ফিচার I মিইয়ে পড়ার মুহূর্তে
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে আর্দ্রতার আশকারা বাড়ার খবর। চুলের বারোটা বাজার যে সময় হয়েছে, সে তো আর আলাদা করে বলতে হবে না! বাড়তি যত্বের প্রস্তুতি কদ্দুর?
ভলিউম বুস্টিং হেয়ারস্টাইল
পাতলা চুল যত বাড়ে, তত নেতিয়ে পড়ার প্রবণতা দেখা দেয়। ফলে চুল যত ছোট হবে, ভলিউম স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে। সেই সঙ্গে এতে বাড়তি লেয়ারের যোগ তৈরি করবে মুভমেন্ট। তাই বলাই যায়, চুলের দৈর্ঘ্যের ওপর নির্ভর করবে এর বাউন্সি ভাব। এ ক্ষেত্রে শোল্ডার লেন্থ অথবা লব লেন্থ হেয়ার কাট জুতসই নেতিয়ে পড়া চুলের জন্য। চেহারার আদল বুঝে করে নেওয়া যেতে পারে গ্র্যাজুয়েটেড শেপ অথবা পিক্সি কাট। ঘন দেখাবে চুল। কাট ছাড়াও হেয়ারস্টাইলিংয়ের সময়ও হতে হবে কৌশলী। কার্ল অথবা মেসি বিচ ওয়েভ, নেতিয়ে পড়া পাতলা চুলে টেক্সচার তৈরি করে দেবে বাড়তি ভলিউম। এমনকি হেয়ার কালারের কারসাজিতেও ঘন দেখানো যায় চুল। হেয়ার ডাই ব্যবহারে চুল এমনিতেও একটু ভারী দেখায়। কারণ, চুলের গভীরের খাদ পূরণ হয়। এ ছাড়া হাইলাইটিং আর বালায়েজের মতো টেকনিকগুলো চুলে যোগ করে বাড়তি মাত্রা।
সঠিক পণ্যের সংযোজন
পরেরবার চুলের যত্ব নেওয়ার পণ্য কেনার সময় উপাদানগুলোর দিকে বাড়তি নজর দিলে পরিবর্তন টের পাওয়া যাবে সহজে। এমন পণ্য কিনতে হবে যেগুলো ওয়াটার বেসড, অয়েল কিংবা ক্রিম বেসড নয়। না হলে তা চুলকে আরও ভারী করে তুলবে। তার চেয়ে বরং টেক্সারাইজিং স্প্রে, ভলিউম বুস্টিং মুজ বেশ কাজের। প্রতিদিনকার হেয়ার ডু-তে ভলিউম যোগে যাদের প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করতে হয়, তাদের জন্য মাস্ট হ্যাভ প্রোডাক্টগুলো হচ্ছে—রুট মুজ, হোল্ড মুজ, সি সল্ট টেক্সারাইজিং স্প্রে। ভলিউম লিফটিং স্প্রেও থাকতে পারে তালিকায়। ভেজা চুলে এটি ব্যবহারে চুলের গোড়ায় ভলিউম দেবে। মিনারেল পাউডার ফিক্সিং স্প্রে লেয়ারড চুলে যোগ করবে টেক্সচার।
কেরামতি কৌশলের
বিশ্বের বাঘা বাঘা হেয়ারস্টাইলিস্টের মত, স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুলের শুরুটা হয় শাওয়ার থেকে। নেতিয়ে পড়া চুলের রূপান্তরের সূচনাও এর ব্যতিক্রম নয়। শ্যাম্পু আর কন্ডিশনার বেছে নিতে হবে চুলের ধরন ও চাহিদা অনুসারে। ‘মেইড ফর ফাইন হেয়ার’ ট্যাগ দেওয়া পণ্যগুলো এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর। চুল ধোয়া শেষে এয়ার ড্রাই করে নিলেই সবচেয়ে ভালো। আর ঘন ভাব আরও দীর্ঘস্থায়ী করতে চাইলে ব্লো ড্রাই সেরা সমাধান। এয়ার ড্রায়িংয়ের আগে তোয়ালে দিয়ে চেপে চেপে চুলের পানি মুছে নিতে হবে। তারপর ভলিউমনাইজিং স্প্রে অ্যাপ্লাই করে নেওয়া চাই ক্রাউনে। তারপর চিরুনি দিয়ে আঁচড়ে নিয়ে ভালো করে শুকিয়ে নিতে হবে চুল। ব্লো-ড্রাইয়ের সময় মাথাটা সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে গোড়া থেকে শুকাতে হবে। অনেকটা আপসাইড ডাউন প্রক্রিয়ায়। এতে চুলের গোড়া স্ক্যাল্প থেকে লিফট হবে। চুল দেখাবে ভলিউমনাস। পুরোপুরি শুকিয়ে যাওয়ার পর ড্রায়ারের সেটিংয়ের ঠান্ডা বাতাস দিয়ে সেট করে নিতে হবে ফুলনেসের জন্য। এতে বর্ষায় নেতিয়ে পড়া চুলও দেখাবে প্রাণোজ্জ্বল।
