ফরহিম I স্কিন ফ্লাডিং
টিকটকের ট্রেন্ড। ক্রমেই পরিণত হয়েছে পুরুষালি গো-টু স্কিন কেয়ার প্র্যাকটিসে। পোস্ট-উইন্টার পরিচর্যার জন্য আদর্শ
থ্যাংকস টু কে-পপ অ্যান্ড টিকটক। যেগুলোর কল্যাণে পুরোদস্তুর বদলে গেছে পুরুষালি পরিচর্যার ধরন। শুরুটা ময়শ্চারাইজার আর সানস্ক্রিনে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন ছেলেরাও মেয়েদের মতো ত্বকের যত্নে সমান আগ্রহী। শুধু কি তাই, রীতিমতো পাল্লা দিচ্ছে জ্যাকব এলর্ডি আর এন্ড্রু গারফিল্ডদের সঙ্গে, তাদের স্কিন কেয়ার রুটিন অ্যাডপ্ট করতে। সেই ধারাবাহিকতায়, ত্বকের বয়স রোখার পাশাপাশি ক্ষতি পূরণে, নতুন অ্যাডিশন হচ্ছে স্কিন ফ্লাডিং!
স্কিন ফ্লাডিং কী
ফ্লাড শব্দটা বিশ্লেষণ করলেই মিলবে এর উত্তর। মজা করে বললে, ত্বকে হবে হাইড্রেশনের বন্যা! শুনতে অদ্ভুত লাগলেও এটা একদম সত্যি। অনেকে একে টিকটক ট্রেন্ড বলে হেসে উড়িয়ে দিলেও ডার্মাটোলজিস্টরা বলছেন ভিন্ন কথা। স্কিন ফ্লাডিংয়ের মূল উদ্দেশ্য ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা বজায় রেখে এতে বাড়তি আভা নিয়ে আসা।
ট্রেন্ড নাকি সায়েন্স
টিকটকের বদৌলতে সম্প্রতি সবার কাছে পৌঁছালেও স্কিন ফ্লাডিংয়ের পক্ষে ডার্মাটোলজিস্টরা কথা বলছেন বহু বছর ধরেই। ত্বকের আর্দ্রতা বাড়ানোর প্রক্রিয়াকে বুস্ট আপ করতে এটি হতে পারে দারুণ উপায়। এমনকি বয়স ধরে রাখতেও।
পরিপূর্ণ প্রক্রিয়া
পুরুষালি ত্বক সাধারণত মেয়েদের ত্বকের তুলনায় বেশি রুক্ষ হয়। তাই যথাযথ আর্দ্রতার অভাবে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। মৃতকোষ জমে হয়ে পড়ে প্রাণহীন। স্কিন ফ্লাডিং শুরুর আগে ত্বককে প্রস্তুত করে নেওয়া তাই প্রাথমিক ধাপ। ত্বকের ধরন বুঝে ব্যবহার করতে হবে ক্লিনজার। ক্লিনজিংয়ের পরবর্তী ধাপে, ত্বককে ভেজা কাপড় দিয়ে হালকাভাবে মুছে দ্রুত মেখে নিতে হবে হায়ালুরনিক অ্যাসিড। এতে উপস্থিত হিউম্যাকটেন্ট ত্বকে আর্দ্রতা আটকে রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ত্বককে উজ্জ্বল করে তুলতে জুড়ি নেই হায়ালুরনিক অ্যাসিডের।
ছেলেদের রাফ অ্যান্ড টাফ স্কিনে শাইনি আর গ্লসি ওয়েট লুক এনে দিতে পারে এই অ্যাসিড। সকাল কিংবা রাতে বেসিক স্কিন কেয়ার রুটিনে তাই নিশ্চিন্তে যোগ করা যেতে পারে হায়ালুরনিক অ্যাসিড। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে, কোনোভাবেই এসপিএফ ব্যবহার যেন বাদ না পড়ে।
ত্বকভেদে উপযোগিতা
পরিবেশের নানা পরিবর্তন প্রভাব ফেলে ত্বক ও ত্বকের ধরনে। ব্রেকআউট, আনইভেন স্কিন টোন, মেলাজমা, ডার্ক স্পট ইত্যাদি পরিণত হয় দৈনন্দিন সমস্যায়। এ ছাড়া সুষ্ঠু ডায়েট মেনে না চলায় ত্বক কখনো শুষ্ক হয়ে পড়ে, কখনোবা দেখা দেয় অতিরিক্ত তৈলাক্ততা। তাই প্রশ্ন থাকতেই পারে, এই অবস্থায় স্কিন ফ্লাডিং আসলে কতটা কার্যকর কিংবা আদৌ কার্যকর কি না।
