সেলুলয়েড I ইট মাস্ট বি হেভেন
চিত্রনাট্য ও পরিচালনা: এলিয়া সুলেইমান
চিত্রগ্রহণ: সোফিয়ান এল ফানি
সম্পাদনা: ভেরোনিক লঁজ
অভিনয়: এলিয়া সুলেইমান, আলি সুলিমান, গাই স্প্রাং
সময়ব্যাপ্তি: ৯৭ মিনিট
ভাষা: ফ্রেঞ্চ
দেশ: ফ্রান্স, কানাডা, ইসরায়েল, ফিলিস্তিন, তুরস্ক
মুক্তি: ২০১৯
ই.এস.। এলিয়া সুলেইমানের সংক্ষিপ্ত রূপ। একজন মধ্যবয়সী লোক। চলচ্চিত্রকার। সদা সচকিত। উঁকিঝুঁকি দিয়ে দেখেন বাস্তবতার চিত্রমালা। কথা বলেন না। অভিব্যক্তিতে ফুটে ওঠে অন্তরের ভাষা। নিজ বাড়িতে থাকার সময় দেখেন, তার লেবুগাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত প্রতিবেশী। পানশালায় দেখেন তারুণ্যের উচ্ছ্বাস। রাস্তায় দেখেন গোলমাল, দখলদার নিরাপত্তা বাহিনীর রক্তচক্ষু, সহিংসতার আভাস। ঘর থেকে বেশ দূরে, কোনো এক উপবনে দেখেন এক ফিলিস্তিনি নারীর রহস্যময় চলাচল। তার সেই দেখার ভেতর দিয়ে আমরা বুঝতে পারি, নিজ দেশে তিনি পরবাসী। কিংবা বলা ভালো, নির্বাসিত।
সদা আতঙ্কগ্রস্ত এই লোক এরপর পাড়ি জমান সত্যিকারের প্রবাসে। সেই স্বেচ্ছানির্বাসনের প্রথম শহর প্যারিস। সেখানে একটি ক্যাফের বাইরে বসে তিনি দেখতে থাকেন ফ্যাশনেবল সজ্জায় হেঁটে যাওয়া রূপসী নারীদের। তার কাছে এই নির্বাসনের জীবন তাই শুরুতে ধরা দেয় স্বর্গতুল্য হয়ে। কিন্তু সহসাই দেখতে পান, আলো-ঝলমলে প্যারিস শুধু রূপসী নারীদের বৈচিত্র্যময় সৌন্দর্যেই পূর্ণ নয়; এখানেও রয়েছে নরকের বিস্তার। এখানেও গৃহহীন মানুষের ছড়াছড়ি; হতদরিদ্র, বিশেষত কৃষ্ণাঙ্গদের অবিরাম ধাওয়া করে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী। ঠিক যেমনটা তিনি দেখে এসেছেন নিজ ভূখণ্ডে; পরাধীন ফিলিস্তিনে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর দৌরাত্ম্য।
প্যারিস ছেড়ে কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে ঘুরে বেড়ান ই.এস.। সবখানেই দেখা পান যুদ্ধংদেহী অস্ত্রের মহড়া; কখনো পরোক্ষভাবে, কখনো প্রত্যক্ষ। কখনো প্রতীকীভাবে, কখনো বাস্তব রূপে। তার বোঝা হয়ে যায়, ফিলিস্তিন শুধু একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমারেখায় সীমিত নয়; সারা দুনিয়াতেই এর বিস্তার। এমনকি ইসরায়েলও। মোটকথা, সর্বত্রই একদল মানুষ নিজেদের অধিকারের জন্য লড়াইরত; আরেক দল মানুষ অন্যদের ওপর নিজেদের নিপীড়নকৌশল আরও শাণিত, আরও সহিংস করে তুলতে সক্রিয়। তাই নির্বাসন ছেড়ে আবারও বাড়ি ফেরেন তিনি। আবারও হাজির হন এক পানশালায়। সেখানে তারুণ্যপূর্ণ নৃত্য দেখতে দেখতে অবচেতনেই তার সম্ভবত মনে হতে থাকে, জীবন স্বর্গীয় সুন্দর!
