কভারস্টোরি I মাইক্রো ওয়েডিং
মিনিমালের জয়গান বিয়েতেও। অল্পতেই সব আয়োজনের সমাহার। একই সঙ্গে সময়োপযোগী এবং বেশ ট্রেন্ডি। লিখেছেন
সাদিয়া আফরিন শায়লা
বাগদান, গায়েহলুদ, বিয়ের গোসল, কনের হাতে মেহেদি পরানো—বাঙালি বিয়েতে অনুষ্ঠানের কমতি মেলাই দায়! এত সব অনুষ্ঠানে বর ও কনেপক্ষের আত্মীয়-বন্ধুবান্ধব মিলে আমন্ত্রিতের সংখ্যাটাও কম নয়। তবে বড় করে আয়োজনের পাশাপাশি এখন অনেকেরই পছন্দ ছোট পরিসরে, শুধু একদমই কাছের মানুষ নিয়ে বিয়েটা সেরে ফেলা। বড় আয়োজনের মতো এ ধরনের বিয়েতেও থাকে প্রচলিত সব রেওয়াজের আনুষ্ঠানিকতা। ইদানীং বেশ জনপ্রিয়তা পাওয়া ছোট পরিসরের এসব বিয়েকে ইংরেজিতে নাম দেওয়া হয়েছে ‘মাইক্রো ওয়েডিং’। দিন যত গড়াচ্ছে, বড় আয়োজন ছাপিয়ে মানুষ তত ঝুঁকছে মাইক্রো ওয়েডিংয়ের দিকে।
বেশ কয়েক বছর ধরে চল থাকলেও দুনিয়াজুড়ে মাইক্রো ওয়েডিং বিশেষত্ব পেয়েছে মূলত করোনা অতিমারির প্রভাবেই। ২০২০ সালে যখন প্রথম করোনার প্রকোপ বাড়তে থাকে, ঠিক সে সময়ই বিশ্বের বেশির ভাগ শহরে দেওয়া হয় লকডাউন। কিন্তু জনজীবন তাতে থেমে থাকেনি। লকডাউনের মধ্যে বিয়ের জন্য বড় কোনো ভেন্যু বেছে নেওয়ার সুযোগ না থাকায় সে সময় প্রায় সবাই-ই ছোট পরিসরে বিয়েটা সেরে নেন। করোনার প্রকোপ কিছুটা কমে এলেও দেখা গেছে, অনেক শহরে লকডাউনের মধ্যেই নানা নীতিমালা নির্ধারণ করা হয়। সেসব নিয়ম মেনে বড় পরিসরের চেয়ে ছোট আয়োজনকেই প্রাধান্য দেয় মানুষ। তা ছাড়া করোনায় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি যাতায়াতের সুযোগ সীমিত হয়ে যাওয়ায় অতিথির তালিকা থেকে বাদ পড়েন অনেকেই। অন্যদিকে, করোনার সময় বিশ্বের সব দেশের অর্থনীতিই কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ পরিস্থিতিতে খরচ বাঁচিয়ে ছোট পরিসরেই বিয়ে সেরে নেন বেশির ভাগ নবদম্পতি। স্বল্প সময়ে, ছোট জায়গা (এমনকি নিজ বাড়ির ড্রয়িং রুমেও) আয়োজন করা যায় মাইক্রো ওয়েডিং। তা ছাড়া গতানুগতিক বিয়ের রেওয়াজ মেনে কয়েক দিনের অনুষ্ঠানকে দু-এক দিনের মধ্যে নিয়ে আসা যায় বলেও বাড়ছে মাইক্রো ওয়েডিংয়ের জনপ্রিয়তা।
তবে শুনতে সহজ হলেও আদতে বাস্তবতা ভিন্ন। গতানুগতিক ধারা ও সংস্কৃতির বাইরে গিয়ে আপনি যখন ছোট পরিসরে বিয়ের কথা পরিবারকে জানাবেন, তখন সবাই যে তা সহজে মেনে নেবে, তা নয়। বিয়ে নিয়ে অনেকেরই প্রত্যাশার বাইরে চলে যেতে পারে আপনার সিদ্ধান্ত। আবার, আয়োজনটা ছোট হওয়ায় সবাইকে নিমন্ত্রণ জানানোও সম্ভব নয়। তাহলে কী করবেন? এ ক্ষেত্রে আপনার ও আপনার ভবিষ্যৎ জীবনসঙ্গীর প্রধান হাতিয়ার হিসেবে কাজ করতে পারে আত্মবিশ্বাস। মাইক্রো ওয়েডিংয়ের কথা বাড়িতে জানানোর আগে নিজেদের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিন, আসলেই আপনারা এত ছোট আয়োজন চান কি না। হবু দম্পতি এ বিষয়ে একমত হলে তারা সহজেই নিজেদের পরিবারকে তাদের ইচ্ছার কথা জানাতে পারে। আর বিয়েটা যেহেতু আপনাদের, তাই দুজনের অনড় সিদ্ধান্তকে তখন পরিবারের বাকিরাও মেনে নেবেন নিশ্চয়।
