তনুরাগ I ফুট পিলস
শুষ্কতা সারাইয়ের জন্য সেরা। বিশেষত পায়ের ত্বকের জন্য। বেবি সফট স্কিন পেতে
ইদানীং আপাদমস্তক ত্বকে কেমন যেন শুষ্কতার টান। বোতলের পর বোতল ময়শ্চারাইজার মেখেও চামড়ার কুঁচকে যাওয়ার সমস্যাটা যেন মিটছে না। কোমলতা হারিয়ে কেমন যেন নিষ্প্রাণ ত্বক। তবে চিন্তার কিছু নেই। ত্বকের বয়স হয়নি; বরং বছরের এই সময়টা এমন মনে হওয়া স্বাভাবিক। তাপমাত্রা বেশ কয়েক ডিগ্রি নিচে নেমেছে যে! ত্বক এখন যারপরনাই তৃষ্ণার্ত; বিশেষ করে পায়ের ত্বক। তাই তো শীত এলেই পা ফেটে চৌচির, হারায় লাবণ্য।
ঠান্ডার সময় পা ঢাকা থাকে অনেকের। মোজা অথবা পা-ঢাকা জুতা হয় নিত্যসঙ্গী। কিন্তু পা আড়ালে বলে যত্নহীন হলে কি চলে? বরং বছরের এ সময় নিয়মিত যত্ন প্রয়োজন।
ফুট পিলস পায়ের যত্ন নেওয়ার একটি আধুনিক প্রক্রিয়া। কেমিক্যাল পিল মাস্ক ব্যবহার করে পায়ের মৃত চামড়া তুলে পরিষ্কার করার অভিনব এক পদ্ধতি। এ জন্য খুব বেশি কষ্ট করতে হবে, তা কিন্তু নয়। ঘরে বসেই অবসর সময়ে করে নেওয়া যায় ফুট পিল ট্রিটমেন্ট।
ফুট পিলের জন্য যে মাস্ক ব্যবহার করা হয়, তাতে সাধারণত কয়েক ধরনের রাসায়নিক উপাদান থাকে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড, গ্লাইকলিক অ্যাসিড, ল্যাকটিক অ্যাসিডের নাম। এই উপাদানগুলো পায়ের চামড়ায় উপস্থিত ময়লা এবং মৃত ত্বককোষ সরাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন পায়ের ওপরে নানা রকমের চাপ তৈরি হয়। ঘরের মেঝেতে হাঁটাহাঁটি ছাড়াও মোজা, জুতা, অলংকার, প্রসাধন—এমন বিভিন্ন উপাদানের নিয়মিত সংস্পর্শের ফলে পায়ের পাতার চামড়া শক্ত হয়ে যায়। এ ছাড়া পায়ের ত্বকে রাফ প্যাচ দেখা যায়। দেখা দেয় চামড়া মোটা হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যাও। নিয়মিত ফুট পিলের ব্যবহারে ত্বক এমন সব অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যা থেকে মুক্তি পায়। তবে ব্যবহার করতে হবে সঠিক নিয়মে।
ফুট পিল মাস্ক ব্যবহারের কিছু পূর্বপ্রস্তুতি রয়েছে। সেদিকে খানিকটা সচেতন থাকলে আরও কার্যকর ফল মিলবে। পায়ের নখে নেইলপলিশ থাকলে আলতো করে সেটি প্রথমেই তুলে নিলে ভালো। এরপর শুরু হবে পরবর্তী কার্যক্রম। পা ভেজাতে হবে মৃদু গরম পানিতে। একটি মাঝারি ধরনের পাত্রে, ১০ থেকে ২০ মিনিট অব্দি। তারপরে ফুট পিলের মাস্কটি পায়ে সুন্দর করে মাখতে হবে আলতো করে। পুরো পায়ের পাতা যেন মাস্কে ঢেকে থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তারপরে পা দুটি বিশ্রামে থাকুক! মাস্ক শুকিয়ে এলে পাতলা মোজা পরে নিতে হবে। ফুট পিলসের প্যাকেটে ব্যবহার বিধি লেখাই থাকে। সেটা মনোযোগসহকারে পড়া চাই। সেখানেই সময়ের সঠিক নির্দেশনা দেওয়া থাকে। আর যদি সে রকম কোনো সময় নির্দিষ্ট করা না থাকে, তাহলে এক ঘণ্টার মতো সময় হাতে নিয়ে বসে পড়তে হবে।
