কুন্তলকাহন I অম্লরসে
অনুকূল পরিবেশ তৈরি হচ্ছে চুলের সুস্বাস্থ্য রক্ষায়। মিলছে বিবিধ সমস্যার সেরা সমাধান। ব্যবহারের পছন্দসই প্রক্রিয়া বেছে নেওয়ারও সুযোগ থাকছে। আর কী চাই
হায়ালুরনিক অ্যাসিড
ত্বকের উজ্জ্বলতা, আর্দ্রতা আর মসৃণতা বাড়াতে এর ব্যবহার বছর পুরোনো। কিন্তু অনেকের হয়তো জানা নেই, চুলের সুস্বাস্থ্য রক্ষায়ও এই অ্যাসিড জাদুকরি। এটি প্রয়োজনীয় পুষ্টির জোগান দেয় মাথার ত্বকে। করে তোলে আর্দ্র। সেই আর্দ্রতা হেয়ার ফলিকলে আটকে রাখার মতো অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে দেয়। ফলে পুনরুজ্জীবিত দেখায় চুল। টেক্সচারের পরিবর্তনও চোখে পড়ে। শুধু তা-ই নয়! বাড়তি ভলিউম যোগ করে। ঘন দেখাবার ইলিউশন তৈরি হয়। সব ধরনের চুলে ব্যবহার উপযোগী হায়ালুরনিক অ্যাসিড; বিশেষ করে হাই পোরোসিটিযুক্ত ড্যামেজড চুলে। জিনগত কারণে অনেকের চুল হাই পোরোসিটিযুক্ত হতে পারে। এ ছাড়া হিট ড্যামেজ, কালারিং আর পরিবেশগত কারণেও এমনটা দেখা দেয়। হায়ালুরনিক অ্যাসিড এমন পোরযুক্ত চুলের ফাটলগুলো পুরে দেয়। আরও দেয় দীর্ঘস্থায়ী আর্দ্রতার নিশ্চয়তা। লাইটওয়েট হওয়ায় হেয়ার কিউটিকলের একদম গভীরে প্রবেশ করতে পারে। ভেতর থেকে বাড়ায় সৌন্দর্য।
স্যালিসাইলিক অ্যাসিড
ইচি স্ক্যাল্পের বেস্ট ফ্রেন্ড এই অ্যাসিড। তাই যাদের মাথায় প্রচণ্ড চুলকানির সমস্যা, তাদের সংগ্রহে থাকা চাই মাস্ট। এক্সফোলিয়েশন ক্ষমতার কারণে অনেক আগে থেকে ত্বকচর্চায় এর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। তবে ক্ল্যারিফায়িং শ্যাম্পু আর অ্যান্টি-ড্যানড্রাফ হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্টগুলোর উপাদান তালিকার দিকে একটু লক্ষ করলেই মিলবে এর উপস্থিতি। কারণ, ত্বকচর্চায় এই হিরো ইনগ্রিডিয়েন্ট নেতিয়ে পড়া ভাব আর মাথার ত্বকের চুলকানির মতো নানা রকম চুলসংক্রান্ত সমস্যা সমাধানেও দুর্দান্ত। স্যালিসাইলিক অ্যাসিড মূলত ত্বকের পুরু স্তর ভেঙে দেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া এই বেটা হাইড্রোক্সি অ্যাসিড এক্সফোলিয়েশনে সহায়তা করে। দূর করে অতিরিক্ত তেল, প্রোডাক্ট বিল্ডআপ আর এমন সব ময়লা, যা লোমকূপ আটকে দিতে পারে। তবে হেয়ার কেয়ারে স্যালিসাইলিক অ্যাসিড যোগের সবচেয়ে বড় সুবিধা, মাথার ত্বকে জমে থাকা বাড়তি অবশিষ্টাংশের সহজ অপসারণ। এর মধ্যে আছে প্রোডাক্ট বিল্ডআপ, তেল, ঘাম আর অন্যান্য দূষণ; যা মাথার ত্বক আর চুল আচ্ছাদিত রাখে। স্যালিসাইলিক অ্যাসিড কোমলভাবে এগুলো দূর করে, চুলের প্রাকৃতিক তেলের কোনো ক্ষতি না করেই। মাথার ত্বকে মৃতকোষ জমতে জমতে একসময় তা পরিণত হয় খুশকিতে। স্যালিসাইলিক অ্যাসিড এরও মহৌষধ; যা এই ফ্লেকি স্কিনকে ভেঙে দূর করে খুশকি। মাথার ত্বকে চুলকানি? তারও সমাধান মিলবে এই অ্যাসিডের ডিটক্সিফায়িং প্রোপার্টিতে।
ল্যাকটিক অ্যাসিড
আলফা হাইড্রোক্সি অ্যাসিড পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। রূপচর্চায় ব্যবহৃত অ্যাসিডগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কোমল। রিসারফেসিং এজেন্ট হিসেবে সেরা; কারণ, এটি এক্সফোলিয়েট তো করেই, সঙ্গে ত্বকের গভীরতম অংশে আর্দ্রতা পৌঁছে দেয়। চুলের যত্নে ঠিক যেমন এক্সফোলিয়েশনেরই খোঁজ সবার। কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর বটে, কিন্তু মৃদুভাবে স্ক্যাল্পের ফ্লেকি অংশ দূর করে। অতিরিক্ত তৈলাক্ততা কমায়। কমিয়ে দেয় চিপচিপে আঠালো হয়ে ওঠার সমস্যা। এ ছাড়া ল্যাকটিক অ্যাসিড মাথার ত্বকে আর চুলের গোড়ায় জমতে থাকা মৃতকোষগুলোতে ভাঙন ধরায়, প্রোডাক্ট বিল্ডআপ গলিয়ে দেয় এবং স্ক্যাল্পের রক্তসঞ্চালন বাড়ায়। ফলাফল—চুল দ্রুত বাড়তে শুরু করে। ছড়ায় উজ্জ্বলতা। এই অ্যাসিড হেয়ার ফলিকল পর্যন্ত প্রয়োজনীয় পুষ্টি আর অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে। কন্ডিশনার হিসেবেও চমৎকার। হেয়ার টেক্সচারের ভোল পাল্টে দিতে পারে। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা আটকে রেখে মাথার ত্বকের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা বাড়ায়। এতে চুল কম শুষ্ক অনুভূত হয়; দেখায় বাউন্সি। স্টাইলিং টুল আর ইউভি রশ্মি রক্ষায় সুরক্ষা দেয়াল তৈরি করে দেয় এই অ্যাসিড। নিশ্চিত করে সুস্বাস্থ্য।
লাইসিন
প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায় মুরগি, ডিম, ডাল, বাদাম আর লাল মাংসে। যেগুলোর প্রতিটি পর্যাপ্ত পরিমাণে লাইসিনের সরবরাহ নিশ্চিত করে। এটি মূলত একধরনের তরল অ্যামাইনো অ্যাসিড, যা দেহের অভ্যন্তরে ক্যালসিয়াম শোষণের মাধ্যমে কোলাজেন ফর্মুলেশনে সহায়তা করে। এই কোলাজেন চুলকে মজবুত করে তোলার পাশাপাশি চুলের বেড়ে ওঠা ত্বরান্বিত করে। শুধু তা-ই নয়, লাইসিন ডিহাইড্রোটেস্টোস্টেরন হরমোনের কার্যক্রমকে ব্যাহত করে, যা চুল পাতলা করে দেওয়ার জন্য দায়ী। ক্যালসিয়াম রেগুলেশনে সহায়ক এই অ্যাসিড স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল বেড়ে ওঠায় সহায়ক ভূমিকা রাখে।
গ্লাইকোলিক অ্যাসিড
মোস্ট প্রমিজিং অ্যাসিডের খেতাবপ্রাপ্ত। ওয়েল-রিসার্চডও বটে। সবচেয়ে সাধারণ আলফা হাইড্রোক্সি অ্যাসিড; যা স্ক্যাল্পে জরুরি আর্দ্রতার জোগান দেয়। আরও দেয় যথাযথ এক্সফোলিয়েশন। ফলাফল—ফ্লেকিং কমে; ত্বরান্বিত হয় চুলের বেড়ে ওঠা। ময়শ্চার ম্যাগনেট হিসেবে পরিচিত এই অ্যাসিড চুলের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। স্ক্যাল্পকে নতুনের মতো করে তুলতেও কার্যকর। চুলে জরুরি পুষ্টি জোগাতে সক্ষম এই অ্যাসিড; যা ভঙ্গুরতা রোধ করে। গ্লাইকোলিক অ্যাসিড ব্যবহারে চুলে জট পড়ে না; ফলে স্টাইলিং সেরে নেওয়া যায় সহজে। এর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ইফেক্ট স্ক্যাল্প অ্যাকনে সৃষ্টিকারী ইস্ট আর ব্যাকটেরিয়া কমাতে সহায়ক। সপ্তাহে এক থেকে দুবার ব্যবহারই যথেষ্ট। সব ধরনের চুলে জুতসই। তবে তেলতেলে ফ্লেকি স্ক্যাল্পে এর কার্যকারিতা সবচেয়ে বেশি।
ব্যবহারবিধি
যে দিনগুলোতে চুল ধোয়া হবে, তখন টপিক্যালি এই সব অ্যাসিড ব্যবহার করা যাবে। চুল শ্যাম্পু করার আগে স্ক্যাল্পে মেখে নিতে হবে। তারপর ৪ থেকে ৫ মিনিট ধরে মাসাজ করা চাই সার্কুলার মোশনে। সমস্যায় আক্রান্ত স্থানগুলোতেও বাড়তি মনোযোগ দিতে হবে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ভেজা চুলে এগুলো ব্যবহারের। কার্যকারিতা বাড়বে এতে। তারপর ভালো করে শ্যাম্পু করে নিতে হবে। সরাসরি অ্যাসিড ব্যবহারে অস্বস্তি হলে এগুলোর ফর্মুলেশনে তৈরি হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করে দেখা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে ভালো ব্র্যান্ডেরগুলো বেছে নিতে হবে।
বিউটি ডেস্ক
মডেল: নিধি
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: নাইমুল ইসলাম