skip to Main Content

ফিচার I মেনু ম্যাজিক

বিয়ের খাবারে অতিথি সন্তুষ্ট না হলে বদনাম বয়ে বেড়াতে হবে আজীবন। একমাত্র সঠিক পরিকল্পনাই পারে এই বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি দিতে। বাজেট ও পদের হিসাব করে অতিথি দাওয়াত দেওয়া চাই

প্রযুক্তির বদৌলতে গড়ে উঠছে একক বিশ্বসংস্কৃতি। রীতির গ্রহণ-বর্জন এখন কয়েকটি ক্লিকের বিষয় মাত্র। সেই প্রভাব পড়েছে খাদ্যসংস্কৃতিতেও। বাংলাদেশে বসে শুধু ইউটিউবে কিছু ক্লিক করেই জানা যাচ্ছে আমেরিকা কিংবা আফ্রিকার মানুষ কী খাচ্ছে, কী পান করছে। বিয়েশাদিতেও তাই মিশে গেছে নানান দেশের সংস্কৃতি; বিশেষ করে খাবারে। দীর্ঘদিন ধরে চলা ওই পোলাও, মাংস, কালিয়া, কোর্মা, রেজালা, পায়েস—এসবের পাশাপাশি বিয়ের অনুষ্ঠানে হয়তো থাকছে মধ্যপ্রাচ্যের কিংবা পাশ্চাত্যের কোনো পদ। শেষ পাতে বাংলার দই-পায়েসের বদলে হয়তো স্থান পাচ্ছে বিদেশি কোনো ডেজার্ট। বিশ্বের বিশাল খাদ্যভাণ্ডারের তালিকা থেকে বিয়ে ও বউভাতের মেনুতে ঠিক কী কী খাবার রাখা যায়, তা নিজে ভেবে গলদঘর্ম হন অনেকেই। তাই বিয়ের আগেই চাই মেনু পরিকল্পনা। সে জন্য কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
প্রথমত, বিয়েতে আপনি কিংবা আপনার পরিবারের সদস্যারা কী খেতে পছন্দ করছেন, তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রাধান্য দিতে হবে অতিথিদের পছন্দ-অপছন্দকে। সে জন্য ওই স্থানের মানুষের ভৌগোলিক অবস্থান, তাদের খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে কিছুটা ধারণা থাকা ভালো। দেশের ভেতরেই কিছু জেলার মানুষ খান আতপ চালের ভাত, কেউ খান সেদ্ধ চালের। তাই বিয়েতে খাবারের মেনু সাজানোর আগে আমন্ত্রিতদের খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে কিছুটা আন্দাজ নিয়ে রাখাই উত্তম। সবচেয়ে ভালো হয় একাধিক অপশন রাখলে। যেমন স্ন্যাকসের মেনুতে চিকেন পাকোড়ার পাশাপাশি রাখা যেতে পারে তন্দুর আইটেম। কয়েক রকমের কাবাব থাকলে অতিথিদের আরেকটু বেশি সন্তুষ্ট করা যেতে পারে। ফিশ ফিঙ্গার ও ফিশ কাটলেট আজকাল খুব চলছে। একটু বৈচিত্র্য আনতে চাইলে এবং খরচে কুলাতে পারলে নিরামিষ স্ন্যাকসও রাখা যেতে পারে। তাহলে খালি মুখে ফিরবেন না একজন অতিথিও। সে ক্ষেত্রে মেনুতে রাখা যেতে পারে পনির টিকিয়া, কলার মোচার চপ কিংবা অন্য কোনো সবজির চপ। এখন অনেক বিয়েতে ফুচকা, দই বড়া ও পাপড়ি চাটও থাকে।
পানীয় আইটেমে অ্যালকোহল জাতীয় কিছু না রাখাই স্বাস্থ্যসম্মত। কোমল পানীয়তেও আজকাল অনেকের অরুচি। সবচেয়ে ভালো হবে বাজার থেকে কিনে আনা পানীয়ের বদলে ঘরে বানানো মকটেল পরিবেশন করতে পারলে। তাতে একটা নতুনত্ব আসবে। সঙ্গে থাকতে পারে জুস ও স্মুদি। এতে শিশুরাও বেজায় আনন্দিত হবে। সন্তান খুশি তো বাবা-মা খুশি। দেশি ফলের শরবতও রাখা যেতে পারে। এতে দেশি একটা আবহ থাকার পাশাপাশি বিয়েতে বৈচিত্র্য আসবে।