অনেকেই হয়তো ভাবছেন, তিন থেকে চারটি অনুষ্ঠান এক বা দুদিনে আয়োজন করা আদৌ সম্ভব? আপনি যদি ছোট পরিসরে নিজের বিয়ের আয়োজন করতে চান, তাহলে প্রথমেই ঠিক করে নিন মেহেদিসন্ধ্যা, গায়েহলুদ, বিয়ে, বউভাত—এসব অনুষ্ঠানের মধ্যে কোনটি গুরুত্ব দেবেন, আর কোনটি তালিকায় না রাখলেও চলবে। বিয়েটা যেহেতু আপনার, তাই পরিকল্পনা করতে হবে আপনাকেই! বাঙালি বিয়েতে অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে জুড়ে আছে গায়েহলুদ। বিয়ের আগে গায়েহলুদ মেখে গোসল না হলে যেন বিয়েটাই অসম্পূর্ণ রয়ে যায়। যারা মাইক্রো ওয়েডিংয়ের কথা ভাবছেন, তারা ঘরোয়া পরিবেশে গায়েহলুদের আয়োজন করতে পারেন সহজেই। আর একই দিনে কয়েকটি অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করলে দিনের অগ্রভাগেই গায়েহলুদের আয়োজন সেরে নিন। তারপর ওই একই দিন বিকেলে করতে পারেন মেহেদিসন্ধ্যার আয়োজন। এতে যেমন সময় বাঁচবে, তেমনি বাঁচবে বিয়ের খরচাও।
এ তো গেল এক দিনের আয়োজন। মেহেদি ও গায়েহলুদের পরদিনই সকালে বা দুপুরে সেরে ফেলতে পারেন বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। বিয়েটা যেহেতু বাড়িতেই হচ্ছে, তাই এ ক্ষেত্রে সময় নির্ধারণের চাবিটাও আপনার হাতেই। দিনের শুরুতে বিয়েটা সেরে নিয়ে ওই রাতেই নিমন্ত্রিতদের জন্য আয়োজন করা যেতে পারে এক দুর্দান্ত নৈশভোজ। একটু কৌশলী হয়ে দিনের সময়গুলোকে ভাগ করে নিয়ে বিয়ের রেওয়াজগুলো আয়োজন করতে পারলে কিন্তু মাইক্রো ওয়েডিং তেমন কঠিন কিছু নয়। আবার এখন অনেক ওয়েডিং ভেনু্যুতেই ছোট পরিসরে বিয়ের আয়োজন করার ব্যবস্থা পেতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রে আগে থেকেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমন্বয় করে নিতে হবে অনুষ্ঠানের সময়সূচি।
মাইক্রো ওয়েডিংয়ের বেলায় প্রথমেই আপনাকে ঠিক করে নিতে হবে অতিথির সংখ্যা। সাধারণত ২০-২৫ জন অতিথি নিয়েই এ ধরনের বিয়ের আয়োজন করা হয়। আপনার জীবনের নতুন অধ্যায়ের সূচনালগ্নে ‘কয়জন’ উপস্থিত থাকছেন, তার চেয়েও বড় বিষয় ‘কারা’ থাকছেন। যারা আমাদের অতীতেও ছিলেন, ভবিষ্যতেও থাকবেন, যাদের কাছে মন খুলে সব বলা যায়, যারা জীবনের কঠিন সময় থেকে শুরু করে আনন্দের দিনগুলোতেও পাশে ছিলেন—এমন