপাশি রুটিও আছে কাতারের খাদ্যতালিকায়। সেগুলোর মধ্যে তুলনামূলকভাবে বেশি জনপ্রিয় খোবেস আরগ্যাগ। ময়দা দিয়ে তৈরি এই রুটি। তা যদি ঝোল, সবজি ও মুরগির মাংস দিয়ে পরিবেশন করা হয়, তাহলে থালাটির নাম হয়ে যায় থারিদ।
এবার আসা যাক পানীয়ের বিষয়ে। শুরুতেই বলে রাখা ভালো, বিশ্বকাপ আয়োজন উপলক্ষে দর্শকদের জন্য অ্যালকোহল গ্রহণে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে দেশটির সরকার। গ্যালারিতে নেওয়া যাবে না বিয়ারও। তবে ম্যাচের আগে-পরে বিয়ার পান করা যাবে। অমুসলিম ক্রীড়ামোদীরা অনুমতি সাপেক্ষে কাতার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি থেকে অ্যালকোহল নিতে পারবেন। তবে অনুমোদিত এলাকাতেই তা পান করা যাবে। নয়তো ছয় মাসের কারাদণ্ডের পাশাপাশি জরিমানা গুনতে হবে ৮০০ ডলার।
তবে সাধারণ পানীয় পানের ক্ষেত্রে বাধা নেই। সে ক্ষেত্রে চুমুক দেওয়া যেতে পারে আরবি কফিতে। ঝলসানো কফি বিন থেকে তৈরি হয় এই ক্লান্তিহরা পানীয়। তাতে সঙ্গ দেয় এলাচি। অর্ডার করলে টেবিলে আসে একটি খেজুরসহ। এলাচিযুক্ত আরেকটি পানীয় হলো করাক। এটি মূলত দুধ-চা। তবে কমলা রঙের। এতে মেশানো হয় জাফরান ও চিনি। জ্বাল দেওয়া হয় অল্প আঁচে। পুদিনা ও জাফরান যোগে বিশেষ এক র চা-ও পাওয়া যাবে কাতারে।
আরব্য মিষ্টির আবেশ রয়েছে কাতারের ডেজার্টগুলোতেও। তেমনই একটি মিষ্টান্ন হলো লুগিমাত। ময়দা, মখন, দুধ, জাফরান, চিনি ও এলাচি দিয়ে তৈরি পদটি জিভে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এর স্বাদে মোহিত হয়ে যান মিষ্টিবিলাসীরা। এটি অনেকটাই ভাজা পেস্ট্রির মতো। ভেজে তার ওপর মধু বা মিষ্টি সিরাপ ঢেলে পরিবেশন করা হয়।
স্বাদে মাতাবে খাবিসও। এটি তৈরির জন্য বীজহীন খেজুর অনেকক্ষণ পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়। পরে ভাজা ময়দার সঙ্গে মিশিয়ে একে একে যোগ করা হয় তেল, চিনি, জাফরান, মাখন, এলাচি ও গোলাপজল। তেল, ময়দা ও চিনি দিয়ে তৈরি আরেকটি সাধারণ মিষ্টি হলো আসিদা। কাতারে মেলে ডিমের মিষ্টান্নও। নাম ব্যালালেত। চিনি, জাফরান, দারুচিনি ও এলাচি দিয়ে রান্না করা নুডলসের পদ এটি। ওপরে থাকে ভাজা ডিম।
সাগো নামে জেলাটিন পুডিংও মিলবে বিশ্বকাপের আয়োজক দেশটিতে। তা জাফরান, এলাচি ও মসলা দিয়ে বানানো হয়। মানে কাতারের মিষ্টান্নগুলোতে জাফরান ও এলাচি অনেকটাই পাকাপোক্তভাবে স্থান করে নিয়েছে।
খাবারগুলো উন্নত ও মজাদার হলেও তা নিয়মিত খেতে চাইলে পকেট থেকে বেরিয়ে যেতে পারে অনেকগুলো টাকা। অবশ্য পকেটসাশ্রয়ী কিছু থাকা-খাওয়ার জায়গাও আছে ওই দেশে। গ্রিন গার্ডেন, কিউ হোস্টেল, ভিক্টোরিয়া, প্রাইভেট কজি রুম ইন দোহা—এসব হোস্টেলে কম খরচে থাকা যেতে পারে। আফগান ব্রাদার্স, ক্যাফেটেরিয়া, আমজাদ থাই স্ন্যাকস, ফর্ক—এসব রেস্তোরাঁয় অল্প খরচেই মিলবে খাবার। এসব ভোজনালয়ে মসালা ডোসা, স্যাফরন চিকেনসহ অনেক রকম মিষ্টি চেখে দেখা যাবে।
বাংলাদেশি খাবারও মিলবে কাতারের কিছু স্থানে। দেশটির সবজি বাজার এলাকায় রয়েছে রংধনু রেস্টুরেন্ট, দোহার সারে আসমাক এলাকায় আছে ঘরোয়া রেস্টুরেন্ট, দোহা আল মুনসুরা অ্যাপোলো হসপিটালের পাশে আছে মোবারক আলী রেস্টুরেন্ট। এসব স্থানে বাংলাদেশি প্রবাসীরা খেতে যান। বাংলার মাছ, মাংস ও ডালের স্বাদ পেতে সেখানে খাওয়া-দাওয়া চলতে পারে ফুটবল বিশ্বকাপের পুরোটা সময়।

ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top