এবার আসা যাক মেইন কোর্সের বিষয়ে। এদিকটায় সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দেওয়া চাই। প্রয়োজনে স্ন্যাকসের খরচ কমিয়ে তা মেইন কোর্সে কাজে লাগাতে পারেন। কারণ, এটিই বিয়ের খাবারের প্রধান আকর্ষণ। আমাদের দেশে পোলাও, বিরিয়ানি, কাচ্চি—এসব পদেরই চল বেশি। বিয়েকে স্মরণীয় করে রাখতে এবং অতিথিদের সন্তুষ্ট করতে মেইন কোর্সে রাখা যেতে পারে স্টিমড রাইসও। জিরা রাইসের সঙ্গে দই মাছও দিতে দেখা যাচ্ছে আজকাল। চিংড়ির মালাইকারি খাবারের আয়োজনকে রাজকীয় করে তুলবে। খরচে পোষালে মাটনেরও কিছু পদ রাখা চাই। সে ক্ষেত্রে মাটন কষা বেশ জুতসই হবে। রাইস আইটেমের পাশাপাশি রুটির পদ রাখতে পারলে ভালো; বিশেষ করে গরম-গরম নান কিংবা রুমালি রুটি রাখা যেতে পারে আয়োজনে। কিছু অতিথি রুটি পেলে রাইসের ধারেকাছে ঘেঁষতে চান না। তাদের জন্যই রুটির আয়োজন।
এবার শেষ পাত। বাংলায় শেষ পাতে দই দেওয়ার চল। তবে দিন এগিয়েছে। এখন মানুষ আর গুটিকয়েক পদে সীমাবদ্ধ নেই। সাধারণ মানুষও বাহারি সব পদ খেয়ে জিভ পাকিয়ে ফেলেছেন। বিয়েতে তারা নতুন কিছু আশা করেন। সবচেয়ে ভালো হয় ঋতুভিত্তিক ফলের কিছু ডেজার্ট তৈরি করতে পারলে। কিন্তু দেশি সুস্বাদু ফল মেলে গরমে। এদিকে এ দেশে শীতকালে পড়ে বিয়ের ধুম। তাই শীতে হয়তো তাজা ফল পাওয়া যাবে না। কোল্ডস্টোরেজের ফল দিয়ে ডেজার্ট তৈরি করলে সেটির স্বাদ খুব একটা খোলতাই না হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ক্ষেত্রে উপায় একটাই—আনকমন ও অপ্রতুল কিছু মিষ্টি অতিথিদের পাতে তুলে দেওয়া। অবশ্য আজকাল অপ্রতুল বলতে তেমন কোনো খাবার নেই। তবু শেষ পাতে যদি ল্যাংচা বা ক্ষীরকদম্ব তুলে দেওয়া যায়, কিছুটা হলেও বৈচিত্র্য আসবে। গরম মালপোয়া, ঘন রাবড়িসহ জিলাপি রাখার কথাও ভেবে দেখা যেতে পারে।
এবার পান। এটি না থাকলে বিয়ের খাবার অনেকাংশেই অপূর্ণ থেকে যায়। এর অনুপস্থিতিতে বয়োজ্যেষ্ঠদের কটু কথাও শুনতে হতে পারে। তা ছাড়া এটি হজমে সহায়ক। ফলে বিয়ের খাবারের মেনুতে একটা পানের স্টল রাখা যেতেই পারে।
যাহোক, বিয়ের মেনু ঠিক করার আগে আরও কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। বাজেট কত এবং মাথাপিছু ঠিক কত টাকা খরচ করতে চান, সেই হিসাবে অতিথিদের আমন্ত্রণ করতে হবে। মানে, মোট খরচ সম্পর্কে শুরুতেই স্পষ্ট ধারণা নেওয়া চাই। খাওয়ার ধরন নির্বাচন করতে হবে। অতিথিরা একসঙ্গে বসে নাকি বুফে পদ্ধতিতে খাবেন, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। খাবারের অপচয় বাঁচাতে বুফে পদ্ধতি গ্রহণ করা যেতে পারে। এটি পরীক্ষিত। ভালো, পরিচিত ও বিশ্বস্ত ক্যাটারারের দ্বারস্থ হতে হবে। তাতে শেষ মুহূর্তে গণ্ডগোল বাধবে না। বিয়েটা ঠিক কোন ঋতুতে হচ্ছে, সেটির ওপর ভিত্তি করে খাবারের মেনু ঠিক করা চাই। গরমে হলে ফলমূল এবং শীতে হলে সবজির পদে বেশি জোর দেওয়া যেতে পারে। আমিষের পাশাপাশি নিরামিষ খাবারগুলোও যেন মুখরোচক হয়, সেদিকে নজর রাখতে হবে। কোনো পদই যেন দায়সারাভাবে পরিবেশন করা না হয়। অনেকে মেনু পরিকল্পনার সময় কুজিন গুলিয়ে ফেলেন। মিক্সড কুজিনের চেয়ে ফিক্সড কুজিনই ভালো। অবশ্য মিক্সড মেইনটেইন করতে পারলে ক্ষতি নেই।
যেকোনো বিয়ের মূল আকর্ষণ খাবারে। এটি ভালো না হলে সারা জীবনই অতিথিদের খোঁটা শুনতে হতে পারে। তা ছাড়া মানুষকে খাইয়ে খুশি করা খুবই কঠিন। ভালো খাবার পরিবেশনের পাশাপাশি কোমল ব্যবহারও বিয়ের খাবারের আয়োজনকে অন্য মাত্রা দেয়। শিশু কিংবা বৃদ্ধ—বিয়েতে আসা সব ধরনের অতিথিদের সন্তুষ্টির প্রতি সূক্ষ্ম নজর রাখা চাই। শিশুদের জন্য বিশেষ কোনো পদের ব্যবস্থা রাখা গেলে ভালো। সে ক্ষেত্রে ডেজার্ট আইটেম একটু বাড়িয়ে তৈরি করা যেতে পারে।

 আহমেদ সজিব
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top