skip to Main Content

সেলুলয়েড I কায়রো স্টেশন

মূল শিরোনাম: Bāb al-adīd
পরিচালনা: ইউসেফ শাহিন
চিত্রনাট্য: মোহাম্মদ আবু ইউসেফ, আবদেল হাই আদিব
অভিনয়: ইউসেফ শাহিন, হিন্দ রোস্তম, ফরিদ শাকি
সময়ব্যাপ্তি: ৭৭ মিনিট
ভাষা: আরবি
দেশ: মিসর
মুক্তি: ১৯৫৮

১৯৫০-এর দশক। মিসরের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এক উন্মত্ত সময়কাল। রাজতন্ত্রের পতন ঘটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় নতুন শাসক, নতুন শাসনব্যবস্থা। অশেষ সংকট ও কাঠামোগত পরিবর্তনের মধ্যে জীবনযাত্রা টালমাটাল। গণমানুষ একই সঙ্গে আশাবাদী ও বিভ্রান্ত। এরই মধ্যে রাজধানী কায়রোর প্রধান রেলস্টেশন ঘিরে নিরন্তর চাঞ্চল্য। হবেই না কেন? কায়রো স্টেশন যে এই রাজধানীর হৃৎপি-! তাই উন্মত্ত সময়ে রাজধানীবাসীর অন্তস্তলের গতি-প্রকৃতি বুঝতে পারার উদ্দেশ্যে এখানেই একটি সিনেমার জাল বিস্তার করেছিলেন মিসরের সবচেয়ে বিখ্যাত ও বিতর্কিত ফিল্মমেকার ইউসেফ শাহিন। স্টেশনটির নামেই সিনেমার নাম, ‘কায়রো স্টেশন’। আর তা শাহিনকে প্রথমবারের মতো এনে দিয়েছিল আন্তর্জাতিক পরিম-লে দারুণ খ্যাতি। সিনেমাটি এই স্টেশনের এক দিনের, আরও নির্দিষ্ট করে বললে মাত্র ১১ ঘণ্টার আখ্যান।
কায়রো স্টেশন-এর শুরু দারুণ এক মন্তাজ দিয়ে। স্টেশন প্ল্যাটফর্মে পত্রিকার দোকান চালানো মাদবুলি নামের এক ন্যারেটর তাতে দর্শকদের পরিচয় করিয়ে দেন কিয়ানি নামের এক পত্রিকার হকারের সঙ্গে। কিয়ানিই কেন্দ্রীয় চরিত্র। হতদরিদ্র মানুষ। পৃথিবীতে তার আপন বলে কেউ আছে, মনে হয় না। জরাজীর্ণ টিনশেডের নিচে বসবাস। সেখানটা অর্ধনগ্ন নারীদের ছবিতে ভরা। আর তাতে তার বিকৃত মানসিকতার ইঙ্গিত ধরা পড়ে।
স্টেশনে ট্রেন আসে, ট্রেন যায়। যাত্রী আসে, যাত্রী যায়। পত্রিকা বিক্রেতা কিয়ানির চোখ খুঁজে বেড়ায় নারীদেহ। এর মধ্যে ঝুড়িতে লুকিয়ে যাত্রীদের কাছে কোমল পানীয় বিক্রি করতে আসা এবং হরদম প্রহরীদের তাড়া খাওয়া রূপসী ও স্বাধীনচেতা তরুণী হানুমার প্রতিই তার বিশেষ টান। শ্রমিক সংগঠনের নেতা ও কুলি আবু সিরির প্রেমিকা এই হানুমা। তাতে কর্ণপাত নেই কিয়ানির। তাকে অশ্লীল চোখে দেখার পাশাপাশি সুযোগ বুঝে দিয়ে বসে বিয়ের প্রস্তাব। যথারীতি হয় প্রত্যাখ্যাত। এরই মধ্যে হানুমা ও সিরির মাখামাখি কিয়ানিকে তীব্র জ্বালাতন করতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ছুরি হাতে তাড়া করে হানুমাকে। পাকড়াও করে ফেলে; কিন্তু শেষরক্ষা হয় না। হানুমার সঙ্গে বিয়ের মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার কাছ থেকে ছুরি কেড়ে নেওয়া হয়। স্টেশনভর্তি উদ্বিগ্ন সহকর্মী ও যাত্রীদের দিকে তাকিয়ে সে টের পায়, ফাঁদে পড়ে গেছে; প্রতিশ্রুতি দিয়ে সরকারব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে গণমানুষকে যেমন ফাঁদে ফেলে দেয় নতুন শাসক! এখানেই শেষ সিনেমা। তবু রয়ে যায় কালোত্তীর্ণ রেশ।
এই সিনেমাজুড়ে কিয়ানির চোখে এক আহত জন্তুর চাহনি জুড়ে দিয়েছেন ফিল্মমেকার। চাহনি দিয়ে চরিত্রটি যেন নারী শরীরগুলোকে গোগ্রাসে গিলে খায়। বলে রাখি, এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন স্বয়ং শাহিন। অভিনেতা হিসেবে তার মুখের নিখুঁত অভিব্যক্তি ও শারীরিক ভাষা যেন কোনো যৌন-অবদমিত ব্যক্তিমানুষের মনোজগতের জানালায় নিবিড় চোখ বোলায়।
কায়রো স্টেশন-এ ছড়িয়ে রয়েছে মেলোড্রামা; তবে মূলত নিওরিয়ালিজমকে আশ্রয় করেছে এই সিনেমা। তাতে এক উন্মত্ত সময়ে, সমাজের প্রান্তিক শ্রেণির অন্যতর লড়াইয়ের ভেতর দিয়ে, যৌন-অবদমনের আড়ালে বস্তুত রাজনৈতিক পীড়নের প্রতিকৃতি দারুণভাবে এঁকেছেন ফিল্মমেকার। বিস্তৃত ও সংকীর্ণ- উভয় দৃষ্টিকোণকেই ইউসেফ শাহিন যে নিবিড়ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, তাতে একটিকে গুরুত্ব দিতে দিয়ে অন্যটিকে হেয় করার প্রচলিত পথে হাঁটেননি; বরং সমাজ ও ব্যক্তিসত্তার বিভিন্ন স্তরের ওপর চালিয়েছেন নিখুঁত পর্যবেক্ষণ। তাতে কায়রো স্টেশন পরিণত হয়েছে কালজয়ী মাস্টারপিস সিনেমায়।
 আরিফুল ইসলাম

কুইজ
১। কায়রো স্টেশন-এর কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন কে?
[ক] প্রযোজক নিজে
[খ] পরিচালক নিজে
[গ] পেশাদার অভিনেতা
[ঘ] একজন রাজনীতিক

২। এই চলচ্চিত্র কোন ফিল্ম মুভমেন্টকে অনুসরণ করে?
[ক] ইতালিয়ান নিওরিয়ালিজম
[খ] ফ্রেঞ্চ নিউ ওয়েভ
[গ] ইন্ডিয়ান প্যারালাল সিনেমা
[ঘ] নিউ জার্মান সিনেমা

৩। কিয়ানির পেশা কী?
[ক] কোমল পানীয় বিক্রেতা
[খ] ফল বিক্রেতা
[গ] কুলি
[ঘ] পত্রিকার হকার

গত পর্বের বিজয়ী

১. সাদিয়া ইসলাম, সূত্রাপুর, ঢাকা।
২. সুমাইয়া ইয়াসমিন, ধানমন্ডি, ঢাকা।
৩. আনিকা আহমেদ, বায়েজিদ বোস্তামী রোড, চট্টগ্রাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top