skip to Main Content

এডিটর’স কলাম I নিজেকে ভেঙে গড়া

ভাঙনের বেদনা আমাদের পোড়াবে ঠিকই, তবু দিন শেষে নিজেকে নতুন করে গড়তে পারার যে আনন্দ, তা পথচলা করে দেবে অর্থবহ ও ফুরফুরে। একই সঙ্গে আরও বেশি আত্মবিশ্বাসীও করে তুলবে

ক্যালেন্ডারের পাতায় যখন নতুন বছরের সূচনা, নিজেকে নতুন করে গড়ার দারুণ এক উপলক্ষও বটে। বিগত বছরের বিবিধ ক্লেদ, ব্যর্থতা, হতাশার জালে আপাদমস্তক জড়িয়ে না থেকে, ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে গা ঝাড়া দেওয়ার এক চমৎকার মুহূর্ত। কেননা, জীবনের পথে-প্রান্তরে অনেক অনাকাক্সিক্ষত ও অপ্রত্যাশিত মুহূর্ত অঙ্গাঙ্গিভাবে চলতে থাকে ঠিকই, তবে সময়ে সময়ে সেগুলো ঝেড়ে ফেলতে হয়। শীতের শেষে বৃক্ষের দেহে যেমন গজিয়ে ওঠে নতুন পাতা; তেমনি জীবনবৃক্ষে নতুনত্বের আহ্বান জারি রাখা চাই। নিজেকে ভেঙে গড়ার স্পৃহায় দেওয়া চাই শাণ। সময়ের আহ্বানে দেওয়া চাই সাড়া। আর নতুন বছর নিঃসন্দেহে এর জন্য মোক্ষম মুহূর্ত।

দুই
বিন্দু বিন্দু পানি মিলে যেভাবে গড়ে ওঠে মহাসাগর, সচেতন মানুষও তেমনি তিলে তিলে সাজিয়ে তোলেন নিজের জীবন। মুদ্রার দুই পিঠের মতোই জীবনের পৃষ্ঠাজুড়ে মুদ্রিত থাকে আনন্দ ও বেদনা, প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তি। তবু অবিরাম চলতে থাকে পথচলা, শেষনিশ্বাস পর্যন্ত। এরই মাঝে, অনেক সচেতনতার সুরক্ষা দিয়ে গড়ে তোলা জীবনেও কখনো কখনো জমা পড়ে এমন কালিমা, যা বিষিয়ে তুলতে পারে সেই পথচলা। অনেকেই তা টের পান; অনেকে পান না। আবার, টের পেলেও তা শুধরে নেওয়ার সুযোগ থাকে না কারও কারও। আসলেই কি থাকে না? ভালো করে দেখেছেন তো? অন্ধকার সুড়ঙ্গের অপর প্রান্তে যেমন অপেক্ষায় থাকে আলো, শুরুতে হয়তো একেবারেই দৃশ্যমান নয়, বেশ খানিকটা এগিয়ে যাওয়ার পর প্রথমে বিন্দুমাত্র, তারপর আরও অনেকটুকু পাড়ি দিলে দেখা মেলে আলোর ফোয়ারার, তেমনিভাবে জীবনপথেও সকল কালিমার, সকল দুঃসময়ের সুড়ঙ্গের কোনো না কোনো প্রান্তে ঠিকই হাজির থাকে আলোকসজ্জা। শুধু দম ধরে রেখে এগিয়ে যাওয়ার ব্যাপার। তাহলেই মিলবে সন্ধান। তাই নিজের ভেতর কোনো অন্ধকারের- হোক তা ছোট কিংবা বড়- দেখা পাওয়া বা অনুভব করামাত্রই মুষড়ে পড়ার কিছু নেই; বরং নিজের শুশ্রুষা নিজেরই নেওয়া চাই। প্রয়োজনে ভেঙেচুরে নতুন করে গড়ে তোলা চাই নিজেকে।

