কুন্তলকাহন I ফরাসি ফরমান
প্রতিদিন চুল ধোয়ার প্রচলিত প্রথার বিপরীত। পারফেক্ট টেক্সচার ফুটে ওঠে; পাশাপাশি অনেকটা আয়ত্তে দেখায়। বাড়তি হ্যাপা বাদেই
‘ওয়াশ ইওর হেয়ার এভরিডে’—এই মন্ত্রে বিশ্বাসী মানুষের সংখ্যা বিশ্বে নেহাত কম নয়। তাতে থোড়াই কেয়ার করেন ফরাসি সুন্দরীরা। সেকেন্ড ডে হেয়ারের পক্ষে তাদের ভোট বরং বেশি। খুব বেশি তেলে না হলে চুল ধোয়ার পক্ষপাতী নন তারা। ইচ্ছুকও নন একেবারে। তাদের কাছে অনেকটা অভ্যাসের মতোই হয়ে পুরো ব্যাপারটা। সৌন্দর্যবিশ্বেরও নজর এড়ায়নি। ‘ডে আফটার’ থিওরিতে জনপ্রিয় সব হেয়ারস্টাইলিস্টের থাম্বস আপ তারই প্রমাণ। সৌন্দর্যসচেতনদেরও আগ্রহ বাড়তে শুরু করেছে সম্প্রতি। সেকেন্ড ডে হেয়ার হয়ে উঠেছে টক অব দ্য সিজন।
সেকেন্ড ডে হেয়ার কী
ওই যে নামেই তো বোধগম্য। ধোয়ার পরের দিনের চুলকে বলা হয় সেকেন্ড ডে হেয়ার। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, ধোয়ার পরপরের চাইতেও এ দিনে চুল আর বেশি ভালো দেখায়, অনুভূতও হয় চমৎকার। কারণ, দ্বিতীয় দিনে চুল পুরোপুরি শুকিয়ে যায়, স্ক্যাল্পের প্রাকৃতিক তেলে ভাব ফিরে আসে আর চুলের স্বাভাবিক আকার পুনরুদ্ধার হয়। ফলাফল—স্টাইলিং এবং তার সৌন্দর্য টিকিয়ে রাখা তুলনামূলকভাবে সহজ হয়। সেটা যেকোনো ধরনের চুলের ক্ষেত্রেই।
সৌন্দর্য রক্ষায়
সেকেন্ড ডে হেয়ারের সৌন্দর্য পুরোপুরি ফুটিয়ে তোলার জন্য চুল বিশেষজ্ঞরা বেশ কিছু পরামর্শ দিয়ে থাকেন। প্রথমত, আগের দিন রাতে ড্রাই শ্যাম্পুর ব্যবহার। সতেজতা সৃষ্টির পাশাপাশি এর টেক্সচার যোগের ক্ষমতা দুর্দান্ত; যা চুলের গোড়ায় লিফটিং ইফেক্ট দেয়, ঘন দেখাতে সহায়তা করে। ক্ল্যাসিক ব্যবহারবিধি বলে, ১৫ সেন্টিমিটারের দূরত্ব রেখে তবেই স্প্রে করতে হবে চুলে। মিনিটখানেক অপেক্ষার পর ভালো করে আঁচড়ে নিতে হবে। ঘুমাতে যাওয়ার আগে রাতে কিংবা সন্ধ্যায় যদি এভাবে ড্রাই শ্যাম্পু দিয়ে নেওয়া যায় চুলে, তাহলে সবচেয়ে ভালো ফল মেলে, মত বিশেষজ্ঞদের। কারণ, এতে করে শ্যাম্পু অতিরিক্ত তেল শুষে নেওয়ার সময় তো পায়ই, সেই সঙ্গে পরের দিন সকালে কোনো অবশিষ্টাংশের ছিটেফোঁটাও দেখা যায় না। এ ক্ষেত্রে খুব বেশি হাইএন্ড শ্যাম্পু ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। প্রক্রিয়া সঠিক হলে হাতের নাগালে থাকা মামুলি ড্রাই শ্যাম্পু দিয়েও মিলবে বেস্ট রেজাল্ট। ধোয়ার পরের দিন পারফেক্ট টেক্সচারেই থাকে চুল। কিন্তু রাতে ঘুমানোর সময় বিছানার ঘষায় জটা বেঁধে যাওয়ার কিংবা উষ্কখুষ্ক হয়ে ওঠার আশঙ্কা তৈরি হয়। তাই পরের দিন চুল বাঁধার পরিকল্পনা না থাকলে বিনুনি বেঁধে নেওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। এতে করে চুল কম উষ্কখুষ্ক হবে, থাকবে উজ্জ্বল। এই ছোট্ট একটু ট্রিকে চুলের জটা ছড়ানোও সহজ হবে। পলিশড দেখাতে সহায়তা করবে।