সব মানুষকেই সাধারণত রাখা হয় নিমন্ত্রিতের তালিকায়। বিষয়টিকে আরেকভাবেও চিন্তা করা যায়, জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কোনো কিছু আপনি শুরুতেই যাদেরকে জানান, কেবল তাদেরকেই রাখুন অতিথির তালিকায়। বিয়েটা যেহেতু হচ্ছে একদমই অন্তরঙ্গ এক আয়োজনের মধ্য দিয়ে, আপনি অবশ্যই এই অভিজ্ঞতার অংশ হিসেবে এমন ঘনিষ্ঠ কাউকে চাইবেন।
অতিথির তালিকা নির্ধারণের আগে আরও মাথায় রাখুন ভেন্যুর সীমাবদ্ধতা। নিজ বাড়িতেই বিয়ের আয়োজন করা হলে সেভাবে হিসাব করে সিদ্ধান্ত নিন, কতজনকে নিমন্ত্রণ জানাবেন। আর বিয়েটা বাইরের কোনো ভেন্যুতে আয়োজন করা হলে সেই ভেন্যুর আকার ও সীমাবদ্ধতা মাথায় রেখে অতিথির তালিকা বানাতে বসে পড়ুন। বিয়েতে নিমন্ত্রিতদের কোনো কিছুর ঘাটতি না পড়া নিশ্চিত করাও কিন্তু আপনারই দায়িত্ব।
আয়োজন ছোট হয়ে আসার পাশাপাশি বর্তমানে সপ্তাহের ওয়ার্কিং ডেগুলোতে বিয়ের সংখ্যা বাড়ছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাদে অন্য যেকোনো দিন আয়োজন করলে একদিকে যেমন ভেন্যু বুকিংয়ে খরচ কমে আসে, তেমনি তা অতিথির তালিকা ছোট রাখতেও সাহায্য করে। তাই অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি বিয়ের তারিখ বেছে নিতেও হোন কৌশলী। তবে যত যা-ই হোক, ছোট পরিসরে আয়োজন করার কারণে বেশির ভাগ সময় কাছের কোনো আত্মীয় বা বন্ধুকে নিমন্ত্রণ জানানোর সুযোগ হয়ে ওঠে না। নিমন্ত্রিত না হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই চিড় ধরতে পারে এসব সম্পর্কে। এমন হলে কী করবেন? প্রথমেই, যাদেরকে ইচ্ছা সত্ত্বেও নিমন্ত্রণ জানাতে পারলেন না, তাদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করে বিয়ের খবরটি জানান। বিয়েটা যে ছোট আয়োজনের মধ্য দিয়ে করেছেন, তা নিয়েও কথা বলতে পারেন তাদের সঙ্গে। এখন করোনার কারণে কিন্তু এদিকটা সামাল দিতে পারবেন আরও সহজেই। এই অতিমারি থেকে বাঁচতেই যে ছোট পরিসরে বিয়েটা সেরে নিয়েছেন, তা এখন আপনার পরিজনেরা আরও সহজে বুঝতে পারবেন।
এখন বিয়েতে অতিথিরা সশরীরে উপস্থিত না থাকলেও ভার্চ্যুয়ালি হাজিরা দিতে পারেন কোনো ঝক্কিঝামেলা ছাড়াই। বিয়ে পড়ানোর সময়টা আপনি চাইলেই লাইভ স্ট্রিম করে দূরে থাকা পরিজনদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারছেন। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে উপস্থিত অতিথিদের মধ্য থেকে কাউকে ঠিক করতে পারেন আপনার নিজের ও জীবনসঙ্গীর নতুন অধ্যায় শুরুর মুহূর্তটি ধারণ করতে। হতে পারে কোনো আত্মীয় কিংবা বন্ধু—বিয়ের দিনই বিয়ের ছবি হাতে পাওয়ার এমন সুযোগ হাতছাড়া করতে কেই-বা চায়!