তিন
‘আমরা কী করতে পারি আর কী পারি না, কোন কাজকে নিজের কাছে সম্ভব মনে হয় আর কোনটাকে অসম্ভব- এগুলো আসলে আমাদের সত্যিকারের সক্ষমতার কোনো পরিচায়ক নয়। এ বরং নিজের ওপর বিশ্বাসের পরিচায়ক,’ বলেছেন আমেরিকান লেখক ও বক্তা অ্যান্থনি রবিনস। তাই অহেতুক ভয় কিংবা আত্মবিশ্বাসহীনতায় আক্রান্ত না হয়ে, নিজেকে ভেঙে গড়ার জন্য যেকোনো সময়ই হতে পারে যথার্থ সময়। এ ক্ষেত্রে প্রস্তুতি হিসেবে মনোবিশ্লেষকদের কিছু পরামর্শ মানা যেতে পারে। শুরুতেই নিজের ভেতর জ্ঞাতসারে কিংবা অজ্ঞাতে বাসা বাঁধা নেতিবাচকতাগুলোকে শনাক্ত করতে এবং চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেন। ধরুন, ‘আমি বোধ হয় কোনো একটি কাজ করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট চালাক-চতুর নই,’ কিংবা ‘আমার কোনো শুভাকাক্সক্ষী নেই’- কোনো পরিস্থিতিতে এমনটা মনে হয়েছে আপনার? নিশ্চয় হয়েছে! কম-বেশি সবারই হয়। কিন্তু এমন পরিস্থিতি থেকে নেতিবাচকতাকে নিংড়ে নেওয়ার মানে নেই; বরং নিজেকে জোর দিয়ে বলে দেখুন, আপনার এমন বিশ্বাস আদতে ‘সত্য’ নয়। পাশাপাশি, নিজের ভেতর থাকা ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলো শনাক্ত ও লালন করুন। গড়ে তুলুন সুস্থ ও স্বস্তিদায়ক সম্পর্ক। প্রয়োজনে নিজেকে একটু বিশ্রাম দিন- শারীরিক ও মানসিকভাবে। প্রয়োজনে ‘না’ বলতে শিখুন এবং গ্রহণ করুন নতুন চ্যালেঞ্জ। দেখবেন, দিনে দিনে বেশ চাঙা হয়ে উঠেছেন। ‘খুঁত’ সারিয়ে নিজেকে করে তুলতে পেরেছেন নিজের মতো করে নিখুঁত।

চার
ভাঙা-গড়ার খেলা কখনোই স্বস্তিদায়ক নয়। তবু আমরা সবাই কখনো না কখনো এ খেলার অংশ হয়ে উঠি। তাতে কখনো আমাদের থাকে রেফারির ভূমিকা, কখনো খেলোয়াড়ের, কখনো-বা নিতান্ত দর্শকের। তবু নিজেকে ভেঙে গড়া যখন অনিবার্য হয়ে ওঠে, সেই চ্যালেঞ্জ নেওয়ার মানসিকতাও থাকা চাই। ভাঙনের বেদনা আমাদের পোড়াবে ঠিকই, তবু দিন শেষে নিজেকে নতুন করে গড়তে পারার যে আনন্দ, তা পথচলা করে দেবে অর্থবহ ও ফুরফুরে। একই সঙ্গে আরও বেশি আত্মবিশ্বাসীও করে তুলবে।

পাঁচ
সময় যখন দুঃসময় খুব, জীবন যখন থমকে দাঁড়ানো, নিজেকে ফিরে পাওয়ার জন্য, ‘আমি আমার ভেতর, আমি আমার মাথায়, আমি আমার শিরায়, আমি আমার পাঁজর ফিরে চাই রে…’- শীলাজিতের এ গানের মতো নিজ সত্তাকে খুঁজে ফিরে, ভেঙে গড়ে তোলাই এগিয়ে নেয় মানুষকে। একই সঙ্গে মানবসভ্যতাকেও। তাই প্রয়োজনে নবায়ন অথবা পুনর্নির্মাণ করুন নিজ সত্তার।

নতুন বছর আনন্দময় হোক সবার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top