skip to Main Content

ফিচার I দামের দাপট

খাবার একটি মৌলিক চাহিদা। এর জন্য অর্থ ব্যয়ের বিকল্প নেই বললেই চলে। তবে কিছু খাবার এতই দামি, যা বেশির ভাগ মানুষের কাছে স্বপ্নের নামান্তর। জানা যাক বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ১০টি খাবার ও খাদ্যপণ্যের কথা

আলমাস ক্যাভিয়ার
ইরানের অ্যালবিনো স্টার্জন মাছের ডিম প্রতি ১০০ বছরে মাত্র একবার পাওয়া যায়। রং কালো। ১ কিলোগ্রাম মাছের ডিমের দাম কয়েকটি গাড়ির মূল্যের সমান। প্রতি কেজিতে খরচ পড়ে ৩৪ হাজার ৫০০ ডলার বা প্রায় ৪০ লাখ ৪২ হাজার ৩৪ টাকা। এক চামচ ডিমের দাম দেড় লাখ টাকা প্রায়। প্রশ্ন হলো, এর দাম এত বেশি কেন? প্রকৃতপক্ষে আলমাস ক্যাভিয়ার এক বিরল প্রজাতির মাছ অ্যালবিনো স্টার্জন থেকে আহরণ করা হয়। প্রাপ্তবয়স্ক মাছের বয়স ৬০ থেকে ১০০ বছর। এই মাছ কাস্পিয়ান সাগরের দক্ষিণ অংশে পাওয়া যায়, যেখানে দূষণ সবচেয়ে কম। অ্যালবিনো স্টার্জন মাছ নিলামে কোটি টাকার ওপরে বিক্রি হয়। তাই এ মাছের ডিমের দামও এত বেশি। পুষ্টিবিদদের মতে, আলমাস ক্যাভিয়ার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের রিপোর্ট অনুযায়ী, এই ডিম ভিটামিন-১২ সমৃদ্ধ, যা মানুষের ক্লান্তি ও দুর্বলতা দূর করতে সহায়ক। এতে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা মস্তিষ্কের জন্য উপকারী। আলমাস ক্যাভিয়ারকে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে অলৌকিক হিসেবে গণ্য করা হয়। সম্ভবত এ কারণেই অতি ধনীদের খাদ্যতালিকায় এটি জায়গা করে নেয়। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুযায়ী, আলমাস ক্যাভিয়ার বিশ্বের সবচেয়ে দামি খাবারের মর্যাদা পেয়েছে।
ইউবারি কিং মেলন
ইউবারি কিং মেলন একচেটিয়াভাবে জাপানের ইউবারি অঞ্চলে গ্রিনহাউসের ভেতরে সূর্যের আলোতে উৎপন্ন হয়। পরস্পরের মধ্যে এই ফলের বিনিময় করাকে জাপানিরা একটি বিলাসবহুল উপহার হিসেবে গণ্য করেন। মিষ্টি ও সুস্বাদু স্বাদের এই তরমুজের দাম স্বর্ণের চেয়েও বেশি! ২০০৮ সালের তথ্য অনুযায়ী, এই প্রজাতির দুটি তরমুজ কিনতে ভোক্তাদের খরচ করতে হয়েছিল ২৭ হাজার ২২৯ ডলার বা প্রায় ৩১ লাখ ৯০ হাজার ১৬১ টাকা।
ব্লুফিন টুনা
জাপানিদের কাছে এই সামুদ্রিক খাবার মহামূল্যবান। কারণ, এটি বিশ্বের সবচেয়ে দামি খাবারের একটি। অন্যান্য ধরনের টুনার তুলনায় এতে চর্বিযুক্ত উপাদান বেশি থাকায় এর স্বাদ ভীষণ দারুণ। প্রতি পাউন্ড ব্লুফিন টুনার দাম ৩ হাজার ৬০৩ ডলার বা প্রায় ৪ লাখ ২২ হাজার ১২৯ টাকা।
আয়াম সেমানি