বিয়ে আপনার জন্য যেমন অতুলনীয় এক অভিজ্ঞতা, তেমনি বিয়েতে আসা অতিথিরাও যেন একটি সুন্দর অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরতে পারেন, তা নিশ্চিতের চেষ্টা করুন। হতে পারে কোনো পার্সোনালাইজড চিঠি, শর্ট নোট কিংবা ছোট উপহার—নিমন্ত্রিতদের জন্য বিশেষ কিছু করার সুযোগ কিন্তু রয়েছে এই ছোট পরিসরে বিয়ের আয়োজনেই। বিয়ের আগে কিছুটা সময় নিয়ে নিজ হাতেই লিখে ফেলতে পারেন প্রত্যেকের জন্য একটি ব্যক্তিগত চিঠি। কেন আপনি তাকে নিজের জীবনের এ গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সাক্ষী হওয়ার জন্য বেছে নিয়েছেন, তার ব্যাখ্যা থাকতে পারে চিঠিতে; কিংবা থাকতে পারে এমন কোনো ঘটনা, যা আপনাদের দুজনের জন্যই ছিল অবিস্মরণীয়। প্রত্যেকের জন্য আলাদা চিঠি লেখা বেশ সময়সাধ্য মনে হলে এর বদলে বেছে নিতে পারেন শর্ট নোট। ছোট্ট একটি খামে এক টুকরো কাগজে দু-এক লাইনেই লিখে ফেলুন অতিথির উদ্দেশে বার্তা। ব্যক্তিগত চিঠি কিংবা শর্ট নোট পাওয়ার এই অভিজ্ঞতা আপনার অতিথিরা যে সহজে ভুলবেন না, তা সহজেই অনুমেয়।
যারা বিয়ের বাজেট কিছুটা বাড়িয়ে ঠিক করছেন, তারা চাইলে অতিথিদেরকে ছোট কোনো উপহারও দিতে পারেন, যা হয়ে থাকবে আপনাদের সুন্দর এই অভিজ্ঞতার প্রতীক। তা ছাড়া ছোট পরিসরের বিয়েতে পরিবার-পরিজনকে নিয়ে আয়োজন করতে পারেন কোনো গেম বা অ্যাকটিভিটি, যা বড় পরিসরের বিয়েতে করা প্রায় অসম্ভবই বলা চলে। এতে বিয়ের আয়োজনটাও হয়ে উঠবে স্মরণীয়।
বিয়ের আরেক প্রধান রীতি, যা আমাদের এই অঞ্চলে প্রচলিত নয়, তা হলো—বর-কনের একে অন্যের উদ্দেশে প্রতিজ্ঞাবাক্য পাঠ করা। বাঙালি বিয়েতে এর যথেষ্ট প্রচলন না থাকলেও ইদানীং অনেকেই একান্ত মানুষটার প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ হিসেবে প্রতিজ্ঞাবাক্যের প্রচলন শুরু করেছেন। সচরাচর বড় পরিসরের আয়োজনে সম্ভব না হওয়ায়, ছোট আকারের বিয়েতে এর প্রচলন শুরু করা যেতেই পারে। সবচেয়ে কাছের মানুষগুলোর সামনে একে অপরের প্রতি প্রতিজ্ঞাবাক্য পাঠের এই অভিজ্ঞতা হতে পারে বিয়ের এক অনন্য অনুষঙ্গ।
মাইক্রো ওয়েডিংয়ের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এ ধরনের বিয়েতে কম বাজেটেই সুন্দর একটি আয়োজন সেরে ফেলা যায়। তবে বাজেট কম হলেও তা যেন নগণ্য না হয়, সেদিকটাও খেয়াল রাখা চাই। স্বল্প পরিসরে বিয়ের ক্ষেত্রে বাজেট গোছাতে হোন কৌশলী। কোন অনুষ্ঠানে বেশি মানুষের সমাগম ঘটবে, কিংবা কোনটিতে সাজসজ্জা বেশি হবে—তা আগে থেকে ঠিক করে ফেলুন। আবার একই দিনে যদি দুটো অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা থাকে, তাহলে ভেন্যু সজ্জা এমনভাবে করতে পারেন, যা দিন ও রাত দুই সময়ের সঙ্গেই মানিয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে লাইটিং ও ডেকরের সাহায্যে রঙের তারতম্য এনে প্রতিটি অনুষ্ঠানে নিয়ে আসতে পারেন নতুনত্ব।