হেয়ার স্প্রেতে সমাধান
নায়িকাদের মতো দোল খেলানো, ঝলমলে চুল চাই ভরপুর বর্ষাতেও? সে-ও সম্ভব। স্বয়ং সেলিব্রিটিদের দেখানো উপায়ে। একটামাত্র প্রোডাক্ট হাতের কাছে থাকলেই চলবে। বলছি হেয়ার স্প্রের কথা। লুকে অনায়াস সৌন্দর্য যোগের পাশাপাশি দীর্ঘস্থায়িত্ব যোগ করবে এটি। হেয়ার স্প্রের পাশাপাশি শাইন স্প্রেও বর্ষার মৌসুমে দারুণ কাজের। অনেকের ভুল ধারণা রয়েছে, স্প্রে স্ক্যাল্পের বিল্ডআপ আর ক্ষতির জন্য দায়ী। ব্যাপারটা মোটেই তেমন নয়। অতিরিক্ত ব্যবহারে এমনটা হতে পারে, যেটা একদম দরকার নেই। তাই ব্যবহারের সঠিক কৌশল আর পরিমাণ সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। উপরি পাওয়া হিসেবে স্টাইলিং টুলের ক্ষতির হাত থেকেও বাঁচবে চুল।
সতেজ স্ক্যাল্প
বর্ষায় বেশি করে চুল ধোয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। কারণ, আর্দ্রতার প্রভাবে স্ক্যাল্প থেকে অতিরিক্ত তেল বের হয়। চিটচিটে করে তোলে এই অংশকে। ফলে ব্লো আউটের ইফেক্ট বেশিক্ষণ ধরে রাখা কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে। তাই তো নানি-দাদিদের সময়কার পরামর্শ ছিল—একরত্তি চুলও যদি বৃষ্টিতে ভেজে, তাহলে পুরো মাথা ধুয়ে নেওয়ার। না হলে শুধু নেতিয়ে যাওয়া নয়, সৃষ্টি হতে পারে স্পর্শকাতরতাও। হাতে সময় নেই চুল শ্যাম্পুয়িংয়ের জন্য? বর্ষাই তো উপযুক্ত সময় ড্রাই শ্যাম্পু ব্যবহারের। চটজলদি চিটচিটে ভাব দূরের।
হট শাওয়ারে মানা
তাপমাত্রার পারদ নামতে শুরু করলেই একটু গরম পানিতে গোসল করার সাধ বেড়ে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে হয় মনকে বশে আনতে হবে, অথবা পরে নেওয়া চাই শাওয়ার ক্যাপ। কারণ, গরম পানি মাথার ত্বককে শুষ্ক করে তোলে, চুলেরও ক্ষতি করে। এতে নেতিয়ে পড়া ভাব বাড়ে। সংক্রমিত হতে পারে স্ক্যাল্পও। তাই চুল ধোয়ার সময় ঈষদুষ্ণ পানি ব্যবহারই ভালো। আর একদম শেষবার ধোয়ার সময় ঢেলে দিতে হবে ঠান্ডা পানি। এতে কিউটিকলগুলো বন্ধ হয়ে যাবে; কমবে নেতিয়ে পড়া ভাব। আরেকটি ইন-শাওয়ার প্র্যাকটিস চুলের উষ্কখুষ্ক ভাব দূর করবে। তা হলো, মাইক্রোফাইবার টাওয়েলের ব্যবহার। বর্ষায় ডিট্যাঙ্গলার চিরুনি ব্যবহারে চুলের ক্ষতিটা কম হবে।
ভুল প্রতিরোধ
নেতিয়ে পড়া পাতলা চুল কাটার সময় চেহারার আকার আর হেয়ারলাইন বিবেচনায় রাখা চাই। কোনোভাবেই যেন চুল আর পাতলা না দেখায়, তা প্রাধান্য দেওয়া প্রয়োজন। আর স্টাইলিংয়ের সময় মাথা ভর্তি করে ভলিউমনাইজিং স্প্রে দেওয়া যাবে না কোনোভাবেই। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। গোড়ায় প্রোডাক্ট বিল্ডআপ হয়ে চুল আরও নেতানো দেখাবে; বরং ভলিউমনাইজিং প্রোডাক্ট অ্যাপ্লাই করা চাই ডগার দিকে। তবেই মিলবে মনপছন্দ ফল, ক্ষতি না করেই।
বিউটি ডেস্ক
মডেল: প্রজ্ঞা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল