skip to Main Content

ত্বকতত্ত্ব I পরিমাণ প্রণালি

টু মাচ অর টু লিটল। কোনোটাই সঠিক নয় প্রতিদিনকার পরিচর্যার পণ্য প্রয়োগে। ভালো নয় পরিবেশের জন্যও

ইউনিভার্সালি পারফেক্ট স্কিন কেয়ার রুটিন না থাকলেও একদম বাঁধাধরা নিয়ম রয়েছে, ত্বকে কতটুকু পণ্য ব্যবহার করতে হবে। কারণ, অতিরিক্ত পণ্যের ব্যবহারে যেমন লোমকূপ আটকে ব্রেকআউটের সমূহ আশঙ্কা তৈরি হয়, তেমনি প্রয়োজনের তুলনায় কম পণ্যের ব্যবহারে এর পুরোপুরি কার্যকারিতা মেলে না। এ ছাড়া অতিরিক্ত পণ্যের ব্যবহার মানেই অপচয়। আর যাদের ধারণা, বেশি পণ্য ব্যবহারে হয়তো বেশি কাজ হবে কিংবা দ্রুত ফল মিলবে, তাদের আশার গুড়ে বালি। এতে শুধু দ্রুত ফুরাবে পণ্য, খালি হয়ে যাবে বোতল আর টিউব। লাভের লাভ কিছুই হবে না; বরং ওভার ইউজিংয়ের ফলে ত্বকের ওপর জমতে শুরু করবে। এ ছাড়া অনেক বেশি অ্যাকটিভ প্রডাক্ট একসঙ্গে ব্যবহারের ফলে ত্বকে দেখা দিতে পারে অস্বস্তি, শুষ্কতা, লালচে ভাব; এমনকি কেমিক্যাল বার্নও হয়ে যেতে পারে। আর প্রয়োজনের তুলনায় পণ্যের কম ব্যবহারে যে কার্যকারিতার ঘাটতি হয়, তার বড় প্রমাণ সানস্ক্রিন। পর্যাপ্ত পরিমাণে না মাখলেই বিপদ। ইউভি রে আর পরিবেশের দূষণ সহজেই বারোটা বাজিয়ে দেবে ত্বকের। এ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ, পণ্যের প্যাকেজিংয়ে থাকা নির্দেশনা ভালোভাবে পড়ে নেওয়ার। ব্র্যান্ডের রেকমেন্ডেশন এ ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ক্লিনজার
এটি সাধারণত দুই ধরনের হয়। একটি মেকআপ রিমুভ করে দেয়, অন্যটি যেটা মেকআপ তুলতে কার্যকর নয়। মেকআপ রিমুভালের জন্য ব্যবহৃত ক্লিনজিং বাম বা অয়েল অল্প অল্প করে ব্যবহার শুরু করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত না পুরো মেকআপ উঠে যাচ্ছে। আর ডাবল ক্লিনজিং সিস্টেমের ক্ষেত্রে এরপরে জেল বা ফোমিং ক্লিনজার ব্যবহার করাই নিয়ম। সে ক্ষেত্রে এক পাম্প বা কয়েন সাইজ পরিমাণের ক্লিনজার নিলেই পুরো ত্বক পরিষ্কার করে নেওয়া যাবে। কারণ, এগুলোতে পানির সঙ্গে মিশিয়ে ফেনা তৈরি করে নেওয়া হয়, যা দিয়ে অনায়াসেই কপাল থেকে চিবুক পরিষ্কার করে নেওয়া সম্ভব। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ক্লিনজার ব্যবহারের আগে ত্বক ভিজিয়ে নেওয়ার। এটাই সঠিক তরিকা। তারপর হাতে ক্লিনজার নিয়ে ঈষদুষ্ণ পানি মিশিয়ে ধীরে ধীরে ঘষে ফেনা তৈরির পর মুখে মাখিয়ে আপওয়ার্ড মোশনে মাসাজ করে নিতে হবে। চোখের অংশটা বাদ দিতে হবে সাবধানতার সঙ্গে। ধোয়ার সময় পরিষ্কার, ঠান্ডা পানি দিয়ে আপওয়ার্ড মোশনে ধুয়ে নিতে হবে মুখ। এতে লোমকূপগুলো বন্ধ হয়ে যাবে, রক্তসঞ্চালনও বাড়বে ত্বকের। আর ভেজা ত্বক মুছে নেওয়ার ক্ষেত্রে সাবধান। খুব বেশি ঘষাঘষির প্রয়োজন নেই। আলতো করে চেপে চেপে মুছে নিলেই চলবে। এতে অসময়ে বুড়িয়ে যাওয়া থেকে বাঁচবে ত্বক। সঠিক পরিমাণে ব্যবহার করলে ২০০ মিলির এক বোতল ক্লিনজার টিকবে ৪-৫ মাস অব্দি।
টোনার, এসেন্স এবং অন্যান্য লিকুইড
টোনার বা এসেন্স ব্যবহারের সময় অনেকেই গোলাকার কটন প্যাড অথবা রিইউজেবল ক্লথ ব্যবহার করেন। কিন্তু এতে অনেকটা পণ্য অপচয় হয়। সে ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ হলো সরাসরি হাতে টোনার বা এসেন্স ঢেলে নেওয়ার। কোয়ার্টার সাইজের হলেই চলবে। তারপর আলতো করে চেপে চেপে পুরো মুখত্বকে মেখে নিতে হবে। তবে কোয়ার্টার সাইজ পরিমাণটা বেশি মনে হলে শুধু ত্বকের সমস্যা আক্রান্ত অংশেও ব্যবহার করলে চলবে, যেমন টি-জোন। স্প্রে বোতলে টোনার থাকলে পাঁচ থেকে ছয়বার স্প্রে করে নিতে হবে ত্বকে। এতে পরবর্তী স্টেপের জন্য ত্বক প্রস্তুত। তবে মাইসেলার ওয়াটারের ক্ষেত্রে রিইউজেবল কটন প্যাড ব্যবহার করাই ভালো। পুরোটা ভালো করে ভিজিয়ে নিয়ে তারপর ব্যবহার করতে হবে।
এক্সফোলিয়েটর
ফর্মুলার ওপর নির্ভর করবে এর পরিমাণ। এ ক্ষেত্রে উৎপাদনকারী ব্র্যান্ডের নির্দেশনা মেনে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। বাঁচা যাবে ওভার এক্সফোলিয়েশনের আশঙ্কা থেকে। কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েন্ট ব্যবহারে নতুন? পুরো মুখে পাতলা এক লেয়ার দেওয়ার মতো এক্সফোলিয়েটর থাকলেই চলবে। আর ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েটরের ক্ষেত্রে টিউব বা বোতলে একবার চাপ দিলে যতটুকু বের হয় ততটুকুই যথেষ্ট।
সেরাম
ডাইম সাইজ সেরাম যথেষ্ট পুরো মুখে মাখানোর জন্য। শুধু কি তাই! সামান্য এতটুকুতেই কাভার হবে গলা থেকে বুক অব্দি। ত্বকে টোনার যদি ভেজা অবস্থায় থাকে, তাহলে তো আরও অল্প সেরাম নিলেই চলবে। তবে ফর্মুলেশনের ভিন্নতা থাকায় অনেক সময় হেরফের হতে পারে পরিমাণে। রেটিনল সাধারণত পি-সাইজ পরিমাণে হলেই চলে। পাম্পযুক্ত, ওভার দ্য কাউন্টার ফর্মুলারগুলো এক থেকে দুই পাম্পই যথেষ্ট পুরো মুখ, গলা ও বুকের ত্বকের জন্য। আর ড্রপার ফর্মে থাকা সেরামগুলোর পাঁচ থেকে দশ ফোঁটা যথেষ্ট।
আই ক্রিম
ত্বকের এই অংশ বেশ স্পর্শকাতর হওয়ায় ‘লেস ইজ মোর’ থিওরিই বেস্ট। সে ক্ষেত্রে পি-সাইজ পরিমাণ আই ক্রিম যথেষ্ট দুই চোখের জন্য। শুধু চোখের নিচের অংশে নয়, মেখে নিতে হবে ওপর এবং চারপাশজুড়ে। রিং ফিঙ্গার ব্যবহার করে।
ময়শ্চারাইজার
এ ক্ষেত্রে একটা সূত্র রয়েছে। এক কিংবা দুই মিলিগ্রাম ময়শ্চারাইজার জরুরি পার স্কয়ার সেন্টিমিটার ত্বকের জন্য। যারা মাপজোখে কাঁচা, তাদের জন্য রয়েছে আরও সহজ সমাধান। এক ডাইম থেকে নিকেল সাইজ পরিমাণের ময়শ্চারাইজার এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট পুরো মুখত্বকের যতেœ। ব্যালেন্সড থেকে কম্বিনেশন ত্বকের জন্য নিকেল সাইজ ময়শ্চারাইজার হলেই চলবে, যা দুটি আঙুলের লম্বার সমান অথবা অর্ধেক চা-চামচ পরিমাণের। ত্বক যদি শুষ্ক হয়, সে ক্ষেত্রে এর থেকে একটু বেশি ময়শ্চারাইজার মাখলেই চলবে। আপওয়ার্ড সার্কুলার মোশনে। তাহলে মিলবে লিফটেড লুক।
সানস্ক্রিন
বছরে যে সময়ই হোক, তাপমাত্রার পারদ উঠুক বা নামুক- বাইরে বেরোলেই সানস্ক্রিন মাস্ট। এখানেই খাটবে সেই আগের সূত্র। প্রতি স্কয়ার সেন্টিমিটার ত্বকের জন্য প্রয়োজন হবে দুই মিলিগ্রাম পণ্য। এক আউন্স সমপরিমাণ। যা দিয়ে শুধু মুখত্বক নয়, মেখে নেওয়া যাবে দেহের খোলা অংশেও।

 অর্চনা সাহা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল

This Post Has One Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top