শুষ্ক ত্বকের অধিকারী যে কারও জন্য স্কিন ফ্লাডিং দারুণ উপযোগী। আবহাওয়া যেমনই হোক, যাদের ত্বক শুষ্ক থাকে বা ত্বকে মৃতকোষ জমতে থাকে, তারা চোখ বুজে করে নিতে পারেন স্কিন ফ্লাডিং। এতে ত্বক শুধু ময়শ্চারাইজডই থাকবে না, বজায় থাকবে স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা।
তেলে বা স্পর্শকাতর ত্বকে
যাদের ত্বকে অল্প কিছু ব্যবহারেই র্যাশ কিংবা অ্যালার্জি দেখা দেয়, তাদের অবশ্যই হাত কিংবা গলার ত্বকে প্যাচ টেস্ট করে নিতে হবে আগেভাগে। এরপরও সমস্যার সম্মুখীন হলে প্রক্রিয়াটি সেখানেই বন্ধ করে দ্রুত শরণাপন্ন হতে হবে ডার্মাটোলজিস্টের। আর যদি মানিয়ে যায়, তবে তো কথাই নেই। ওয়েলকাম টু দ্য ওয়ার্ল্ড অব স্কিন ফ্লাডিং।
ছেলেদের তৈলাক্ত ত্বক মেয়েদের চেয়ে পুরোপুরি আলাদা। কারণ, ছেলেদের সহজেই ব্রেকআউট হয়। শক্তিশালী হেয়ার গ্ল্যান্ডস থাকার কারণে ব্রণও হয় বেশি। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই ত্বকের ধরন বুঝে ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক প্রোডাক্ট ব্যবহার করা চাই। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য হাইড্রেটিং জেলগুলো দারুণ কাজ করে। এগুলোর ব্যবহারে ত্বক তেলতেলেও হয় না, আবার চকচকে ভাবও বজায় থাকে। এ ছাড়া ত্বককে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত করানো যেতে পারে বেনজয়েল পার-অক্সাইডের সঙ্গে। এতে ত্বক সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর মতো কিছুটা সময়ও পাবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, ত্বকে রেটিনল ও বেনজয়েল পার-অক্সাইড যেন একই সঙ্গে ব্যবহৃত না হয়। এতে ব্রেকআউট বেড়ে যেতে পারে।
আসলেই কি জটিল
ব্যাপারটা মোটেই তেমন নয়। শুরুটা একটু কঠিন হলেও ত্বক যদি একবার মানিয়ে নিতে পারে, তাহলে স্কিন ফ্লাডিংও ধীরে ধীরে ক্লিনজিং, টোনিংয়ের মতো রোজকার রূপ রুটিনে জায়গা করে নিতে পারবে অনায়াসে।
যারা গ্লেজড ডোনাটের মতো শিশিরসিক্ত আর উজ্জ্বল ত্বক পেতে চান, তাদের জানা ভালো, এ ক্ষেত্রে স্কিন ফ্লাডিংয়ের তুলনা মেলা ভার। টিকটকের এই স্কিন কেয়ার ট্রেন্ডের কল্যাণে, রিয়েল লাইফেও এখন সম্ভব স্ন্যাপচ্যাট ফিল্টারের মতো ব্লেমিশ ফ্রি স্কিন। স্কিনটোন যেমনই হোক, খুব সহজে ত্বককে আর্দ্রতায় পরিপূর্ণ করে তারুণ্যোজ্জ্বল ভাব বাড়াতে স্কিন ফ্লাডিং হতে পারে প্রথম পছন্দ।
বিদিশা শরাফ
মডেল: পলাশ
মেকওভার: পারসোনা মেনজ
ছবি: কৌশিক ইকবাল