বাজেট কম হওয়ায় এ ধরনের বিয়েতে অনেকেই বেছে নেন মিনিমালিস্টিক ডেকর। পুরো ভেন্যু জাঁকজমকভাবে না সাজিয়ে কেবল এর একটি অংশকে কেন্দ্র করে সাজাতে পারেন জায়গাটা। তা ছাড়া ছোট আকারের ভেন্যুতে ভারী ডেকর মানানসই না। ডেকরের প্রসঙ্গ যখন এলো, বলে নেওয়া যাক থিমের কথাও। বড় পরিসরে বিয়ের আয়োজন করলে বেশির ভাগ সময় থিম ধরে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়ে। দেখা যায়, বর-কনের থিম ঠিক রাখা গেলেও অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রিতদের মাঝে তা ঠিক রাখা সম্ভব হয়ে ওঠে না। মাইক্রো ওয়েডিংয়ের বেলায় কিন্তু চাইলে সহজেই থিম মেনে আয়োজন করা যায়। বর-কনের পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে ভেন্যুর ডেকর, অতিথিদের সাজ, এমনকি অনুষ্ঠানের নানা অনুষঙ্গ, যেমন খাবার পরিবেশনের সরঞ্জামাদির রংও মেলানো যায় ছোট পরিসরের বিয়েতে। পরিবারের ঘনিষ্ঠজন ও বন্ধুবান্ধবের সান্নিধ্যেই এ ধরনের আয়োজন হয় বলে এসব বিয়েতে সাধারণত বর-কনের বসার আলাদা জায়গা রাখা হয় না। তাই এ ক্ষেত্রে বাজেটের সঙ্গে সমন্বয় করে অতিথিদের জন্য ছোট্ট একটি লাউঞ্জের ব্যবস্থা করতে পারেন। রীতি-রেওয়াজ মেনে বিয়ে শুরু হলেও এর শেষটা যেন হয় প্রিয়জনদের আড্ডায়।
বাজেট মেনে অন্দরসজ্জার পাশাপাশি মাইক্রো ওয়েডিংয়ের খাবারের মেনুতেও থাকে নতুনত্বের ছোঁয়া। যেহেতু অতিথি সংখ্যা কম, তাই এমন পরিমাণ খাবারের ব্যবস্থা করুন, যেন কোনো খাবার নষ্ট না হয়, আবার সবাই পর্যাপ্ত খেতে পারেন। পশ্চিমা বিশ্বে বিয়েতে দামি পানীয়ের প্রচলন থাকলেও আমাদের দেশে তা দেখা যায় না বললেই চলে। গতানুগতিক ধারার বড় পরিসরের বিয়েতে ভিন্নধর্মী কোনো খাবারের আয়োজন করা কষ্টসাধ্য হলেও, ছোট পরিসরের বিয়েতে সে ব্যবস্থা করাই যায়। হতে পারে কোনো বিশেষ পানীয়, কিংবা মেনুতে বিশেষ কোনো আকর্ষণ। অতিথির সংখ্যা কম হওয়ায় তাদের আপ্যায়নে কমতি না রাখাই ভালো। তা ছাড়া মানুষ কম হলে পার্সোনালাইজড কেক কিংবা পেস্ট্রির পিস রেডি করতে পারেন তাদের জন্য। আমন্ত্রিত প্রত্যেকের নামে রাখতে পারেন একটি কেক বা পেস্ট্রি।
খাবারের আয়োজনের পাশাপাশি অতিথিদের বসার জায়গা সাজানোর দিকটাও তো দেখতে হয়। ছোট পরিসরের বিয়েতে একই রুমে (বাড়িতে) বা একই টেবিলে (ভেন্যুতে) সবাইকে খাবার পরিবেশন করা যেতে পারে। এমনভাবে টেবিল সেট করার চেষ্টা করতে হবে, যেন নিমন্ত্রিত সবাই একসঙ্গে একই টেবিলে বসে খাবার উপভোগ করতে পারেন। অতিথির সংখ্যা ১০-১২ জন হলে লম্বা এক টেবিলেই মুখোমুখি বসার ব্যবস্থা করা যায়। কিন্তু সংখ্যা যদি হয় ২০-২৫, সে ক্ষেত্রে ইংরেজি ‘ইউ’ বর্ণের আকৃতির টেবিলে খাবার পরিবেশন করা ভালো। এতে যেমন বড় একটি ভেন্যুতেও অন্তরঙ্গ সময় কাটানো সম্ভব হবে, তেমনি আপনার বিয়ের অতিথিরা পাবেন এক দারুণ অভিজ্ঞতা।