পুরো সিনেমায়, শুধু প্রবাসে থাকাকালে একবারই কথা বলা, ‘আমি একজন ফিলিস্তিনি’—এই আত্মপরিচয় জানান দেওয়া ই.এস.-এর জীবনবোধ ঘিরে প্রখ্যাত ফিলিস্তিনি ফিল্মমেকার এলিয়া সুলেইমান নির্মাণ করেছেন কমেডি-ড্রামা ‘ইট মাস্ট বি হেভেন’। বলা বাহুল্য, এ পর্যন্ত বানানো তার প্রতিটি ফিচার ফিল্মেই [‘ক্রনিকল অব আ ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স’ (১৯৯৬), ‘ডিভাইন ইন্টারভেনশন’ (২০০২), ‘দ্য টাইম দ্যাট রিমেইনস’ (২০০৯) ও ‘ইট মাস্ট বি হেভেন’ (২০১৯)] কেন্দ্রীয় চরিত্রের নাম ই.এস.। এই চরিত্র এমন একজন ফিলিস্তিনির, যিনি সবকিছু শুধু চেয়ে চেয়ে দেখেন; মুখ ফুটে সচরাচর কিছু বলেন না। আর তার অভিব্যক্তি থেকে শুরু করে সিনেমাগুলোর ইমেজে ইমেজে ছড়িয়ে পড়ে নিজ দেশে পরাধীন জীবন কাটানো এক ব্যক্তিসত্তার মর্মান্তিক মনোবেদনা। ছড়িয়ে পড়ে দখলদারদের নিপীড়ন। তবে তা একেক সিনেমায় একেক ভঙ্গিমায়। আর এই কেন্দ্রীয় চরিত্রে নিজেই অভিনয় করেন এলিয়া সুলেইমান।
‘ক্রনিকল অব আ ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স’-এর সেই টগবগে তরুণ ই.এস. ‘ইট মাস্ট বি হেভেন’-এ এসে পৌঁছেছেন মধ্যবয়সে। বার্ধক্য সন্নিকটে। জীবনের চলতিপথে অনেক কিছুই হয়তো মেনে নিয়েছেন; আশাবাদের বড় একটি অংশ দখলে নিয়েছে নৈরাশ্য। তবু তার পরাধীনতার বেদনা অভিন্ন রয়ে গেছে। যেমনটা রয়ে গেছে যেকোনো ফিলিস্তিনির। আর তাতে ই.এস. পরিণত হয়েছে ফিলিস্তিনি নাগরিকদের একটি প্রতিনিধিত্বসুলভ চরিত্রে। তারই সর্বশেষ নমুনা ‘ইট মাস্ট বি হেভেন’।
i আরিফুল ইসলাম
কুইজ
১। ‘ইট মাস্ট বি হেভেন’-এর কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন কে?
[ক] একজন হলিউড তারকা
[খ] চলচ্চিত্রকার নিজে
[গ] চিত্রগ্রাহক নিজে
[ঘ] একজন মঞ্চাভিনেতা
২। এ চলচ্চিত্রের কেন্দ্রীয় চরিত্রটি মোট কয়বার কথা বলে?
[ক] একবার
[খ] দুইবার
[গ] সাতবার
[ঘ] একবারও না
৩। চলচ্চিত্রটি কোন ধারার?
[ক] মেলোড্রামা
[খ] ডকু-ড্রামা
[গ] থ্রিলার
[ঘ] কমেডি-ড্রামা
কুইজ উত্তর
১.খ
২.ক
৩.ঘ
মোবাইল : 01790318741
Dhaka University area,Dhaka,Bangladesh