ঘণ্টাখানেক হয়ে গেলে মাস্ক তুলে নিয়ে পা ধুয়ে ফেলতে হবে। এ জন্য খুব বেশি আয়োজনের দরকার, তা কিন্তু নয়। হালকা গরম পানি আর সাবানেই কাজ হবে। তবে খেয়াল রাখা চাই কোনোভাবেই যেন আঘাত না লাগে। তারপরে পানি আর সাবানে ধুয়ে, মুছে নিতে হবে কোমল একটি তোয়ালে দিয়ে।
পা মুছে নিয়ে বডি অয়েল অথবা লোশনের মসৃণ প্রলেপ বোলাতে হবে পায়ের ত্বকজুড়ে। ব্যস, শেষ হয়ে গেল ফুট পিলিং।
একটি বিষয় বলে রাখা ভালো, ফুট পিলিংয়ের মাধ্যমে রাতারাতি পায়ের ত্বকের কোনো পরিবর্তন আসে না। সময় দরকার হয়, সাধারণত ৫-৭ দিন। পিলিং প্রসেস শুরু হওয়ার পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে হাত দুটি সামলে রাখা। যাতে কোনোভাবে হাত দিয়ে পায়ের ত্বক স্পর্শ করা না হয়। হাতের মাধ্যমে পিলিং প্রসেস ত্বরান্বিত করার প্রয়োজন নেই। এই সময় পায়ে স্ক্রাবিং কিংবা হাত দিয়ে টেনে চামড়া ওঠানো থেকে বিরত থাকলেই ভালো।
কয়েক দিনের মধ্যেই পা থেকে ডেড সেল উঠে আসতে শুরু করলে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এই চামড়াগুলো পায়ের মৃত কোষ। পা অসুন্দর দেখানোর পেছনে দায় সবচেয়ে এদের বেশি। পিলিং যেদিন করা হবে, সেদিনের পর থেকে কয়েক দিন মোজা ব্যবহার করলে পা পরিষ্কার থাকবে। পিলিং প্রক্রিয়া সুন্দরভাবে সম্পন্ন হবে। তাই শুরুর দিন থেকে পিলিং শেষ হওয়া অবধি পায়ের পাতা দুটি ঢেকে রাখাই ভালো।
পায়ের পাতার বেসিক যত্নের জন্য ফুট পিলস বেশ কার্যকর পদ্ধতি। ত্বকে অ্যালার্জি-সংক্রান্ত সমস্যা থাকলে এটি ব্যবহারে সচেতনতা জরুরি। আগে থেকে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নিতে হবে। ফুট পিলস থেকে কোনো প্রকার ত্বক সমস্যা তৈরি না হলেও এটি কিছু সমস্যা উসকে দিতে পারে। যেমন অ্যাজমা, সোরায়সিস। বৃদ্ধি করতে পারে অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন।
এর বাইরে আরও কয়েকটি কারণে ফুট পিলিং ব্যবহারের আগে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নেওয়া জরুরি। সেগুলো হচ্ছে, অ্যাথলেটস ফুট, ফাংগাল ইনফেকশন, ইচিং, র্যাশ, রেডনেস। এর বাইরে পায়ে যদি কোনো ধরনের কাঁটা অথবা ক্ষত থাকে, তাহলেও বিরত থাকতে হবে ফুট পিল করা থেকে। কারণ, এতে এসব সমস্যা আরও বাড়তে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে ত্বক।
ছয় থেকে আট সপ্তাহ পর পর ফুট পিলিং করা যেতে পারে। এরপর পায়ের যত্নে সাবধান থাকতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় পিলিংয়ের পর কয়েক সপ্তাহ মোজা পরে থাকলে।
সারাহ্ দীনা
ছবি: ইন্টারনেট