নিকষ কালো রঙের এই মুরগি জাদুকরি ক্ষমতার সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত বলে মনে করা হয়। বিশ্বাস করা হয়, সেমানি মুরগির মাংস সব ধরনের রোগ নিরাময়ের পাশাপাশি সৌভাগ্য বয়ে আনতে কার্যকর। গড়ে প্রতিটি মুরগির দাম ২ হাজার ৫০০ ডলার বা প্রায় ২ লাখ ৯২ হাজার ৯০১ টাকা। বলে রাখা ভালো, পৃথিবীতে কালো মাংস প্রজাতির যত মুরগি রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে আয়াম সেমানি অন্যতম। এটি ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপপুঞ্জের একটি প্রাচীন মুরগির জাত। দ্বাদশ শতাব্দীর শুরু থেকে জাতটি পরিচিতি পায়। মূলত তখন ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক কাজে এই মুরগির মাংস ব্যবহৃত হতো। ডাচ কর্নেল সেটেলারের মাধ্যমে আয়াম সেমানি মুরগি প্রথমবার সারা বিশ্বে পরিচিতি পায়। ১৯৯৮ সালে আরেক ডাচ বিজ্ঞানী জ্যান স্টভেরিক এটি ইউরোপে নিয়ে ব্রিডিং করান। এর ফলে ইউরোপেও জাতটির ব্যাপ্তি ঘটে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এবং আফ্রিকার কয়েকটি দেশে আয়াম সেমানি লালনপালন করা হয়। আমাদের দেশে এটি মিললেও এর সমগোত্রীয় জাত কাদাখনাথ মুরগি বেশ জনপ্রিয়।
হোয়াইট ট্রাফল
উত্তর ইতালির পিয়েমন্ত অঞ্চলে পাওয়া যায়। তবে এটি পেতে নির্দিষ্ট ধরনের গাছের সন্ধান করা চাই। খুব শক্তিশালী স্বতন্ত্র সুবাসের কারণেই এই ট্রাফল বিলাসবহুল খাবার। সীমিত প্রাপ্যতার কারণে প্রতি কিলোগ্রামের দাম ২ হাজার ১০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ ডলার বা ২ লাখ ৪৬ হাজার ৩৭ থেকে ২ লাখ ৯২ হাজার ৯০১ টাকা।
জাফরান
বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল মসলা হিসেবে একে গণ্য করা হয়। নাম শুনলেই বনেদি এক আভাস ভেসে বেড়ায় যেন! এই উপাদানের ব্যবহার অনেকের সাধ্যের বাইরে থাকলেও এর গুণাগুণ সম্পর্কে অনেকে অবগত। জাফরানকে রেড গোল্ড বলা হয়। কারণ? এর মূল্য স্বর্ণের চেয়ে অনেক বেশি। মানভেদে প্রতি পাউন্ড ৫০০ থেকে ২ হাজার ডলার বা ৫৮ হাজার ৫৮০ থেকে ২ লাখ ৩৪ হাজার ৩৮১ টাকা। ক্রোকাস ফুল থেকে এ ধরনের মসলা তোলা হয়। এই ফুল বছরে কয়েক সপ্তাহের জন্য পাওয়া যায়। মসলাজাতীয় এই দ্রব্য জাফরান ফুলের শুষ্ক গর্ভমুণ্ড থেকে মেলে। আনুমানিক সাড়ে ৩ হাজার বছর ধরে মানুষ এই উদ্ভিদ চাষ ও ব্যবহার করে আসছে। মসলার পাশাপাশি এটি ওষুধ, রং এবং সুগন্ধি হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। ধারণা করা হয়, বিশ্বে প্রথম ফুল থেকে কোনো মসলার উৎপত্তি হয়েছে এই উদ্ভিদ থেকে। খাবার সুস্বাদু করার জন্য জাফরান অধিক প্রচলিত। বিশেষ করে বিরিয়ানি, কাচ্চি, জর্দা, কালিয়াসহ নানা পদের দামি খাবার তৈরিতে। এর যোগে খাবারের স্বাদ ও পুষ্টিগুণ অনেকটাই বেড়ে যায়।