দ্বিতীয়ত, মাথার ত্বকের প্রতি মনোযোগী হতে হবে। এমনিতেও নিয়মিত চুল আঁচড়ানোর অভ্যাস চুলকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করে তুলতে সহায়ক। কিন্তু চুল ধোয়ার পরের দিন ভালো করে আঁচড়ে নেওয়ার ফল—উজ্জ্বলতা উসকে দেওয়া। হেয়ার এক্সপার্টদের পরামর্শ, শুধু আঁচড়ে নিলেই চলবে না। সার্কুলার মোশনে আস্তে আস্তে মাসাজ করে নিতে হবে। এতে উদ্দীপ্ত হবে স্ক্যাল্প, বাড়বে রক্তসঞ্চালন। দুশ্চিন্তামুক্ত হওয়ার পাশাপাশি হেয়ার ফলিকলের মুখ খুলে দেবে এ প্রক্রিয়া। এতে চুলযত্বের পণ্যগুলোর উপাদানের পুষ্টিগুণ পৌঁছে যাবে গভীরে; যা চুলের বৃদ্ধিকেও ত্বরান্বিত করবে। সেকেন্ড ডে হেয়ারের শ্রীও বহুগুণে। যাদের চুল কার্লি সেকেন্ড ডেতে যদি তা একটু নেতিয়ে পড়া দেখায়, সে ক্ষেত্রে এক দারুণ টোটকা রয়েছে। পানি এবং লিভ-ইন-কন্ডিশনার স্প্রে করে নিতে হবে, ব্যস। এতে কার্লগুলো কোমল হবে, উষ্কখুষ্ক ভাব কমে আসবে। এ ছাড়া চুলের সিঁথি বদল করে দেখা যেতে পারে। এতে সেকেন্ড ডে হেয়ারে বাড়তি ভলিউম যোগ হবে। শ্যাম্পু করার পরের দিনে হেয়ারস্টাইলিং টুল ব্যবহার না করাই ভালো। যদি করতেই হয়, তাহলে শাইন এনহ্যানসিং স্ট্রেটনিং আয়রন বেছে নেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
সেকেন্ড ডে হেয়ারস্টাইল
শ্যাম্পু করার পরের দিন বেঁধে নেওয়ার বেশ কিছু ধরন চমৎকার দেখায় চুলে। সেকেন্ড যে স্পেশাল হেয়ারস্টাইল বললে ভুল হবে না এগুলোকে।
হাই পনিটেইল
শ্যাম্পু করার পর প্রাকৃতিকভাবেই চমৎকার দেখায় এ হেয়ারস্টাইল। টাইমলেস, স্টাইলিশ এবং সহজে করে নেওয়া যায় বলে পছন্দের শীর্ষে এর অবস্থান। শুধু চুলের গোড়ায় সামান্য হেয়ার জেল মাখিয়ে নিতে হবে। তারপর সব চুল মাথার উপরিভাগে একত্র করে হেয়ার ব্যান্ডে বেঁধে নিতে হবে। ব্যস! আরও স্টাইলিশ দেখাতে পনিটেইল করে তা সাধারণ বেণিতে বেঁধে নেওয়া যায়। লং লাস্টিং করে তুলতে স্ট্রং হোল্ড স্প্রে ব্যবহার করে নেওয়া যায়। বাবল পনিটেইলও থাকতে পারে অপশনের তালিকায়।
বানের বাঁধনে
ক্ল্যাসিক লুক চাইলে হাফ-আপ বান হতে পারে আদর্শ স্টাইল। চুলকে টপ এবং বটম সেকশনে সমান ভাগ করে নিতে হবে প্রথমে। টপ হাফে পনিটেইল করে তারপর তা বানে বেঁধে নিতে হবে। বটম হাফ ছেড়ে রাখারই নিয়ম এ ক্ষেত্রে। এ ছাড়া প্রিটজেল বানও মন্দ দেখাবে না। সব চুল নিয়ে কাঁধের কাছে পনিটেইল বেঁধে তারপর তা পেঁচিয়ে ববি পিনে আটকে গড়ে নিতে হয় এই বান। দারুণ দেখাবে ডাচ সাইড বান আর টপ নটও।
এ ছাড়া বিচ স্টাইল কিংবা টাসেলড ওয়েভও কিন্তু সেকেন্ড ডে হেয়ার হিসেবে দারুণ পছন্দনীয়।
বিউটি ডেস্ক
মডেল: মারিয়াম
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল