ফরহিম I পোস্ট-ওয়ার্কআউট
স্বল্প সময়ের গ্রুমিং সেশনের জন্য পারফেক্ট টাইম। জিম ব্যাগে মাত্র কয়টা জিনিস থাকলেই সেরে নেওয়া যাবে সহজে
সুস্থ জীবনধারার অনুশীলন বা সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে জিমে যাওয়া জরুরি। ঠিক তেমনি জরুরি পোস্ট-ওয়ার্কআউট গ্রুমিং সেশন। কারণ, ব্যায়াম করে বের হওয়ার পরেই ঘামের কারণে ত্বক, চুল কিংবা শরীরের যে ভেজা ও আঠালো অবস্থা হয়, তা দীর্ঘ সময় থাকলে সৌন্দর্যের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় হিসেবে তৈরি করে নেওয়া একটি পোস্ট-ওয়ার্কআউট জিম কিট। এটি তৈরি করতে কোন ব্যাপারগুলো মাথায় রাখতে হবে আর কী ধরনের প্রোডাক্ট জুতসই হবে, তা নিয়ে বিস্তারিত জানা থাকা ভালো।
ওয়ার্কআউটের পর স্বভাবতই শরীর প্রচুর ঘামতে থাকে। শরীর ঠান্ডা রাখার জন্য এই ঘাম হওয়াটা ভালো। তবে ওয়ার্কআউটের পরপরই কোনো কুলিং এজেন্টের সাহায্য না নিলে এ প্রক্রিয়া থামবে না, যা বেশ অস্বস্তিকর। এ কারণে ওয়ার্কআউটের পরে বরফ-ঠান্ডা পানি পান করার পাশাপাশি তা দিয়ে গোসল করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়াকে লিম্ফেটিক ড্রেইনেজ বলা হয়, যা শরীরের তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে। ওয়ার্কআউটের পর এই ঘাম আর এর সঙ্গে বের হওয়া ময়লা শরীরে চিটচিটে ভাব তৈরি করে। যা দূর করতে শুধু ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করাই যথেষ্ট নয়। তাই সঙ্গে ব্যবহার করা যেতে পারে শাওয়ার জেল ও বাথ সল্ট। এগুলো শক্তিশালী ক্লিনজিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং একই সঙ্গে শরীরের আর্দ্রতার মাত্রা অক্ষুণ্ন রাখে। তা ছাড়া ঘামের ফলে হওয়া শরীরের দুর্গন্ধ দূর করে একটা সতেজ অনুভূতি দিতে পারে নিমেষে। বেছে নেওয়া যায় নিজের পছন্দের যেকোনো শাওয়ার জেল বা বাথ সল্ট। এ ক্ষেত্রে এখন পরামর্শ দেওয়া হয় অর্গানিক কিছু বেছে নেওয়ার।
ওয়ার্কআউটের পর পুরো শরীরে খুব ভালোভাবে রক্ত প্রবাহিত হতে থাকে। এই রক্তসঞ্চালন স্ক্যাল্পের ক্ষেত্রেও খুব ইতিবাচক। কিন্তু যেহেতু মাথার ত্বক শরীরের বাকি ত্বকের মতো দেখা যায় না, তাই বেশির ভাগ পুরুষই অবহেলা করেন একে। যার কারণে ওয়ার্কআউটের পরে অতিরিক্ত ঘামে ভেজা আঠালো চুলের জন্য এখনো সাধারণ শ্যাম্পুর ব্যবহার বেশি। ওয়ার্কআউটের পর শরীরের যেমন প্রয়োজন, ঠিক ততটাই প্রয়োজন চুল ও স্ক্যাল্পের যত্ন। এই সময়ের জন্য কোনো ধরনের অ্যান্টিড্যানড্রাফ কিংবা অ্যান্টি-হেয়ারফল শ্যাম্পু ব্যবহার