মাতসুতাকে মাশরুম
মাতসুতাকে বা মুতা মাশরুম কোরীয় উপদ্বীপ, ইউরোপ, চীন এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে চাষ করা হলেও জাপানে, বিশেষ করে জাপানের কিয়োটো অঞ্চলে যে জাতের মাশরুম পাওয়া যায়, তা সবচেয়ে জনপ্রিয় ও ব্যয়বহুল। চীন, জাপান ও কোরিয়ার অভিজাতদের জন্য একটি সাধারণ রান্নার উপাদান এটি। কিনতে চাইলে প্রতি কিলোগ্রামে খরচ করতে হবে ৬০০ ডলার বা প্রায় ৭০ হাজার ২৯৬ টাকা।
রেইনডিয়ার মিল্ক পনির
এখন পর্যন্ত আপনি সম্ভবত পনিরকে প্রক্রিয়াজাত গরুর দুধ হিসেবেই জানেন। কিন্তু সুইডেনের মুজ হাউস ফার্ম একচেটিয়াভাবে মুজ মিল্ক পনির তৈরি করে। রিন্ড-স্টাইল, ফেটা-স্টাইল ও ব্লু পনির—মূলত এই তিন ধরনের মুজ পনির রয়েছে। যেহেতু এটি খুব সীমিত পরিমাণে তৈরি করা হয়, তাই এর মূল্য প্রতি পাউন্ড ৫০০ ডলার বা প্রায় ৫৮ হাজার ৫৮০ টাকা। রেইনডিয়ারের দুধ থেকে তৈরি পনির ঐতিহাসিকভাবে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অঞ্চলে মেলে। লেইপাজুস্টোর মতো আধুনিক ফিনিশ পনিরগুলো অতীতে রেইনডিয়ার দুধ দিয়ে তৈরি করা হতো।
মানুকা মধু
জগতের সব মধুই যে একই রকম, তা কিন্তু নয়। যেমন ধরুন, মানুকা মধু বেশ ব্যয়বহুল আইটেম। তবে এই মধুর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান অন্যান্য মধুর চেয়ে অনেক বেশি। তাই একে অনেকে মধুর রাজাও বলে থাকেন। এই মধুতে থাকা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টিভাইরাল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি শরীরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করে। খাঁটি মানুকা মধু মূলত নিউজিল্যান্ডে মানুকা নামক একধরনের ঝোপজাতীয় উদ্ভিদের অনিন্দ্যসুন্দর ফুল থেকে উৎপাদিত হয়। পেটের পীড়া, গলার সমস্যা, সর্দি, কাশি, ক্ষতসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার সমাধানে এই মধু দারুণ কার্যকর। মানুকা মধু এমন মৌমাছির মাধ্যমে উৎপাদিত হয়, যা মানুকা বুশ ফুলের (লেপ্টোস্পার্মাম স্কোপেরিয়াম) অমৃত গ্রহণ করে। এই বিখ্যাত মধুর জন্য প্রতি কেজিতে খরচ করতে হবে ৫০০ ডলার বা প্রায় ৫৮ হাজার ৫৮০ টাকা।
ইবেরিকো হ্যাম
পর্তুগাল ও স্পেনের একধরনের মাংস। সাধারণত শূকরের। এগুলোকে জীবনের শেষ পর্যায়ে অ্যাকর্ন খাওয়ানো হয়। এই মাংস ৩৬ মাস সংরক্ষণের প্রয়োজন পড়ে। তাই এর মূল্য খুব বেশি, প্রতি কিলোগ্রাম ৩৯২ ডলার বা প্রায় ৪৫ হাজার ৯২৭ টাকা।

 ফুড ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top