অন্দরসজ্জা, নেমন্তন্ন, আপ্যায়ন তো গেল; ছোট পরিসরের বিয়েতে বর-কনের প্রস্তুতি কেমন হওয়া উচিত? আয়োজন যত ছোটই হোক না কেন, বিশেষ এই দিনে বিশেষভাবে নিজেকে সাজিয়ে তুলতে কার্পণ্য করবেন না। আয়োজনটা ছোট হলেও নতুন জীবন শুরুর মুহূর্তটা বিশাল। তাই বাজেটের একটি বড় অংশ রাখুন শুধুই নিজেদের জন্য। বিয়েতে অনেক কনে তার মায়ের বিয়ের ঐতিহ্যপূর্ণ শাড়ি পরাকে বেছে নেন। এ ক্ষেত্রে মায়ামাখা শাড়িটা পুরোনো হলেও এর সঙ্গে নতুন ট্রেন্ডি সাজের মাধ্যমে পুরো সাজপোশাকেই নিয়ে আসতে পারেন হাল ফ্যাশনের ছোঁয়া।
মাইক্রো ওয়েডিং ট্রেন্ডের সঙ্গে মিল রেখে অনেকে এখন বিয়ের পোশাকেও আনছেন নতুনত্ব। এ ধারা অবশ্য এখন পর্যন্ত মূলত পশ্চিমা বিশ্বেই চলছে। বিয়ের ঐতিহ্যবাহী পোশাক গাউন বাদ দিয়ে বাইরের দেশগুলোর বিয়েতে কনেরা বেছে নিচ্ছেন সুট-প্যান্টের মতো পোশাক। এ ছাড়া লং স্কার্ট, মিনি বা মিডি ড্রেস তো আছেই। আমাদের দেশে এখনো কনের ফ্যাশনে পশ্চিমা ছোঁয়া ব্যাপকভাবে না লাগলেও তা যে সামনে বদলাবে, সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। কনের মতো বরের সাজেও আসছে নতুনত্ব। বিয়ের ফিটেড সুট বাদ দিয়ে অনেকেই বেছে নিচ্ছেন আরামদায়ক পোশাক। নতুন কিংবা পুরোনো, ট্রেন্ডি কিংবা ঐতিহ্যবাহী—বিয়ের পোশাক যেমনই হোক, তা যেন হয় নবদম্পতির নিজেদের পছন্দেই।
আয়োজন ছোট পরিসরে হোক কিংবা বড়, বিয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ এই অধ্যায়কে ক্যামেরাবন্দি করতে ভুলবেন না যেন। পুরো আয়োজনে বর-কনের সাজ থেকে শুরু করে অতিথিদের আপ্যায়ন পর্যন্ত অনেক ক্ষেত্রেই খরচের প্রয়োজন হলেও, বাজেটের একটি নির্দিষ্ট অংশজুড়ে রাখুন ফটোগ্রাফি ও ভিডিওগ্রাফি। তবে এ ক্ষেত্রে বড় মাপের ফটোগ্রাফি প্যাকেজের পেছনে খরচ করতে না চাইলে ছোট প্যাকেজও বেছে নেওয়া যায়। এমনকি অনেকে প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার ভাড়া না করে নিজেদের পরিচিত কাউকে দিয়েও ক্যামেরাবন্দির কাজটা সেরে ফেলেন। বর-কনের এ নতুন অধ্যায়ের পাশাপাশি, ছোট পরিসরের অন্তরঙ্গ বিয়ের প্রতিটি মুহূর্তই যেন স্মৃতির খাতায় থেকে যায়, তা-ই হওয়া উচিত ছবি তোলার মূল উদ্দেশ্য।
বিয়ে মানুষের জীবনের এমন এক অধ্যায়, যা তার পূর্বের ও পরের জীবনকে একই সুতায় গেঁথে দেয়। জীবনের এই মাহেন্দ্রক্ষণে নিজেদের চাওয়া-পাওয়াগুলো পূরণের দিকে নজর দিতে হবে শুরুতেই। বিয়ের পরিকল্পনায় প্রথমেই মাথায় রাখতে হবে—বিয়েটা আপনাদের দুজনের। নিমন্ত্রিত অতিথিদের আপ্যায়নের আগে নিজেদের বাজেট, স্বাচ্ছন্দ্য ও ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিন। ছোট পরিসরের বিয়েতে সাধারণত বর-কনে নিজেরাই সবকিছু সামলে থাকেন, তাই তাদের ওপর দিয়ে কম ঝড় যায় না। তা ছাড়া দুজনেই যেহেতু জীবনের নতুন এক পরিক্রমায় প্রবেশ করতে যাচ্ছেন, তাদেরও দরকার কাছের মানুষের সাহায্যের।
মাইক্রো ওয়েডিং ট্রেন্ডি হলেও নিজেদের সংস্কৃতি, রেওয়াজ ও রীতিনীতির মিশেলেই হতে পারে এক অনন্য বিয়ের আয়োজন।
মডেল: হৃদি শেখ
মেকওভার: পারসোনা
আইডিয়েশন: নুজহাত খান
স্টাইলিং: শাহ্রুখ আমিন
ওয়্যারড্রোব: নাবিলা
জুয়েলারি: আমিসে
ছবি: কৌশিক ইকবাল