না করা ভালো। কারণ, এই ফর্মুলার শ্যাম্পুগুলো চুলের ময়লার পাশাপাশি স্ক্যাল্পের প্রাকৃতিক তেলও ধুয়ে ফেলে। পরিবর্তে ক্রিমবেসড হেয়ার ওয়াশ ব্যবহার করলে চুলের আর্দ্রতা এবং প্রাকৃতিক তেল স্ক্যাল্প ভালোভাবে সংরক্ষণ করবে। চুল ও স্ক্যাল্পকে হাইড্রেটেড করার পাশাপাশি মসৃণ ও কোমল করে তুলবে। কেননা এই ধরনের শ্যাম্পুগুলো চুলের কন্ডিশনার হিসেবেও কাজ করে।
ওয়ার্কআউটের পরে যখন গোসল করা হয়, তখনো শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার প্রক্রিয়ায় থাকে এবং তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি থাকে। এই অবস্থায় যদি চুল ভালো করে শুকিয়ে একটি ভালো জেল দিয়ে সেট করা না হয়, তাহলে খুব একটা ভালো দেখায় না। তাই পরিহার করার পরামর্শ হেভি ডিউটি যেকোনো জেল বা হেয়ার ক্রিম। কারণ, এগুলো চুলকে খুব ভারী করে তোলে আর স্ক্যাল্পের তাপমাত্রা বেশি থাকায় বারবার চুল নেতিয়ে পড়তে পারে। অনেক সময় চুলে আঁশটে গন্ধও হতে পারে। তাই এ ধরনের বিব্রতকর অবস্থা এড়াতে মেনে চলা যেতে পারে সহজ কিছু বিষয়। শুরুতেই চুল শুকিয়ে নিতে হবে। এই অবস্থায় হেয়ার ড্রায়ারটি কুল মোডে ব্যবহার করা ভালো। এরপরে ব্যবহার করতে হবে পছন্দের লাইটওয়েট কোনো জেল বা হেয়ার ক্রিম। তবে যদি শুকানোর সময় না থাকে কিংবা হাতের কাছে হেয়ার ড্রায়ার না মেলে, তাহলে তোয়ালে দিয়ে খুব ভালোভাবে চুল মুছে হালকা শুকনো করে নিতে হবে। তারপর ব্যবহার করা যেতে পারে ভালো মানের ক্লে বা ওয়্যাক্স বেসড স্টাইলিং প্রোডাক্ট। এগুলো চুলে পছন্দের স্টাইল ধরে রাখার পাশাপাশি স্ক্যাল্পকে শ্বাস নেওয়ার সুযোগ করে দেবে।
গোসলের পর ত্বককে ময়শ্চারাইজড রাখতে তো একটা ময়শ্চারাইজার মাস্ট! তবে ওয়ার্কআউটের পর চুলের জেলও যেমন যেকোনোটা হলে চলবে না, তেমনি ত্বকের যত্নেও দিতে হবে বাড়তি কিছু। আর যেহেতু ওয়ার্কআউটের পরপরই শরীরের তাপমাত্রা পুরোপুরি স্বাভাবিক হয় না, এমন অবস্থায় ত্বকে খুব ভারী কোনো লোশন বা ময়শ্চারাইজার মাখলে তা খুব জলদি অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এগুলো খুব সহজে গলে যায়, ফলে শরীরে আবারও ঘাম হতে পারে। তাই বেছে নেওয়া যেতে পারে এমন কোনো বডি ক্রিম বা লোশন, যা খুব লাইটওয়েট এবং কম তৈলাক্ত। হায়ালুরনিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ ক্রিমগুলো হতে পারে আদর্শ; কারণ, এগুলো ত্বকের আর্দ্রতার ভারসাম্য বজায় রেখে ত্বককে রাখে ময়শ্চারাইজড।
শিরীন অন্যা
মডেল: পলাশ
মেকওভার: পারসোনা মেনজ
ছবি: কৌশিক ইকবাল